somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরবে বাংগালীদের দুর্দশার কারন-৬ঃ আন্ধাকানুন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অনেকেরই মনে একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে যে , সৌদি আরবে কোরানের আইন ও রাসুল প্রদর্শিত পথ মোতাবেক দেশ পরিচালিত হয় । এ ধারনা সম্পুর্ন ভুল । সৌদি-আরবের বিভিন্ন প্রদেশ ও জেলার প্রধান একেক জন প্রিন্স কিংবা তাদের প্রতিনিধি । আইন-আদালত , শরিয়া কাউন্সিল সবই নামকাওয়াস্তে ।দেশ চলে রাজতন্ত্রের আড়ালে স্বৈরতন্ত্রের আরআন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার ইশারায় ।লিখিত কোন নিয়মকানুন নেই । প্রদেশ ও জেলার প্রিন্স কিংবা তাদের প্রতিনিধির মৌখিক নির্দেশই বড় আইন ।নিয়ম-কানুন গুলো বড়ই বর্বর ও মধ্যযুগীয় ।

সৌদি-বাঙ্গালী ঝগড়া লাগলে পুলিস এসে দোষ যারই থাকুক বাঙ্গালীকে ধরে নিয়ে যায় । জেলে নিয়ে শুরু করে অমানুষিক নির্যাতন ।সৌদি পিচ্চিপোলাপান আজকালপথেঘাটে বাঙ্গালি একা পেলেই মোবাইল , টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় বাধাদিলে মারধর শুরু করে । পুলিস আসলে কিংবা পুলিসের কাছে নালিশ করলে কোন লাভ নেই ।গত কয়েক বছর ধরে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির কারনে বাংগালিরা সাংঘাতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ।


সৌদি আরবে এসে প্রথমেই একজন শ্রমিককে তার পাসপোর্ট কফিল কিংবা কোম্পানীর কাছে জমা রাখতে হয় ।একজন শ্রমিক চাইলেও কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারে না বা প্রয়োজনে দেশে যেতে পারে না ।এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কফিলরা বাংগালীদের সেই পুরনো দাসত্বের শৃংখলে বন্দি করে রাখে ।যারা গৃহকর্মের কিংবা বখরি চরানোর কাজ করে তাদের ঊপর প্রচন্ড শারিরীক নির্যাতন করা হয় ।কথা বা মতের অমিল হলেই ঘাড় ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় । আইন-নিয়ম কানুন , চুক্তিপত্র এসব যেহেতু কারো কাছে থাকে না,থাকলেও এসবের কোন মুল্যও নেই ।

ILO,মানবাধিকার সংগঠনের চিল্লাচিল্লি এখানে পৌঁছায় না ।

একটু টাকা-পয়সা হলে একটা গাড়ি কিনতে হলে তা কফিলের নামে কাগজপত্র করতে হয় । কোন বিদেশি সেদেশে জায়গা কিনতে পারে না বা নিজের নামে কোন সম্পত্তির মালিক হতে পারে না ।

বাংলাদেশের বহু জামাতপন্থী ধর্ম ব্যবসায়ী লণ্ডনে বাড়ি কিনেছে কিন্তু সৌদিতে কিনতে পারেনি ।বিলাতের “কাফের”রা সেই সুযোগ দিলেও সৌদির ভাইয়েরা সেই সুযোগ দেয়নি । বহু দুঃখের মাঝে এ ভেবে হাসিও পায় যে ,বহু যুদ্ধাপরাধি বৃটেন ও ইউরোপে পালিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ত পেলেও সৌদিতে সেই সুবিধা আদায় করতে পারেনি ।এজন্য মাঝে মাঝে সৌদিতে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের পার্সপোর্ট বাতিল করে দেশে পাঠানোর কথা ঊঠলেই কান্নকাটি, দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায় ।

কোর্টের ভাষা আরবি । কোন অভিযোগ দাখিল করতে হলে আরবিতে লিখে কোর্টে জমা দিতে হয় । কোর্ট কোন জায়গায়তাও অনেকেই জানে না । বিচারে রায় হয় কোন আইনের ধারা মোতাবেক নয় ,হুকুমতের মর্জি মত ।তাই ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন । বেশীর ভাগ রায় সৌদি কফিল বা কম্পানীর পক্ষে যায় ।এসব অনিয়মের বেড়াজালে কেউ কেউ খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে । বেশীরভাগই পারে না ।তাদের কপালে জুটে শারীরিক নির্যাতন ,জেল ,গলা ধাক্কায় দেশে ফেরত ।

আইন সবার জন্য সমান নয় । একজন সৌদি চাইলেই ভিনদেশি কারো স্ত্রী-কন্যাকে ধর্ষন করতে পারে ।বিচার পাওয়া তো দুরের কথা , ঊল্টো বিচার প্রার্থীরই সে দেশে থাকা সমস্যা হয়ে যায় ।আর ভিনদেশি কেউ অভিযুক্ত হলে তার শিরোচ্ছেদ ।প্রকৃত আইনের-শাসন থাকলে ভিনদেশি-সৌদি উভয়েরই শিরচ্ছেদ হওয়ার কথা ।

বহু সৌদি বহু বিবাহের কারনে কিংবা শেষ বয়সে এসে অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করার কারনে বহু যুবতী তরুনীকে বিধবা কিংবা নিসংগ জীবনযাপন করতে হয় ।এসুযোগে বহু বাঙ্গালী গৃহকর্মী বা ড্রাইভারের সাথে তাদের একটা প্রনয়ের সম্পর্ক গড়ে ঊঠে । সম্মতিসুচক শারিরীক সম্পর্কের কারনে কিংবা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোন সৌদি অভিযোগ জানালে অসহায় বাঙ্গালীর জান শেষ । তার পক্ষে দাড়ানোর কেঊ থাকে না ।খুব দ্রুত রায় হয়ে দ্রুত শিরোচ্ছেদ কার্যকর হয় ।

একজন সৌদি চাইলে ভিনদেশি কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারে । কিন্তু কোন ভিনদেশি চাইলে সৌদিমেয়েকে বিয়ে করতে পারে না ।

এরকম বহু বিপরীতধর্মী নিয়ম কানুন আছে –বলে শেষ করা যাবে না ।


বহুদিন আগে ILO মধ্যপ্রাচ্যে কাজের পরিবেশ ও নিয়মকানুন শ্রমিক বান্ধব করার উদ্যোগ নেয় ।দুবাই থেকে কাজ শুরুও করে । কিন্তু এরপর কি হয়েছে আর জানা যায়নি ।

Uncle Tom’s Cabin এর মত কিছু কিছু দয়ালু কফিল যে নাই তা নয় ।ঐ ধরনের কফিল পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার । দেশে কিছু কিছু প্রবাসীকে আদম ব্যবসা,দু-নম্বরি ছাড়াওবিশাল অর্থবিত্তের মালিক হতে দেখা যায় ।এর একমাত্র কারন , কপালগুনে সে একজন ভালো কফিল পেয়েছে ।এদের দয়া দাক্ষিন্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না । ছুটিতে ফিরতে দেরী হলে স্বয়ং কফিলের বাংলাদেশে চলে আসা থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা সে বাংগালীটির মংগলের জন্য করে না ।

কিং বর্তমান কট্টরপন্থী মোতোয়াল্লী প্রধানকে বহিস্কার করে মধ্যপন্থী একজনকে বসিয়েছেন । দেখা যাক, শ্রমিক বান্ধব কোন কিছু আমরা পাই কি-না ।

(ক্রমশঃ)

(৫ম পর্ব ) (৭ম পর্ব )

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৫৩
১৯টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×