১৯৭১ সালে আপনার মতো লোকজন পাকী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন, একেবারে সাধারণ বাংগালীরা আক্রমনের মুখে ৯ মাস অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন জাতির পক্ষে; এতে আপনি যদি গর্ব অনুভব করেন, নিজ জাতির বিজয় যদি আপনাকে উৎফুল্ল করে থাকে, আপনাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক প্ল্যান করে, অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ২৫ শে মার্চ রাতে বাংগালীদের আক্রমণ করেছিলো; আক্রমনের প্ল্যানের মাঝে ছিলো শেখ মুজিবকে জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, রাস্তায় আন্দোলনরত প্রচুর মানুষকে হত্যা করে ত্রাসের সৃষ্টি করবে, ঢাকা ইউনিভার্সিটির হলগুলো আক্রমণ করে ছাত্র হত্যা করা হবে; ইপিআর, বেংগল রেজিমেন্ট, পুলিশ ও আনসার বানিনীকে নিরস্ত্র করে নিস্ক্রিয় করে দেবে; পুরোদেশ মিলিটারীর অধীনে চলে আসবে, নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে; মানুষ ভয়ে থেমে যাবে; প্রথম ঝটিকা আক্রমনে অসহযোগ আন্দোলন থেমে গেলে, পরে চিহ্নিতদের পাকড়াও করা হবে, এটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিজয়ের প্ল্যান ছিলো।
শুরুতে, প্ল্যানটা আংশিকভাবে কাজ করেছে: শেখ সাহেবকে ধরে নিয়ে গেছে; কিন্তু তাজুদ্দিন সাহেবসহ বেশীর ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা পালিয়ে যান। পাকী বাহিনী ঢাকার সব অংশ দখল করে নিয়েছিল সহজে , যাঁকে পেয়েছে, তাঁকে হত্যা করেছে; কিন্তু পুলিশ লাইন ৫/৬ ঘন্টা যুদ্ধ করেছে, বেংগল রেজিমেন্টের অনেক সৈন্য প্রাণ হারালেও, একাংশ হালকা অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে; ইপিআর'গণ উল্টো অনেক পাকিস্তানী সহকর্মীকে আটকায়ে নিজেরা মোটামুটি বিজয়ী হয়েছে; চট্রগ্রাম শহরে, সাধারণ মানুষ পাকিস্তানী বাহিনীকে ক্যান্টনমেন্ট ও বন্দরে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিলেন।
প্রথমে, ইপিআর ও বেংগল রেজিমেন্ট চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে পাকী বাহিননীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়; এই যুদ্ধ সংগঘঠিত হয় ১৯৭১ সালের ২৭ শে মার্চ; সেদিন পাকী বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের সাময়িক বিজয়ের অবসান হয়ে গেছে; ইহা যু্দ্ধের শুরু মাত্র, এবং এতে বাংগালীরা জয়ী হবে।
তাজুদ্দিন সাহেব এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের পক্ষে সরকার গঠন করেন, ও ইন্দিরা গান্ধীর সাহায্য নিয়ে কলিকাতায় অস্হায়ী কার্যালয় থেকে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার কাজ শুরু করেন।
বাংলাদেশ সরকার পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ শুরু করেন; ৯ মাসে ১ লাখের বেশী সাধারণ মানুষ গড়ে ১ মাসের ট্রেনিং নিয়ে গেরিলা ও সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন; যোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত হন। পুরো যুদ্ধে ২২ হাজার যোদ্ধা প্রাণ দেন জাতির জন্য; '৭১ সালের ১৬ই মার্চ পাকী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এই যুদ্ধের শেষ হয়; বাংগালী জাতির সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করে বিজয়ী হলেন; এতে আপনি কি গর্ব অনুভব করেন, এই বিজয় কি আপনাকে উৎফুল্ল করে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৩৫