somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা

৩০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মীয় শিক্ষা শব্দটা শুনলেই অনেকের মৌলবাদি মৌলবাদি চিন্তা মাথায় আসে, অনেকের এলার্জি বেড়ে যায়। যাহউক কথা সেটা না কথা হল ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।

এদেশে যখনই কোন কিছু অন্যায় হাইলাইট হয় তখনই আমরা বলি ধর্মীয় শিক্ষার অভবা যেটার উন্নত রূপ এখন নৈতিক শিক্ষার অভাব। তো কথা হচ্ছে সে সব নৈতিক শিক্ষা নিয়ে।

আমাদের দেশে ২ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা যদিও আমার মতে ৩ধরনের। এক সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা যেটাকে জেনারেল লাইন বলে দুই ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা যেটা মাদ্রাসা লাইন বলে পরিচিত। এই মাদ্রাসা লাইনের আবার ভাগ আছে শুধু কোরান মুখস্ত করা যেটাকে হাফেজিয়া শিক্ষা বলা হয় যেখানে সরকারের কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ নেই এবং আরেকট আরবীর পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, অংকও শেখানো হয় যেটা মাদ্রাসা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত।

শিক্ষা ব্যবস্থা কবে এদেশে সেবামূলক ছিল সেটা হয়তো এখনকার কারোরই জানা নাই তবে আমার মতে অনন্ত ৯০এর দশকেও শিক্ষকতাটা বেশ ভালোই সেবা মূলক পেশা হিসেবেই ছিল। তারপরই শুরু হল ব্যপক আকারে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং সভাপতি তার নিজেদের লোকদের বা অথবা সুবিধের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়েগোর মহাৎসব এবং তাদেরকে এমপিও ভুক্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় এমপিউ ভূক্তি করার প্রক্রিয়া সেবা মূলক পেশাটা হয়ে ওঠে শোষণ মূলক ব্যবসায়।

যা হউক মূল কথা ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে। আমাদের দেশের জেনারেল লাইন যাকে বলি সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা একেবারেই উপেক্ষিত, নামমাত্র পড়ানো হয়। সপ্তাহে একদিন ধর্ম ক্লাস, এবং ধর্মীয় শিক্ষকের কোনরূপ দায়সারা ভাবে পাঠ দান এবং অধিকাংশ সময় ক্লাসে ঝিম ঝিম ভাব বা ঘুম ঘুম ভাব, তাও মাসে ৪সপ্তাহে ১সপ্তাহ গড়ে শিক্ষক আসেন না বা পড়ানো হয় না। এই ধর্মীয় শিক্ষকেদের বেতনও কম এবং বিশেষ কারনে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু বলেও না। ফলাফল আমাদের ধর্ম বই সারাবছরই নতুন থেকে যায়।

অন্যদিকে হাফেজিয়া মাদ্রাসা একটা সময় সম্পূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল এবং সেখানকার ছাত্ররা ছিল অধিকাংশ অনাথ গরীব ও এতিম শ্রেণী। কালের পরিক্রমায় সেটা এখন সব থেকে বেশি ব্যবসায় মূলক প্রতিষ্ঠান রূপ নিয়েছে যারা বাচ্চাদের শুধু আরবী পড়াতেই জানে এবং কোরাণ শরীফি মুখস্থ করিয়ে দেয়। আল্লাহর ওয়াস্তে তারা জানে না কোন অর্থ এবং তাদের এমন ভাবে মগোজ ধোয়া হয় যেন ওস্তান জীবনে যা বলেছে তাই ধর্ম, তারা বাইরে কিছু না। একজন কোরানে হাফেজ ১৪জন কে বেহেস্তে নিতে পারবে এ ফতোয়া দিয়ে তাদের ব্যবসায় বেশ জমজমাট। এখানে সরকারের বা প্রশাসনের কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ না থাকার দরুন যাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে তারা।

আরেকটি ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা যেটি সরকার দ্বারা এবং আলাদা বোর্ড যেটি মাদ্রাসা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। সেখানে গত কয়েক বছর সরকারের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ দেখা গেলেও আগে অধিকাংশ ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হতো নকল করে দাখিল পাশ করার জন্য, ধর্মীয় পুস্তকের পাশাপাশি বাংলা ইংরেজিও ছিল তবে তা ছিল জেনারেল লাইনের ধর্মীয় শিক্ষার মত অবস্থা। আরবীটা মোটমুটি পড়নো হতো, যারা নিয়মিত ছাত্র/ছাত্রী তারা বেশ ভালো মানেরই ছিল। কিন্তু সেখানেও সরকারের তেমন দৃষ্টি ছিল না মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল যেমন চালাতো তেমন চলত।

যুগে যুগে এদেশে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তাদের অনুমোদনের জন্য বা মান স্বীকৃতির জন্য বহু দেনদরবার-আন্দোলন করেছেন আমাদের আলেম সমাজ, যার ফলে কওমিকে একটি স্বীকৃতি দিয়েছ এবং একটি বোর্ড গঠনও হবে। কিন্তু তারা কেওই সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা'র মান উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত বা কথা বলতে কখনও শোনা যায় না যার প্রধান কারণ ব্যবসায়। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন করলেই যেখানে ভালো মানের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া সম্ভব সেখানে তারা আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে দুইটা শ্রেণী গড়ে তুলেছেন। মাদ্রাসার ছাত্রদের সর্বদা বৈষম্যের স্বীকার হতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যার জন্য তারা দাখিল (এসএসসি) পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়লেও অধিকাংশ জেনারেল লাইনে চলে আসে ইন্টার লেভেল থেকে। আর হাফেজিয়া ও কওমি তে যারা পড়া লেখা করে তারা কোথাও যেতে না পেরে সেখানেই পরে থাকে।

আমাদের দেশে আলেম সমাজ যতই গলাফাটাক বা আন্দোলন করুক এবং আলাদা স্বীকৃতি আদায় করুক না কেন দেশে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার হবে না এবং রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে ধর্মীয় সু-উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত লোক যেতে পারবে না যতক্ষণ না সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। তারা মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি নিয়ে যত আন্দোলন দেনদরবার করেছেন তার ১০ভাগের ১ভাগও যদি সাধারন শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে কথা বলত তা হলে আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থার দরকার হতো না এবং দুই শিক্ষার মাঝে বিভেদও গড়ে উঠত না। রুটি রুজি ও নিজেদের স্বার্থে তারা আলাদা হয়ে নিজেরা কিছুটা স্বার্থ হাসিল করতে পারলেও প্রজন্ম হয়ে গেছে দুটি ভাগে বিভক্ত এবং দিন দিন সে বিভক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আর এই বিভক্তির জন্যই আমাদের এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীকে ভাড়া করতে হবে (জেনারেল লাইনে পড়ুয়ারা মাদ্রাসা লাইনে পড়ুয়াদের ভাড়া করে) ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের জন্য। আর আলেম সমাজেরও বেঁচে থাকার জন্য জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের কাছে ধর্ণা ধরতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেঁচে থাকার প্রয়াস।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮




আমার ভেতরে জন্ম নেয়া বিভিন্ন চরিত্র আজন্ম যুদ্ধে লিপ্ত,যা বিশ্বযুদ্ধ থেকে ভয়াবহ। প্রতি সেকেন্ডে একজন মারছে,একজন উদযাপন করছে, এসব আটকানোর কোনো শান্তি চুক্তি নেই, নেই কোনো মোড়কে বেধে দেয়ে বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর মাঝে ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×