somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনিয়া বেগমের মা

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল ন টা। প্রধানমন্ত্রী তার অফিস রুমে একা বসে আছেন। প্রধানমন্ত্রী’র মুখ থমথমে। চোখ ফেটে বেরিয়ে আসা অশ্রু প্রানপণে দমন করতে করতে তিনি দরজা ঠেলে প্রবেশ করতে থাকা প্রথম সাক্ষাৎকার প্রার্থী খনিজ সম্পদ মন্ত্রী’র দিকে তাকালেন। খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বিনয়াবনত হয়ে বললেন- স্যার, আগামী বিশ বছরে দেশে উত্তোলনযোগ্য খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ আলোচনা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়ে বললেন- আজকে তুমি নিজেই খনির ভেতর গিয়ে বসে থাক! আজকে আমি এসব বিষয় নিয়ে কোন কথা বলব না!

খনিজ সম্পদ মন্ত্রী কাঁপতে কাঁপতে প্রধানমন্ত্রী’র দপ্তর থেকে বের হয়ে এলেন। তাঁর মনে হতে লাগল তাঁর পা দুটো আসলেই মাটির মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে!
দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার প্রার্থী যোগাযোগ মন্ত্রী দরজা ঠেলে প্রধানমন্ত্রীর রুমে ঢুকলেন। তারপর বিনয়াবনত হয়ে বললেন- স্যার, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে নতুন নতুন আরো দশটা করে ফ্লাই ওভার নির্মান করে যানযট কিভাবে মাইনাসে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে মাস্টার প্ল্যান করা হয়ে গেছে। মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আপনার সাথে বসতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শীতল গলায় বললেন- মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়ে তুমি মহাখালি ফ্লাই ওভারের নিচে গিয়ে বসে থাক! আজকে আমি এসব বিষয় নিয়ে কোন কথাই বলব না!!

যোগাযোগ মন্ত্রী কাঁপতে কাঁপতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বের হয়ে এলেন। তাঁর মনে হতে লাগল ঢাকা এবং চট্টগ্রামে নির্মীয়মাণ সব ফ্লাই ওভার আচমকা তাঁর মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েছে!

তৃতীয় সাক্ষাৎকার প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী দরজা ঠেলে প্রধানমন্ত্রী’র রুমে ঢুকলেন। তারপর বিনয়াবনত হয়ে বললেন- স্যার, শিক্ষাকে কিভাবে আরো বিজ্ঞানমুখী করা যায় সেই ব্যাপারে সারাদেশে সেমিনার করতে চাইছি। আপনার কি মত? প্রধানমন্ত্রী রাগত স্বরে বললেন- সেমিনার না করে তুমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাও! বাসায় বসে বসে ঠাকুরমার ঝুলি পড়।!! এক্ষুনি বিদেয় হও আমার সামনে থেকে!

শিক্ষামন্ত্রী আতঙ্কিত মন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রূম থেকে বের হয়ে এলেন। তাঁর মনে হতে লাগল- ঠাকুর মা’র ঝুলির সবগুলো রাক্ষস খোক্ষস একযোগে তাকে গিলে ফেলতে আসছে!

চতুর্থ সাক্ষাৎকারপ্রার্থী মিডিয়ামন্ত্রী দরজা ঠেলে প্রধানমন্ত্রী’র রুমে ঢুকলেন। তারপর বিনয়াবনত হয়ে বললেন- স্যার, ফেসবুক সারা দেশে জ্যামিতিক হারে বাচালের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে! ফেসবুক বন্ধ করে দিতে চাই! প্রধানমন্ত্রী রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন- বাচালামি না করে আমার সামনে থেকে যাও। গিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দাও- ‘আমি পাগল হয়ে গেছি!’ দেখ ক’টা লাইক পড়ে!!

প্রধানমন্ত্রী’র রুম থেকে বের হতে হতে মিডিয়ামন্ত্রীর নিঃশ্বাস আটকে আসল। তিনি কি আসলেই পাগল হয়ে গেছেন??

পঞ্চম সাক্ষাৎকার প্রার্থী হিসেবে যিনি ঢুকলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী’র স্কুল শিক্ষক এবং প্রধানমন্ত্রী কে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করেন। তাকে দেখে প্রধানমন্ত্রী’র দূ চোখ দিয়ে অশ্রুর ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল। নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে সামনের চেয়ার দেখিয়ে আবেগ রুদ্ধ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বললেন- স্যার বসেন।
স্যার কিছুটা দ্বিধাজড়ানো গলায় বললেন- তোমার কি হয়েছে মা? সবাই কে নাকি রূম থেকে বের করে দিচ্ছ? বলছ- আজকে কারো সাথেই কোন কাজ করবে না। তোমার কাজ মানেই ত দেশের কাজ মা। তুমি কাজ না করে বসে থাকলে দেশের কি হবে মা?

