somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بسم الله الرحمن الرحيم

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ

যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম৷ আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী৷ হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন৷

ইমাম মুসলিম এর প্রথম অংশ বর্ণনা করেছেন৷

অর্থাৎ একজন মুসলিম তার কথা কিংবা কাজের দ্বারা অপর মুসলিমকে কষ্ট দেয় না৷ যে নিন্দা করা, গালমন্দ করা, দোষ বর্ণনা করা, অপবাদ দেয়া, আক্রমণ করা কিংবা উপহাস করার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়, তার জিহ্বা থেকে মানুষ নিরাপদ নয়৷ তেমনি যে কাউকে আঘাত করা, হত্যা করা, কারও সম্পদ হরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে কাউকে কষ্ট দেয়, তার হাত থেকে মানুষ নিরাপদ নয়৷ অবশ্য জিহ্বা বা হাতের দ্বারা কষ্ট দেয়ার বিষয়টি আরও ব্যাপক হতে পারে, যেমন কাউকে জিহ্বা কিংবা হাতের অঙ্গভঙ্গির দ্বারা কষ্ট দেয়া৷ আবার কখনও মানুষ পরোক্ষভাবে অন্যের কষ্টের কারণ হয় – তারাও এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে৷ যেমন কোন মজলিসে কেউ একজন ব্যক্তিকে উল্লেখ করে যেন অন্যরা তার দোষ আলোচনা করতে পারে৷ কেউ লোক ভাড়া করে কাউকে হত্যা করায়, কারও জমি দখল করে নেয়, কারও সম্পদের ক্ষতি করে ইত্যাদি৷

এই হাদীসে মানুষকে কষ্ট না দেয়ার বৈশিষ্ট্যকে সরাসরি ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে: এই বৈশিষ্ট্য যার নেই, তার যেন ইসলামই নেই! যদিও এখানে ইসলাম সম্পূর্ণ না থাকা উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য ইসলামের পূর্ণতা না থাকা তথা ঘাটতি থাকা৷ অর্থাৎ ইসলামের অন্যান্য বিধান পালনের পাশাপাশি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ হবে, তার ইসলাম পরিপূর্ণ হবে, নতুবা তার ইসলামে অপূর্ণতা থেকে যাবে৷ এজন্য হাদীসের কোন কোন ভাষ্যে এসেছে, নবীকে প্রশ্ন করা হল:

أَيُّ الْإِسْلَامِ أَفْضَلُ
কোন ইসলাম সর্বোত্তম?

অথবা

أَىُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ

মুসলিমদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?

এর জবাবে তিনি এই কথাটি বলেছিলেন৷

এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে একজন মুসলিমের জান, মাল ও সম্মান অলংঘনীয়। এজন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেছিলেন:

إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا

নিশ্চয়ই তোমাদের পরস্পরের জান, মাল ও সম্মান ঠিক তেমনি অলংঘনীয় যেমনিভাবে তোমাদের এই নগরীতে [অর্থাৎ মক্কা নগরী] এই মাসের এই দিনটি [অর্থাৎ যিলহজ্জের ১০ তারিখ] পবিত্র৷১

অপর হাদীসে তিনি বলেন:

كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ

প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের জীবন, সম্পদ ও সম্মান অলংঘনীয়৷২

আজ মুসলিমদের মধ্যে সালাত, সাওম, যাকাত, হজ্জ্ব জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো পালনের গুরুত্ব যতটা আলোচিত ও উপলুব্ধ হয়; মানুষের জান, মাল ও সম্মানের নিরাপত্তার গুরুত্ব ততটা আলোচিত কিংবা উপলুব্ধ হয় না৷ এজন্য মানুষ অপরের গীবত বা পরচর্চা, অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-উপহাস করে কার্টুন আঁকা, পত্র-পত্রিকায় কিংবা বক্তৃতার মঞ্চে কাউকে প্রকাশ্যে নিন্দা, গালমন্দ করা – এগুলোকে কোন অপরাধই মনে করে না। অন্যের জান-মাল হরণ করে, অন্যের ক্ষতি করেও একজন মানুষ নামায-রোযা-হজ্জ্ব পালন করে তসবী হাতে নিয়ে সমাজে ভাল মানুষ সাজতে পারে৷ ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে, জনগণের সম্পদ হরণ কিংবা ধ্বংস করেও মানুষ ভাল মুসলিম থাকতে পারে!

