এই লেখায় ঈশানের আসবার কথা ছিলো না। কথা ছিলো আমাদের মতোই ঘরে বসে সে নববর্ষে উদযাপন করবে, বুয়েটের স্যারদের মতই তারও পরিবার আছে।
বন্ধুমহলে পরিচিত মুখ ঈশানের কৃতিত্ব কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়া তৌসিফ আহমেদ ঈশান একজন
সৃজনশীল প্রোগ্রামারও বটে।
বুয়েটের শেষবর্ষের বিদায়ী ব্যাচের ঐতিহ্য জাঁকজমক করে র্যাগ উৎসব করা। সে লক্ষ্যেই বর্তমান বিদায়ী ব্যাচ (ক্যানভাস’২০০৬) আয়োজন করেছিলো তাদের চারদিন ব্যাপী র্যাসগ উৎসব। প্রথম রাতে ছিলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দ্বিতীয় রাতের কনসার্টে আসার কথা গায়ক জেমসের, তৃতীয় রাতে আরেকটি কনসার্টে আসবে ব্যান্ডদল মাইলস্ আর শেষ রাতটা গ্রাজুয়েশন নাইট।
২৭ তারিখের সন্ধ্যা ভালোয় ভালোয় পেরিয়ে গেলেও গোলযোগের শুরু হলো ২৮ তারিখের জেমসের কনসার্টের রাতে।যারা বুয়েটের কনসার্টে গেছেন, তারা জানেন ক্যাফেটরিয়ার সামনের প্রাঙ্গনটার চারপাশে বাঁশ ফেলে সাময়িক একটা ফেন্স তৈরী করা হয়। এই ফেন্সের ভেতরে থাকেন বিদায়ী ব্যাচের বুয়েটিয়ানেরা। ফাঁক গলে অবশ্য মাঝেমাঝেই ঢুঁকে পড়ার চেষ্টা করে জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরা
২৮ তারিখের রাতের কনসার্টে এই ফেন্সের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়েছিলো আমাদের বন্ধু ঈশান। সদা হাস্যমুখী এই ছেলেটা কখনো কোনো রাজনৈতিক কাজে জড়িত না থাকলেও বন্ধুদের সাহায্য করতে সে সবসময়ই ইচ্ছুক থাকে। গোলমাল বাঁধলো তখন, যখন ০৮’ ব্যাচের (দুই বছরের জুনিয়র) এমএমই বিভাগের ছাত্র সুজিত সাহা জোর করে এই ফেন্সের ভেতরে ঢুঁকতে চায়। ফেন্সের প্রবেশমুখে থাকা ঈশান আর সৌমিক তাকে ভেতরে ঢুঁকতে বাঁধা দিলে সুজিত সাহা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে। বাজে ভাষায় গালিগালাজের পর সুজিত সাহা জোরগলায় জানায়- তার নাম সুজিত সাহা, তাকে কেউ দেখে নিতে চাইলে সে নজরুল ইসলাম হলে আসতে পারে।কনসার্টের শেষে রাত ২টার দিকে বিদায়ী ব্যাচের আয়োজকেরা এই বিষয়ে নজরুল ইসলাম হলে গেলে সেখানে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সুজিত সাহা ০৬’ ব্যাচের নাহিয়ান নাসিরের বুকে লাথি মেরে বসে। ঘন্টাতিনেক বাদানুবাদের শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে এই বিতন্ডা থামে। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি যে র্যা গ উৎসবের জন্যে নেয়া হয়েছিলো, সেটি সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের স্বার্থে বিদায়ী ব্যাচের আয়োজকেরাও এই ঘটনার এখানেই শেষ বলে মেনে নেয়।
২৯ তারিখের কনসার্ট আর ৩০ তারিখের রাতজুড়ে চলা গ্রাজুয়েশন নাইটের সমস্ত উৎসব পরিকল্পনা অনুসারেই হয়। র্যা গ উৎসব শেষে আজ ভোরে চোখে কান্না নিয়ে ঘুমোতে যায় ০৬’ব্যাচের ছাত্ররা।অথচ আজ বেলা বারোটার দিকে নজরুল ইসলাম হলনিবাসী ০৬’ব্যাচের ছেলেদে( এই অংশটা সঠিক নয়- কপি করা তাই হুবুহু দিলেম বটে, ০৬ এর কয়েকজনের উপর আক্রমণ হয়) উপরে হামলা করে এই রাজনৈতিক জোর খাটানো ছাত্রলীগ কর্মী। কোন রাজনৈতিক কারণ ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশ নিয়ে নজরুলের ০৬’ ব্যাচের ছেলেদের থাকবার রুমগুলোতে খোঁজ করতে থাকে। চারতলায় কাউকে না পেয়ে সুজিত সাহা, সাইফুল্লাহ শিকদার মিথুন (০৮’ ব্যাচ, পুরকৌশল বিভাগ) আর আরিফ রায়হান দিপ (০৯’ ব্যাচ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ) নেমে আসতে থাকে নিচে। দোতলায় এক কক্ষে তারা খুঁজে পায় ঈশানকে। দুর্ভাগ্য ঈশানের, হলনিবাসী না হলেও এই গ্রাজুয়েশন নাইটের শেষে ঘুমাতে এসেছিলো সে এই নজরুল ইসলামের হলের এক বন্ধুর কক্ষে। বেসবল ব্যাট, হকিস্টিক আর লোহার রড নিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পেটাতে থাকে এই তিনজন। ঈশানের চীৎকার শুনে বেরিয়ে আসে ০৭’ ব্যাচের এক জুনিয়র। ঝুঁকে পরে সে ঈশানকে রক্ষা করে। ০৮’ ব্যাচের সিনিয়র বলে তার অনুরোধে ঈশানকে মার দেয়া বন্ধ করে এই ছেলেরা। ০৭’ব্যাচের ছেলেটি ০৬’ব্যাচের আরেক বড়ভাইকে রক্ষার্থে তার নিজের রুমে আটকে রাখে।