somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষবরণে বিবেক সংক্রান্তি ও বটমূলে উৎপাটিত বাংলা মূল

১৪ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগে আমার ব্লগে কোন পোস্টের রিপিট করা হয়নি। কিন্তু নতুন বর্ষবরণের ক্ষনে আজ মনে হলো এই গল্পটা অনেকের পড়া উচিৎ। এর মেসেজটা জানা উচিৎ। আমাদের কৃষ্টির গোড়ার কিছু ভ্রান্তি যা শিক্ষিত সমাজে বেমানান তা শেয়ার করতেই রি পোস্ট। কেউ কিছু মনে নেবেননা আশা করি। মন্তব্য না করুন। একবার পড়ে ভাবুন। ব্যাস। ঐ ভাবনাই একদিন বাঁধ ভাংবেই ভাংবে।
--------------------------------

সেই কাকডাকা ভোরেই শুভ ঘুম থেকে উঠে গেছে। ১৪ই এপ্রিল ভোর ৬টায় শুরু হবে রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। তার বোন নন্দী তাকে আগাম জানিয়ে রেখেছে যেন আগেভাগেই হাজির হয়ে যায়। নইলে ভীড় ঠেলে অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। নন্দী ছায়ানটেই গান শেখে। সেও মঞ্চে থাকবে। শুভ থাকে রাজশাহীতে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান দেখতেই তার ঢাকায় আসা। যদিও সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তবু এবার সংগঠন থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে।

কোনমতে হাতমুখ ধুয়ে তৈরী হয়েই শুভ ছুট দিল সিএনজি নিয়ে। পথে তার এক বন্ধুকেও সাথে নিতে হবে। চারিদিকে রঙের বন্যা.. রঙিন রঙিন মানুষে ইতিমধ্যে পথ ছেয়ে গেছে! কোন এক হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালা যেন ডাক দিয়েছে। তাই সবার মধ্যে এত সাড়া! সেই রঙের ভীড় ঠেলে কোনরকমে যথাস্থানে পৌঁছুল শুভ। সামনে মঞ্চ। আর কিছুক্ষন পরেই শুরু হবে অনুষ্ঠান।

শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান শুরুর জন্য অপেক্ষার পালা। ৫টা ৪০ বাজলো, কিন্তু মঞ্চে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। ধীরে ধীরে ৬টা বাজলো। কিন্তু এ কী! এখনো যে মঞ্চ ফাঁকা! উপস্থিত দর্শক শ্রোতার মাঝে গুঞ্জন শুরু হলো। এতাদিন ধরে ওই মঞ্চেই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা বর্ষবরণ করে নেয়া হয়। কিন্তু আজ কী হলো! ওদের কারো কি ঘুম ভাঙ্গেনি? পথে জ্যামের কারণে শিল্পীরা এসে পৌঁছুতে পারেনি? নাকি আবার কোন নাশকতার আভাস পেয়েছে তারা! অজানা আশঙ্কার ছাপ সকলের চোখে মুখে স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিও এই শঙ্কা কাটাতে ব্যর্থ।

শুভ বারবার করে নন্দীকে ফোন করার চেষ্টা করলো কিস্তু তার ফোন বন্ধ। ছায়ানটের যার যার নম্বর তার কাছে আছে, সবাইকে চেষ্টা করলো, একই অবস্থা। টেনশনে শুভর ঘাম ছুটে যাবার জোগাড়। অনুষ্ঠানের ব্যাপারতো আছেই, সাথে তার বোনের অবস্থান জানাটাও জরুরী।

সকাল ৬টা বেজে ১৫ মিনিট।

হঠাৎ মাইকে এক গুরুগম্ভীর আওয়াজ ভেসে এলো। উপস্থিত দর্শকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষন করে ঘোষনা শুরু হলো।

" সুধী, প্রথমেই আপনাদের সকলের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনারা অনেক্ষন ধরে কষ্ট করে বসে আছেন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখবার জন্য। কিন্তু আজ আমরা বর্ষবরণ করতে পারিনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে পঞ্জিকা মোতাবেক আজ ১লা বৈশাখ বা নববর্ষ না। আজ চৈত্রসংক্রান্তি।"

অনুষ্ঠানস্থলে বোমা ফাটলেও বোধকরি লোকজন এতটা হতবাক হতো না! দর্শকের মৃদূ গুঞ্জন এবার বিস্ময়ধ্বনিতে রূপনিলো। তারই মাঝে বক্তা বলে চলেছেন-

