২৯ জুন ২০০৮
ক্রিং! ক্রিং!! ক্রিং!!! হাতড়িয়ে পাশের টেবিল থেকে ঘড়িটা কোন রকমে নিলাম। সকাল ৭:৩০। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে আর একটু আরাম করে ঘুমাবো ভেবে লেপটা টেনে নিতেই বেরসিকের মতো মোবাইলটা বেজে উঠল স্ক্রীনে খালেকের ছবি অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা ধরলাম "দোস্ত একটু খাগড়াছড়ি যেতে হবে রেডি হয়েনে" বলেই ফোনটা কেটে দিল। আমি চিন্তা করলাম এ আবার কোন বিপদ? খালেক আমার ছোট বেলার বন্ধু স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতে আমরা তিন বন্ধু এক সাথে থাকতাম আমি খালেক , কোরবান সবাই আমাদের নাম দিয়েছিল ত্রিরত্ন।
আমার আর খালেকের কাজ হলো হটাৎ করে কোন প্রোগ্রাম ঠিক করা কাউকে না জানিয়ে ২/৪ দিনের জন্য হাওয়া হয়ে যাওয়া মাঝে মাঝে কোরবানকেও আমাদের সাথী করে নেই। যাই হোক হটাৎ জরুরী তলবে বুঝলাম আজও কোন নতুন ফন্দি আছে খালেকের , কিন্তু তাই বলে এই বৃষ্টির দিনে কোথাও বেরুতে কি আর ভাল লাগে ? তার উপরে আবার অফিসও আছে কি করবো বুঝতে পারছি না একদিকে অফিস অন্যদিকে বাল্যবন্ধু শেষ পর্যন্ত বাল্যবন্ধুরই জয় হল গোল্লায় যাক অফিস দেখি কি হয় বলেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে কাপড় পরে বের হলাম। গলির মুখে এসেই দেখি খালেক আর কোরবান আগে থেকেই হাজির মাইক্রোবাস নিয়ে আমি বললাম বাহ! আয়োজনতো তোরা বেশ ভাল করেছিস কিন্তু উদ্দেশ্যটা কি ? খালেক বলল কিছু না কিছুদিন আগে মানিকছড়িতে যে বাগানটা(বাগানের একটা লম্বা কাহিনী আছে আর এক দিন বলেবা) রেজস্ট্রি হবে আজ সুতরাং সকাল ১১ টার মধ্যে খাগড়াছড়ি ডিসি অফিসে হাজির হতে হবে। আমি বললাম শালারা তোদের এই কাজের জন্য আমার আজকে অফিস কামাই দিতে হচ্ছে। তখনই ঠিক করলাম অফিস যখন কামাই করলাম আজকে পিকনিক হয়ে যাক। যাই হোক পিকনিক মেজাজে সবাই গাড়িতে উঠলাম এরই মধ্যে লিটন এসে যোগ দিল আমাদের সাথে, পথে ফতেয়াবাদ থেকে শাহিন ও নাকি আমাদের সাথে যোগদিবে।
সকাল ৮:৩০ গাড়ী ছাড়ি ছাড়ি করছে এমন সময় খালেকের মোবাইল বেজে উঠল খালেককে দেখলাম বিমর্ষ, বললাম কি হয়েছে ? যা বলল মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। ওর অফিসে নাকি কি একটা ঝামেলা হয়েছে ওকে এখনই অফিসে যেতে হবে। খালেক বলল "দোস্ত তোরা গিয়ে কাজটা সেরে আয় আমিতো যেতে পারছি না"। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল বললাম বেটা তোর জন্য আমি অফিস কামাই দিলাম আর তুই দিব্বি অফিস করবি ? বলল "দোস্ত মাইন্ড করিস না তোরা গিয়ে রেজিস্ট্রিটা করে আয় আজকে না হলে আরো দুই মাস পিছিয়ে যাবে। কি আর করা অগ্যতা খালেককে ছাড়াই আমরা রওয়ানা দিলাম চট্টগ্রাম শহরের যানজট পেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে পাহাড়ী কন্যা খাগড়াছড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম পথে ফতেয়াবাদ থেকে শাহীনকে উঠিয়ে নিলাম । জানালার বাইরে তাকালাম এখনো ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে গাড়িতে গান বাজছে "এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন..... " একটু উধাস হয়ে গেলাম।
ফটিকছড়ির শেষ প্রান্তে উদলিয়া চা বাগান এখান থেকেই মুলত পাবত্য চট্টগ্রাম শুরু রাস্তার পাশে পাহাড়ের ঢালে উচু উচু গাছের নিচে সবুজ চা বাগান বৃষ্টিতে ভিজে চা গাছ গুলো আরো রোমান্টিক হয়ে গেছে। গাড়ী চলছে উচু নিচু পাহাড়ী পথ ধরে এক একটি বাঁক এলেই মনে হয় সামনে আর রাস্তা নেই বিশাল এক খাদ অনবিজ্ঞ চালক অথবা একটু বেখেয়াল হলেই মারাত্বক দূর্ঘটনা ঘটে যাবে আর বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে আরো বিপদজনক হয়ে আছে মনের মধ্যে ভয় আর রোমাঞ্চের মিশ্রক্রিয়া চলছে। এভাবে চলতে চলতে আমাদের গাড়ী যখন আলুটিলায় এলো তখন কোরবান বলল এখানে নাকি একটা গুহা আছে ? সবাই ওটা দেখতে আসে এখানে , চল আমরাও গিয়ে দেখে আসি। আমি মোবাইল এর স্ক্রীনে সময়টা দেখলাম ১০:৩০, সকাল ১১ টার মধ্যে ডিসি আফিসে হাজির হতে হবে সময় খুব বেশী নেই। বললাম এখন থাক আসার সময় দেখব। যাই হোক আমরা কিছুক্ষনের মধ্যে ডিসি অফিসে পৌছালাম। সেখানকার আনুষ্টানিকতা শেষ করতে খুব বেশীক্ষন লাগলো না কারণ অন্যরা সব আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল । সেখান থেকে বের হয়ে একটি রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়ে নিলাম তার পর শুরু হল আমাদের আলুটিলা অভিযান.......
চলবে.......

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