প্রধানমন্ত্রী র চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে টেবিলের উপর পড়ল। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রধানমন্ত্রী বললেন- আজকে আমার একটা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে স্যার। যতটুকু আলামত পাওয়া গেছে তাতে এটা মুটামুটি নিশ্চিত যে আমার মেয়েটাকে ধর্ষন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আজকে আমি শুধু আমার মেয়ের হত্যার বিচারের জন্য যা যা করা লাগে করব। অন্য কিছু করব না।

স্যার তীক্ষ্ণ চোখে প্রধানমন্ত্রী’র দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

প্রধানমন্ত্রী’র পিএ পাংশু মুখে ঢুকল। ‘ স্যার, আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে চায়! আপনার মেয়ে রত্না আর রুনা!! ছয় বছর আগে নিমতলী অগ্নিকান্ডের পর আপনি তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী কান্নারুদ্ধ ভারী গলায় বললেন- রত্না রুনা কে বলে দাও- সেদিন আমি রত্না রুনা ও আসমা র কোমল মা ছিলাম। আজকে আমি আমার ধর্ষিতা মৃত মেয়েটার কঠোর মা। সেদিন আমার মমতার কোমল হাতে আমি রত্না রুনা ও আসমা কে বৌ সাঁজিয়ে দিয়েছিলাম। আজকে আমি আমার নির্দয় পাষাণ হাতে আমার ধর্ষিতা মৃত মেয়ের হত্যাকারীর টুঁটি টিপে ধরব। কোমল মা হবার চেয়ে কঠিন মা হওয়া অনেক বেশি কঠিন!!

একটু পরে প্রধানমন্ত্রী’র পি এ আবার পাংশু মুখে ঢুকল। তোতলাতে তোতলাতে বলল- স্যা...স্যার, এ... এই বার আপনার নি... নিজের মে... মেয়ে!’ প্রধানমন্ত্রী দ্বিধাহীন স্পষ্ট উচ্চারনে বললেন- আজকে আমি অন্য কারো মা নই। এমন কি আমার নিজের ছেলেমেয়ের ও মা নই! আজকে আমি শুধু আমার ধর্ষিতা কন্যা জনিয়া বেগমের মা!!

পি এ মাথা নিচু করে বের হয়ে গেল।

রুমের মধ্যে কিছুক্ষন থমথমে নিস্তব্ধতা বিরাজ করল। প্রধানমন্ত্রী’র সামনে চেয়ারে বসে থাকা প্রধানমন্ত্রী’র স্যার পাঞ্জাবি’র পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছলেন। তারপর বললেন- মা, তুমি আজকে সত্যি সত্যি শুধুই জনিয়া বেগমের মা?

প্রধানমন্ত্রী কান্নারুদ্ধ অথচ দৃঢ় কন্ঠে বললেন- হ্যাঁ। আজকে আমি শুধুই জনিয়া বেগমের মা। স্বরাষ্টমন্ত্রী কে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনিয়ার হত্যাকারীকে সাত হাত গর্ত থেকে হলেও খুঁজে বের করে আমার সামনে নিয়ে আসবে। আর আমার মেয়েটা যেরকম কষ্ট পেয়ে মরেছে শুওরের বাচ্চা টাকে ঠিক সেরকম কষ্ট দিয়ে মারা হবে!

স্যার প্রধানমন্ত্রী’র দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী’র বিষাদ মাখা মুখটা অদ্ভুত এক আলোয় উদ্ভাসিত। সেই আলোর খানিকটা যেন রুমের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া আলোটা প্রধানমন্ত্রী’র চারদিকে নেচে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির মত। সেই আলোর ভেতর ক্ষণে ক্ষণে অদ্ভুত ভাবে ভেসে উঠছে একটি মিষ্টি কিশোরী মেয়ের মুখ। মেয়েটা প্রধানমন্ত্রী’র দিকে অসম্ভব আবেগমাখা বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলছে- ‘মা মাগো, কে বলছে আমি মরে গেছি? তোমার মত মা থাকতে তার সন্তানের গায়ে কি কেউ কখনো হাত তুলতে পারে? এই যে দেখ মা! আমি বেঁচে আছি। দিব্যি ভাল, সুস্থ ভাবে বেঁচে আছি!’
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×