23. বিনা শুল্কে ভারতকে ট্রানজিট:
ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট দেওয়ার আগে বলা হচ্ছিল যে, ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে বিপুলভাবে লাভবান হবে। কিন্তু এখন ট্রানজিট চালু করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কোনো শুল্ক ছাড়াই ট্রান্সশিপমেন্ট হচ্ছে। ভারত তো রয়েছেই, বাংলাদেশ সরকার নিজেও নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনভাবে ফাঁকফোকর রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে যাতে বাংলাদেশ কোনো দিনই লাভবান হতে পারবে না। বরং ক্ষতির ভাগটিই বেশি হবে। ট্রানজিট পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও এখানে জড়িত। শেষাবধি ট্রানজিট দেশের জন্য লাভজনক হওয়ার বদলে মস্ত বড় এক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘‘ট্রানজিট হলো বাংলাদেশের আয়-রোজগারের একটা মাধ্যম। ফলে ট্রানজিট ফি কোনোভাবেই মওকুফ করা হবে না।’’ কিন্তু তার এই মন্তব্য এখন আর ঠিক থাকছে না। ট্রানজিট ফি ইতোমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে।
24.ফ্রি ট্রানজিটের নেপথ্যে :
ভারতকে ফ্রি ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। ভারতের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো ট্যারিফ, ফি, ট্যাক্স ও চার্জ ছাড়াই ট্রানজিট চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানায়। এ বিষয়ে ড. মশিউর রহমান বলেন, আমরা ট্রানজিট দেয়ার বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে কোনো ফি দাবি করতে পারি না। কারণ, আমরা এখন বিশ্বের সিভিলাইজড দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানা যায়, ট্রানজিট চুক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি ভঙ্গ করে কোনো শুল্ক, ফি, ট্যাক্স ও চার্জ গ্রহণের ব্যবস্থা না রেখে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার ব্যাপারে একক তত্পরতা চালান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনি ভারতকে সম্পূর্ণ ফ্রি ট্রানজিট দেয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা চুক্তির খসড়ায় ইতিবাচক মতামত দিতে আইন মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করেন। ফ্রি ট্রানজিট দিলে সেটা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হবে বলে উল্লেখ করে ভেটিং শেষে আইন মন্ত্রণালয় আপত্তিসহ দুই দফা ফাইল ফেরত পাঠানোর পর ড. মশিউর নিজেই পর্যবেক্ষণসহ ভেটিংয়ের সারসংক্ষেপ লিখে পাঠান। তার দেয়া এ মতামত অনুযায়ী চুক্তির খসড়ায় আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিতে আইন মন্ত্রণালয়কে তিনি নির্দেশনা পাঠান। আইন মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত ড. মশিউর রহমানের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ভারতকে ফ্রি ট্রানজিট দেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেন। তবে ট্রানজিট চুক্তিতে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং বাংলাদেশের লাভালাভের বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে পরামর্শ দেয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের ১৪০৪/১০নং ইউও’তে বলা হয়েছে, ‘বিবেচ্য বিষয়টি হচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নির্মিতব্য পালাটানা বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য ভারী যন্ত্রাংশ (ওডিসিএস) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে সড়কপথে আখাউড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত পরিবহনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত খসড়া চুক্তির পুনঃভেটিং প্রসঙ্গে। ভেটিংয়ের নোটানুচ্ছেদ ৯৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নথি পর্যালোচনাক্রমে দেখা যায় যে, এ খসড়া চুক্তিটির বিষয়ে ইতিপূর্বে কতিপয় মতামতসাপেক্ষে নিরীক্ষা (ভেটিং) করে দেয়া হয়েছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তা পুনঃভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে। নোটানুচ্ছেদ ৯৯-তে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান খসড়া চুক্তির বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ওপরে তার ব্যক্তিগত মতামত (অবজারভেশন) দিয়েছেন। ভেটিংয়ের বিষয়ে তিনি চারটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি ভারতীয় প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রস্তাবিত খসড়ার ওপর আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের নোটানুচ্ছেদ ১০০-তে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টার লিখিত নির্দেশনাসমূহ এবং তার আদেশের প্রেক্ষিতে ডিউটি, ফি, ট্যাক্সেস ও চার্জ প্রদান না করার বিষয়গুলো সংযোজন করা হয়েছে। এ বিষয়টি আবারও পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয় তার মতামতে উল্লেখ করেছে, খসড়া চুক্তির ২.