somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টিভেজা ধর্ষণের গল্প

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিতি অনেকক্ষণ হল দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মায়ের ঘরের দরজা। ঘরে ঢুকতেই এসেছিলো ও কিন্তু দরজা ধরেই দেখলো ওর মা রেহানা সেলাই করছে। সেই থেকে দরজায় দাঁড়িয়ে সেলাই দেখছে মিতি। কি সুন্দর একটা বেপার। সুতাগুলো একবার এদিকে যায় , এর পরেই ঐ দিকে। শেষমেষ নকশাটা কি সুন্দর লাগে।
মিতি এবার ক্লাস টেন এ উঠলো। মিতির দিকে তাকালে সবাই প্রথমেই যে কথাটি ভাববে তা হল, মেয়েটা তো অনেক সুন্দর দেখতে। মিতি নিজেও জানে এটা। সুন্দরী মেয়েদের জানতে হয় যে তারা সুন্দর। কিছু মানুষ থাকে যাদের দেখলেই মনে হয় একটু কথা বলা যেত, মিতি হল সেই গোত্রের মেয়ে। বিয়েবাড়িতে গেলে সবসময়ই দেখা যায় ছেলেরা চেষ্টা করে ওর সাথেই কথা বলতে , ওর আশপাশেই থাকতে। এই করতে করতেই সেবার এক কাহিনী হয়ে গেল। গত কোরবানী ঈদের কয়েকদিন আগের কথা-
মিতি, রেহানা আর মিতির ভাই শাহেদ গিয়েছিলো রেহানার এক আত্মীয়ের বিয়েতে। ঝুম বৃষ্টি ছিল সেদিন। গাড়ি থেকে নেমে কিছু বোঝার আগেই পুরো ভিজে গেল মিতি। শাড়ি লেপ্টে গেল গায়ের সাথে। একবার ভাবলো মা কে বলবে যে ও ঢুকবে না আর বিয়েতে, কিন্তু সাহস পেল না। বাবা জানতে পারলে খুন করে ফেলবে। মিতির বাবা ডাক্তার। অর্থোপেডিক্সের আরমান সাহেব বললে শহরের অনেকেই চিনতে পারেন।
বিয়েতে ঢুকতেই হল। ঢুকার পরেই মা আর শাহেদ চলে গেল এক এক দিকে। আঁচল দিয়ে শরীর ঢাকতে ঢাকতে মিতি হঠাৎ দেখলো সুন্দর দেখতে এক ছেলে আসছে ওর দিকে। সোজা ওর সামনেই দাঁড়ালো ছেলেটা। অবাক হয়ে মিতি দেখলো ছেলেটার চোখ নির্লজ্জ্বের মত ওর গলার নিচের দিকে।
- তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে কিভাবে?
গা জ্বলে গেল মিতির ছেলের প্রশ্ন শুনে। আরে গাধা, বৃষ্টিতে ভিজে কিভাবে মানুষ? রাগ গোপন করে মিতি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
“বাইরে যে বৃষ্টি, গাড়ি থেকে বের হয়েই ভিজে গেলাম।”
কথা বলতে খুবই অস্বস্তি লাগছিল মিতির। কারণ একটাই, ছেলেটার চোখ ওর পুরো দেহে ঘুরছিলো। ‘চোখ দিয়ে ধর্ষণ’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে মিতির বন্ধুমহলে। সেটাই হচ্ছিল মিতির সাথে। বিরক্ত হয়ে মিতি বললো,
-“আমার যেতে হবে, সরি।” ছেলেটিকে কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেল ও আরেকদিকে। কান্না পাচ্ছে ওর অনেক। আচ্ছা , ছেলেগুলো সব এমন কেন? এসব নোংরা চিন্তা ছাড়া ওদের মনে আর কিছু নেই?



মিতি এখনো দরজা ধরেই দাঁড়ানো। দাঁড়িয়েই ভাবছিল সেই দিনের কথা। কত তাড়াতাড়ি দিন শেষ হয়ে যায়। আজকেও সেদিনের মতই ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি নামলেই মিতির সেই দিনের কথা মনে পড়বেই কারণ সেই দিনটাই আজকে ওর জীবনটা বদলে দিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই অবশ্য বৃষ্টির জন্য পাগল মিতি। সব মানুষের মাঝেই বৃষ্টিতে ভেজার বাসনা থাকে। মিতির বয়সের মেয়েদের একটু বেশিই থাকে। মিতি দরজায় দাঁড়িয়েই ঠিক করে ফেললো, মা কে যে কথাটা বলতে এসেছে সেই কথাটা বলেই ও ছাদে চলে যাবে। ভিজতে হবে প্রাণ ভরে। ওদের ছাদ তের তলায়। ও মনে প্রাণে চাচ্ছে যেন বৃষ্টিটা হঠাৎ থেমে না যায়।


মিতি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে থাকুক। এরমধ্যে আমরা সেই ছেলেটির সাথে পরিচিত হয়ে আসি। ছেলের নাম অনিক।
অনিক পড়ে ইউনিভার্সিটিতে, থার্ড ইয়ারে। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে বলতে যা বোঝায়, ও ঠিক তাই। এরকম ছেলেদের আরেকটা নাম আছে , তা হল ‘দুধ-কলা’। অনিকের কথা গল্পে আসার কারণ হল, অনিক হচ্ছে মিতির প্রেমিক। মিতি অনিককে ভালবাসে এবং অনিক হল সেই ছেলে যে বছরখানেক আগে মিতির বৃষ্টিভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছিলো মিতির সাথে সেই বিয়েবাড়িতে।


