somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআনের আয়াতের পুরুষতান্ত্রিক বয়ান এর কাউন্টার-১ঃ নারী পুরুষের বাম পার্শ্বের পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে, এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক মুফাসসির কুরআনের কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, নারী পুরুষের শরীরের অংশ। কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ, নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :

- ﴿يَاأَيُّهَاالنَّاسُ اتَّقُواْرَبَّكُمُالَّذِي خَلَقَكُممِّننَّفْسٍ وَاحِدَةٍوَخَلَقَمِنْهَازَوْجَهَاوَبَثَّمِنْهُمَارِجَالاًكَثِيراًوَنِسَاء﴾
- হে মানব সকল! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা থেকে তার সহধর্মিণীকেও এবং ঐ দু’জন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন (নিসা : ১)।

O mankind, fear your Lord, who created you from one soul and created from it its mate and dispersed from both of them many men and women. And fear Allah , through whom you ask one another, and the wombs. Indeed Allah is ever, over you, an Observer.


" O mankind! Be aware of your Lord who created you from a single soul, and created its mate from it, and, from the two of them, scattered numerous men and women." Al Nisa-1 The Quran translated bu Ali uli Qarai

here created its mate from it (soul) means both Adam and Hawa were created from the same soul i.e same source




- ﴿هُوَالَّذِيخَلَقَكُم مِّننَّفْسٍوَاحِدَةٍ وَجَعَلَمِنْهَازَوْجَهَا﴾
-তিনিই তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকেও (আ’রাফ : ১৮৯)।
- ﴿خَلَقَكُممِّننَّفْسٍ وَاحِدَةٍثُمَّجَعَلَ مِنْهَازَوْجَهَا﴾
- তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার স্ত্রীকেও (যুমার : ৬)।
- ﴿وَمِنْآيَاتِهِأَنْخَلَقَلَكُممِّنْأَنفُسِكُمْ#1571;َزْوَاجاً﴾
- আর এটা তাঁর নিদর্শনমূহের নমুনা স্বরূপ যে, তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন (রূম : ২১)।
- ﴿وَاللّهُجَعَلَلَكُم مِّنْأَنفُسِكُمْأَزْوَاجاً وَجَعَلَلَكُممِّنْأَزْوَاجِكُم بَنِينَوَحَفَدَة﴾
- আর আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী নির্দিষ্ট করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান ও পৌত্রদের সৃষ্টি করেছেন (নাহ্‌ল : ৭২)।
- ﴿جَعَلَلَكُممِّنْ أَنفُسِكُمْأَزْوَاجاً﴾
- তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন (শুরা: ১১)।

বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে, প্রথম তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ একটি নফস (সত্তা) থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্ত্রীগণও ঐ নফস থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু পরের তিনটি আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে সমস্ত পুরুষের প্রতি ইশারা করে বলা হচ্ছে যে, তোমাদের স্ত্রীগণকে তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি আমরা একটুখানি এই বিষয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেই তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এ আয়াতসমূহে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, তাদের স্ত্রীগণ উৎসের দৃষ্টিতে তাদেরই প্রকৃতির, অন্য প্রকৃতির নয়। এটা নিশ্চয় বুঝাতে চাননি যে, স্ত্রীগণ তাদের দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যে, প্রতিটি স্ত্রীই তার স্বামীর দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী তিনটি আয়াত প্রথম তিনটি আয়াতকে ব্যাখ্যা করেছে, যাতে করে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।

আল্লামা তাবাতাবাই এই আয়াতের তফসিরে বলেছেন : ‘ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা’ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে যে, স্ত্রীদের পুরুষের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের উভয়েরই সৃষ্টির উৎস হচ্ছে এক।
এই আয়াতে ‘মিন’ শব্দটি উৎস বর্ণনা অর্থে এসেছে অর্থাৎ এখানে ‘মিন’ কোন কিছু সৃষ্টির উৎসকে বর্ণনা করছে। এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতই পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির উৎস বর্ণনা করেছে, যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।
অতএব, এটা আমাদের কাছে পরিস্কার এবং বিভিন্ন তফসির গ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা নারীকে পুরুষের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলিলহীন উক্তি (আল মিযান ফি তাফসিরুল কুরআন, খণ্ড- ৪, পৃ.-১৩৬)।