৯ অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারী যন্ত্রাংশের পুনঃরফতানির ক্ষেত্রে ডিউটি, ফি, ট্যাক্সেস ও চার্জ প্রদান না করা এবং ৩.৪ অনুচ্ছেদের আওতায় ভারী যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে ডিউটি, ফি, ট্যাক্সেস ও চার্জ প্রদান না করার উদ্দেশ্যে আরও একটি বিধান সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধান সংযোজন করা হলে সেটা হবে ট্রানশিপমেন্ট ও ট্রানজিট পণ্যের কাস্টমস ব্যবস্থাপনা বিধিমালাপরিপন্থী। কেননা, বিধান অনুযায়ী কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে পরিবহন করা সব পণ্যের ওপর ফি আদায় করতে হবে।
25. ট্রানজিট বিষয়ে আগে কে কি বলেছিলেন :
১৮ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দেওয়া হলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।’’ অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।’’ ট্রানজিটের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ১২ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে না দিলে, ট্রানজিট না দিলে, বাংলাদেশের উন্নতি হবে না।’’ ট্রানজিট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, ‘‘বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দিলে তার বিনিময়ে ট্যারিফ বাবদ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা পাবে। মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে হবে।’’ রিসার্চ ফর ডায়ালগ নামের একটি সংস্থা বলেছিল, ‘‘ভারতকে চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে।’’
ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তিকে অর্থনীতির জন্য সহায়ক, অর্থবহ, গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর হিসেবে অভিহিত করে ১১ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেছিলেন, ‘‘ঋণের অর্থ দিয়ে দেশের সড়ক, রেল, বন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, যা পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে। পণ্য পরিবহনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ট্রানজিট দিলে বছরে বাংলাদেশ আয় করবে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা।’’
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘‘ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে দেশের ক্ষতি হবে বলে যে প্রচারণা চলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।’’ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলোকে ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যেমনি অথনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারি, তেমনি সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’’ ডা. দীপু মনি দাবি করেন, ‘‘১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর ভুল নীতির কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়নি।’’ এদিকে ভারতকে করিডোর দেওয়ার জন্য এডিবির পরামর্শের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হলো ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে লাভবান হওয়া।’’ ৬ জুলাই ২০০৯ বাংলাদেশ সফররত এডিবি মহাপরিচালক কুনিও সেঙ্গা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভারতকে করিডোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এডিবির মহাপরিচালক বলেছেন, ‘‘ভারতকে করিডোর দিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’’ এর আগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে ট্রানজিট প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে।’’ বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ভারতকে করিডোর এবং ট্রানজিট প্রদান বিষয়ে বরাবরই অতি আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক ট্রানজিট সড়ক নির্মাণের জন্য ৮০ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে।
শেষ কথা : ট্রানজিট বাস্তবায়নের বিষয়ে ঝড়ের গতিতে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সব মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার জন্যে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে কর্মকর্তা নিযুক্তি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। ট্রানজিট বাস্তবায়নে অবকাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশের নৌপথ খনন করে নাব্যতা বাড়ানো, সড়কপথ মেরামত এবং রেলপথ উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার একটি চুক্তি করে গেছেন। এই ঋণের অর্থ ট্রানজিট বাস্তবায়নেই ব্যয় হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছয়শ’ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় ঋণের অর্থে ভারত থেকেই আনতে হবে নদী খননের ড্রেজার, ট্রেনের লোকোমোটিভ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ফিরতি সফরে শিগগিরই বাংলাদেশে আসবেন। ফলে ট্রানজিট চালুর কাজে গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৩ জুন ২০১১ গওহর রিজভীও ভারতকে ট্রানজিট দিতে আর কালক্ষেপণ না করার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি এগিয়ে যাব। ট্রানজিট নিয়ে সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিলে চলবে না। সংকীর্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখলে চলবে না।’ তিনি বলেন, কোনো একটা দেশের স্বার্থ চিন্তা করে ট্রানজিট দেওয়া হবে না। এটি একটি ভিশন। দীর্ঘ ৪০ বছর আমরা অপেক্ষা করেছি। পিছিয়ে পড়েছি অগ্রসরমান পৃথিবী থেকে। তাই আর নয়।
27. বিশেষজ্ঞদের মতামত:
তেমন আর্থিক লাভ হবে না: মুরশিদ
তবে ট্রানজিট থেকে লাভবান হওয়ার ‘বড় বড় অঙ্ক আকাশে ওড়ালে বিভ্রান্তি ছড়াবে’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কে এ এস মুরশিদ। তাঁর মতে, বাস্তবতার আলোকেই ট্রানজিট থেকে আর্থিকভাবে তেমন একটা লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ এখন নেই। তিনি বলেন, ট্রানজিট দিয়ে কোটি কোটি ডলার পাওয়ার যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। বরং এসব লাভের অঙ্কের ফানুস ওড়ালে জনমনে বিভ্রান্তি বাড়বে। নিজ গবেষণা থেকে উদ্ধৃত করে মুরশিদ বলেন, ট্রানজিট-সুবিধা থেকে কিছুটা লাভ পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে তা যদি রেলপথে সম্পন্ন করা হয়, তা হলেই। কেননা, রেলপথ নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী। এতে দেশের রেল অবকাঠামোও শক্তিশালী করা যাবে। এ জন্য অবশ্য বিনিয়োগ ও কিছুটা সময় লাগবে।
অন্যদিকে সড়কপথে এখন ট্রানজিট দেওয়ার মতো অবস্থায় বাংলাদেশ নেই বলে মন্তব্য করেন মুরশিদ। তিনি বলেন, সড়ক অবকাঠামোর যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাই আপাতত সড়কপথে ট্রানজিট বাস্তবায়নযোগ্য হবে না।
বিআইডিএসের এই গবেষক আরও বলেন, ট্রানজিটের লাভালাভের ক্ষেত্রে এর বাজারের দিকটিও বোঝা দরকার। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর পণ্য বহন মূলত রেলপথনির্ভর ও আসামকেন্দ্রিক। রেলপথে বছরে এই রাজ্যগুলোতে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে যে পরিমাণ পণ্য আসা-যাওয়া করে, এর সিংহভাগই সম্পন্ন হয় আসামের সঙ্গে। আর তাই আসামকেন্দ্রিক পণ্য-বাণিজ্যের কতটা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সম্পন্ন হতে পারে, এর ওপর ট্রানজিটের লাভ বহুলাংশে নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন।
কে এ এস মুরশিদ বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরা ছাড়া অন্য কোনো রাজ্য, বিশেষত আসাম বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট-সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহী নয়। আর রাজনৈতিক কারণেও আসামকেন্দ্রিক বাণিজ্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বড় ধরনের ভর্তুকি পেয়ে থাকে। সুতরাং, আসাম থেকে বর্তমান বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে ধাবিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মুরশিদ আরও বলেন, ট্রানজিট থেকে বড় অঙ্কের লাভ তুলতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে। কাজেই তড়িঘড়ি না করে সতর্কভাবে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।
ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান
তবে কে এ এস মুরশিদের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিমত পোষণ করেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিলে অর্থনৈতিকভাবে অবশ্যই লাভবান হওয়া যাবে। শতভাগ লাভবান হওয়া যাবে। এ জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে আগামী তিন-চার বছরে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
মুজিবর রহমান আরও বলেন, যেহেতু পদ্মা বা যমুনার ওপর পরিপূর্ণ রেলসেতু নেই, তাই পদ্মা সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত রেলপথে ট্রানজিট দেওয়া যাচ্ছে না। সীমিত আকারে কেবল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তর-পূর্ব রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম ও আসামের সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এ জন্য অন্তত বছর দেড়েক সময় লাগবে।
ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ট্রানজিট বাণিজ্যের ব্যাপার। রাজনীতির ব্যাপার নয়। তাই ট্রানজিটের জন্য আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই, বসে থাকা উচিত হবে না।’
ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া আত্মঘাতী হতে পারে: দেবপ্রিয়
বাংলাদেশ অবকাঠামোগত ভাবে ট্রানজিট দেওয়ার জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। এই মুহূর্তে ট্রানজিট দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাই ভারতের সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষি না করে ট্রানজিট দেওয়া অবিবেচকের কাজ হবে।
২৩ জুন ২০১১ বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) উদ্যোগে ‘রিজিওনাল কানেকটিভিটি এন্ড ট্রানজিট’ শীর্ষক সেমিনারের মূল আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। পিআইবি মিলনায়তনে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ট্রানজিটের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক লাভের বিষয়টি আগে ভেবে দেখতে হবে। ট্রানজিট নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। সেটি না করে আগেই তাদের দেওয়া মতামত মেনে নেওয়া মোটেই বিবেচকের কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ট্রানজিটের ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে বাংলাদেশের তা বিন্দুমাত্র নেই। দেশের সাধারণ মানুষের উপকারে না এলে এই ট্রানজিট বাস্তবে কোনো কাজেই আসবে না।
তিনি বলেন, বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে টেকসই করতে হবে। তাই পাকাপাকিভাবে চুক্তির আগে একটি কাঠামোগত চুক্তি করা উচিত। যাতে এর পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে।
তিনি ডব্লিউটিও আর্টিকেল ৫ এর উল্লেখ করে বলেন, আজ ভারতকে ট্রানজিট দিলে যে সুবিধা দেওয়া হবে ভবিষ্যতে এর অধীনে মায়ানমার ও পাকিস্তানকেও সেই একই সুবিধা দিতে হবে।
তিনি বলেন, ট্রানজিটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে উপযোগী হলো রেলপথ ও নৌপথের ব্যবস্থা করা। স্থল পথ নয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে মূল আলোচনাটি হয়েছে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে।
বিষয়টি সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক। তবে যাই হোক না কেন যে দেশকেই ট্রানজিট দেওয়া হোক বাংলাদেশের স্বার্থে বিষয়টি আগে ভাবতে হবে।
28. ট্রানজিটের লাভ-ক্ষতি :
দুটি সমীক্ষা ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এই সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশ মোট ১৪টি করিডর বা পথ ব্যবহার করতে পারে। এর মধ্যে আটটি সড়ক, পাঁচটি রেল ও একটি নৌ-পথ। ইউএন-এসকাপের সাবেক পরিচালক ড. রহমতউল্লাহ এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. মুহাম্মদ ইউনুস যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের উপযোগী অবকাঠামো না থাকায় এসব করিডর বা পথকে ট্রানজিট উপযোগী করতে হবে। এজন্য আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে ৩৪৭ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার পর বছরে বাংলাদেশ ৫০ কোটি ডলার বা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে। অর্থাৎ অবকাঠামো উন্নয়নের ৫ বছর পর থেকে বছরে এই আয় আসবে। অবশ্য এর আগে শুরুতে প্রতি বছর মাসুল থেকে আয় হবে ৫ কোটি ডলার বা ৩৫০ কোটি টাকা। এডিবির হিসেব অনুসারে দীর্ঘমেয়াদে এই আয় বেড়ে দাঁড়াবে বছরে ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
ট্রানজিট সংক্রান্ত বিনিয়োগগুলো হবে মূলত পথ ও রেলের উন্নয়ন, মেরামত এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার কাজে। আর তা সম্পন্ন করতে হবে ট্রানজিট সুবিধা চালুর পাঁচ বছরের মধ্যেই। এই অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়ে গেলে তা দেশীয় পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রেও বড় রকমের সুফল মিলবে। অবকাঠামো দুর্বলতায় এখন খুব বেশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ নেই। তাই এডিবি মনে করছে, প্রথমদিকে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে বছরে মাত্র ১৮ লাখ টন পণ্যের চাপ নিতে পারবে বাংলাদেশে। পাঁচ বছরের মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টন পণ্য চলাচল সম্ভব হবে।
এডিবির সমীক্ষা অনুসারে, ১৪টি করিডরের মধ্যে ১২টি ব্যবসায়িক বিবেচনায় লাভজনক হবে। দুটি সড়ক করিডর (চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল ও মংলা-বুড়িমারি) ব্যবসায়িক বিবেচনায় সফল হবে না। বরং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক স্থানে আছে রেল ব্যবস্থায়। কলকাতা বন্দর থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরের সরু রাস্তা এবং নৌপথ দীর্ঘদিন অব্যবহƒত থাকায় রেলের সুবিধা বেশি। রেল লাইনগুলো দ্বৈত লাইনে রূপান্তর করার আগ পর্যন্ত কন্টেনার পরিবহনের জন্য মোট ১৪০টি কন্টেনার ওয়াগান (ফ্ল্যাট কার) সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে ৭০টি মিটার গেজ ও ৭০টি ব্রড গেজ। এসব কন্টেনার পরিবহনের জন্য দুটি ব্রড গেজ এবং দুটি মিটার গেজ ইঞ্জিন লাগবে। রাজধানীর কমলাপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেনার ডিপোতে (আইসিডি) মিটার ও ব্রড গেজ উভয় সুবিধা থাকায় রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না বলেও এডিবির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতীয় কাভার্ড ভ্যান বা কাভার্ড ট্রাক প্রবেশ করার পরিবর্তে যৌথ উদ্যোগে একটি মালামাল পরিবহন কোম্পানি গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছেÑ যার মালিকানায় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের যৌথ অংশীদারিত্ব থাকতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) পলিসি রিসোর্স প্রোগ্রামের (পিআরপি) আওতায় পরিচালিত ‘ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ এ্যান্ড দ্য নর্থইস্ট : ট্রানজিট এ্যান্ড ট্রান্সশিপমেন্ট-স্ট্র্যাটেজিক কনসিডারেশন’ (বিআইডিএস-পিআরপি ওয়ার্কিং পেপার-০৬) শীর্ষক একটি গবেষণায় ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ লাভ সীমিত হবে বলে দেখানো হয়েছে। বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কেএএস মুরশিদ এই গবেষণাটি করেছেন।
এডিবির সমীক্ষার সঙ্গে বিআইডিএসের সমীক্ষার যে জায়গাটিতে মিল রয়েছে, সেটি হলো রেলপথের মাধ্যমে ট্রানজিট প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া। কারণ বাংলাদেশে রেলওয়ের যে অবকাঠামো বিরাজমান তা বহুলাংশে ব্রিটিশ আমল থেকেই ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর তাই বিদ্যমান অবকাঠামোয় পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করলে এবং অবকাঠামোর সংস্কার সাধন করা হলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে, অন্যদিকে ট্রানজিটের সত্যিকারের সুফল পাওয়া যাবে।
তবে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিনিময়ে এডিবি যে বিরাট অঙ্কের লাভালাভের কথা বলছে, বিআইডিএসের গবেষণা তা পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছে না একাধিক কারণে। এডিবির সমীক্ষায় শুধু ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বহনে করার বিপরীতে বাংলাদেশ কি পরিমাণ অর্থ মাসুল হিসেবে পাবে, তাই নির্ণয় করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার রাস্তার দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটারে নেমে আসলে ভারতীয় উৎপাদকদের পণ্য বহনে খরচ কমে গিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্যকে কতটা প্রতিযোগিতার মুখে ফেলবে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রপ্তানি হ্রাস পাবে না কি বর্তমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়নি।
ভারতকে ট্রানজিট বা করিডর সুবিধা দেয়া হলে, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে যে পরিমাণ পণ্য যায় ও সেখান থেকে যে পরিমাণ পণ্য আসে, তার কতখানি বাংলাদেশের দেয়া করিডোর দিয়ে যাবে, তার ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করছে ট্রানজিট থেকে আর্থিক লাভালাভের বিষয়টি। এডিবির সমীক্ষা অনুসারে, বর্তমানে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে আসামমুখী বাণিজ্যের ৩৫% ও মেঘালয়মুখী বাণিজ্যের ৫০% বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সম্পন্ন হবে এই করিডর বা ট্রানজিট সুবিধা গ্রহণ করে। কিন্তু বিআইডিএসের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আসামের বাণিজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের ভর্তুকি পেয়ে থাকে। রাজনৈতিক কারণেই এই ভর্তুকি স্পর্শকাতর। আর তাই আসামমুখী পণ্য পরিবহন বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্তের মধ্যে সংকীর্ণ ভারতীয় ভূখ-ের শিলিগুড়ির (যা কি না ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত) ওপর দিয়েই অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আসামমুখী বাণিজ্যের জন্য গুয়াহাটি-ডাউকি /তামাবিল-পাটুরিয়া ফেরি-বেনাপোল/পেট্রাপোল-কলকাতা ও শিলচর-সুতারকান্দি-পাটুরিয়া-বেনাপোল/পেট্রাপোল-কলকাতা সড়ক পথদ্বয় এবং শিলচর-মহিশ্মশান/শাহবাজপুর-ঢাকা (ধীরাশ্রম)-দর্শনা/গেদে-কলকাতা রেলপথ ব্যবহƒত হতে পারে। তবে আসামের রাজ্য সরকার এই পথ গ্রহণে কতটা আগ্রহী হবে সেটাও বিবেচনার বিষয়। বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার যেখানে বারবারই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী, সেখানে আসামের দিক থেকে তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। আর আসামের দিক থেকে এ বিষয়ে সক্রিয়তা দেখা না গেলে আসামমুখী বাণিজ্যের কতটা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে দ্বিধা থেকেই যাচ্ছে।
চলবে....................
পূর্বের পর্ব সমূহ