প্রথম কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি সংবিধানসম্মত সংগঠন হচ্ছে ডাকসু।ডাকসুকে মিনি পার্লামেন্ট বা ২য় সংসদও বলা হয়ে থাকে।
এ দেশের জন্মের সাথে ডাকসুর অবদান ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শাসকগোষ্ঠীর সকল অত্যাচার, নির্যাতন আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ডাকসুই সর্বাগ্রে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, প্রতিবাদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর নেতৃবৃন্দের অবদান রয়েছে।
সর্বশেষ স্বৈরাচার এরশাদের সরকার থাকাকালেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। ২১ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। ১৯৯০ সালে এ সংগঠনটরি নির্বাচনে আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন যথাক্রমে র্সবশেষ ভিপি ও জিএসের দায়ত্বি পালন করেন। দুই দশক ধরে নেতৃত্ব সৃষ্টির এ প্রধান কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে।
ডাকসুর পথচলা
ডাকসুর পথচলা শুরু হয় স্যার এ. এফ. রহমানের হাত ধরেই। তার উদ্যোগেই প্রত্যেক হলে ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যবস্থা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম উপাচার্য স্যার এ.এফ. রহমান অক্সফোর্ডে ছাত্র থাকাকালে সেখানে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । তার উদ্দ্যেগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ছাত্র সংসদ গঠিত হয়। প্রথমে হল ছাত্র সংসদ গড়ে তোলা হয়। হল ছাত্র সংসদের সাফল্যের পর ১৯২২-২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা ‘ডাসু’ গঠিত হয়। প্রথম সভাপতি ছিলেন উপাচার্য ডব্লিউ. এ. জোনকিন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র ১ টাকা চাঁদা দিয়ে এর সদস্য হতেন । সে সময়ের তিনটি হল ঢাকা হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের প্রতিটি হল থেকে একজন করে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং উপাচার্য মনোনীত একজন শিক্ষক নিয়ে এ সংসদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদের সাধারণ সভায় খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়।
ডাসুর ১ম সাংগঠনিক কাঠামো
সভাপতি - অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার
সহ - সভাপতি- মমতাজউদ্দীন আহমদ (ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে)
সাধারণ সম্পাদক- যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদের সাধারণ সভায় খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করলে গঠনতন্ত্রটি কার্যকর হয়। এতে ছাত্র প্রতিনিধি ও মনোনীত শিক্ষক প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ কর্তৃক কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে সে সময় সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্র প্রতিনিধির মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা হত । এ সময়ে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম শুধু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তখন এ ছাত্র সংসদ সাধারণ মিলনায়তন পরিচালনা, বির্তক সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো ।
সাম্প্রদায়িক প্রভাবের কবলে ডাসু
এ শতকের গোড়া থেকেই এ দেশে সাম্প্রদায়িক বিরোধ-সংঘাত একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয় । হিন্দু মুসলমান সংঘর্ষ তদানীন্তন অবিভক্ত ভারতে বেশ ভয়াভয় রূপ নিয়েছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব এবং নির্বাচনও তাই এর দ্বারা দারুনভাবে প্রভাবিত ছিল।
মুসলমান হলের থেকে সহ-সভাপতি হলে হিন্দু হল থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে কিংবা হিন্দু হল থেকে সহ-সভাপতি হলে মুসলমান হল থেকে নির্বাচন সাধারণ সম্পাদক করা হবে। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কিছুটা উপমশ করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