somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাচার

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভর সন্ধ্যাবেলা চায়ের দোকানে মুসলমান কর্তৃক হিন্দুদের উপর হামলার খবর শুনিয়া আব্দুল খালেক রাগে ফুঁসিয়া উঠিল। এরা কি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক! যাহাদের অধিক ভালোবাসা দিতে হয়, অধিক বুকে টানিয়া লইতে হয় তাহাদের উপর হামলা করিয়া এরা কোন ইসলামের সেবা করিতেছে কিছুই বুঝিতে পারিল না আব্দুল খালেক। প্রথমে হামলাকারীদের কাফের মুরতাদ বলে গালি দিয়া, তারপর এরা ইসলাম সঠিক ভাবে না বোঝার জন্য মোল্লা মৌলবী দের কে দায়ী করিয়া সবশেষে এদের মস্তিষ্কে যে ঘিলু কম এই বিষয়ে নিজে পুরোপুরি নিশ্চিত হইয়া এবং অপরকে নিশ্চিত করিয়া আব্দুল খালেক সাইকেল মারিয়া বাড়ির পথ ধরিল। পথিমধ্যে দেখা হইল বাল্যবন্ধু রমণীমোহন ভটচায এর সঙ্গে। আব্দুল খালেক সাইকেল হইতে নামিয়া সাইকেল স্ট্যান্ডের উপর খাড়া করিয়া রমনী কে বুকে জড়াইয়া ধরিল। হামলায় আহতদের মধ্যে রমনীর বড় শ্যালক ছিল। বড় শ্যালক আপন ভগিনী অর্থাৎ রমনীর স্ত্রী’র সম্পত্তি খাইতে চাহে বলিয়া তাহাকে রমণী এমনিতে অপছন্দ করিত । কিন্তু এক্ষণে বন্ধু আব্দুল খালেকের বুকের মধ্যে বাঁধা পড়িয়া অভিমানে ফ্যাঁৎ করিয়া উঠিল- এঁ এঁ বড় কুটুম্বের মাতায় দুটে দুটে চাট্টে ডান্ডার বাড়ি, ইয়াব্বড় ব্যান্ডেজ, এঁ এঁ...তুমি অ ত মুচলমান, এরা কেমন মুচলমান গো!

আব্দুল খালেক নিজের মাথার পাগড়ি’র একাংশ দিয়া রমণী’র অশ্রু মোচন করিয়া দিল। তারপর বলিল- ইসলামে এসবের মোটেও স্থান নাই রমনী। উহারা মূর্খ, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, উহারা জানেনা যাহারা বিধর্মী কাফের তাহাদের কেই সবার আগে বুকে টানিয়া লইতে হয়, তাহাদের সুবিধা অসুবিধার দিকেই সবার আগে লক্ষ্য রাখিতে হয়, তাহাদের কাছেই নিজেদের চরিত্রের মাধুর্য্য সবার আগে তুলিয়া ধরিতে হয়। না হইলে তাহারা সত্যের দিকে আকৃষ্ট হইবে কি করিয়া? উহারা প্রকৃত মুসলমান নহে রমণী। উহারা পথভ্রষ্ট।

রমনী আবেগে গলিয়া গেল। বড় শ্যালকের জন্য ব্যাথার ওষুধ কিনিয়া তাহার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিবার কথা। কিন্তু সে আব্দুল খালেকের মহত্ত্বে মজিয়া পথিমধ্যে তাহার সাথে একটা ক্যাপস্ট্যান সিগারেট এবং এক কাপ দুধ চা খাইতে রাজি হইয়া গেল। আব্দুল খালেক নিজের পয়সায় সিগারেট কিনিয়া নিজেই ম্যাচ মারিয়া প্রথমে রমনী’র টা ধরাইয়া দিয়া তারপর নিজের টা ধরাইল। বিড়িতে টান দিয়া রমনী’র চেহারার দিকে গভীর ভাবে তাকাইল আব্দুল খালেক- কি মিহিন ধুতি’র মতন শান্ত চেহারা মালাউন টার! চেহারায় একটুও উগ্রতা নাই, বরং নরম একটা আত্নসমর্পনের ভাব রহিয়াছে! আব্দুল খালেক যদি একে গু খাইতে বলে তাহা হইলে হয়ত গু খাইবেনা। কিন্তু সরাসরি গু খাইতে বলিবার প্রতিবাদ ও করিবে না। হাতজোড় করিয়া বলিবে- ডাক্তার গু খাইতে নিষেধ করিয়াছে, কাজেই খাইতেছিনা! এইরকম ভদ্র পোলাইট মিহি নরম চেহারার মালাউনে যদি দেশ ভর্তি হইয়া যায় তাহা হইলে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা কত সহজ হইয়া যায়!!

