somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরনারীমুখী পুরুষের বিশ্বস্ততার হরমোন.....

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বামীর অবিশ্বস্ততায় প্রথমে বীতশ্রদ্ধ, পরে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে একদিন স্ত্রী গিয়ে হাজির হলেন ডাক্তারের কাছে, বললেন- ওকে অক্সিটসিন দিন তো! আর পারছি না। সুন্দরী নারী দেখলেই ছোঁকছোঁক।


ওষুধ আকারে পাওয়া গেলে পরনারী আসক্ত স্বামীর খাবারেও কেউ কেউ গোপনে মিশিয়ে দিতে পারেন এই অক্সিটসিন! প্রেম-ভালবাসার হরমোন বলে পরিচিতি অক্সিটসিনের এমন ব্যবহার এখনই সম্ভব নয়। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণার ফল থেকে আশা করা যায় যে একদিন দাম্পত্য জীবনের পরিপূরক হয়ে ওঠবে এই হরমোন।

অক্সিটসিনের ‌ডামি ড্রাগ দিয়ে দেখা গেছে, দেহে অক্সিটসিন হরমোন সক্রিয় থাকা অবস্থায় বিবাহিত বা সম্পর্কে আবদ্ধ পুরুষ অপরিচিত নারীর ঘনিষ্টতায় এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করে- ওই নারী যতোই আকর্ষণীয় বা সুন্দরী হোক না কেন! আর এই অস্বস্তি ভাব শুরু হয় দুজনের মাঝখানে দুরত্ব কমতে কমতে চার থেকে ছয় ইঞ্চিতে চলে আসার পর। এ কারণে অক্সিটসিনকে গবেষকরা নাম দিতে চান, পুরুষের বিশ্বস্ততার হরমোন।

অক্সিটসিন শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি হয়। যৌনতা, যৌনাবেদন, আস্থা, বিশ্বাস- এই সবকিছুর সঙ্গেই রয়েছে এর নিবিড় যোগাযোগ। মেয়েদের বেলায় এ হরমোন নিসৃত হয় সন্তান প্রসবের সময়। বুকের দুধ তৈরি হওয়া এবং জরায়ু মুখ ফের ছোট হয়ে আসার কাজ করে এই অক্সিটসিন। সন্তানকে দুখ খাওয়ানোর সময় এই হরমোনে সিক্ত হয় মস্তিষ্ক, ফলে মা ও শিশুর মধ্যে গড়ে উঠে অনুপম এক বন্ধন।

গবেষকরা জানান, বেশ কিছু পুরুষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন- অক্সিটসিন পুরুষের বিশ্বস্ত থাকার গুণ বাড়াতে পারে। তবে যে পুরুষ একা, কোনো ধরনের সম্পর্কে আবদ্ধ নন- তাদের বেলায় অক্সিটসিনের কোন যাদু কাজ করে না। এ নিয়ে চালানো গবেষণার ফল ইতিমধ্যেই ছাপা হয়েছে নিউরোসায়েন্স সাময়িকীতে।

জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রেন হার্ল-মান বলেন, এ‌র আগে পশুর ওপর অক্সিটসিনের গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, পশুদের একমুখী বিশ্বস্ততার (মনোগ্যামাস ফিডেলিটি) পেছনে বড় প্রভাব রয়েছে এই অক্সিটসিনের। তবে এই প্রথম আমরা এ প্রমাণ দিচ্ছি যে মানুষের ক্ষেত্রেএ এটি একই ধরনের কাজ করে থাকে।

গবেষণায ড. হার্ল-মানের টিম নাকে স্প্রের মাধ্যমে ৫৭ জন স্বাস্থ্যবান পুরুষকে অক্সিটসিন প্রয়োগ করে- যাদের প্রায় অর্ধেক কিনা এক নারীতে সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।অক্সিটসিন দেওয়ার ৪৫ মিনিট পর তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় একজন নারীকে; (গবেষণার পর জিজ্ঞাসা করা হলে পুরুষরা বলেছিলেন এই নারী
ছিলেন 'আকর্ষণীয়া'।)। যাহোক, একে একে সব পুরুষদের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়। তাদের বলা হয়, সু্ন্দরী ওই নারী তাদের কাছে ঘেঁষবেন। খেয়াল রাখতে হবে দুজনের মাঝখানে দূরত্বটা কতটুকু থাকলে সেটাকে আদর্শ, গ্রহণযোগ্য মনে হয় এবং কোন পর্যায়ে গেলে কিছুটা অস্বস্তি ভাব আসে।

ড. হার্লমান বলেন, ‌যেহেতু এ ধারণা প্রচলিত যে অক্সিটসিন মানুষের বিশ্বস্ততা বাড়ায় তাই আমরা আশা করেছিলাম এই হরমোন ব্যবহার করা হলে তার প্রভাবে পুরুষ একজন অপরিচিত নারীকে আরো কাছে পেতে চাইবেন। কিন্তু এর উল্টোটা ঘটতে দেখলাম গবেষণায়। অর্থাৎ ওই সুন্দরী নারী যতোই কাছে ঘেঁষছিলেন প্রয়োগ করা হরমোনের প্রভাবে পুরুষ ততোই অস্বস্তি বোধ করছিলেন। অপলক দৃষ্টি বিনিময়, কিংবা দুই দিকে দুজনের চোখ- দুই ভাবেই গবেষণা চালানো হলো- ফল অভিন্ন। একই ফল এলো ভূমিকা বদল করেও। যেমন নারীকে স্থির রেখে পুরুষকে বলা হলো সক্রিয় হতে। এরপর পুরুষকে নিশ্চল রেখে নারীকে বলা হলো ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে। সব ক্ষেত্রেই একই ফল: সম্পর্কে আবদ্ধ পুরুষরা দূরত্বের একটা পর্যায়ে অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। তবে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে নেই এমন পুরুষের ক্ষেত্রে অক্সিটসিনের কোন প্রভাব ছিল না বলে জানান হার্লমান। অর্থাৎ গবেষণার জন্য ডাকা ওই নারী যতোই কাছে ঘেঁষছিলেন তাঁকে যেন আরো কাছে প্রত্যাশা করছিলেন সিঙ্গল ম্যান। নারীর বদলে পুরুষ-বনাম পুরুষ বনাম নিরীক্ষা চালিয়েও পাওয়া গেলো একই ফল- কাজ করছে না অক্সিটসিন!

তবে গবেষকরা বলেছেন, অক্সিটসিন কীভাবে মস্তিস্কের দখল নিয়ে আচরণকে প্রভাবিত করে এ বিষয়টি জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আটলান্টার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার অধ্যাপক ল্যারি ইয়াং বলেন, বাবারা যে বাচ্চাদের ছেড়ে চলে যান না- একই নীড়ে জীবন কাটিয়ে দেন এটি এই অক্সিটসিনেরই যাদু। এই পরম্পরাতেই মানবজাতি আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অবশ্য এই গবেষণাকর্মে ল্যারি ইয়াঙ্গের অংশগ্রহণ ছিলো না।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×