somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক টুকরো লেখা.....

০৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চিত্রঃ পাতার উপর মুক্তোর ন্যায় জল জ্বলজ্বল করছে

আমরা প্রতিনিয়তই নিত্য-নতুন লেখার সংস্পর্শে আসি। সেটা হতে পারে কাগজের মাধ্যমে কিংবা ডিজিটাল ভাবে। তবে সব লেখাই কি মনে দাগ কাটে? না কাটে না। সব লেখা সবার জন্য যেমন নয় তেমনি একটা লেখা আমার ভালো লাগতে পারে কিন্তু অন্যজনের ভালো নাও লাগতে পারে। এখানেই আসে শব্দ ব্যবহারে নৈপুণ্যের প্রসঙ্গ।

এক টুকরো লেখা কখনো মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করতে পারে। কিংবা কয়েক লাইনই পারে মনকে ভাবনার জাহাজে তুলতে। সবটাই আসলে লেখকের কারিকুরি বা কৃতিত্ব। লেখক শব্দের জাল বুনে অতি ছোট লেখাকেই মহিমান্বিত করতে পারেন। শব্দের বিচিত্র ব্যবহার, চিত্ররূপময়তা, উপমা লেখাকে আলাদা করে তোলে। শব্দ চয়ন , গঠনশৈলী, সাবলীলতা একটা লেখাকে অন্য মাত্রা এনে দেয়। যার ফলে পাঠকের কাছে লেখাটি হয়ে উঠতে পারে চমকপ্রদ এবং মনে দাগ কাঁটা।

কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাকঃ
সকাল থেকেই আকাশটা কেঁদে চলেছে.....
সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে..........
সকাল থেকেই বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর.....

উপরের সবগুলো বাক্যই আমার বৃষ্টির ক্ষেত্রে লিখতে পারি। কিন্তু কোনটা সবচেয়ে মনকাড়া? অবশ্যই আকাশের কেঁদে চলা।

আরোকটা উদাহরণ দিইঃ
পাতার উপর মুক্তোর ন্যায় জল জ্বলজ্বল করছে।
জীবন নৌকার শেষ যাত্রা।
বাবার মৃত্যুতে সায়ানদের জীবনটা ধূসর হয়ে গেছে।

উপরের দ্বিতীয় বাক্য দ্বারা শবযাত্রা বুঝানো হয়েছে।

আসলে লেখাও ইমারতের মতো। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কাগজে। কিন্তু লেখকের শব্দ ব্যবহারে মুন্সিয়ানাই পারে পাঠককে টানতে।
যেমন চিত্ররূপময়তা পাঠককে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে বাধ্য করে । সে যা পড়ছে তা মন আকাশে ভেসে ওঠে। এতে লেখার মাধুর্য যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি পাঠকের জন্যও তা সহায়ক বটে !

এবং আরো উদাহরণঃ
কান পাতলে হাহাকার শোনা যায়।
নরম ঘাসের বুকে কঠোর পদচিহ্ন।
হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘেদের আনাগোনা।
মেয়েটির চোখদুটো দিয়ে মুক্তো ঝরছে।

উপরের বাক্যগুলো পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ ঘাসের দুমড়ানো মোচড়ানো অবস্থা কিংবা কালো আকাশে মেঘের রাজত্ব। মেয়েটির কান্না যেন মুক্তোর মতেই ঝরে পড়ছে। অথবা অনতিদূরের হাহাকার।


চিত্রঃ চোখ দিয়ে মুক্তো ঝরছে....

উপরের ছবিটা আসলে আমাদের মানসপটে ভেসে উঠবে। এরকমটাই দেখা যায় প্রথম চিত্রেও। এবং এমনটা দেখানোই হলো লেখকের উদ্দেশ্য। লেখাকে বাস্তবতার আলোকে বা ছায়ায় আনা, যাতে পাঠক খুব সহজেই লেখার রস আস্বাদন করার সুযোগ পায়।


চিত্রঃ নীল আকাশ যখন কালো.....

উপরের ছবিটা এমনিতেই পাঠকের হৃদয়ে আঁকা হয়ে যায়। তবে আকাশে কালো মেঘ সর্বনাশও নির্দেশ করে।


চিত্ররূপময়তা কবিতাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। যেন কবিতা মাত্রই রঙ-বেরঙের শব্দের হোলিখেলা।

উদাহরণঃ
সময় নদীতে জীবনের গান
নৌকার মতোই বহমান।

অথবা,

তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

এখানে শব্দের সাহায্যে কবি গ্রামের সুনিপুণ ছবি এঁকেছেন। কিংবা, প্রথম উদাহরণটাতে সময় ও জীবন নদীতে একাকার।


লেখার স্বাভাবিক গতিশীলতা পাঠককে প্রশান্তি দেয়। সাথে চমৎকার গঠনশৈলীর বাক্য থাকলে সোনায় সোহাগা। পাঠক লুফে নেবে। সাথে স্পেসিংও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বড়ো লেখার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ অনুচ্ছেদ করে লিখলে ভালো হয়। অপেক্ষাকৃত সরল বাক্য ব্যবহার করা উত্তম। এতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।


চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×