somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আশপাশের মমতাময়ীরা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইএসসি ১ম পার্ট ফাইনাল শেষ করে, শহর থেকে বাড়ী এলাম সন্ধ্যার দিকে; ফেরার পথে খামারে থেমেছিলাম বুড়োমিয়াকে দেখতে। উনাকে জানালাম, কলেজ ১ মাসের ছুটি দিয়েছে; উনি কাপড় গোছাতে লেগে গেলেন, এখুনি নিজের পরিবারকে দেখতে যাবেন। বুড়োমিয়া চলে গেলেন; এখন থেকে আগামী ১ মাস খামারের সব দায়িত্ব আমার উপর; বৈশাখ মাস, খামারের রজনীগুলো ভয়ানক সুন্দর: তিনদিকে মাঠ, বাতাস বইছে, গভীর রাতে শিয়ালের দল মাঠে শামুক খোঁজে, সোস্যালাইজিং করে; রাতের পাখীরা বের হয়।

পরদিন খুব ভোরে বাড়ী গিয়ে নাস্তা করে খামারে এসে গরু, ছাগলগুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে, পুকুর পাড়ে বসে নজর রাখলাম; ৩টা বলদ খুবই শক্তিশালী, মাঠের অন্য গরুগুলোকে আক্রমণ করে, এগুলোকে চোখে চোখে রাখতে হয়; যাক, আজকে মাঠের এইদিকে কারো গরু আসেনি, ঘাষও প্রচুর। বেলা ১১টার দিকে প্রচন্ড গরমের কারনে গরুগুলো নিজের থেকেই ঘরে ফিরলো, ভালো! আমি পানি খাওয়ায়ে, গামলায় ঘাস দিয়ে ঘরে ঢুকলাম; প্রচন্ড রোদ, অনেক গরম; দুপুরের খাবার খেতে যাবার দরকার; কিন্তু এই রোদে বের হতে ইচ্ছে হলো না। জানালর দিকে মাথা রেখে, চৌকিতে শুয়ে দৈনিক আজাদী পড়ছি; কখন চোখ লেগে এসেছিলো কে জানে! কার পায়ের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো! কে যেন জানালার এপাশ থেকে আস্তে ওপাশে চলে গেলো, পত্রিকার উপর ছায়ার মতো পড়লো!
-বাহিরে কে?
-আমি!
-ভেতরে আয় ছেমনা।

ছেমনা, আমাদের বাড়ীর উত্তর পাশের ২য় বাড়ীর বদি ভাইয়ের মেয়ে; বয়স ১২/১৩ হবে, বয়সের তুলনায় একটু লম্বা গঠনের, বাবাও লম্বাটে; মায়ের মতো সুন্দরী; আমি স্কুলে থাকতে খামারে আমার জন্য খাবার আনতো সব সময়; কাজটা সে নিজের থেকেই নিয়েছিলো; মাকে এটা সেটায় সাহায্য করতো, আর আমার জন্য খাবার আনতো। গত ১ বছর আমি কলেজে, বাড়ী এলে ব্যস্ত, খামারে গেলেও ছেমনার সাথে আমার সময়ে মিলে না।

-কিরে ছেমনা, কেমন আছিস, অনেকদিন তোকে দেখি না!
-এখন বের হই না; মা বলেছে, আমি বড় হয়ে গেছি!
-তাই? তুই অবশ্য অনেক লম্বা হয়ে গেছিস!
-আর কিছু না?
-তোকে অনেক সুন্দর লাগছে!

-মাঠ থেকে ছাগল নিতে এসেছিলাম, দেখি তুমি খামারে। তোমাকে দেখতে এলাম; তুমি খেয়েছ?
-না, এই গরমে যেতে চাচ্ছি না।
-বরাবরের মতোই অলস তুমি; আমি নিয়ে আসবো!
-এখন থাক, এই রোদে খাবার আনার দরকার নেই, তুই অসুস্হ হয়ে যাবি।
-আসার সময় দেখলাম, পুকুরের উত্তর পাড়ে ২ গাছে কলা পেকে আছে, পাখী অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছে। দা আছে ঘরে?
-বুড়োমিয়ার ঘরে দেখ।

ছেমনা হাতে দা নিয়ে কলা কেটে আনতে চলে গেলো; পুকুরের উত্তর পাড়টায় দুনিয়ার সাপের বাসা। আমি দৌড় দিয়ে বের হলাম; সে প্রায় উত্তর পাড়ের কাছে; আমি চীৎকার দিয়ে বললাম,
-ছেমনা থাম, আমি আসছি; ওখানে অনেক সাপ।

আমি লাঠি হাতে প্রথমে পাড়ে উঠলাম; কলা অনেক আগেই পেকেছে, বুড়োমিয়া টের পায়নি; ২ জনে মিলে ২ ছড়া কলা ঘরে আনলাম।
দু'জনে বসে খাচ্ছি; আমি ২/৩টা খাাওয়ার সময়, ছেমনা ৪/৫টা খেয়ে ফেললো।
-কিরে, তুই এত কলা কিভাবে খাচ্ছিস? পেটে ব্যথা করবে।
-আমি সকাল থেকে কিছু খাইনি; আসলে, কাল রাতেও খাইনি।
-ঘরে কিছু নেই?
-না, আব্বার অসুখ আজ ৪/৫ দিন, কাজকর্ম নেই।
-আমাদের ঘরে যাস নাই কেন?
-এখন শরম লাগে, বড় হয়ে গেছি।
-তুই আবার কিসের বড় হলি! ছাতা নিয়ে যা, খাবার নিয়ে আয়; মাকে বলিস মেহমান আছে ১ জন।

ছেমনা ২ জনের খাবার এনেছে; আমার ক্ষুধা নেই, কলা খেয়ে ক্ষুধা চলে গেছে। ছেমনা বললো,
-তোমার মেহমান কই?
-মেহমান তুই!
ছেমনা অদ্ভুত করে হাসলো।
-তুই খেয়ে নেয়, বাকীটুকু তোর বাবার জন্য নিয়ে যা; কলা খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে, কলাও নিয়ে যা।
-আমিও খেতে পারবো না; কলা বেশী খাওয়াতে পেট ভারী লাগছে; সবটুকু নিয়ে যাই, আব্বা ও আম্মা খাবে।
-বেলা ডুবার আগে আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসিস; মাকে বলিস, মেহমান থাকবে একজন।


-
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:০৬
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×