somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বল্টু মিয়ার ইচ্ছেপূরণ

১০ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐ ছ্যাড়া উঠ, আর কতো ঘুমাবি?
ঐ পোলা উঠছ না কেন?
ভোটকার ডাকে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে চোখ কচঁলাতে কচঁলাতে উঠে বসে বল্টু।উঠেই ভোটকার পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়।

হালা তোরে না কইছি আমারে ঘুমের মইদ্যে ডাক দিবিনা? হালারপুত আমার খোয়াবটাই নষ্ট কইরা দিছোস।কি সুন্দর হপনের মইদ্যে পোলাও কোরমা দিয়া খাইতাছিলাম।

উহ আইছে আরেকজন পোলাও কোরমা ওয়ালা !পেছন থেকে খেকিয়ে উঠে বদু মিয়া।

কাম কাজের খবর নাই খালি খাওন আর খাওন।জলদি গিয়া পেশাব পায়খানা সাইরা কামে যা।আর সাবধান মুখ ধুইবি না কইলাম!ফুলবাবু সাজনের কাম নাই।
বদু মিয়ার ১৪ গোষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে ভোটকা আর বল্টু বের হয়।

বল্টুর বুঝ হওয়ার পর থেকেই বাপ মা নেই।বদু মিয়ার কাছেই মানুষ।মানুষ বলতে শুধু ২-৪ টা খেয়ে পড়ে বাচাঁ আরকি।বদুর আন্ডারে ১২ জন ছেলে ভিক্ষে করে।সারাদিন যা রোজগার হয় এর ৩ ভাগের ২ ভাগ বদুর আর ১ ভাগ নিজের।ভোটকা হলো বল্টুর সাগরেদ।বল্টুর পা না থাকায় ভোটকা সকালে বেলা বেয়ারিং লাগানো ঠেলা গাড়িতে করে সকালে বল্টুকে নিয়ে বের হয় আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে।ভোটকার আসল নাম জসিম হলেও একটু বেশি খায় বলে সবাই ডাকে ভোটকা।

আজকে বল্টু আর ভোটকার গন্তব্য মহাখালি।একেকদিন একেক জায়গায় গেলে টাকা পয়সা ভালো পাওয়া যায়।এক জায়গাই বেশিদিন ভিক্ষা করলে লোকে চিনে ফেল।তখন আর বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায়না।

ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে ভোটকা জিজ্ঞেস করে,
কিরে কি হপনে দেখছোস রে?
আর কইছ না বেডা ,পোলাও ,গোস্ত ,আইপল,কমলা কতোকিছু যে দেখছি।খালি খাওন আর খাওন।বলেই চওড়া হাসি হাসে বল্টু।
ভোটকার জিভে জল চলে আসে।
আমারে দেহস নাই?
আমি আছিলাম না তোর লগে?উৎসুক ভাবে ভোটকা জিজ্ঞেস করে।
নাহ! তুই আছিলি না।
আইচ্ছা হুন ভোটকা ল আইজকা ২ জনে মিল্লা পোলাও খামু গোস্ত দিয়া।

উহহ!! পোলাও খাওনের টেকা পাবি কই? বুইড়া বদু জানলে তোর নলি তো ভাঙবোই আমার টাও হাতে ধরায়া দিবো,পরে তোর ঠেলা ঠেলবো কোন নানায়?
নিমিষেই মুখ কালো হয়ে যায় বল্টুর।রাগে নিজেই ২ হাত দিয়ে জোরে বেয়ারিং ঘোরাতে থেকে।

নাহ ! আজ সারাদিন ভিক্ষার পরেও মাত্র ১৮৭ টাকা হয়েছে।অন্যদিন কম করে হলেও ৪০০ টাকা হয়।অন্তত বদির চোখ ফাকিঁ দিয়ে দুজনে ২ টা কলা আর মিষ্টি কেক খেতে পারে।আজকে বোধ হয় আর খাওয়া হলোনা।

লরে বল্টু যাইগা,আমার খিদা লাগছে
হ বদুঁ বুইড়ারে গিয়া কচু দিবা তাইলে? বল্টু হিসিয়ে উঠে।
আর রাইতের খাওন পাইবা মনে করছো?শালায় আস্তা একটা খচ্চর,পত্তেকদিন ৫০০ টেকা লইয়া যাওন লাগবো হের লাইগ্যা।মানুষ যেন টেকা আমাগো লাইগ্যা লইয়া বইয়া রইছে।

