somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

........................................

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউসুফ মোল্লা যখন অনেক ছোট ছিল তার সপ্ন ছিল একদিন সে অনেক বড় হবে, সবাই তাকে চিনবে, রাস্তা দিয়ে যখন হেটে যাবে সবাই ঘুরে তাকে দেখবে বলবে “ ঐ দেখ আমাদের ইউসুফ “ গরিব ঘরে জন্ম ইউসুফের সপ্ন, সপ্নই থেকে যায়। ইস্কুলের গন্ডি পার হতে পারে না, এক সময় দালালের হাত ধরে চলে আসে বিদেশে। উরদু পাশে জানত অল্প অল্প ইংরেজি কিন্তু এই আরবদের দেশে আরবি ছাড়া কাজ চলে না। সেটাও শিখে ফেলল দ্রুত, না শিখে উপায় কি? বেচে থাকতে চাইলে নিজেকে কত ভাবে বদলাতে হয় সে শুধু হতভাজ্ঞ লোকেরাই জানে। দেশে থাকা ছোট ভাই বোনদের মুখ যখন মনে পরে তখন ৪৩ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচেও পিচ ঢালা রাস্তায় কাজ করতে হয়। বাবাতো জন্ম দিয়েই দায়িত্ত শেষ, পেতেছে নতুন সংসার। প্রথম প্রথম খুব কস্ট হত। কখন কখন মরুভুমিতে কখন কখন রাস্তার সাফ সুতরের কাজ, মাঝে মাঝে একলা বসে কাদতো, গাল বেয়ে সে পানি পড়ার আগেই শুকিয়ে যেত রোদ্রের তাপে। ধিরে ধিরে অবস্থার পরিবরতন ঘটে, ইউসুফ নিজের একটা বাবসা খোলে। নিজের একটা দোকান। সুঠাম দেহের ইউসুফ একদিন আবিস্কার করে দাড়িতে সাদা আভা লেগেছে, মা তাড়া দেয় এই বার নিজের একটা সংসার কর। গুড়িয়া ,হ্যা একরাম ভাইজানের মেয়ে। প্রতি সকালে দরজায় নুপুরের ঝুন ঝুন আওয়াজি বলে দেয় গুরিয়া এসেছে। ইউসুফ অনুভব করে তারও একটা গুড়িয়া দরকার খুব, দোকান থেকে যখন ফিরবে গুড়িয়া তার বুকের ওপর বসে খেলবে। কিন্তু তার আগেতো গুরিয়ার মা কে ঘরে আনতে হবে। গেলবার দেশে গিয়ে নিয়ে আসে গুড়িয়ার মাকে। এখন যেন ঘরে ফিরে শান্তি খুজে পায় ইউসুফ, যখন গুড়িয়ার মার হাল্কা নুপুরের আওায়াজ কানে আসে। ইউসুফ আজ সব ভুলে গেছে, সেই বাবার ফেলে যাওয়া, ম্রুভুমিতে কাটান দিন গুল। ইউসুফ শুকরিয়া জানায় প্রভুকে।
আজকাল কাজের ব্যাস্ততার জন্য ইউসুফ করমচারি ফিরজ কে দিয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে আসে।
বাবসা বাড়াচ্ছে তাই কাজের চাপ বেশি। আগের মত আর সময় দিতে পারে না আসমা কে। গতরাতে ঘুমের ঘোরে হাত দিয়েছিল আসমার গায়ে, আসমা হাতটা সরিয়ে দিয়েছিল। দুপুরে ফিরজকে খাবার আনতে পাঠাবার পর মনে পরল ইউসুফের, বুঝতে পারে তার ব্যাস্ততা আসমাকে কস্ট দিচ্ছে। দোকান গুছিয়ে নিজেই রওনা দিল বাসার পথে। এতক্ষনে ফিরজের রওনা দেবার কথা, পথে পেয়ে গেলে চাবি দিয়ে দেবে দোকানের আজ আর সে দোকানে যাবেনা। ফিরজ় ছেলে টা অনেক ভাল দেশ থেকে আশার পর তার দোকানে কাজ করছে, অনেক বিশস্ত। বাড়ির দরজায় ফিরজের চপ্পলটা দেখে, বুঝল ও এখন বের হয়নি, ভালই হল, এক সাথেই খাবে দুপুরের খাবার। ঘড়ে ঢুকে এদিক সেদিক কাউকে না দেখে একটু অবাকই হল সে। আসমাই বা কোথায়? শোবার ঘরের দিকে এগুলো, হয়ত যা দেখলো সেটা না দেখাই ভাল ছিল। খাটের কোনায় যে মাকড়শার জাল ইউসুফ আর আসমার প্রনয়ে ভাংতো সেটা আজ ফিরজ় ভাংছে। ব্যাস্ততা যে ইউসুফের সংসারকে তার থেকে কত দূরে নিয়ে গেছে সেটা হয়ত তার চিন্তাতেও ছিল না। ইউসুফ আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, বকরি ঈদের জন্য কেনা ছুরিটা বসিয়ে দেয় ফিরজ়ের বুকে। বাবার অবহেলা, অনাহারে কাটানো শৈশব, ইশকুলের বেতন যোগার করতে না পারা, দালালের চক্করে পরে সুমুদ্রের লোনা জলে ভিজে বিদেশে আসা, অবৈধ অভিবাসনের জন্য দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়ান, মরুভুমিতে শুকিয়ে যাওয়া চোখের জল সব কিছুর জন্য যেন ইউসুফ আজ দায়ি করছে ফিরজ়কে। ক্রোধে তার শরীর কাপছে, সব শক্তি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে চলছে ফিরজকে। ফিরজের নিথর দেহটা অনেক আগেই মাটিতে লুটিয়ে পরেছে কিন্তু ইউসুফ থামছে না। বুকের ভেতর জমে থাকা অবহেলা আর কস্টের বরফ আজ গলে ঝরছে লোনা জল হয়ে। আসমার কান্না কানে আসে কিন্তু তার দিকে তাকাবার কোন ইচ্ছে আর ছিলনা ।