"আমরা অনেকদিন ধরেই এই দিনটা নববর্ষ হিসেবে পালন করে আসছি অথচ এটা আবহমানকাল ধরে চলে আসা প্রকৃত ক্যালেন্ডারের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। আজও গ্রাম বাংলায় অনেকেই সেই প্রকৃত পঞ্জিকাকেই অনুসরন করেন নানা উৎসবে। আজও বাঙালীর একটা বড় অংশ সেই আদি ক্যালেন্ডারকেই অনুসরণ করে। শুধু আমরাই নতুন এই ক্যালেন্ডারের অনুসারী যার সেরকম যৌক্তিক কোন কারণ আছে বলে মনে হয়না। সম্রাট আকবরের আমলে এই বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছিল এমন জ্ঞানী সব জ্যোতির্বিজ্ঞানী দ্বারা যাঁরা চোখের পলকে রাতের আকাশ পানে চেয়ে তারার অবস্থান দেখে নিখূঁত ভাবে সময় ক্ষণ দিন বলে দিতে পারতেন। বলতে পারতেন আগত অমাবশ্যা বা পূর্ণিমার সঠিক হিসেব। এই সব মহতি ব্যক্তিরাই রাশিচক্র আর পূর্ণিমার নিখুঁত সহাবস্থানের বৈজ্ঞানিক মিলনের ক্ষণ থেকেই বাংলা সন শুরু করেন। যেন তেন ভাবে না। সে হিসাবে বিশাখা, জেষ্ঠা প্রভৃতি নক্ষত্রের রাশিতে অবস্থান ও ঐ বিশেষ নক্ষত্রের পূর্ণিমা অনুসারেই বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাস নির্ধারিত হয়েছে। অথচ আজ সেই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে পরিতাজ্য বলে বিবেচিত!"

জনস্রোত যেন স্থবির হয়ে গেছে। সবাই উৎকর্ণ হয়ে পরবর্তী বাক্যটি শোনার অপেক্ষা করছে। এমন ভাবে শুনছে যেন একটা শব্দও ছুটে না যায়। ঘোষণা চলছেই-

"আমরা শিল্পীসমাজ; মানুষের কথা বলি; বিবেকের কথা বলি। এই আমরাই যদি ভুল পথে পরিচালিত হই তবে আর সকলকে সত্যের পথে আসতে বলবো কিভাবে? কোন যুক্তিতেই আমরা এই দায় এড়াতে পারিনা। আর তাই আজকের দিনটা বাংলাদেশের সমস্ত শিল্পীসমাজ একজোট হয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশেই আজ এভাবেই চৈত্র সংক্রান্তি পালন করা হচ্ছে। কাল আমরা এই বটমূলেই নতুন বছরকে বরণ করে নেব। সকলকে আজ চৈত্র সংক্রান্তিতে যোগ দিতে অনুরোধ করছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।"

ঘোষনা শেষ হয়ে গেছে। স্তব্ধ জনগন মন্ত্রমুগ্ধের মতো প্রত্যক্ষ করলো কিভাবে এক নিরব বিপ্লব ঘটে গেল। ঐতিহ্য ফিরে পেল তার যথাযথ মর্যাদা। মেকীর বিদায় হলো এক লহমায়; এক ঝটকায়।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং...
''হ্যালো....''
নন্দীর ফোন। "এই দাদা। কি হলো রমনা বটমূলে যাবিনা? এখনো ঘুম নাকি?"

শুভ ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে। ঘোর এখনো কাটেনি। কানে যেন সেই ঘোষণা এখনো বেজে চলেছে.. আজ ১লা বৈশাখ বা নববর্ষ না। আজ চৈত্রসংক্রান্তি।

সব কেমন যেন বিচিত্র ঠেকছে।

হাত ঘড়িতে দেখে সময় বেশী নেই। কোনমতে হাতমুখ ধুয়ে তৈরী হয়েই শুভ ছুট দিল সিএনজি নিয়ে। গন্তব্য রমনা বটমূল।

শুভ জানে, তার স্বপ্নের পূনরাবৃত্তি ঘটবেনা সেখানে। যথাসময়ে সবাই সেখানে প‌ৌঁছে যাবে। শিল্পীরা মঞ্চে গান পরিবেশন করে বর্ষবরণ করে নেবে। পুরো দেশ মেতে উঠবে বৈশাখী উৎসবে। সবই নিয়ম মতোই চলবে, যেমন চলে আসছে। ভুল ক্যালেন্ডার মোতাবেকই নতুন একটা বছর আসবে। আর এটা জেনেও শিক্ষিত শিল্পী সমাজ এই ঘটনার পূনরাবৃত্তি করতে থাকবে বছরের পর বছর। এক সময় এই ভুলটাই আবহমানকালের কৃষ্টির রূপ পাবে।

কেউ জেগে থেকে চোখ বন্ধ করে রাখলে তার ঘুম কোনদিনই ভাঙ্গানো সম্ভবনা।

-----------------------০------------------------

(সৌজন্যে। গুপীগায়েনের ব্লগ থেকে পাওয়া রম্য পোস্ট- বাংলা নববর্ষঃ আকবর বনাম এরশাদ চাচা থেকে অনুপ্রেরণা । )

পরিশেষেঃ
এই গল্পের চরিত্রগুলো বাস্তবে আছে। তাঁরা আমার পরিচিত। তাঁদের অবস্থানও ঠিক আছে কিন্তু এই গল্পের কোন অংশের সাথে তাঁদের কোন সম্পর্ক নেই। ১৩ই এপ্রিল সকালে শুভ গেছে ঢাকায় ১লা বৈশাখ পালনের উদ্দেশ্যেই, কিন্তু এই গল্প লেখাকালীন সময়েও সে ঘুণাক্ষরেও জানেনা এ বিষয়ে। নন্দীর বিষয়েও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। তাই পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, কেউ তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে চিনলেও এ বিষয়ে তাঁদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করবেননা বলেই আশা করি। তাঁদের কোন দায় মোটেও মোটেও মোটেও নেই। সকল দায় ব্যক্তিগতভাবে একান্তই আমার। স্বপ্নটিও।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×