somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাঙের ছাতার পূর্ণপাঠ - তথ্যমূলক পোস্ট

১৯ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘মাশরুম’’ ব্যাঙের ছাতার মতো এক ধরণের ছত্রাক জাতীয় গাছ। মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা দেখতে একই রকম হলেও এদের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোন কোন মাশরুম বিষাক্ত হয় এবং সেগুলো খাওয়া যায় না। সূর্যের আলোয় প্রাকৃতিকভাবে খুব বেশি মাশরুম জন্মাতে পারে না তাই প্রাকৃতিক উপায়ে খাবারের জন্য বেশি করে মাশরুম পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে অনেক স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষকরা মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি স্থানে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। মাশরুম চাষ করতে আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না।

মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। তাই খাদ্য হিসেবে এটা খুবই পুষ্টিকর। এর উপকারিতাসমূহ হল-

১. রক্তে চিনির সমতা রক্ষা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগী এবং যারা স্থুল বা স্বাস্থ্যবান তাদের জন্য উপযুক্ত খাবার।

২. মাশরুম দেহের ক্ষয়পূরণ, হাড় গঠন ও দাঁত মজবুত করে।

৩. রক্তহীনতা, বেরিবোধ, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

বিশ্বে মাশরুমের ব্যবহার ও চাষের ইতিহাসঃ


মনুষ্য ইতিহাসে খাদ্য হিসেবে মাশরুমের ব্যবহার অতি পুরোনো। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর তথা প্রাক প্রস্তর যুগে মাশরুমের ব্যবহার ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মানব সভ্যতার উত্থানের সাথে মাশরুম ওতপ্রোতভাবে জরিয়ে আছে। স্বাদে ও গুণে অতুলনীয় মাশরুম বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত হলেও প্রাচীনকালে জাদুকরী ও সম্মোহনকারী খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল। মিশরের ফারাও রাজাগণ মাশরুম সংগ্রহ ও ভক্ষণ করতেন এবং সাধারণ নাগরিকের জন্য মাশরুম খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। রোমানরা মাশরুমকে ঈশ্বরের খাবার মনে করতেন এবং ইহা সংরক্ষণের জন্য আইনও পাস করেছিলেন।
প্রায় তের শত বছর পূর্বে চিলিতে মাশরুম খাবার হিসেবে ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে একে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির নির্ভরযোগ্য ইতিহাস চীনের দখলে। প্রায় ২০০ বছর পূর্ব থেকে চীনারা মাশরুমকে খাবার ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন রোমান ও গ্রীকরা বিশেষত সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষ মাশরুম রন্ধন কাজে খাবার সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহার করত। তৎকালীন সময়ে বিশ্বজুড়ে মাশরুম উজ্জীবক তথা জীবনী শক্তি বর্ধক ব্যবহার হত। বর্তমানে বিশ্বের ১০০ টির ও বেশী দেশে মাশরুম বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হয়।

পৃথিবীতে প্রায় তিন লক্ষ্য প্রজাতির ছত্রাক রয়েছে। এর সব টাই খাবার উপযোগী নয়। এর মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই বাছাই শেষে মাত্র ২০০প্রজাতির খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক পাওয়া গেছে যার ৩০ টি প্রজাতি বাণিজ্যিক ও মাত্র ১০ টি প্রজাতি ইন্ডাস্ট্রিয়ালি আবাদ যোগ্য। তাই সকল মাশরুম ছত্রাক হলেও সকল ছত্রাক মাশরুম নয়। মাশরুমের পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বে এর চাষ ও উৎপাদন দিনদিন বেড়েই চলেছে।