আব্দুল খালেক রমণী’র কাঁধে হাত রাখিয়া কিছুটা হাল্কা মেজাজে কহিল- রমনীবাবু, আর যাহাই বল, মাথায় ডান্ডার বাড়ি খাওয়া তোমার বড় কুটুম্ব কিন্তু তোমার মত বিনয়ী নহে। তাহার ঘাঁড় কিঞ্চিত ত্যাঁড়া আছে!!

রমনী ‘এ রাম এ রাম তাহার ত ধর্মে মতি নাই, বিনয়ী হপি কি করিয়া!’ বলিতে বলিতে কোন দেবতার উদ্যেশ্যে যে মাথা ঝুঁকাইল তাহা আব্দুল খালেক ঠিক ঠাক ঠাহর করিতে পারিল না। সে পাল্টা জিজ্ঞাসা করিল- ধর্মে তাহার কিরূপ মতি নাই খোলাসা করিয়া কহ ত রমণী!
রমণী আবার রাম রাম করিয়া বলিল- পলাশ যে হিঁদুর ছেলে হইয়া গোমাংস ভক্ষণ করে!
পলাশ অর্থাৎ রমণীর বড় শ্যালকের অনাবশ্যক ঔদ্ধত্ত্বের কথা ভাবিয়া আব্দুল খালেক অত্যাধিক বিরক্ত হইল। গরুর মাংস খাবার মধ্যে একটা তেজী মুসলমানি ভাব রহিয়াছে। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান বন্ধু বান্ধবের সাথে সংখ্যালঘিষ্ট মালাউন রা দাওয়াত খাইতে গেলে মুসলমান রা সাঁটিয়া গরুর মাংস খাইবে,আর অন্যপাশের টেবিলে মালাউন রা শাক পাতা খাইবার ভঙ্গিতে মুরগি খাসি’র মাংস খাইবে, মাঝে মধ্যে মুসলমান রা মস্করা করিয়া তাহাদের গরুর মাংস সাধিবে কিন্তু তাহারা কিছুতেই খাইবে না!- ইহাই আদর্শ অসাম্প্রদায়িক দৃশ্য, ইহাই আদর্শ ভক্তির দৃশ্য!- এই ধরনের সাচ্চা মালাউন কে ভালোবেসে বুকে টানিয়া লইতে কোনও সাচ্চা মুসলমানের কণামাত্র আপত্তি থাকিবার কথা নহে! কিন্তু যেসব সীমা লঙ্ঘণকারী মালাউন রা রীতিমত গরুর মাংস ইত্যাদি খাইতেছে তাহারা কখনোই ভদ্র পোলাইট মিহি নরম চেহারার আদর্শ মালাউন দের মত নহে! সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি রক্ষার জন্যই ইহাদিগকে মাঝে মধ্যে ‘মাথায় বাড়ি মারিয়া হাল্কা টাইট’ দেবার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রহিয়াছে!!

আব্ধুল খালেক রমনীকে সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে উঠাইয়া লইয়া দারুল শিফা ঔষধ ঘরের দিকে আগাইয়া দিতে দিতে কহিল- আমরা খুবই অসাম্প্রদায়িক জাতি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র দেশ, শান্তির দেশ। কিন্তু তোমরা যদি শান্তি রক্ষায় ভুমিকা না রাখ তাহা হইলে আমরা একা কি করিব? সংসারে স্ত্রী যদি স্বামীর অনুগতা না হয় তাহা হইলে সংসারে স্বামী হাজার চাহিলেও শান্তি রক্ষা হয়না! কারণ স্বামী হইল শক্তিশালী পক্ষ, স্ত্রী হইল দূর্বল পক্ষ। ঠিক তেমনি তোমরা মালাউন রা যদি আমরা মুসলমানদের অনুগত না থাক, যদ্রুপে চলিলে আমরা তোমাদের সহ্য করিতে পারি তোমরা যদি তদ্রুপে না চল, তাহা হইলে তোমাদের আমরা কেমনে আদর করিব বল রমনী? তোমার বড় শ্যালকের মত মালাউন রা যদি আজকে উদ্ধত মালাউন না হইয়া তোমার মত ভদ্র পোলাইট জেন্টেল মিহি মালাউন হইত তাহা হইলে দেশের কোনখানেই কি আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাঙ্গার নজীর দেখা যাইত? চুপ করে কেন রমনী??

কথা বলিতে বলিতে আব্দুল খালেক কিছুটা বেখেয়াল হইয়াছিল। অন্ধকার গ্রামের রাস্তা। রাস্তায় অসৎ কন্টাক্টরের উদ্বৃত্ত সম্পদের সমপরিমান খাদ! খাদে পড়িয়া সাইকেল উল্টাইয়া গেল। সাইকেল সমেত খাদে পড়িয়া নূরানী চেহারার মুসলমান আব্দুল খালেক এবং অনূরানী চেহারার মালাউন রমণী মোহন ভটচাজ উভয়েই ‘ও মাগো!’ বলিয়া যুগপৎ চিৎকার করিয়া উঠিল!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×