somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুতোষ গল্প টিকটিকি ও মানিব্যাগ

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





এক
মিনু ও রনির মধ্যে ছিল বেশ ভাব। বয়সে দুজনেই পিঠাপিঠি। রোজ দুজনেই স্কুল থেকে এসে খেলতে বসে। গাড়ি খেলা, চোর-পুলিশ খেলা, পলান-চোর খেলা, কাগজের নৌকা খেলা, রাজা-রানি খেলা প্রভৃতি সকল খেলাতেই তাদের তাদের বেশ দখল রয়েছে। চোর-পুলিশ খেলতে গিয়ে রনি জ্ঞাতসারেই মিনুকে বেশ জোরে মেরে দিল। মার খেয়ে মিনুর সেকি কান্না! পাশের রুম থেকে মা সেলিনা দৌঁড়ে এল। সকল ঘটনা শুনে রনিকে আচ্ছা রকম বকে দিল। কিন্তু মিনুর কান্না তো আর কোনক্রমেই থামছে না। সেলিনা বেগম বুঝতে পারলেন মিনু বিচারে সন্তুষ্ট নয়। মিনুকে খুশি করার জন্য তিনি রনিকে একটু কানমলাও দিলেন। ছোট্ট রনি কিন্তু এতে খুব অপমান বোধ করলো। সেও ম্যা ম্যা করে কাঁদতে কাঁদতে মিনুর রুমে ঢুকলো। ওর একটা ভারি বাজে অভ্যাস ছিল। রাগ ওঠলে সামনে যা পায় তা সে ছুড়ে মারে। সেলিনা বেগম ভাবলো হয়ত কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।

মিনুকে নিয়ে তিনি পাশের বাসায় গেলেন। এদিকে মিনুর পড়ার টেবিলের একপাশে রাখা ছিল সিডি প্লেয়ার। ৪র্থ শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় কবির মামা তাকে কিনে দিয়েছে। গতকালই মাত্র এনেছে। দেখতে বেশ চকচকে। রনি প্রথমে সেটাকে ছুড়ে মারলো। নিচে টাইলসের মাঝে পড়তেই তা কয়েক টুকরো হয়ে গেল। তারপরে ধরল মিনুর বই, খাতা, জামা ইত্যাদি। টেবিলের একপাশে রাখা ছিল কবির মামার মানিব্যাগ। মানিব্যাগে তিনি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাখেন। সপ্তাহ খানেক হবে সে আমেরিকা থেকে দেশে এসেছেন। কিছুদিন থেকে আবারও সে চলে যাবে। পাসপোর্ট, গ্রীনকার্ড, অফিসের পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সে মানিব্যাগেই রাখতো। আজ কী কারণে যেন সে মানিব্যাগটি নিয়ে যায় নি।

রনি মানিব্যাগটি ধরে বাহিরে ছুড়ে মারলো। দরজার সামনেই জিহ্বা বের করে বসা ছিল পাশের বাসার ‘টমি’ কুকুর। নিজের মুখের সামনে মানিব্যাগটি পড়ামাত্রই কুকুরটি কামড়ে ধরলো। হয়ত মাংস বা হাড় জাতীয় কিছু একটাই সে মনে করেছে! আরাম করে খাবে এমনটি ভেবে একটু আড়ালে নিয়ে গেল। রনি একবার কুকুরটির দিকে তাকাল। কিন্তু কিছুই বলল না। এরপর দেখতে দেখতেই কুকুরটি মানিব্যাগসহ অদৃশ্য হয়ে গেল।

দুই
সন্ধ্যেবেলা। কবির মামা রুমে ঢুকতেই দেখল রুম লন্ডভণ্ড। ঝড়ে গৃহের যেমন অবস্থা হয় তেমনি আর কি! হন্যে হয়ে তিনি তার মানিব্যাগ খোঁজতে লাগলেন। রুমের জ্ঞাত অজ্ঞাত সকল জায়গাতেই খোঁজলেন। কিন্তু কোথাও পেলেন না। রাগে তিনি অস্থির হয়ে ওঠলেন। তার চোখ-মুখ ক্রমশই লাল হয়ে ওঠছে। মিনিটের মধ্যেই তার বাঁজখাই কণ্ঠে সমস্ত বাড়ি তোলপাড় করে তুললেন। তার গলাবাজিতে বাসার ছোটবড় সকলেই হাজির হল। কেউ কবিরের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। কেননা, মাদকসেবীদের মতোই এখন কবিরের চোখও রক্তবর্ণ। লোহা ঝালাইয়ের সময় তা থেকে বের হওয়া স্ফুলিঙ্গের মতো কবিরের চোখের কোঠর থেকেও যেন অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে! একে একে সকলেই খোঁজতে লাগলেন। কিন্তু কেউ মানিব্যাগের কোন সন্ধান পেলেন না।

