চিত্রঃ পাতার উপর মুক্তোর ন্যায় জল জ্বলজ্বল করছে
আমরা প্রতিনিয়তই নিত্য-নতুন লেখার সংস্পর্শে আসি। সেটা হতে পারে কাগজের মাধ্যমে কিংবা ডিজিটাল ভাবে। তবে সব লেখাই কি মনে দাগ কাটে? না কাটে না। সব লেখা সবার জন্য যেমন নয় তেমনি একটা লেখা আমার ভালো লাগতে পারে কিন্তু অন্যজনের ভালো নাও লাগতে পারে। এখানেই আসে শব্দ ব্যবহারে নৈপুণ্যের প্রসঙ্গ।
এক টুকরো লেখা কখনো মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করতে পারে। কিংবা কয়েক লাইনই পারে মনকে ভাবনার জাহাজে তুলতে। সবটাই আসলে লেখকের কারিকুরি বা কৃতিত্ব। লেখক শব্দের জাল বুনে অতি ছোট লেখাকেই মহিমান্বিত করতে পারেন। শব্দের বিচিত্র ব্যবহার, চিত্ররূপময়তা, উপমা লেখাকে আলাদা করে তোলে। শব্দ চয়ন , গঠনশৈলী, সাবলীলতা একটা লেখাকে অন্য মাত্রা এনে দেয়। যার ফলে পাঠকের কাছে লেখাটি হয়ে উঠতে পারে চমকপ্রদ এবং মনে দাগ কাঁটা।
কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাকঃ
সকাল থেকেই আকাশটা কেঁদে চলেছে.....
সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে..........
সকাল থেকেই বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর.....
উপরের সবগুলো বাক্যই আমার বৃষ্টির ক্ষেত্রে লিখতে পারি। কিন্তু কোনটা সবচেয়ে মনকাড়া? অবশ্যই আকাশের কেঁদে চলা।
আরোকটা উদাহরণ দিইঃ
পাতার উপর মুক্তোর ন্যায় জল জ্বলজ্বল করছে।
জীবন নৌকার শেষ যাত্রা।
বাবার মৃত্যুতে সায়ানদের জীবনটা ধূসর হয়ে গেছে।
উপরের দ্বিতীয় বাক্য দ্বারা শবযাত্রা বুঝানো হয়েছে।
আসলে লেখাও ইমারতের মতো। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কাগজে। কিন্তু লেখকের শব্দ ব্যবহারে মুন্সিয়ানাই পারে পাঠককে টানতে।
যেমন চিত্ররূপময়তা পাঠককে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে বাধ্য করে । সে যা পড়ছে তা মন আকাশে ভেসে ওঠে। এতে লেখার মাধুর্য যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি পাঠকের জন্যও তা সহায়ক বটে !
এবং আরো উদাহরণঃ
কান পাতলে হাহাকার শোনা যায়।
নরম ঘাসের বুকে কঠোর পদচিহ্ন।
হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘেদের আনাগোনা।
মেয়েটির চোখদুটো দিয়ে মুক্তো ঝরছে।
উপরের বাক্যগুলো পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ ঘাসের দুমড়ানো মোচড়ানো অবস্থা কিংবা কালো আকাশে মেঘের রাজত্ব। মেয়েটির কান্না যেন মুক্তোর মতেই ঝরে পড়ছে। অথবা অনতিদূরের হাহাকার।
চিত্রঃ চোখ দিয়ে মুক্তো ঝরছে....
উপরের ছবিটা আসলে আমাদের মানসপটে ভেসে উঠবে। এরকমটাই দেখা যায় প্রথম চিত্রেও। এবং এমনটা দেখানোই হলো লেখকের উদ্দেশ্য। লেখাকে বাস্তবতার আলোকে বা ছায়ায় আনা, যাতে পাঠক খুব সহজেই লেখার রস আস্বাদন করার সুযোগ পায়।
চিত্রঃ নীল আকাশ যখন কালো.....
উপরের ছবিটা এমনিতেই পাঠকের হৃদয়ে আঁকা হয়ে যায়। তবে আকাশে কালো মেঘ সর্বনাশও নির্দেশ করে।
চিত্ররূপময়তা কবিতাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। যেন কবিতা মাত্রই রঙ-বেরঙের শব্দের হোলিখেলা।
উদাহরণঃ
সময় নদীতে জীবনের গান
নৌকার মতোই বহমান।
অথবা,
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
এখানে শব্দের সাহায্যে কবি গ্রামের সুনিপুণ ছবি এঁকেছেন। কিংবা, প্রথম উদাহরণটাতে সময় ও জীবন নদীতে একাকার।
লেখার স্বাভাবিক গতিশীলতা পাঠককে প্রশান্তি দেয়। সাথে চমৎকার গঠনশৈলীর বাক্য থাকলে সোনায় সোহাগা। পাঠক লুফে নেবে। সাথে স্পেসিংও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বড়ো লেখার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ অনুচ্ছেদ করে লিখলে ভালো হয়। অপেক্ষাকৃত সরল বাক্য ব্যবহার করা উত্তম। এতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