somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ডাক্তার ও আমার মায়ের কথা বলবো !!!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মা" এক অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ।
কিন্তু এক হাজার বিশেষন দিয়েও মায়ের কথা বলে শেষ করা যাবেনা।যার মায়ের আদর,মমতা পাননি তাদের মর্মবেদনা আর কেউ বুঝতে পারবে না।আমি যে কতোটা ভাগ্যবান আমার মা কে আমার পাশে পেয়ে সেটা বুঝানোর জন্যই আজকের এ লেখা।

আমি তখন খুব ছোট,সবে মাত্র হাটা শিখেছি।আব্বু আম্মুর হাত ধরে অনভ্যস্ত গুটি গুটি পায়ে হাটি।এমনি একদিন মাঠে আব্বু আমাকে একটা ছোট ফুটবল দিয়ে আমার সাথে খেলছিলো।হঠাৎ আমি পড়ে যাই।আব্বু আমাকে ঐ দিনের মতো বাসায় নিয়ে আসে।কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি যে আমি ব্যাথা পেয়েছি।
দেখা গেলো যে দু দিন ধরে আমি ভালোমতো খাইনা,ঘুমাই না।আমার খেলাধুলা আর হাসিও কমে গেলো।আম্মু হঠাৎ লক্ষ করলো যে আমি দাড়াতে পারছি না।সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলো।ঐদিন ঔষধ খেয়েও লাভ হলোনা।
পরের দিন আমার পায়ের ফুলা আরো বেড়ে যাওয়াতে আমাকে নিয়ে আব্বু আম্মু ছুটলেন চিটাগং ( আমরা থাকতাম কাপ্তাই) সারাদিন ঘোরে ডাক্তারের পিয়নকে ঘুষ দিয়ে সিরিয়াল নেওয়া হলো।চেম্বারে আমাকে কোনরকম দেখেই ডাক্তার আম্মু আব্বুর সাথে খারাপ ব্যাবহার শুরু করলো,বললো এতোদিন পরে এনেছেন কেনো ? আমার আর কিছু করার নেই,৩ দিন পর অপারেশন, পা কেটে ফেলতে হবে।আম্মু ডাক্তার কে আরেকবার ভালোভাবে দেখতে বললে উনি বললেন উনি যা বলেছেন তাই ফাইনাল,আর উনার হাতে সময় ও নেই।
আম্মু আব্বুর দুজনেরই পাগলের মতো অবস্থা।আব্বু সকাল বেলা হাসপাতাল থেকে কাজে যেতো আর রাতে আবার শেষ বাসে আমাদের কাছে চিটাগং চলে আসতো,যা প্রতিদিনে যাওয়া আসায় ৫ ঘন্টার জার্নি।
যাহোক আমার অপারেশনের আগের ঐ ৩ টা দিন আম্মু পানি আর পাউরুটি ছাড়া কিচ্ছু খায়নি।সারা রাত দিন শুধু আমাকে বুকে নিয়ে কাদঁতো ,কেবিনের আশেপাশে কোন ডাক্তার দেখলেই বারবার অনুরোধ করতো আমাকে আরেকবার দেখার জন্য।আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতো।খাওয়া দাওয়া গোসল সব বন্ধ হয়ে গেলো আম্মুর।

যেদিন আমার অপারেশন হওয়ার কথা সেদিন সকালেও আম্মু কাদঁছে এমন সময় আমার পাশের বেডের রোগীর একজন গেস্ট এলেন।

উনি যখন আম্মুকে এভাবে কাদঁতে দেখলেন উনি জিগ্গেস করলেন কেন কাদঁছেন?

আম্মু সব বললে উনি বললেন আপা আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি বাবুকে একবার দেখি।আমি নিজে একজন ডাক্তার।

আম্মু হ্যা বলতেই উনি আমাকে ভালোভাবে দেখে বললেন ,ডাক্তার কি বলেছে যে ওর পা কেটে ফেলতে হবে?
আম্মু বললেন "হ্যা"

উনি নিজে গিয়ে ঐ ডাক্তার কে সাথে করে নিয়ে এলেন, বললেন ওকে আপনি দেখেছেন?
ডাক্তার বললো হ্যা, আমি বলেছি পা ফেলে দিতে হবে।সাথে সাথে ঐ ভদ্রলোক ডাক্তারের কলার ধরে বললেন" কু**র বাচ্চা আজকেই ওর অপারেশন করবি,ওর পা এখনো ভালো আছে,তুই ভালোভাবে না দেখে কেনো কেটে ফেলবি বললি? (পরে জেনেছিলাম ঐ ভদ্রলোক সরকারি কোন বড়ো পদে ছিলেন )

