খবরটোয়েন্টিফোর.কম: শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা আজ কাল তেমন কোনো বিরল ব্যাপার নয়৷ জার্মানিতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ শরীরে সূচ ফুটিয়ে নানা রঙের উল্কি আঁকান৷ এই সব রঙে প্রায়ই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে৷ অমোচনীয় কালি দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে শরীরে রঙ বেরঙের চিত্র আঁকাকে উল্কি বলা হয়৷
বহু পুরানো এই পদ্ধতিটি অনেক জাতির মধ্যেই কমবেশি প্রচলিত৷ এক কালে কয়েদি ও ক্রীতদাসদের শরীরে উল্কি দিয়ে এঁকে দেয়া হত নানা রকমের নকশা৷ যা সহজে ঢেকে রাখা বা মুছে ফেলা যেত না, সারা জীবন বহন করতে হত৷ কিন্তু এখন যে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন শরীরের উল্কি আঁকাতে৷ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না তারা৷ যদিও উল্কির রঙে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে৷
নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ
সম্প্রতি জার্মানির বাডেন ভ্যুর্টেনব্যার্গ রাজ্যের উদ্যোগে উল্কি আঁকার ব্যাপারে জার্মানি ও ইউরোপীয় আইন কানুন কঠোর করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এই রাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বির্গিট বিন্সলের মতে, উল্কির চেয়ে প্রসাধনীর সামগ্রী নিয়ন্ত্রণের আইন কানুন বরং কঠোর৷ অথচ মেক-আপ চামড়ার ওপর সাময়িকভাবে থাকে, কিন্তু উল্কি থাকে সারা জীবন৷
জার্মানিতে ২০০৯ সাল থেকে ট্যাটু সংক্রান্ত একটি জাতীয় বিধিবিধান চালু হয়৷ ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ইউরোপব্যাপী নতুন সুপারিশের কথা শোনা যাচ্ছে৷ তবে বির্গিট বিন্সের কাছে তা যথেষ্ট নয়৷ তাঁর মতে, এই সুপারিশ ইউরোপের অল্প কয়েকটি দেশেই শুধু কার্যকর হবে৷
সম্প্রতি জার্মান সংসদের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট’এ বিষয়টির ওপর একটা দিক নির্দেশনা দেয়া হল৷ এতে বলা হয়েছে, উত্পাদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে, ট্যাটুতে ব্যবহার করা পদার্থ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷ এছাড়া এমন সব পদার্থের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে, যেগুলি ক্ষতিকারক নয়৷
অধিকাংশ উপাদানই বিপজ্জনক
সেই ২০১০ সালেই ফ্রাইবুর্গ ও কার্ল্সরুয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক তদারকি দপ্তরগুলি উল্কির রঙে ক্ষতিকর পদার্থের ব্যাপারে সতর্ক করেছিল৷ ট্যাটুতে ব্যবহৃত ৩৮ উপাদানের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই অনুমোদন নেই৷ অর্ধেক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোমাটিক অ্যামিন, নাইট্রোসেমাইন ও ফেনোল নামের রাসায়নিক পদার্থ৷ এই গুলিকে ক্যানসার উদ্দীপক বলেও মনে করা হয়৷ বির্গিট বিন্সলে জানান, ‘‘কিছু কিছু পদার্থ থেকে তৈরি রঙ এমন সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার নাম থেকেই বোঝা যায় এটি কী৷ যেমন ‘ফেরারি রোট’৷ গাড়ি রঙ করার জন্য ব্যবহার করা হয় এই রঙ৷ যার সন্ধান পাওয়া যায় ট্যাটুর রঙের মধ্যেও৷”
পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই রঙের উপাদান মানবদেহের লসিকা গ্রন্থির মধ্যে জমা হতে পারে৷ বিন্সলে বলেন, ‘‘লসিকা গ্রন্থির প্রক্রিয়াটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে শরীরের বিশুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে৷ এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরে থাকাটা বেশ বিপজ্জনক৷”
উল্কি দূর করতেও ঝুঁকি
অনেকে উল্কি আবার দূর করাতেও চান৷ এজন্য নিতে হয় লেসার রশ্মির সাহায্য৷ এক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ত্বকে আঁকা রঙের উপাদান ধ্বংস হওয়ার পর শরীরে কী প্রতিক্রিয়া ঘটে, তা কেউ জানেনা৷ তবে বিন্সলের মতে, ট্যাটুর রঙের ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রমাণ এখনও মেলেনি৷
ট্যাটু ওয়েস্টার্ন স্টাইল
বিশেষজ্ঞরা এখন চিন্তা ভাবনা করছেন, সংশ্লিষ্টদের কীভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা যায়৷ উল্কি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানো হয়নি এতদিন৷ বড় কোনো কোম্পানি থেকে নয় বরং ছোট ছোট সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কেনা হয় উল্কির সামগ্রী৷ নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতাও তাদের নেই৷ ইদানীং বিশেষ করে চীন থেকেই আসছে উল্কি আঁকার সরঞ্জাম৷
শুধু উল্কির ভক্তরাই নয়, উল্কি প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ীরাও এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা চান৷ নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া রাজ্যের বড় এক উল্কি স্টুডিওতে কাজ করেন অ্যান্ডি৷ আপাদমস্তক উল্কি আঁকা এই ব্যক্তি মনে করেন, এই ধরনের আলোচনা সমালোচনার ফলে উল্কি ব্যবসায়ী ও স্টুডিওর নাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে৷ অ্যান্ডির ভাষায়, ‘‘লোকের মুখে মুখে চলা নেতিবাচক প্রচারণার চেয়ে, মন্দ কিছু আর নেই৷ খদ্দেরদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে, তা দ্রুত ছড়িয়ে যায়৷”
উল্কির রঙ প্রস্তুতকারীরা রাজনৈতিক দিক নির্দেশনাকে কতটা মেনে চলবেন, সে ব্যাপারে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা৷ সুঁই ফুটিয়ে যে রঙ ঢোকানো হয় শরীরে, তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো প্রয়োজন৷ কিন্তু এই পথটা যেমন দীর্ঘ তেমন ব্যয়বহুল৷ প্রসাধনী শিল্পের মত অতটা আর্থিক সংগতি ট্যাটু শিল্পের নেই৷