somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহৎ প্রেম এবং জানোয়ারী প্রেম

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম আমার খুব প্রিয় বিষয়। ব্যাখ্যাতীত আধ্যাত্নিক প্রেম নয়। ব্যাখ্যা সম্ভব নরনারীর জাগতিক জৈবিক প্রেমেই আমার আগ্রহ। প্রেমে পড়ার জন্য মানুষ কে সাধনা করতে হয়না, ভাল এবং সৎ মানুষ হতে হয়না, নির্দিষ্ট কোন ধর্মের হতে হয়না বা নির্দিষ্ট কোন দেশে জন্মাতে হয়না। আকাশে নিম্বাস মেঘ জমলে যেমন বৃষ্টি পড়ে তেমনি শরীরে নির্দিষ্ট হরমোন জমলেই নরনারী পরস্পরের প্রেমে পড়ে। এই প্রেমের সত্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। সমাজ তার চরিত্র অনুযায়ী কোন প্রেম কে স্বীকৃতি দেবে,কোন প্রেম কে দেবেনা। কিন্তু হরমোন নিবন্ধিত সব প্রেমই সত্য!

নায়কের প্রেম যতটুকু সত্য, ভিলেনের প্রেম ও ততটুকুই সত্য। নায়িকার প্রেম যতটুকু সত্য, সখি’র প্রেম ও ততটুকুই সত্য। নকল না করে পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া লাল্টু মিয়ার প্রেম যতটুকু সত্য, ফাঁসপ্রশ্ন হাতে পেয়েও পাশ করতে না পারা কেল্টু মিয়ার প্রেম ও ঠিক ততখানিই সত্য। রাজকন্যার প্রেম যতটুকু সত্য, ঘুঁটে কুড়ানির প্রেমও ততটুকুই সত্য। বৃষ্টি পড়ার কারনে যেমন মেঘ কে দায়ী করা যায়না, তেমনি প্রেমে পড়ার কারনেও মানুষ কে দায়ী করা যায়না।
প্রেমে পড়ার পর মানুষের দূঃখের সীমা থাকেনা। খাবারের রুচি নষ্ট হয়, গায়ে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। মানুষ অকারণ সেন্টিমেন্টাল হয়ে উঠে, বাপ মা ভাইবোন বন্ধু বান্ধব যারাই তার প্রেমে বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে মনে হয় তাদের প্রতি বিরক্তি অনুভব করে। তখন সেই তার বন্ধু, যে তাকে প্রেমে সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই তার পীর, যে তার প্রেমের পক্ষে ফতোয়া দেয়। তার মস্তিস্ক তাকে সব সময় বার্তা দিতে থাকে- তোমার প্রেমাস্পদের সাথে মিলিত হও। মশা কামড়ে ধরলে মশা মেরে না ফেলা পর্যন্ত যেমন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি নেই তেমন প্রেমে পড়লে প্রেমাস্পদের ‘হ্যাঁ’ না শোনা পর্যন্ত পতিতের শান্তি নেই। মানুষ যে কি ভয়ঙ্কর স্বার্থপর একটা প্রানী সেটা সম্যক বোঝা যায় যখন সে প্রেমে পড়ে! প্রেমে পড়া প্রত্যেক নরনারী সাময়িক ভাবে একচোখা ষাঁড় এবং এক রোখা জানোয়ারে পরিনত হয়।

তবে মানুষ যখন ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হয়( যদি আদৌ হয়!) তখন সে প্রেমের স্বরূপ বুঝতে পারে। প্রেমের নেপথ্যে প্রকৃতির উদ্যেশ্য কি সেটা বুঝতে পারে। তখন সে তার ‘একচোখা ষাঁড়ী এবং একরোখা জানোয়ারী সর্বস্ব’ অতীতের কথা ভেবে হা হা করে হাসে। একসময় যাদের কে হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলবে ভাবত, তাদের জন্য তার মায়া হয়!

ঠিক সে মুহুর্তে তার বিরাট মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আগে তার বেশির ভাগ কর্মপরিকল্পনা ছিল প্রতিহিংসামূলক( এই শালাকে দেখে নেব, ‘ওর ও’র থেকে বেশি পয়সাওয়ালা হব!- এই টাইপ)। এই উপলব্ধি আসার পর তার কর্ম পরিকল্পনায় পরিবর্তন হয়। কারন অন্যের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীলতা নষ্ট হয়ে যাবার ফলে সে তার নিজের ভেতরে ক্রিয়াশীল সৃষ্টিশীলতা কে খুঁজে পায়। একজন মানুষ যখন তার ভেতরে নিত্য ক্রিয়াশীল সৃষ্টিশীলতা কে খুঁজে পায় মূলত তখুনি তার একেবারে নিঃজস্ব মগজ ইঞ্জিন চালু হয়! একেবারে নিঃজস্ব মগজ ইঞ্জিন চালু হবার পর নিজের ক্ষমতা দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়। সে অবাক হয়ে দেখে জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে গেছে। আগে যে জীবন যুদ্ধ কে সে ভয় পেত এবং এড়িয়ে চলতে চাইত সেটাকেই সে এখন উপভোগ করে। মানুষের প্রতি অকারন প্রতিক্রিয়াশীলতা আগে তার যে জগত টাকে ছোট করে এনেছিল, মানুষের প্রতি সহজাত মমত্ববোধ এখন তার সেই জগতটাকে বিস্তৃত করে ফেলেছে। সেই সময় মানুষ টার ভেতরে একটা স্পন্দন তৈরি হয়। মরে যাবার আগেই মানবতার জন্য, পৃথিবীর জন্য কিছু করার জন্য তার ভেতরে একটা স্বতঃস্ফুর্ত তাড়না তৈরি হয়।
এই প্রেম হল মানবিক প্রেম। জানোয়ারী প্রেম পৃথিবী কে যে অসংখ্য মানুষ উপহার দেয় এই মানবিক প্রেম সেই অসংখ্য মানুষ কে পৃথিবীতে সুন্দর সভ্য জীবন উপহার দেয়!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×