২০১০ সালের ৯ নভেম্বর আইরিশ ডেইলি মিরর এবং ১৪ নভেম্বর বৃটেনের দ্য উইকলি নিউজ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে জানায় ব্রিটেনের ক্যাম্পেইন মিডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই খবরে মুসা বিন শমসেরের বিচিত্র বিলাসবহুল বর্ণাঢ্য জীবনের বৃত্তান্ত-বিবরণও দেয়া হয়।
তার আগে একজন ঘৃণ্য নরপিশাচ, নৃশংস, নপূংশক ও নির্যাতক এর সাথে আমরা পরিচিত হব । নামটা আশা করি স্মরণ করাতে হবেনা
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, তখন দৈনিক জনকন্ঠে 'তুই রাজাকার' শীর্ষক এক ধারাবাহিক সিরিজে ফরিদপুরের কুখ্যাত রাজাকার মুসা বিন শমশেরের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে লোমহর্ষক কাহিনী ছাপা হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জনকন্ঠের সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের ওপর নারকীয় হামলা চালায় মুসা বিন শমশেরের ভাড়াটে গুন্ডারা। পরে গুরুতর আহত ওই সাংবাদিকের পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। শুরু হয় তার পঙ্গুজীবন।
আরো পরে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসে মুসা বিন শমশের। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা লন্ডনের হ্যামারস্মিথ এলাকায় বসবাস করছেন।
মুসা বিন শমসের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার আকরাম কোরায়শী ও আরো অনেক সৈন্য নিয়ে যখন ফরিদপুরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালায় ঢুকে তার কেয়ারটেকার কেষ্টমন্ডলকে হত্যা করে মন্ডলের চার কন্যা ননী, সোহাগী, বেলী ও লতাকে ধর্ষনের পর ধর্ষন করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। ওই হানাদার আর্মি অফিসার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মদন গোপাল আঙিনা এলাকার মেয়ে কমলা ঘোষকে ধর্ষন করে বীরত্বের বুক ফুলিয়ে চলে গিয়েছিল। ননী ও বেলীকে পাকিস্তানী আর্মিরা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওদিকে কমলা ঘোষের স্বামী জানতে পারে তার স্ত্রী’র লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হবার ঘটনা । স্বভাবতই এই স্বামী বঙ্গ জননী কমলাকে আর ঘরে নেয় নি । ফলশ্রুতিতে কমলা দেশের বাইরে আশ্রয় নেয় সময়ের পরিক্রমা। এখন তিনি দেশের বাইরে বেঁচে আছেন একা হয়ে ।
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তালিকায় ফরিদপুর জেলার প্রধান ১৩ জন রাজাকারের মধ্যে তার নাম আছে শুরুর দিকেই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ঘৃন্য রাজাকার মুসা বিন শমশের ওরফে নুলা মুসা নিজেকে রীতিমতো 'মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' হিসেবে দাবি করে বসে আছে! '
ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি'র আহ্বায়ক ডা. এমএ হাসান আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী খোঁজার বিষয়ে বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ন ও নিষ্কলুষ করার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই জরুরি ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি করা উচিত।' (আমাদের সময়, ২৮ এপ্রিল, ২০১০)
নুলা মুসা কিংবা প্রিন্স মুসাঃ যে রাজাকারের সম্পদ আর ক্ষমতার কথা শুনে আপনি চমকে যাবেন- আজকের পর্ব -জ্বি হুজুর
(যমুনা গ্রুপের সাথে এত খাতির কেন বুঝলাম না )
২০১০ সালে তিনি আবার তোলপাড় তুলেন পশ্চিমা জগতে। এ তোলপাড় তার সাত বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাংকে আটকে যাওয়ার কারণে। এ একাউন্ট জব্দ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষই। বলা হয়েছে, মুসা বিন শমসেরের ‘লেনদেন অনিয়মিত’।
এনিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার লন্ডনস্থ আইনজীবিরা। এ বিশাল অর্থ তিনি গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র, তেল ও ক্ষমতার দালালী (পাওয়ার ব্রোকারেজ) করে।
মুসা ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম তার বন্ধু ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) টনিব্লেয়ারের নির্বাচনী ফান্ডে ৫০ লাখ পাউন্ড অনুদান দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বিশ্ব দরবারে আলোচনায় উঠে আসেন। একজন বিদেশী নাগরিক হওয়ায় টনিব্লেয়ার অবশ্য সে অনুদান গ্রহণ করেননি।
তার পরে নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে এ ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যেই বিশ্ব মিডিয়ার আলোচনা বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছেন। লোক মুখে আছে তার বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য জীবনের অনেক চমকপ্রদ কাহিনী। ১৯৯৭ সালে ড. মুসা বিন শমসের তার ইউরোপিয়ান সদর দপ্তর হিসেবে একবার আয়ারল্যান্ডের কালকিনি দুর্গ কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি।
“সুইস ব্যাংকে আটকা ৫১ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে প্রিন্স মুসার লবিং” গত ২০ ডিসেম্বর ২০১০ এর মানবজমিন প্রধান শিরোনাম এটি।
প্রিন্স মুসার বিশ্বখ্যাতি অমিত সম্পদশালী এক ধনকুবের হিসেবে। তবে কেউ জানে না কত তার ধনসম্পদ। হয়তো নিজেও তিনি জানেন না। মনে করা হয়, তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ধনীদের অন্যতম একজন । তার জীবন যাপনের কথা ও কাহিনী দেশে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে আছে কিংবদন্তির মতো। লোকের মুখে-মুখেও আছে তার বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য জীবনের অনেক চমকপ্রদ চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিবরণ।
ফিলিপাইনের ফাষ্ট লেডি ইমেল দ্য মারকোসের ওয়্যারড্রব ভরে থাকত ১০০ জোড়া সৌখিন জুতো। মুসা বিন শমসেরের বিলাসিতা তার চেয়েও বিস্ময়কর। তাঁর সংগ্রহে অসংখ্য মূল্যবান স্যুট রয়েছে; তাঁকে কখনো এক স্যুট পরিহিত অবস্থায় দু`বার দেখা যায় না। এমনি মূল্যবান প্রতিটি স্যুটের দাম ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার পাউন্ড। যা শুধু তাঁর জন্য তৈরী করা হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজাইনার বলে খ্যাত প্রিওনী বেলভেস্ট এবং ইটালীর আবলা এবং ফ্যান্সিসকো স্মলটো ও খ্রিস্টিয়ান ডিয়রের বিশেষ ব্রান্ডের অতি মূল্যবান পোশাক-আশাক দিয়েই তাঁর সারি সারি ওয়্যারড্রব ভর্তি।
দেখে নিন এ শীর্ষ ধনীর জীবন যাপন সম্পর্কে একটি ডকুমেন্টরি
বিশ্ব খ্যাত জুতা কালেক্টর শফিক রেহমান এর চুলচেড়া বিশ্লেষণ
লন্ডনের দি সানডে টেলিগ্রাফের মতে, বিশ্বের যেসব ধনাঢ্য ব্যক্তির সবচাইতে এক্সপেনসিভ জুতার কালেকশন আছে তাদের অন্যতম হচ্ছেন মুসা বিন শমশের।
মুসা বিন শমশেরের জুতা দামি হবার অনেক কারণ আছে। এক. এসব জুতা বিভিন্ন প্রাণীর চামড়ার তৈরি। উট পাখি, হরিণ, ছাগল, ব্যাঙ, সাপ, মাছ প্রভৃতি। তার কিছু জুতা সিল্কের তৈরি। দুই. জুতাগুলো ইটালিতে বানানো। কারিগর কোম্পানি দুটির নাম ট্রেসটনি (Trestoni) এবং আরটিওল্লি (Artiolli)। ইটালি থেকে বাংলাদেশে এসব জুতা পৌছে দেয় সউদি আরবের জুতা পরিবহনে বিশেষজ্ঞ বৃটিশ কোম্পানি হোয়াইটস (Whites™)। যে বাক্সে জুতাগুলো আসে তারই দাম হাজার বিশেক টাকা হতে পারে !!
আর জুতার দাম?
