somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র মহিলা নওয়াব ও নারীশিক্ষার পথিকৃৎ। তিনি অনেকটা নিজের অদম্য ইচ্ছার কারণে শিক্ষিত হন। শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সেবাব্রতে তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তিনি তার পরিবারের অত্যাচারিত জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে জনকল্যান জমিদারি পরিচালনা করেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেসার জন্ম কুমিল্লা জেলার হোমনাবাদ পরগনার (বর্তমানে লাকসামের) অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে । তিনি ১৮৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা জমিদার আহমেদ আলী চৌধুরী আর মা আরাফান্নেসা চৌধুরাণী। ফয়জুন্নেসা বাবার প্রথম কন্যাসন্তান। জমিদার বংশের সন্তান হিসেবে বেশ আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়ে তিনি বেড়ে ওঠেন। মোগল রাজত্বের উত্তরসূরী এই মহীয়সী নারীর ছিল দুই ভাই আর দুই বোন ছিলেন।


ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় তার প্রচুর আগ্রহ দেখে ফয়জুন্নেসার বাবা মেয়ের জন্য গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন। তিনি কঠোর নিয়মানুবর্তিতা পালন করে তার জ্ঞানস্পৃহাকে আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলেন। গৃহশিক্ষকের সাহায্যে ফয়জুন্নেসা খুব দ্রুতই কয়েকটি ভাষার উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। বাংলা, আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত এ চারটি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ সহ ফয়জুন্নেসার এ প্রতিভা স্ফুরণে তার শিক্ষক তাজউদ্দিনের অবদান অতুলনীয়। সে সময়ের আরেক জমিদার সৈয়দ মোহাম্মদ গাজীর সাথে ১৮৬০ সালে তার বিয়ে হয়। কথিত আছে নওয়াব ফয়জুন্নেসা ১৮৭১ সালে বিয়ের সতের বছর পর জানতে পারেন তার স্বামীর আরেকটি স্ত্রী আছে। এক পর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। স্বামী বিচ্ছেদের পর তিনি সমাজ সংস্কার ও গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি তার বিয়ের কাবিনের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে পশ্চিমগাও এ সাড়ে তিন একর জমিতে একটা বাড়ি করেন। এটি নির্মাণ করতে তিন বছরের মত সময় লেগেছিল।

তিনি জমিদারি পরিচালনার প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন। তাছাড়া বুদ্ধির দীপ্ততা, বিচক্ষণতা আর কর্মদক্ষতায় অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। তাই ১৮৭৩ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পশ্চিমগাঁও-এর জমিদারি লাভ করেন এবং ১৮৮৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তিনি মাতুল সম্পত্তিরও উত্তরাধিকারী হন।

ফয়জুন্নেসা ছিলেন হোমনাবাদ পরগনার জমিদার। তিনি তার চিন্তা কাজ কর্মে ছিলেন সে সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক। সেকালের সমাজ ব্যবস্থার সবরকম বাঁধা পেরিয়ে তিনি সম্পূর্ণ কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনে মনোযোগ দিয়েছিলেন। তাই একজন নারী হয়েও সে সময়ে জমিদারির কঠোর দায়িত্ব তিনি সফলভাবে পালন করতে পেরেছেন। তিনি নির্ভীকভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করেন। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেন আর নিজ জমিদারিটি পরিণত করেন 'ওয়াকফ' সম্পত্তি হিসেবে।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব। তিনি সমাজ সংস্কারের অংশ হিসেবে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি জোর প্রচেষ্টা করেন। ১৮৭৩ সালে নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি মেয়েদের জন্য কুমিল্লায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। উপমহাদেশের বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের প্রাচীন স্কুলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দেশে বিদেশে শিক্ষার প্রচারে তার অবদান অনস্বীকার্য। নওয়াব ফয়জুন্নেসা (পশ্চিমগাঁয়ে) একটি অবৈতনিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসার ছাত্রদের অন্য একটি ছাত্রাবাসও ছিল। মাদ্রাসার ভালো ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে পরবর্তিকালে তার (ফয়জুন্নেসার) বংশধরগণ ১৯৪৩ খ্রীঃ এটিকে উচ্চ মাধ্যমিক ইসলামিক কলেজে রূপান্তরিত করেন। ১৯৬৫ খ্রীঃ কলেজটি একটি ডিগ্রী কলেজে রূপান্তরিত হয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা ডিগ্রী কলেজ নামে আখ্যায়িত হয়। ১৯৮২ খ্রীঃ এ কলেজটির সরকারিকরণ হয় এবং নাম হয় নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ। তাছাড়া তিনি আর তার কন্যা বদরুন্নেসা পশ্চিমগাঁওয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মেয়েদেরকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তিনি সব সময় উৎসাহিত করতেন। তিনি মেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার জমিদারির আয় থেকে মেয়েদের জন্য নির্মিত এ হোস্টেলের সব খরচ বহন করা হতো। মেয়েদের জন্য মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। তিনি পবিত্র মক্কা শরিফে 'মাদ্রাসা-ই-সওলাতিয়া ও ফোরকানিয়া সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমানে সহায়তা করেন।

শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেয়েদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও সুচিকিৎসারও ব্যবস্থা করেন। ১৮৯৩ সালে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন 'ফয়জুন্নেসা জানানা হাসপাতাল'। ১৮৯৩ সালে নওয়াব বাড়ির কাছেই তিনি মেয়েদের জন্য একটি স্বতন্ত্র হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। তিনি ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনেকগুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এতিমখানা এবং সড়ক নিমার্ণ করে তার মানবতাবাদী ও সমাজ সংস্কারের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি নওয়াব বাড়ীর সদর দরজায় একটি দশ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৪ সালে পবিত্র হজ্ব পালন করার সময় তিনি মক্কায় হাজীদের জন্য একটি 'মুসাফিরখানাও প্রতিষ্ঠা করেন।

আমাদের এদেশে তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বিদ্যমান ছিল। নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারী জনহিতকর কাজেও প্রচুর অর্থ দান করতেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তিনি সমস্ত নারীর জন্যই চিন্তা ও কাজ করে গেছেন। জেলার উন্নয়নে কুমিল্লার তদানীন্তন ম্যাজিসেট্রট ডগলাস জমিদারদের কাছে ঋণ চাইলে তিনি তোড়াভরতি টাকা দান হিসাবে প্রেরণ করেন।



আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম সাহিত্যিক হিসেবে নবাব ফয়জুন্নেসার নাম চিরস্মরণীয়। তার সাহিত্য সাধনার খুব অল্প সময়ে তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক লেখক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম গদ্য-পদ্যে লেখিকা ছিলেন। ১৮৭৬ খ্রীস্টাব্দে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গিরিশচন্দ্র মুদ্রণ যন্ত্র থেকে শ্রীমতি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী রচিত সাহিত্য গ্রন্থ ‘রূপজালাল' প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ অপশাসনের ফলে মুসলিম সমাজে কুসংস্কারের বেড়াজালে অবরোধবাসিনী হয়েও ফয়জুন্নেসা সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে একটি গৌরবময় স্থান অধিকার করে আছেন। রূপজালাল ব্যতীত ফয়জুন্নেসা কর্তৃক দু'খানি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়-সঙ্গীত লহরী ও সঙ্গীত সার প্রকাশিত হলেও তা এখন দুষ্প্রাপ্য। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না সাহিত্য সাধনায় ফয়জুন্নেসার পথ ধরে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব হয়েছে। বাংলার নারীদের সাহিত্যে অবদানে নওয়াব ফয়জুন্নেসা সর্বাগ্রে।

বাংলাদেশের নিভৃত পল্লীর এ বিদূষী রমণী বেঁচে থাকতে তার কাজের স্বীকৃতি সেভাবে পাননি। মহারাণী ভিক্টোরিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ফয়জুন্নেসাকে বেগম এবং এর পর নওয়াব উপাধি দেন। ১৮৮৯ সালে তার নির্দেশক্রমে ফয়জুন্নেসাকে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'নওয়াব' উপাধি দেয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তার সমস্ত ভূসম্পত্তি জাতির সেবায় দিয়ে যান।

২০০৪ সালে ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী নিবাসের নামকরণ করা হয় নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাস। তার প্রতিষ্ঠিত নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ কে সরকারিকরণ করা হয়েছে।

১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহীয়সীর জীবনাবসান ঘটে। তাকে তার প্রতিষ্ঠিত দশগুম্বুজ মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।




কপি- ফরম উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না'ফেরা অবধি দেশ মিলিটারীর অধীনে থাকবে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৯



একমাত্র আওয়ামী লীগ ব্যতিত, বাকী দলগুলো ক্যন্টনমেন্টে জন্মনেয়া, কিংবা মিলিটারী-বান্ধব।

আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ অনেকটা সমর্থক শব্দ ছিলো: বাংলাদেশ ব্যতিত আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই, আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাংলাদেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×