সুতরাং কোরআনের আয়াত থেকে আমাদের কাছে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উৎসগত আলোচনা করেছে এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যকে তুলে ধরেছে। এর পক্ষে আমাদের আরো জোরাল যুক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ:
নবী (সা.)-এর ৬ষ্ঠ উত্তরসূরী ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে, ‘একদল লোক বলে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
তিনি বললেন: আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এমন ধরনের কাজ করা থেকে পবিত্র। এরপর তিনি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন: আল্লাহ্‌র কি ক্ষমতা ছিল না যে, হযরত আদমের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করবেন যে তার পাজরের হাড় থেকে হবে না? যাতে করে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে যে, হযরত আদম নিজেই নিজের সাথে বিয়ে করেছেন। আল্লাহ্‌ তাদের ও আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে ফায়সালা করুন (ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড-২০, পৃ. -৩৫২, বাব- ২৮, হাদীস নং-২৫৮০৪)।
(অর্থাৎ এখানে ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ্‌ যখন হযরত আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তবে তার স্ত্রী সৃষ্টির জন্য, তার পাজরের হাড় থেকে করতে হবে কেন? যেহেতু আল্লাহ্‌ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই এ কথা বললে তাঁর অক্ষমতাকেই তুলে ধরা হয়, নয় কি? -নাউযুবিল্লাহ্‌)।
অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে, ‘আল্লাহ্‌ তা’য়ালা হযরত আদম সৃষ্টির পরে অবশিষ্ট কাদা-মাটি থেকে হযরত হাওয়াকে (হযরত আদমের মতই) স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন (বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-১১, পৃ. -১১৫, হাদীস নং-৪২)।
﴿وَأَوْحَيْنَاإِلَى أُمِّمُوسَىأَنْأَرْضِعِيهِ فَإِذَاخِفْتِعَلَيْهِ فَأَلْقِيهِفِيالْيَمِّ وَلَاتَخَافِيوَلَاتَحْزَنِي إِنَّارَادُّوهُإِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُمِنَالْمُرْسَلِينَ﴾
“আমরা মুসার মায়ের প্রতি এরূপ ইলহাম করেছিলাম যে, তাকে দুধ দাও এবং যখনই তার ব্যাপারে ভয় পাবে তখনই তাকে (নিল নদের) পানিতে নিক্ষেপ কর, তুমি ভয় করো না ও দুঃখিত হয়োনা আমরা তাকে পুনরায় তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্যে স্থান দিব”(কাসাস : ৭)।
এই আয়াতে এ বিষয়টি পরিস্কার যে, আল্লাহ্‌ তা’য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর মায়ের প্রতি ইলহাম করেছেন, আল্লাহ্‌ একজন নারীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন এটা হচ্ছে নারীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয়।
﴿إِذْقَالَتِالْمَلآئِكَةُ1610;َا مَرْيَمُإِنَّاللّهَيُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍمِّنْهُاسْمُهُ الْمَسِيحُعِيسَىابْنُ مَرْيَمَوَجِيهاًفِيالدُّنْيَا وَالآخِرَةِوَمِنَالْمُقَرَّبِينَ﴾
“(ঐ সময়কার কথাকে স্মরণে আন) যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেন : ‘হে মারিয়াম! আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে এক বাণীর সুসংবাদ দান করছেন যে, তার নাম হচ্ছে মাসিহ্‌ ঈসা ইবনে মারিয়াম, সে এই দুনিয়া ও আখেরাতেও একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে” (আলে ইমরান: ৪৫)।
তাহলে আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে, একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব যে, সে পরিপূর্ণতার এমন পর্যায়ে পৌছাবে, যার কারণে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা আসমানী কিতাবে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলবেন। আর আল্লাহ্‌র ফেরেশ্‌তাগণ ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আ.) তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলবেন। আর এমন নজির পুরুষদের মধ্যেও কম দেখা যায়।
﴿وَضَرَبَاللَّهُ مَثَلاًلِّلَّذِينَ آمَنُوا اِمْرَأَةَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتاً فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
“আল্লাহ্‌ তা’য়ালা মু’মিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যখন সে বলেছিল যে, হে আল্লাহ্‌! বেহেশ্‌তে তোমার কাছে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে ফিরআউনের কু-কর্ম ও তার অত্যাচারী দলবল থেকে রক্ষা কর”(তাহ্‌রিম : ১১)।
১- আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এই আয়াতে সকল পুরুষ ও নারীর সামনে একজন নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
২- আছিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) সকল নারীকে এটাই শিক্ষা দিল যে, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন বাদশাহ্‌র প্রাসাদে জীবন-যাপন করার (সেখানে সব ধরনের সু-ব্যবস্থা থাকা সত্বেও) থেকেও উত্তম। সে আরো প্রমাণ করলো যে, কোন নারীরই উচিৎ নয় এই দুনিয়ার বাহ্যিক রূপের মোহে ভুল করা। কেননা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা ধবংস হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ই থাকবেন।
৩- সে আরো শিক্ষা দিল যে, নারীদের স্বাধীনতা থাকবে (যতটুকু আল্লাহ্‌ অনুমতি দিয়েছেন) এবং তারা জুলুম ও জালিমের প্রতি ঘৃণা রাখবে; যদিও ঐ জালিম তার স্বামীও হয়ে থাকে।
﴿إِنَّاأَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَر * فَصَلِّلِرَبِّكَ وَانْحَرْ * إِنَّشَانِئَكَ هُوَالْأَبْتَرُ﴾
“হে রাসূল! আমরা তোমাকে অফুরন্ত নেয়ামত - নবুওয়াত, শাফা’য়াতের ন্যায় উচ্চ মর্যাদাসহ কাউসার (ফাতিমাকে) -দান করেছি। সুতরাং তুমি এই নে’য়ামতসমূহের শুকরিয়া স্বরূপ নামায আদায় এবং কুরবানী কর। আর প্রকৃতপক্ষে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে নির্বংশ” (কাউছার : ১, ২, ৩)।”