ঔষধি মাশরুম ঋষিঃ


ইমিউন সিস্টেম উন্নত করণের আশ্চর্যজনক ক্ষমতা জন্য ২০০০ বছরের পুরানা এশিয়ান পান্ডুলিপিতে রেফারেন্স হিসেবে ঋষি মাশরুমের নাম পাওয়া যায়। এর বিরল ঔষধী গুণ, রাজকীয় স্বাস্থ্য সুবিধা ও দীর্ঘায়ু দানের ক্ষমতার কারণে চীন ও জাপানিজরা একে "গোল্ডেন হার্ব" ও “রয়াল হার্ব” বলতো। এছাড়াও এর গুনের কারণে ঋষি মাশরুম কে "স্বর্গীয় হার্ব" বা "ব্লিজ হার্ব" বা "অমরত্বের মাশরুম" হিসাবে রেফারেন্সে উল্লেখ করা হয়েছে। চীন দেশে এই মাশরুম Lingzhi পরিচিত।
ঔষধিগুণাবলী সম্পন্ন মাশরুম গুলোর মধ্যে এটি বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, বিশেষ করে চীন, জাপান ও মালয়েশিয়াতে হার্বাল মেডিসিন হিসেবে এই মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই মাশরুম দিয়ে ক্যান্সার, টিউমার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের ঔষধ তৈরী করা হয়। এছাড়াও কসমেটিকস্ শিল্পে যেমন- পেস্ট, সাবান, লোশন, শ্যাস্পু, ম্যাসেজ ওয়েল ইত্যাদি এমনকি চা, কফি, চকলেট তৈরীতেও ইহার ব্যবহার বিশ্বে প্রচুর।
বর্তমানে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে ঋষি মাশরুমের ৭টি স্ট্রেইন (Strain) আছে। স্ট্রেইন গুলি যথাঃ Gl-1, Gl-2, Gl-3, Gl-4, Gl-5, Gl-6 এবং Gl-7. সবগুলি স্ট্রেইনই আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী এবং ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাগ, লগ, বোতল, ট্যাংক ও জুন সাউ চাষ প্রযুক্তিতে বর্তমানে এই মাশরুম চাষ হচ্ছে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র কর্তৃক কাঠের গুঁড়ায় সহজ উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবণ হওয়ায় এ মাশরুম বাংলাদেশে খুব সহজেই চাষ করা যায়।
ইহার সংরক্ষণ ক্ষমতা ও বাজার মূল্য (৩০০০-৯০০০ টাকা) অনেক বেশী হওয়ায় এই মাশরুম এ দেশে বাণিজ্যিক আকারে চাষ করা খুব ই লাভজনক।
পরিবেশগত চাহিদাঃ
উচ্চ তাপমাত্রা (২২-৩২ ডিগ্রী সেঃ) ও উচ্চ আদ্রতা (৮৫-৯৫%) পছন্দ করে বিধায় আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে খুব সহজেই চাষ করা যায়।
পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরা সুস্বাদু এই মাশরুমের উৎপাদন ও চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। মিল্কী হোয়াইট মাশরুমে প্রোর্টিন ৩২.৩%, আঁশ ৪১.০০%, (Krishnomoorthy, ২০০৩) আছে। এছাড়াও এটি থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, নিকোটিনিক এসিড, প্রাইরোডক্সিন ও এসকরবিক এসিড, (Breene ১৯৯০) এর খুবই ভাল উৎস।
ঋষি মাশরুমের গুনাগুণঃ


১- ঋষি মাশরুম ইমিউন সিস্টেম তথা রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা পূর্নজ্জিবীত করে।
২- ক্যন্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ ও ধ্বংস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৩- এই মাশরুম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গুরুত্ব পুর্ন ভূমিকা পালন করে।
৪- রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
৫- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও স্বাস্থের উন্নয়নে সাহায্য করে
৬- হার্পেস সিমপ্লেক্স ও কোল্ড সোর সারাতে সাহায্য করে।
৭- ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ ভাইরাস রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৮- করোনারীর প্রসারণ ও অক্সিজেন সর্বরাহ বড়ানোর মাধ্যমে হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৯- ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যাবহৃত রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি জনিত শারীরিক ক্ষতি( চুল, নখ, ত্বক) হাত থেকে রক্ষা করে।

মিল্কি হোয়াইট/দুধ ছাতু মাশরুমের বৈশিষ্ট্যঃ


১- এটি গ্রীষ্ম মৌসুমের মাশরুম (মার্চ থেকে অক্টোবর)।
২- উচ্চ তাপমাত্রায় চাষ করা যায় (৩৫-৩৮০ সেঃ)।
৩- ফ্রুটিং বডি দুধেরমত সাদা ও পূরু।
৪- আকৃতিতে অনেক বড় হয় (৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত)।
৫- স্টাইপ অনেক মোটা, সুস্বাদু এবং অল্পখরচে চাষ করা যায়।।
৬- এই মাশরুমকে বাংলা বাটন বলা হয়ে থাকে।
৭- ধানের খড়, গমের খড়, কাঠের গুড়া ইত্যাদি খুব সহজে চাষ করা যায়।
৮- সংরক্ষণকাল বেশি ও এর বাজার মূল্য বেশি।
৯- স্ট্র মাশরুম চাষে ব্যবহৃত সাবস্ট্রেট এ মাশরুম চাষের জন্য পূনঃ ব্যবহার করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়।


আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোর বিভিন্ন হোটেল ও চাইনিজ হোটেলগুলোতে মাশরুমের চাহিদা আছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে মাশরুমের বাজার মূলত শহরে গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। মাশরুম শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিদেশে সবজি ও কাঁচামাল পাঠায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

উৎসঃ (১) (২) (৩)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×