অনিক আর মিতির সম্পর্কটা অদ্ভূত। দুইজন দুইরকম মানুষ। সম্পর্কের শুরুটা অবশ্য অতও অদ্ভূত নয়, বিয়েবাড়ি থেকে আসার পরদিন মিতির কাছে ফোন আসে এবং কথোপকথনটা হয় এরকম-
- হ্যালো, কে মিতি?
- জ্বি, কে বলছেন?
- আমি অনিক, গতকাল বিয়েবাড়িতে দেখেছিলাম তোমাকে।
-ও আচ্ছা।
- আচ্ছা মিতি, তোমার অনেক ছেলেবন্ধু?
- না তো, কেন বলতো?
- আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি?
মিতি কোন উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দিয়েছিলো। অনেক রাগ লাগছিলো ওর, ভয়ংকর রাগ। রাগ হলেই ও বারান্দায় যেয়ে বৃষ্টি কল্পনা করে। সেদিন ছিল কাঠফাঁটা রোদ। মিতি বারান্দায় যেয়ে কল্পনা শুরু করলো, চারদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। ঝড় আসছে, প্রচণ্ড ঝড়।
সেদিন রাতে মিতিই ফোন দেয় অনিককে। সৃষ্টিকর্তা তরুণীদের মত ভাঙ্গার আয়োজন কম করে রাখেন নি। মিতিও সব মেয়েদের মত মন থেকে চিন্তা করে, মন দিয়েই সিন্ধান্ত নেয়। ছয়দিনের মাথায় শুরু হয় ওদের সম্পর্ক, প্রস্তাবটা মিতিরই ছিল।


মিতি ঢুকে গেল দরজা দিয়ে। রেহানা জিজ্ঞাসা করলেন,
- “কিরে কিছু বলবি মা?”
- হ্যা”।
- “বল”
মিতি ইতস্তত না করে একবারেই বললো,
-“মা আমি প্রেগন্যান্ট।”
রেহানার মনে হল উনি শুনেননি ঠিকমত কথাটি। কি বললো মিতি?
- মা, আই এম সরি।
রেহানা ডাকলেন,- “মিতি কাছে আয়।”
মিতি ঠোঁট কামড়ে ধরে মায়ের কাছে গেল। ছোটবেলা থেকেই ও দেখেছে ঠোঁট জোরে কামড়ে ধরে রাখলে বৃষ্টি নামে না, কিন্তু তাও আজকে কেন জানি বৃষ্টি থামছিল না।
মিতি কাছে যাওয়া মাত্রই রেহানা একটা চড় বসালেন ওর গালে। সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট কেটে গেল মিতির।
-“মা, আমি ভুল করেছি। অনিক আমাকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করেছে। আমি ভালবাসতাম ওকে, আমি কিছুই বলি নি। তোমার যে শাস্তি খুশি দাও আমাকে।”
রেহানার চোখ জ্বলছিল, তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন উনি ,
-“কবের ঘটনা?”
মিতি গ্রীষ্মের বৃষ্টির সাথে সবই বললো মা কে। কিভাবে ওকে অনিক নিয়ে গেল ফাঁকা বাসায়, কিভাবে ওর বন্ধুরা ভিডিও করেছে ওর আর অনিকের সবকিছু। কিভাবে ভয়ে বারবার ওর যেতে হয়েছে সব নোংরামির মধ্য দিয়ে।
সব শেষে মিতি বললো, “মা তুমি অনিককে কিছু বলবে না।”
- “কেন?”
- “আমি ওকে এখনও ভালবাসি মা।”
রেহানা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে। ক্লাস টেনে পড়া এই মেয়েটা কি উনার নিজের মেয়ে? ছোটবেলায় একেই জড়িয়ে ধরে রাখতেন যখন ঝড় হত? স্পষ্ট মনে আছে রেহানার, যখন বজ্রপাত হত – কেঁপে উঠতো মিতি বারবার, তখন রেহানাকে বলতে হত, “আমি আছি তো মা, তোমার কিছু হবে না আমি থাকতে।” তাও কাঁদতো মিতি। কখনো কখনো বৃষ্টির ইচ্ছে করে না নামতে, কিন্তু বৃষ্টি নিজেও তো বাধা থাকে প্রকৃতির নিয়মেই।
রেহানা মিতিকে শান্তমুখে বললেন, “তোর বাবাকে কিছু বলবো না, যা রেডি হ, ক্লিনিকে যাবো কোন একটা।”



একটু আগেই মিতির এবোরশন হয়েছে। ও আর রেহানা এখন রিক্সায়। হুড উঠিয়ে দেয়া রিক্সার। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই পাগলের মত কাঁদছে রেহানা। মিতি কাঁদছে না, মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু মনে হয় না ও দেখছে ওর মা কে। একটু আগেই অনেক ইচ্ছা করছিলো ওর ভিজতে, কিন্তু এখন কেমন শূণ্য লাগছে। বাচ্চাটার জন্য কষ্ট হচ্ছে। আহারে, ওর কি দোষ ছিল? ও তো জানতেও পারলো না যখন বৃষ্টি আসার আগে চারদিক অন্ধকার হয়ে বাতাস শুরু হয় তখন কেমন লাগে। ও তো কোনদিন জানবেও না বর্ষার সবচেয়ে আজব ব্যপারটা।
বর্ষার বৃষ্টির শেষ ফোঁটাও প্রথম ফোঁটার মতই শীতল থাকে।



সন্ধ্যায় সুইসাইড করে মিতি। ছাদ থেকে লাফ দেয় ও। ওর প্রিয় তেরতলার ছাদ। লাফ দেয়ার সময়ও বৃষ্টি ছিল তুমুল বেগে। প্রকৃতি একটু দয়া করেছে ওর জন্য, বৃষ্টি লাশের চারদিকে কোন রক্ত জমতে দেয় নি।
কেন মিতিদের সাথে এত অবিচার করা হয়?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×