ঐ ভোটকা হালা আন্ধা দেহছ না সিগনাল পড়ছে,হালা ঠেলা দে নাইলে গাড়ি ছাইড়া দিবো।

জ্যামের মাঝে গিয়ে গাড়ির জানালায় ঠুকে হাত বাড়ায় বল্টু
ঐ ফকিন্নির পুত হাত সরা,গেলাস ময়লা করছ কেন?গাড়ির ড্রাইভার চেচাঁয়।
রাগ করেন কেন ডাইবর সাব? দেন না ২ ডা টেকা?
যাহ মাফ কর,গাড়িত কেউ নাই
আফনেই দেন না?
কইলাম না যা! দিমু একটা ঠুয়া
লাগতো না টেহা,খাইস্টার টেহা লই না,বলেই বেয়ারিং ঠেলাদিয়ে বল্টুর গড়ি নিয়ে পালায় ভোটকা আর দুজনে হেসে গড়িয়ে পড়ে ঐদিকে ড্রাইভারের খিস্তি শোনা যায়।

সবুজ লাইট জ্বলতেই ওরা তাড়া লাগায় রাস্তা পার হতে,বল্টুও হাত লাগায়।রাস্তা পার হয়েছি কি হয়নি এমন সময় ধাতব কর্কশ একটা শব্দে পিছনে ফেরে দুজন,ঠেলা টা সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভোটকাও লাফ দেয়।ঠেলা থেকে অল্প দূরে এসে বাইকটি থামে। আরোহী ছেলেটি তখনো বাইকের নিচে চাপা পড়ে আছে।সবাই ছুটে আসছে।তবে যে পরিমাণ রক্ত রাস্তায় পড়ে আছে বোঝাই যায় বেচেঁ নেই।ভোটকা হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়ায়,গিয়ে বল্টুকেও টেনে তুলে।ওদের দিকে কারো নজর নেই।সবাই বাইকের ছেলেটিকে নিয়ে ব্যাস্ত।

বল্টু হঠাৎ হাত দিয়ে ইশারা করে ভোটকা কে।
ভোটকা না বুঝে এপাশ ওপাশ তাকায়,বোঝে উঠতে পারছেনা কি চাইছে বল্টু! হঠাৎ চোখ পড়ে বাইকের ছেলেটির মানিব্যাগ ছিটকে এসে পড়েছে ভোটকার পায়ের পাশে।মানিব্যাগটি কুড়িয়ে নিয়েই ভোটকা বল্টুর ঠেলা নিয়ে ঐখান থেকে বেরিয়ে আসে।
নিজের ছেড়া গেন্জি দিয়ে মানিব্যাগের রক্ত মুছে বল্টু।
দেখ রে জইস্যা ভিতরে ৫০০ টেহার নোট।আইজকা পোলাও খামুরে,বল্টুর চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।কিন্তু ভোটকা তখনো ঘোরের মধ্যে।
নারে বল্টু আল্লায় গুনা দিবো,মরা বেডার টাকায় খাইলে।
আরে ধূর ঐ বেডা তো মরছে,আরেকটু অইলে আমাগোরে ও মারতো।এই টাকায় আমাগো হক আছে।
ভোটকা কি বুঝে কে জানে সেও বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ায়।

২ বন্ধু রাস্তার পাশের ভাতের হোটেলের দিকে পা বাড়ায়।আজকে ওদের খুশির দিন,আজ ২ জনে পেট পুরে পোলাও খাবে,হয়তো ঐ খাবারে রক্তের নোনতা স্বাদ থাকতে পারে,তবুও আজ ওদের ক্ষুধা নিবৃত্তির দিন।

উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার নোমান নমি, নিশাচর ভবঘুরে।
আর ৯ টা বানান ভূল ধরে দেওয়ার জন্য আফুনি কে থ্যান্কস,যদিও সবগুলো বানান এখনো ঠিক করা হয়নি আলসেমির কারনে :)

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৬
১২৬টি মন্তব্য ১২৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×