এরপরেই ঈশানের বন্ধুদের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। ইতিমধ্যে তার দুই পা’ই সম্পূর্ণ থেতলে দেয়া হয়েছে, হাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আগামীকাল তার অপারেশন।বিকেল থেকে বুয়েটের এম এ রশীদ ভবন- চলতি কথায় রেজিস্টার বিল্ডিং- এর সামনে এই ঘটনায় জড়িত দোষীদের তাৎক্ষণিক বহিষ্কার চেয়ে ভীড় জমাতে থাকে সাধারণ ছাত্ররা। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না কেউই রশীদ ভবনের দোতালা যতদূর দৃষ্টি যায় করিডোর আর সিঁড়ির রাস্তায় বসে আছে বুয়েটের অসংখ্য সাধারণ ছেলেমেয়ে। তারা শাস্তি চায় অপরাধীদের, তারা ঈশানের উপর এই মধ্যযুগীয় হামলার বিচার চায়।প্রো-ভিসি হাবিবুর রহমানের কক্ষের সামনে ভীড় করে আছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। অথচ অপ্রয়োজনে আইনের বিভিন্ন ফাঁক দেখিয়ে কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রথমে বলা হয়েছে মিটমাটের কথা, এরপর বলা হয়েছে এক টার্মের বহিষ্কার (এই আদেশ আবার অফিসিয়াল নোটপ্যাডে নয়- সাধারণ কাগজে এসেছে।)চাওয়া হচ্ছে চাক্ষুষ সাক্ষ্য, বলা হচ্ছে তারা ‘দেখবেন’ বিষয়টি। অথচ বুয়েটের ছাত্ররা জানে এই দেখা কখনোই শেষ হয় না। নিকট অতীতেও আহসানউল্লাহ হলে ঘটে যাওয়া ‘রাজনৈতিক ঘটনাবলী’ দেখতে চেয়ে হল খালি করে দেয়া হয়েছিলো। কাটানো হয়েছিলো সময়, স্তিমিত করা হয়েছিলো আন্দোলন।বুয়েটের সাধারণ ছাত্ররা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে প্রতিকারের জন্যে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, অফিসিয়াল কাগজে নোটিশ এসেছে আজীবন বহিষ্কারাদেশের কথা- তবে রেখে দেয়া হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি- তদন্ত সাপেক্ষে !! বুয়েটের ছাত্ররা এখনো অবরোধ করে রেখেছে প্রো-ভিসির কক্ষ। তাদের দাবি অনুযায়ী চিরকালীন বহিষ্কার করা হোক দোষীদের।বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে এই বিষয়ে আসছে অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক খবর। বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন গোলমালে একজন আহত হয়েছে। আপনাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ, এই ভুল খবরটি ছড়াবেন না বা প্রচার করবেন না। ঈশান আমাদের মতো সাধারণ এক বুয়েটিয়ান। কখনই তার কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো না।
সংযুক্তিঃ Click This Link
এই ফেসবুক পেজে গেলে জানা যাবে ঘটনার সর্বশেষ আপডেট।
লেখাটি মৌলিক নয়। তবু শেয়ার না করে পারলাম না। যদি ২/১ জন পড়ে এই আশায়।
এখান থেকে কপিডঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42635
এদেরকে চিনে রাখুন সুজিত সাহা(০৮)
এদেরকে চিনে রাখুন সাইফুল্লাহ মিথুন(০৮)
এদেরকে চিনে রাখুন আরিফ রাইহান দিপ(০৯)
এদের মদদ দিয়েছে নাকি ০৭ ব্যাচের লিমন, এ সম্ভবত কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের কোন একটা পদে আছে। এছাড়া পলাশ (০৬) ব্যাচের হলেও সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়ার চেষ্টা করছে। এরা বুয়েটের আগের অপকর্ম গুলোর সাথে জড়িত।
এদের ছবিও আছে চাইলে দেয়া হবে। কিন্তু আমার ব্লগ কি কেউ পড়োবে???
প্লিজ ফেবুতে দিন !!!