somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামকুকুরের অভয়ারণ্য

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তনু একজন নাট্যকর্মী ছিল, আমিও একজন নাট্যকর্মী ছিলাম। তনু বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিল, আমিও বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলাম। তনু টিউশনি করত, আমিও টিউশনি করতাম। তনু রাত্রিবেলা কুমিল্লা ক্যান্টনমেট এলাকা থেকে টিউশনি সেরে ফেরার পথে তাকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে। আমিও একসময় অনেক রাত্রে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে টিউশনি করে বহুবার ফিরেছি। টিউশনি থেকে ফেরার পথে আমাকে কেউ খুন এবং ধর্ষণ করেনি। আমার এবং তনুর মধ্যে পার্থক্য কি? আমার চিন্তাশক্তি আছে, তনুর ও আছে। আমার ভালোবাসাবোধ আছে, তনুর ও আছে। আমার দেহবোধ আছে, তনুর ও নিশ্চয় ছিল। আমার মধ্যে লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রেরণা আছে, তনুর ও নিশ্চয় ছিল। শুধু বায়োলজিক্যাল আইডেন্টিটি তে আমি আর তনু ভিন্ন। এই বায়োলজিক্যাল আইডেন্টিটি ভিন্ন হবার কারনেই শুধু আমি যখন রাস্তায় বের হই, স্কুলে বা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অফিসে বা হাটে বাজারে যাই তখন আমাকে দেখে আশেপাশে উঁৎপেতে থাকা কোন কামকুকুর তার শীশ্নে শান দেয়না। কিন্তু তনু যখন রাস্তায় বের হয়, থিয়েটারের রিহার্সালে যায় বা কলেজে যায় বা টিউশনি তে যায় তখন আশেপাশে উঁৎপেতে থাকা হাজারো কাম কুকুর শিষ বাজাতে বাজাতে বাজাতে তাদের শীশ্নে শান দেয়। এই কামকুকুর দের মধ্যথেকে কেউ কেউ একদিন সুযোগ বুঝে দিনে অথবা রাতে তনুকে ধর্ষণ করে। তনুরা ধর্ষিত হবার পর এদেশে সব সময় নিশ্চিত ভাবেই একটা ঘটনা ঘটে। এদেশের বৃহত্তর হতভাগ্য জনতা, যারা ধর্ষনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে তারা তাদের মানসিক ধর্ষণ কে জায়েজ করার জন্য তনুর কাপড়চোপড় চরিত্র পেশা ইত্যাদি’র সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং ফেসবুক এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রানপ্রিয় ধর্ষক ভাইদের প্রতি আড়ে ঠারে বা প্রকাশ্যে সমবেদনা জানায়। প্রত্যক্ষ ধর্ষক ভাইদের এই পেরেশানীর দিনে( কিছু মানুষ অন্তত তাদের গালি দেবে, পুলিশ লোক দেখানোর জন্য হলেও তাদের অন্তত কিছুদিন বিরক্ত করবে, আর সেলিব্রেটি হবার কিছুটা বিড়ম্বনা ত আছেই) তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী পরোক্ষ ধর্ষক ভায়েরা তাদের দিকে বুক উঁচিয়ে দিয়ে বলে- মেয়েটা যেহেতু ধর্ষণ না করার সমস্ত শর্ত পূরণ করেনি এবং তোমরা যেহেতু ধর্ষণ করেই ফেলেছ কাজেই বুঝতে হবে মেয়েটারও কিছু দোষ আছে। আস বুকে আস।

অসভ্য একটি সমাজ যদি একটি ইমারত হয় তাহলে এই কামকুকুরগুলো হল এই ইমারতের রড। আর তাদের বুকে নেয়া তথাকথিত ভদ্রলোকের মুখোশধারী ইতরগুলো হল এই ইমারতের কনক্রিট। এই ইতর কংক্রিটের ভেতরেই এই শুয়োর রডগুলো আরামে ঢালাই হয়ে থাকে এবং এই কনক্রিট ভেদ করতে করতে রড কাটার হ্যাক’স একসময় ভোঁতা হয়ে যায়। ভোঁতা হতে হতে হ্যাক’স একসময় নিজেই কংক্রিটের মধ্যে ঢালাই হয়ে যায়।

আমি তনু হত্যা এবং ধর্ষনের বিচার চাই। আমি জনিয়া বেগম হত্যা এবং ধর্ষনের বিচার চাই। আমি মাইক্রোবাসে ধর্ষন করে মেরে ফেলা তরুনী হত্যার বিচার চাই। আমি ধর্ষন করে মেরে ফেলা আদিবাসী তরুনী হত্যার বিচার চাই। আমি আমাদের দেশের সমস্ত ধর্ষিতা মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাই। আমি মনে করি যে দেশে ধর্ষণের বিচার করতে গিয়ে একজন বিচারকের কাছে মেয়েটার পরিধানের কাপড়চোপড়, পেশা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সেদেশের বিচারক নিজেই একজন ধর্ষক অথবা নপুংসক। তিনি হয় প্রতিদিন এজলাশে বসে অজস্র নির্যাতিত এবং শক্তিহীন মানুষ কে তার ক্ষমতার শীশ্ন দিয়ে ধর্ষণ করেন অথবা ক্ষমতাশালী মহলের ক্ষমতার শীশ্ন নিঃসৃত বাণী’র উপর নিরুপায় আস্থা স্থাপন করে সেটাকেই মাননীয় আদালতের রায় বলে চালিয়ে দেন । একজন বিচারক যদি ধর্ষক অথবা নপুংসক না হয়ে বিচারক হন তাহলে বছরে অন্তত একটা হলেও কামকুকুর একটা শীতল মমিতে রূপান্তরিত হয়। বুকে বেঁধা তীব্র ব্যথা এবং অপমান থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পায় একজন ধর্ষিতার স্বজন। একটা দিনের জন্য হলেও ফাটল ধরতে পারে নিকৃষ্ট অপমানব দের ততোধিক নিকৃষ্ট নিরেট আত্ন-বিশ্বাসে।

সেরকম সত্যিকারের নায়ক একজন বিচারক কি আমরা কখনো পাব যে গভীর অন্ধকার ম্লানিমায় ডুবে যাওয়া এই দেশ মাতৃকার মুখটা এক মুহুর্তের জন্য হলেও তুলে ধরতে পারবে আলোয়? এক মুহুর্তের জন্যে হলেও তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলতে পারবে- মা আমরা আমাদের সমস্ত আবেগ শুয়োরের মত শুধু ক্রিকেট খেলার জন্য বিক্রি করে দিইনি। কিছুটা জমিয়ে রেখেছি মানবতার জন্যও। কিছুটা জমিয়ে রেখেছি মানবতার জন্যও। ।

নাকি সর্বস্তরের বিচারকরা আজীবন ই ধর্ষক এবং নপুংসক থেকে দেশটাকে চিরদিনকার কামকুকুরের অভয়ারণ্য হিসাবে রেখে দেবে?



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৩৯
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×