উপরোক্ত হাদীসটি তাই আমাদের অনেকের জন্যই ইসলামের মহান শিক্ষার এক নতুন দুয়ার ও অদেখা দিগন্তকে খুলে দেয়৷ ইসলামের শিক্ষা ব্যাপক, আর এর ব্যাপক শিক্ষার একটা বড় দিক জুড়ে রয়েছে মানুষের অধিকার, তাদের জান-মাল ও সম্মানের নিরাপত্তার বিষয়টি৷ এর সাথে সংশ্লিষ্ট বহু আয়াত ও হাদীস মানুষকে কষ্ট দেয়ার ফলে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি ও পরিণতি বর্ণনা করেছে এবং যারা তা থেকে বিরত থাকে, তাদের প্রতিদান বর্ণনা করেছে৷

কারও দোষত্রুটি তালাশ করা, আক্রমণ করা, গালমন্দ করা, কিংবা আঘাত করা, নির্যাতন করা, সম্পদ হরণ করা থেকে যারা সতর্ক – এটি তাদের অন্তরের পরিচ্ছন্নতার প্রমাণ৷ যারা আল্লাহর ভয়ে মানুষকে তাদের জিহ্বা ও হাতের আঘাত থেকে রেহাই দেয়, তারা ইসলামের অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোও যথাযথভাবে পালন করবে – এটাই অধিক সম্ভাব্য৷ এর বিপরীতে, ইসলামের বাহ্যিক অনুষ্ঠানগুলো পালন করাই অন্তরের পরিচ্ছন্নতার প্রমাণ নয়৷

এই হাদীসটিতে আরও রয়েছে প্রকৃত হিজরতের পরিচয়৷ হিজরত বলতে সাধারণভাবে আল্লাহর রাস্তায় দেশত্যাগ করাকে বোঝায়৷ অর্থাৎ হিজরত হল দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য অবিশ্বাসীদের ভূমি ত্যাগ করে মুসলিমদের ভূমিতে বসতি-স্থাপন৷ যে হিজরত করে, তাকে মুহাজির বলা হয়৷ এই হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন এক প্রকার হিজরতের পরিচয় তুলে ধরেছেন, যা আরও ব্যাপক – যা প্রতিনিয়ত সকলকেই করতে হয় – আর তা হল আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে ত্যাগ করা৷ যে আল্লাহর অবাধ্যতাকে ত্যাগ করে তাঁর আনুগত্যের গণ্ডীতে প্রবেশ করে – সে-ই প্রকৃত মুহাজির৷ পাপ পরিত্যাগ করা হল সেই হিজরত যা সবাই সবসময় করতে পারে, বরং তা করতে তারা আদিষ্ট৷

এই হাদীস থেকে আমরা যে শিক্ষাগুলো পাই তা সংক্ষেপে এই:

১. ইসলাম ও ঈমানের স্তরের তারতম্য হয়৷ কারও ইসলাম পূর্ণ, কারও অপূর্ণ৷ কারও ইসলাম অপরের থেকে উত্তম৷

২. ভাল কাজের তারতম্য অনুসারে ইসলামের স্তরের তারতম্য হয়৷

৩. ইসলাম শুধু বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইসলামের শিক্ষা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনের গভীরতম বিষয়গুলোকে স্পর্শ করেছে৷

৪. কথা কিংবা কাজের দ্বারা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা ইসলামের একটি অন্যতম শিক্ষা৷ যার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য নেই, তার ইসলাম অপূর্ণ৷

৫. কথার ব্যাপারে খুব সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিৎ৷

৬. পাপকাজ পরিত্যাগ করাই প্রকৃত হিজরত৷

৭. দ্বীনের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানকে যথার্থভাবে আদায়ের চেষ্টার পাশাপাশি অন্তরের অবস্থার দিকেও আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিৎ৷

………………………

১বুখারী, মুসলিম৷
২মুসলিম৷
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×