চাপে পড়ে ঐ ডাক্তার আম্মুকে বললো আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে।
তখন আব্বু সাথে ছিলোনা।কিন্তু আম্মু তা নিয়ে না ভেবে আমাকে নিয়ে ছুটলেন অপারেশন থিয়েটারে।তার কান্নামিশ্রিত চোখে তখন একটু খানি আশার ঝিলিক।আম্মুর কোমর আর হাটু ব্যাথার প্রচন্ড সমস্যা।কিন্তু ওসবের তোয়াক্কা না করে আমাকে নিয়ে ৩-৪ তলা সিড়ি ভেঙে উঠলেন।এক নার্স হেল্প করতে চাইলে ঐ ডাক্তার চোখ রাঙিয়ে নিষেধ করে দিলো।আমাকে ওটিতে নেওয়ার পর ঐ ডাক্তার আম্মুকে বকাঝকা শুরু করলো।বললো বড়ো অফিসার ডেকে এনে আমাকে অপমান করেন না? ক্ষমতা দেখান?

আম্মু আমার জন্য ঐ লোকের হাত ধরে বললেন ভাই আমাকে মাফ করেন,আমার ছেলের জীবন টা বাচান প্লিজ।
ডাক্তার বললো আমাদের আয়ার শর্ট আছে অপারেশন আরো কয়েক ঘন্টা পরে হবে,নাহলে ক্লিনিং করবে কে?

আম্মু বললো আমি করবো।
উনি হেসে বললেন পারবেন না,ভেজাল কইরেন না,ওয়েট করেন।
পরে আম্মুর জোরাজোরিতে উনি অপারেশন শুরু করলেন।শুনেছি ৩-৪ গামলা তুলা,রক্ত,গজ এসব ময়লা আম্মু কে দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছিলো।

অপারেশনের মাঝখানে বললো যান অমুক ইনজেকশন টা নিয়ে আসুন।আম্মু আবার ছুটলো ,ফিরে আসতেই ডাক্তার বললো আরেকটা ঔষধ নিয়ে আসুন নাম লিখে দিচ্ছি।অথচ পরে আম্মু আয়ার কাছে জানতে পেরেছিলো ঐ সব ঔষধ সবি ডাক্তারদের কাছে ফ্রিজে ছিলো।শুধু আম্মুকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আর রাগ দেখানোর জন্য এসব ওরা করেছে।আগেই বলেছি আম্মুর হাটুর ব্যাথা ছিলো শেষের বার যখন ঔষধ নিয়ে উপরে আসে তখন হোচট খেয়ে আম্মুর একটা নখ উপড়ে যায়।কিন্তু আম্মু নাকি টের ই পায়নি।পুরা অপারেশনের সময় ওরা নাকি গান গাইছিলো আর মজা করছিলো।আর আমার অসহায় মা তখন অঝোরে কাদঁছিলো আর দিকভ্রান্তের মতো ঔষধের জন্য এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছিলো।
বুকের মানিকের জীবনের জন্য সব অপমান, লজ্জা আম্মু মুখ বুজে সয়ে গেলো।
অপারেশনের পরে আমি নাকি ২ দিন একটানা ঘুমিয়েছিলাম।

আম্মুর সেই নখটি আজো ভালো হয়নি,আম্মুকে আমি বলেছিলাম আম্মু তুমি ব্যাথা পাওনি?
আম্মু হেসে বললো, বাবারে তোর জন্য এটুকু ব্যাথা কেনো আমি আমার জীবন টাই দিয়ে দিতে পারি।তুই আমাকে কখনো ভুলে গেলেও আমি তোকে এভাবেই ভালোবেসে যাবো ,আমি যে তোর মা।
এর পরও দেখেছি আমার যে কোন অসুখ হলে আম্মু সারারাত ঘুমায় না, কখনো কখনো আব্বুকেও ঘুমাতে দেয়না।বিদেশে আছি বলে পরপর ২ দিনও যদি ফোন না দেই ফোন করলেই কান্নাকাটি শুরু করে।

আর এখনো আমার পায়ে সেই অপারেশনের দাগ টি আছে,যখনি দেখি ঐ অজানা ভদ্রলোকটির কথা মনে পড়ে যার উছিলায় আল্লাহ আমাকে পন্ঙ্গুত্বের হাত থেকে বাচিয়েছেন।দোয়া করি যেখানেই থাকুন না কেনো আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন।

আর আম্মু তোমাকে বলি,অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায়,যদিও মুখ ফুটে কখনো বলতে পারিনি ....




সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০০
৮৫টি মন্তব্য ৮৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×