নবী (সা.) তাঁর নবুওয়্যাত প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত নারীদের উপর যুলুম হত, এখনো যে হচ্ছে না তা বলছি না তবে তখন এমই যুলুম হত যে তাদেরকে শিশুকালেই জীবন্ত দাফন করা হত। মহা নবী (সা.) হচ্ছেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি এ কুসংস্কারের বিরুদ্ধাচারণ করেন এবং তাতের জীবন্ত কবরস্থ করাকে হারাম ঘোষণা দেন। আর ইসলামই হচ্ছে সর্বপ্রথম ধর্ম, যে ধর্ম নারীকে দিয়েছে উপযুক্ত মর্যাদা, সম্মান ও স্থান। তবে বর্তমানে মুসলিম সমাজে এখনো নারীরা বিভিন্নভাবে পুরুষের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে, আর এই নির্যাতিত হবার পেছনে কিছু ভ্রান্ত ধারণা যাতে দ্বীন-মাযহাবের রং দেয়া হয়েছে বিদ্যমান। যা নারীকে পুরুষের থেকে নিচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে পরিচিত করাচ্ছে। আর এমনই একটি বিষয় নিয়ে এ লেখা, যা নারীর অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত তা নিয়ে লেখা হেয়েছে লেখাটি গভীর দৃষ্টি নিয়ে পড়ুন, ভাবুন এবং সিন্ধান্ত নিন।

﴿إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْوَ الْحَافِظَاتِوَ الذَّاكِرِينَ اللَّهَكَثِيراً وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّاللَّهُ لَهُممَّغْفِرَةً وَأَجْراًعَظِيماً﴾

“নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী, খোদাভীরু পুরুষ ও নারী, ছদকা দানকারী পুরুষ ও নারী, রোযাদার পুরুষ ও নারিগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ্‌ তা’য়ালার কাছে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার” (আহ্‌যাব : ৩৫)।
এই পবিত্র আয়াতে, পুরুষ ও নারীকে পাশা-পাশি উল্ল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’য়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি।

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوباً وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ﴾
“হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি এ কারণে যে, তোমরা যেন একে অপরকে চিনতে পার (এবং বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়)। তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহ্‌র কাছে অধিক উত্তম যে অন্যের থেকে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ জ্ঞানী এবং মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন” (হুজুরাত : ১৩)।

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ্‌ তা’য়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাঁর ও একক, পবিত্র সত্তাকে উত্তমরূপে জানা বলে উল্লেখ করেছেন। আর বংশ, ক্ষমতা, ধন-দৌলত, জ্ঞান, রং, ভাষা ও ভৌগলিকতার (আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ইত্যাদি) ভিত্তিতে আল্ল্লাহ্‌ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেন নি বরং আল্লাহ্‌র কাছে উত্তম বস্তু হচ্ছে তাকওয়া, আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা।

﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحاً مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ﴾

“পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে এবং উত্তম কাজ আঞ্জাম দিবে, তাদেরকে আমরা পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদের কাজের তুলনায় উত্তম পুরস্কার দান করব”(নাহ্‌ল : ৯৭)।
এই আয়াতেও আল্লাহ্‌ তা’য়ালা উত্তম কাজের বিনিময় স্বরূপ পুরস্কার ও সওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন, আর সৎকর্ম সম্পাদনকারী পুরুষই হোক অথবা নারী হোক কোন পার্থক্য করেন নি বরং যে কোন বান্দাই এই ভাল কাজ আঞ্জাম দিবে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

﴿وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
“আল্লাহ্‌ তা’য়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সহধর্মিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার, আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে” (রূম : ২১)।

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ্‌ তা’য়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নারীরা হচ্ছে ভালবাসা, রহমত ও প্রশান্তির কারণ। বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবাই (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যারা উভয়ই পূর্ণতা অর্জন করে এবং এ দু’য়ের মিলনের মাধ্যমে মানব জাতির বংশ বিস্তার ঘটে থাকে, আর তারা একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ।

আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন: এই বিষয়টি তাদের জন্য নিদর্শন যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন। তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক। আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং এর সদস্যদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। যে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্ল্লাহ্‌ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত। শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই তারা এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।
কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দু’টি দিক বিদ্যমান। তার একটি হচ্ছে ঐশী ও ভালবাসার দিক অপরটি হচ্ছে পাশবিক দিক। তবে মানুষ তার ঐ ঐশী ও ভালবাসার বোধের মাধ্যমেই পূর্ণতায় পৌঁছে থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×