এটা নির্ভর করে মুসা বিন শমশের তার জুতায় কোন ডায়মন্ড বা মণিমানিক্যের চেইন লাগাবেন। সাধারণত তার জুতার ওপরাংশে দুটো আংটা থাকে। ছোট সাইজের ডায়মন্ড বা অন্য কোনো দামি পাথরের চেইন এই দুটো আংটায় আটকিয়ে তিনি জুতার আকর্ষণ ও দাম বাড়ান। এসব ডায়মন্ডের চেইন সাপ্লাই করে বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল জুয়েলার্স টিফানিস (Tiffany™s)।
তার জুতা রিপেয়ারিং শপে যায় না। এবং কোনো জুতা তিনি পলিশও করেন না। পলিশ করার প্রয়োজনীয়তার আগেই হোয়াইটস তার গুলশানের রোড নাম্বার চুরাশি-র বাড়িতে পৌছে দেয় মখমলে মোড়ানো আরো এক শু বক্স। তার ওই বাড়ির দোতলায় বাথরুমের পাশেই আছে এয়ারকন্ডিশন্ড শু রুম।
জুতা কালেকশনে ড. মুসা বিন শমশেরের আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কে? তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে আছেন আরো দুজন। এক. জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় খ্যাত অ্যাক্টর রজার মুর এবং দুই. আমেরিকান প্রপার্টি টাইকুন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। দুদক এর সামনে হাজিরা দিতে সশরীরে কিন্তু জাকজমকের সাথে শো-অফ করেন- নুলা মুসা। তার গাল-গল্পে অনেকেই বিশ্বাস করেননা। তাদের জন্য পরের অংশটা দেয়া হল।
মুসা বিন শমসেরের সবই ফাঁকা বুলি!
একেকটি স্যুটের মূল্য নাকি পাঁচ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাতের ঘড়ি ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার। পায়ের জুতা মিলিয়ন ডলারের। আর ডায়মন্ডখচিত যে কলমটি দিয়ে ব্যবসায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করেন সেটির মূল্য কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে সম্পদ আছে ১২ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একই ব্যাংকে গচ্ছিত আছে ৯০ কোটি টাকা মূল্যের ডায়মন্ড, স্বর্ণসহ মূল্যবান সব সম্পদ। এসবই সবাই শুনছেন মুসা বিন শমসেরের মুখে। এসবের কোনো সুনির্দিষ্ট দলিল-প্রমাণ নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গুলশানে মুসার স্ত্রীর নামের বাড়ি এবং ফরিদপুরের পৈতৃক বাড়িটি ছাড়া কথিত আর কোনো সম্পদেরও দলিল-প্রমাণ নেই। জানা গেছে, সুইস ব্যাংকের কথিত টাকা জব্দ হওয়ায় তিনি এখন এমন অর্থ সংকটে পড়েছেন যে গুলশানে স্ত্রীর বাড়িটি ডেভেলপারকে দিয়ে সাইনিং মানি হিসেবে পাওয়া ২০ কোটি টাকায় নির্ভর হয়ে চলতে হচ্ছে তাঁকে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি যে রাজকীয় ঢঙে দুদকে হাজির হন, সেটাও ছিল লোকদেখানো। তাঁর চোখ ধাঁধানো নিরাপত্তা বাহিনীর অধিকাংশই ছিল সাজানো।
এসব কারণে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহের ধূম্রজাল। সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন ডলার আদৌ আছে কি না তা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সন্দিহান। এমনকি মুসার ডেটকো গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তাও বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মুসার হয়ে যে আইনজীবী দুদকের কাছে তথ্য সরবরাহ করেছেন, তিনিও এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
মুসার ডেটকো গ্রুপের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আপনাদের মতো আমরাও শুধু শুনে আসছি আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা জব্দ আছে। সেই টাকার জন্য মামলা চলছে। কিন্তু টাকা আদৌ আছে কি নেই, সেটা একমাত্র মুসা সাহেবই বলতে পারবেন।'
অন্য এক কর্মী বলেন, 'খালি শুনি তিনি দেশের সেরা ধনী, বিদেশের ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। কিন্তু কয়েক মাস পর নিজের বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে তাঁকে। এমন অবস্থা হলে তিনি আবার দেশের সেরা ধনী হন কিভাবে?'
