সত্য কি মিথ্যা, জানা খুবই কঠিন, ২০০৮ সালে সামরিক সরকার নাকি বেগম জিয়াকে চাপ দিচ্ছিল দেশ ছেড়ে চলে যাবার জন্য; তাঁর শিষ্যদের কথানুযায়ী, তিনি হলেন, 'আপোষহীন নেত্রী', তিনি মিলিটারীর সাথে আপোষ করেনি, দেশ ছেড়ে যাননি; এখন তিনি চলে যেতে চাচ্ছেন; আগামী কয়েকদিনের ভেতর উনার চলে যাবার সম্ভাবনা আছে; মনে হয়, এখানেই বেগম জিয়ার অধ্যায়টা শেষ হবে।
১৯৭১ সাল থেকেই বেগম জিয়ার ভুমিকাটা জাতির পক্ষে ছিলো বলে মনে হয় না; স্বামী যখন মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন, তখন তিনি বাংগালীদের চেয়ে পাকীদেরকে শক্তিশালী ( হয়তো, পাকীদের প্রচারনায় বিভ্রান্ত হয়ে! ) হিসেবে ধরে নিয়ে, সেই পক্ষকেই সাপোর্ট করেছেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাতে তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, দেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের সুগঠিত,শক্তিশালী বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পেরে উঠবে না।
জেনারেল জিয়া হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি যে, তার অনুপস্হিতে বেগম জিয়াকে একদিন বাংলাদেশের ও উনার দলের সর্বোচ্চ পদে থাকতে হবে। তবে, জেনারেল জিয়া জেনে, কিংবা না জেনে সেই পথ রচনা করে গিয়েছিলেন। জেলারেল জিয়া সামরিক শাসনকর্তা থেকে যেদিন দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে নেমেছিলেন, সেদিনই হয়তো উনি নিজের মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্হা করে গিয়েছিলেন; উনার মৃত্যু ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জেনারেলের মৃত্যুর পরে, উনার দলে যেসব লোকজন ছিলেন, তারা বেগম জিয়াকে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কিংবা দেশের প্রাইম মিনিষ্টার বানানোর পক্ষে থাকার কথা নয়; তারপরও, বেগম জিয়া কি করে এই ২ সর্বোচ্চ পদে চলে গেলেন? কোন শক্তি উনাকে এসব পদে সমাসীন করেছিলো? সেটার উত্তর হলো, মিলিটারী।
জেনারেল জিয়া যেই পরিমাণ সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন, তাতে বেগম জিয়া সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারতেন; এরপর, জেনারেল এরশাদ বেগম জিয়াকে জাতির সম্পদ থেকে ২ টি বাড়ী, ততকালীন সময়ে ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোসিট, গাড়ী, ছেলেদের পড়ালেখার খরচ, চাকর বাকর, ইত্যাদি দেন। এগুলোর আয় দিয়ে তিনি ততকালীন সময়ে খুবই বিলাসবহুল জীবনের মালিক হতে পারতেন; ছেলে ২টিকে পড়ালেখা করায়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারতেন।
তিনি রাজনীতিতে আসায় উনার ২ ছেলের লেখাপড়া হয়নি ঠিক মতো, ২টি ছেলেই ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে, দুনিয়ার যতসব মাফিয়ার মতো দখলদারীর ব্যবসায় জড়িয়ে যায়; উনার ভাইয়েরা, বোনেরা সবাই সব যায়গায় অন্যায়ভাবে ক্ষমতার ব্যবহার করে ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে নেয়।
উনার সাধারণ জ্ঞানের অভাবের সুযোগ নিয়ে ব্যুরোক্রেটরা দেশকে মগের মুল্লুক করে তোলে। উনার বড় ছেলে রাজনীতির নামে দলের তরুণদের নিয়ে "হাওয়াভবন" নামে রাজনৈতিক অফিস খোলে, দেশে আরেকটি প্যারালাল সরকার চালাতে থাকে। হাওয়াভবনে দলের ৪০/৫০ জন তরুণ সদস্য পুরোপুরি মাফিয়া ব্যবসা শুরু করেছিলো: এরা সরকারী খাস জমি, ঢাকার নবাবদের জমি, ব্যাংকলোন, কারেন্সী ব্যবসা, আমদানী রপ্তানী, সরকারের টেন্ডার সব দখল করে নেয়। উনার বড় ছেলে মিলিটারীতে প্রমোশন ইত্যাদিতেও জড়িত হয়ে যায়। উনার বড় ছেলে বিদেশ ভ্রমণে যাবার সময় সেনাবাহিনীর এক জেনারেলকে সাথে নিয়ে যেতো।
উনার ২য় টার্ম'এর পর, দেশের ভয়ংকর অবস্হায় মিলিটারী আবার দেশের ক্ষমতা দখল করে নেয়; উনারই নিযুক্ত সেনাপ্রধান উনাকে এক সময় গ্রেফতার করে জেলে আটকায়ে রাখে, এই ছিলো উনার রাজনীতির চরম ফল। উনি ক্ষমতায় থাকার সময় দেশে জামাতের চরমপন্হিদের একটা গ্রুপ (বাংলা ভাই ) সাধারণ মানুষকে হত্যার শুরু করে, সেই গ্রুপের সাথে উনার ছেলের ঘনিষ্টতা ছিলো; সেই রকম আরেক গ্রুপ শেখ হাসিনাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালায় বারবার। মিলিটারী ক্ষমতা নেয়ার পেছনে এগুলো কাজ করেছিলো; মিলিটারী নাকি উনাকে দেশ ত্যাগ করতে বলেছিলো, উনি দেশ ত্যাগ করেননি তখন, এখন মনে হয় উনি দেশ ত্যাগ করছেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:৪৯