somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কারণে দেশের সকল নাগরিককে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজস্বের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের উন্নয়ন, সরকারী চাকুরী জীবিদের বেতন , চিকিৎসা সেবা, জন কল্যাণমূলক কর্ম কাণ্ডের সকল ব্যয় সরকারকে জনগনের দেয়া রাজস্বের উপর নির্ভর করতে হয়৷ আর যদি সরকার তার চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হয় তখন জাতীয় বাজেটে ঘাটতি দেখা দেয় এবং এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে বৈদেশিক ঋণের দ্বারস্ত হতে হয়৷ এই ভাবে দিনে দিনে ঋণের বোঝা চক্রহারে বৃদ্ধি পেয়ে দেশ হয়ে যায় দেউলিয়া।

এতক্ষণ আমি যা কিছু লিখলাম সেগুলো সবারই জানা। যেহেতু উপরের কথাগুলো আমার লেখার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক তাই ভুমিকা হিসেবেই কথাগুলো উল্লেখ করলাম। একটি দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব সেই দেশের জনগনের। আর সেই দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক দেশের কল্যানার্থে রাজস্ব পরিশোধের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও উন্নয়নশীল দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারে। কাজেই দেশের স্বার্থে প্রতিটি নাগরিকের রাজস্ব বা কর প্রদান করা নৈতিক দ্বায়িত্ব ও অপরিহায্য। এখানে আলোচ্য ভ্যাট বিষয়টি রাজস্ব বা করের একটি অংশ তাই ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন করকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই৷এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের উপর এই কর প্রদানের দায়িত্ব বর্তায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই কর আরোপ করা সমর্থন করি এই জন্য যে রাজস্ব বিভাগ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে এই আইনের মাধ্যমে আয়কর রিটার্নিং তথা বাৎসরিক করের আওতায় নিয়ে আনতে সক্ষম হবে৷এবং কর ফাঁকি দেয়ার সংস্কৃতি থেকে জনগনকে নিরুৎসাহিত করতে সমর্থ হবে৷ যেহেতু করদাতা তার আয়ের উপর ভিত্তি করে কর দিবেন এবং এখানে ব্যক্তিগত হিসাব নিকাশ জড়িত তাই কর বিষয়ে বিস্তারিত গভীরে না গিয়ে আমি কেবল ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই৷

আমি এক যুগেরও বেশী ইউরোপের মাটিতে ব্যবসা করেছি। সেদেশের জনগনকে প্রতিটি জিনিষের উপর ভ্যাট দিতে হত৷বাচ্চাদের ইস্কুলের খাবার ঘর থেকে শুরু করে সিনেমা হল কোনটাই ভ্যাটের আওতা থেকে বাদ ছিল না৷ আমি ভ্যাট দিয়ে জিনিষ ক্রয় করার পর ভোক্তাদের নিকট ভ্যাট সংযুক্ত করে জিনিস বিক্রি করতাম। আর এজন্য বছরের শেষে ফিক্স একটি অর্থ ভ্যাট বাবদ আমার উপর ধার্য্য করা ছিল রাজস্ব বিভাগ থেকে। কিন্তু আমি প্রভাইডারদের কাছ থেকে জিনিস ক্রয় করার সময় ভ্যাট বাবদ যে অর্থ পরিশোধ করেছিলাম, সেই পরিমান অর্থ বাদ দিয়ে বাকি অর্থ কোষাগারে জমা করতে হত।

তবে আমার নিকট এ দেশে ভ্যাট আদায়ের পদ্ধতি অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়েছে ভ্যাট ছাত্ররা দিবে না বরং বিশ্ববিদ্যালয় দিবে। এই বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায় দেশের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে সেখানে সরকার চাচ্ছে তাদের লাভাংশ থেকে কিছু অর্থ কোষাগারে জমা হোক৷ সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যায়ের কার্য বিবরণী তাদের নজরদারিতে রাখার পথ সুগম হবে৷এক ঢিলে দুই পাখী মারার কৌশল যাকে বলে৷

আমি দেশের সর্ব স্তরের নাগরিকেকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসার পক্ষে। এরপর যারা প্রদত্ত ভ্যাট ফেরত পেতে আগ্রহী, তারা আয়কর রিটার্নিং ফর্মে দেয়া যে সব খাতে ভ্যাট desgravar করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো পূরণ করে ধার্য্য করা আয়কর থেকে বিয়োগ দিতে পারবেন। বিষয়টি গণিতিক সংখ্যা দ্বারা একটু পরিস্কার করে বলি, ধরি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র প্রতি টিউশন ফি বাবদ ১৪০০ টাকা আদায় করেন। এখানে বিলটি ভেঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ দেখানো হলে আমরা দেখতে পাব ছাত্রটি ৭.৫% হারে তিনি ভ্যাট পরিশোধ করেছেন ৯৭,৬৮ (১৩০২.৩২+৯৭.৬৮=১৪০০টাকা)৷এইভাবে ১২ মাসে তিনি ভ্যাট পরিশোধ করেছেন সর্বমোট ( ১২ x ৯৭.৬৮) ১১৭২,১৬ টাকা। এখন সরকার যেহেতু বলেছেন ছাত্রদের ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে না কাজেই ছাত্রের অভিবাবক যিনি বাৎসরিক আয়কর রিটার্ন ঘোষণা করেন তিনি তার উপর ধার্য্য করা আয়কর থেকে ১১৭২,১৬ টাকা বাদ দিতে পারবেন। এবং নিম্ন আয়ের করদাতা না-সূচক দেখিয়ে পরিশোধিত ভ্যাট অংশিক বা সম্পূর্ণ ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন।

পরিশেষে বলব আমাদের সব সময় বড় কিছু অর্জনের জন্য ছোট খাটো বিসর্জন দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আমরা অল্প টাকা ভ্যাট দেয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি অথচ পেছন দিয়ে বড় বড় রাঘব বোয়াল কর ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে কেটে পরছে সেটা ভ্রুক্ষেপ করছি না। এটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভ্যাট আরোপ করাতে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় চলে আসবে অন্য দিকে বিত্তশালী অবিভাবকের নিকট থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×