এই দেশে খুনের আসামির শাস্তি হয় শিরচ্ছেদ হয়ে। জানের বদলে জান। চুরি করলে হাত কেটে নাও। যেদিন আসামি আনা হয় আম্বুলেঞ্চে ফায়ার সারভিসের গাড়ি এনে রাখা হয় আল জাফারি মসজিদের চারপাসে। রাস্তা আটকে দেয়া হয়। চারপাসে লোকজন ভিড় করে দেখে খুনির শিরচ্ছেদ হচ্ছে, বিচার দেখে বাকিরা ভয় পায় হয়ত নিজেকে সরিয়ে রাখে অপরাধ থেকে। ইউসুফ কতবার গিয়েছে আল জাফারি মসজিদে দেখতে। কিন্তু পারেনি দেখতে, বুক ধরফর করে তার। এখনতো ইউসুফ কে দেখবে সবাই। দিন গোনে সে, হটাৎ কিভাবে যেন তার আয়ু বেড়ে যায় কিছুদিন। ওকে ওর দেশে পাঠান হবে, শাস্তি হবে দেশের আদালতে।

বিমানবন্দর এমন একটা জায়গা যা কখন ঘুমায় না। যেদিক তাকান যায় মানুষ আর মানুষ। এদের মাঝে দিয়ে ইউসুফ যাচ্ছে সামনে পিছনে পুলিশ তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন সে পালাতে না পারে। হায়রে পালাবে কি করে পা দুটো তো শেকলে বাধা। আর পালিয়ে আজ সে কোথায় যাবে? ছোটবেলায় সপ্ন দেখেছিল একদিন সবাই তাকে ঘুরে দেখবে…বলবে “ঐ তো আমাদের ইউসুফ যায়। তাইতো আজ সবাই ইউসুফ কে দেখছে। পায়ে বাধা শেকলের ঘরষনের শব্দ, ধুষর পোশাকে পুলিশ অথবা ইউসুফের পাথর দৃষ্টি কিছু একটা সবাই কে আকশন করছে। কিন্তু ইউসুফের আজ কোন ভাবান্তর নেই। “ দুনিয়া তো হামে পেহলেসেই মার ডালা” দেশ থেকে আসার সময় মার কান্না থামাতে ইউসুফ এই কথাটাই বলেছিল। আজ কাল আর গুরিয়ার পায়েল এর আওয়াজ শোনে না সে, কানে আসে শেকলে শেকলে সংঘরসের চাপা আরতনাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×