খোঁজতে খোঁজতে সেলিনা বেগম যতই হয়রান হচ্ছে ততই তার রাগের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। শেষটায় সে লাঠি হাতে নিল। আজকের ঘটনার মূল হোতা যে রনি তা বুঝতে মোটেও বাকী ছিল না সেলিনার। কাজেই তাকে উত্তম-মধ্যম কিছু দিলে সব ঘটনাই বের হয়ে যাবে। আজ আর তার রক্ষে নেই। শাসন না করতে করতে সে বেশি বেড়ে গেছে। সেলিনার স্বামী ওয়াজেদ আলীও তাকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেয়। ছেলেকে আজ শাস্তি না দিলেই নয়। রনির দাদা গণি মুনশি কবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে কী একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। কেবল সাহস করে আমেনা দাদিই শুধু এইটুকু বলল- ছাওয়ালটারে না মারি বুঝায়ে বললি কাজ হতি পারে। হয়ত বুঝায়ে বললে অনেক সময়ই কাজ হয় কিন্তু আজ যে বুঝায়ে বলার দিন নয়। পাসপোর্ট, গ্রীনকার্ড আরও কত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস! ওগুলো না পেলে যে ছোট ভাইটার আমেরিকা যাওয়াই একেবারে কানা হয়ে যাবে!

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রনি সবই দেখছে। মামার রাগ দেখে ভয়ে সে একেবারে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গেল। মামার এই ভয়ানক রূপ সে ইতোপূর্বে কখনোই দেখে নি। কোনক্রমে যদি মামা জানতে পারে যে সে-ই এ কাজ করেছে কিংবা তার মাধ্যমেই এটা হারিয়েছে, তাহলে কিন্তু আজ তার আর রক্ষে নেই। রনির পাশেই দেয়ালের গায়ে ছিল এক টিকটিকি। প্রায় সময়ই সে এই টিকটিকির সাথে খেলত। টিকটিকির সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল বেশ অদ্ভুত রকমের। সে হাত বাড়ালেই টিকটিকি তার হাতের তালুতে ওঠে আসতো। দুজনে কথা বলতো। টিকটিকীয় ভাষা! কখনো বা টিকটিকির মাথায় আলতো চুম্বন দিত। আদর পেয়ে টিকটিকি চোখ বন্ধ করতো। শুধু তাইই নয় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ প্রভুভক্ত কুকুরের মতো সেও তার লেজ নাড়াত। কখনো বা চোখ পিটপিট করে টিকটিক করে ডেকে ওঠতো। এসব অদ্ভুত ঘটনার একমাত্র রাজসাক্ষী হল মিনু।

তিন
আজ এই বিপদের দিনে সে টিকটিকিকে বলল- বন্ধু, আমার আজকে খুব বিপদ। আমাকে একটু বাঁচাও না। কথা দিচ্ছি আর দুষ্টুমি করবো না। টিকটিকি একবার চোখ নাড়ল। তার চোখ নাড়াতে মনে হল সে রনির প্রতিজ্ঞাকে বিশ্বাস করেছে। তাছাড়া টিকটিকিকেও সে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। তাই কৃতজ্ঞতচিত্তে সে একবার টিকটিক করে ওঠলো। পাশেই ছিল হুলো বিড়াল। টিকটিক শব্দ শুনতেই সে ম্যাঁও ম্যাঁও করে খাবার জন্য এগিয়ে গেল। এই বুঝি সে কামড় মেরে খেয়ে ফেলবে! পরিমরি করে টিকটিকি দিল দৌঁড়। জানালা দিয়ে বের হয়ে একেবারে বাতরুমের পাশে সরু গলির মুখে এক কালো ব্যাগের মধ্যে! বিড়াল পাশ দিয়েই রাজকীয়ভাবে ঘুরছে। কিন্তু হুট করে যে এই টিকটিকির বাচ্চা তার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোথায় লুকাল তা যেন সে ভেবেই পাচ্ছে না! রনি দৌঁড়ে এল প্রিয় বন্ধু টিকটিকিকে বাঁচাতে। রুম থেকে তার দৌঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া দেখে পিছন দিক থেকে তার মা লাঠি হাতে সুউচ্চ স্বরে ডাকছে- রনি! রনি!! দাঁড়া বলছি। আজকে তোর...!

রনির দৃষ্টি তখন টিকটিকির দিকে। মশা যেমন করে মানুষকে খোঁজে বের করতে খুব একটা কষ্ট হয় না, তেমনি রনিরও টিকটিকিকে খোঁজে বের করতে কষ্ট হয় নি। সে ঠিকই খোঁজে পেল টিকটিকিকে। বাতরুমের পাশে সরু গলির মুখে রাখা এক কালো মানিব্যাগের চিপার মধ্যে সে চুপচাপ লুকিয়ে রয়েছে। কেউ আসছে বুঝতে পেরেই টিকটিকির বুকটা ধরফর করতে লাগলো। সে মনে করল আর বুঝি রক্ষে নেই। তবুও একটিবার মাথা বের করে দেখল কে আসছে। রনিকে দেখেই সে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সেই সাথে মহা খুশিতে সে টিকটিক করে ওঠলো। টিকটিক শব্দ শুনে সে মানিব্যাগটি হাতে নিল। পাসপোর্ট ও গ্রীনকার্ডের চিপার মধ্যে থেকে সে একবার চোখ পিটপিট করে পুনরায় ডেকে ওঠলো- টিক টিক টিক।


.................................................
১১.১১.২০১৪
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×