২০০৭ সালের দিকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক কেনার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন 'ধনকুবের' মুসা বিন শমসের। বিদেশে বড় বড় অনুদান দেওয়ার কথা বলা হলেও এসবের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি মুসা। দেশের মাটিতেও কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের কোনো অনুদান দেওয়ার নজির নেই তাঁর। দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর মুসা নতুন করে আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিন তিনি নারীসহ ৩০ জনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে দুদক কার্যালয়ে হাজির হন। দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুসা যতটা না আলোচিত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন তাঁর রাজকীয় উপস্থিতির জন্য। অনেকেই মনে করছেন, নিজেকে বাংলাদেশে পরিচিত করার জন্যই মুসা নিজের সম্পর্কে এসব প্রচার করছেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে দুদকে হাজির হওয়া প্রসঙ্গে মুসার ডেটকো অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কালের কণ্ঠকে জানান, দুদক যেদিন মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞসাবাদ করে, সেদিন ওনার নিরাপত্তাকর্মী সেজে অনেকেই গিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মুসা বিন শমসেরের অফিসে হাতে গোনা কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। সেদিন চমক দেখাতেই জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনকে বাইরে থেকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গুলশান ২ নম্বরের ৮৪ নম্বর রোডের ১৫ নম্বরের বাড়িটিতে মুসা তাঁর পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তবে কাগজে-কলমে বাড়িটির মালিক মুসার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চৌধুরী। মুসা দেশের বাইরেই বেশি থাকেন। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন। তবে প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে খুব একটা যাননি। গুলশানের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছোট সন্তান আজ্জাত বিন মুসা জুবিকে নিয়ে বসবাস করেন। বাড়িটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি শান্তা প্রোপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মুসার স্ত্রী সাইনিং মানি হিসাবে পান ২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে মুসার নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় স্ত্রীর নামেই রয়েছে ওই টাকা।
গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী মো. বকুল ও দুলাল হোসেন বাধা দেন। দুলাল বলেন, অনুমতি ছাড়া বাড়ির ভেতরে ঢোকা যাবে না। মুসা বিন শমসের বাংলাদেশে কত দিন ধরে অবস্থান করছেন জিজ্ঞেস করলে দুলাল বলেন, স্যার দেড় বছর ধরে দেশের বাইরে যাননি, শুধু বনানীর অফিসে নিয়মিত যান। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড়ির এক কর্মী জানান, এই বাড়িতে স্যার ও তাঁর পরিবার বেশি দিন থাকবে না। বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ডেভেলপার কম্পানি কাজ শুরু করবে। তখন মুসারা কোন বাড়িতে থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোন বাড়িতে থাকবেন জানি না। তবে এটা জানি, ঢাকায় স্যারের আর কোনো বাড়ি নেই। তাই আপাতত হয়তো কোনো ভাড়া বাড়িতে উঠবেন।'
ডেটকো গ্রুপের ম্যানেজার মিনহাজুর রহমান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সুইস ব্যাংকে যে টাকা জব্দ করা হয়েছে, সেটা উদ্ধারে আমাদের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। ওই টাকা আটকে যাওয়ার কারণেই স্যার আর্থিকভাবে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন, যার কারণে নিজের বসতবাড়িটিও ডেভেলপার কম্পানির কাছে দিয়েছেন। সেখান থেকে পাওয়া সাইনিং মানির টাকা বিপদের সময় কাজে আসছে।'
ডেটকো গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, 'স্যারের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই, অনেক কষ্টে আছেন। সবাই তাকিয়ে আছেন সুইস ব্যাংকের টাকার দিকে। এখন সেই টাকা আদৌ ওই ব্যাংকে আছে কি না তার সঠিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।'
মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে মোর্শেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্যার কাউকে সাক্ষাৎকার দেন না।' অল্প সময়ের জন্য একটু দেখা করব জানালে নিয়ে যাওয়া হয় মুসা বিন শমসেরে কক্ষে। কালের কণ্ঠের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে মুসা বিন শমসের বলেন, 'আমি কোনো সাক্ষাৎকার দেব না। আমি পত্রিকায় এখনো কোনো সাক্ষাৎকার দিইনি।' কিন্তু আমার পেশাগত কারণে আপনার একটি বক্তব্য লাগবে, যদি আপনার সুইস ব্যাংকের টাকার কথা বলেন...। জবাবে মুসা বলেন, 'সুইস ব্যাংকের টাকা অবমুক্ত করতে আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সেই টাকা অবমুক্ত করা গেলে দেশেই বিনিয়োগ করব।' সেই সম্পদ ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো ব্যবসা আছে কি না জানতে চাইলে মুসা বিন শমসের বলেন, 'জনশক্তির এই ব্যবসাই ছিল আমার প্রথম ব্যবসা। আজকে রেমিট্যান্সের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে, দেশ শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ভিত শুরু করেছিলাম আমি। বিদেশে প্রথম যাদের শ্রমিক হিসেবে পাঠিয়েছিলাম সেসব কর্মী আজ বড় বড় রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক। এমনকি ইতালিতে প্রায় ছয় লাখ কর্মীকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা ছিল অনেক। আমাকে সরকার এবং দুদক সহযোগিতা করলে সুইস ব্যাংকের টাকা দ্রুত ফেরত আনতে পারব। সুইস ব্যাংকের পুরো টাকাই আমি দেশে বিনিয়োগ করতে চাই।'
দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকের টাকাসহ সাভার ও গাজীপুরে ১২০০ বিঘা জমির মালিকানার কথা বলা হলেও জমির মৌজা কিংবা দাগ নম্বর, এমনকি জমির দলিল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি উল্লেখ করেননি মুসা। দুদকের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুসার সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের নম্বর উল্লেখ নেই। কেন সেই টাকা জব্দ করা হয়েছে আর কোন আদালতে মামলা চলছে তা-ও উল্লেখ করা হয়নি। সুইস ব্যাংকে মুসার ১২ বিলিয়ন ডলার আছে কি না সেটা যাচাই করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে দেশে তাঁর আর্থিক অবস্থা খোঁজ নিয়ে যতটা জানা গেছে, খুব ভালো নেই তিনি, আর্থিক কষ্টে আছেন।' তিনি বলেন, হাওয়ার ওপর বললেই তো কেউ লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে না, প্রমাণাদিও দরকার।
গত বছর বিজনেস এশিয়া নামের একটি ম্যাগাজিনে মুসাকে নিয়ে প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে মুসাকে জ্ঞিাসাবাদও করা হয়। অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য মুসাকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ করে দুদক। মুসার পক্ষে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে রাখা ১২ বিলিয়ন ডলারের উৎস সম্পর্কে বলেন, এই অর্থ তিনি অস্ত্র ও ক্রুড অয়েলের ব্যবসা করে অর্জন করেছেন। সুইস ব্যাংকে রাখা ৯০ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণালংকারের উৎস সম্পর্কে বলেন, সেসব অলংকার তিনি বিভিন্ন সময়ে কিনেছেন এবং উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
মুসার পক্ষে দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট নুর হোসেন। সুইস ব্যাংকে মুসার টাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দেখুন, মুসা বিন শমসেরের সুইস ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন অ্যাকাউন্টে আছে সেটা আমার জানা নেই। ওনার পক্ষে আমি দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছি। কত টাকার সম্পত্তির মালিক মুসা সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।'
দুদকের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের সূত্রকে কেন্দ্র করে আমরা অনুসন্ধান শুরু করি। তাঁর সম্পদ বিবরণী চাওয়া হলে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে সেটা দাখিল করেন। সেখানে সুইস ব্যাংকে থাকা ১২ বিলিয়ন ডলারের কথা উল্লেখ করেন। বিষয়গুলো এখন আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।'
বনানীর ১ নম্বর রোডের ৫৭ নম্বর ভাড়া বাড়িতেই মুসার জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ডেটকো প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসটিতে মুসা এখন নিয়মিত যাচ্ছেন। এ অফিসের মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে কোনো জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে না। এ অফিস ভবনের মালিক অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
See more at- :
মুসাকে বাচানোর জন্য এটা হলুদ মিডিয়ার নতুন কারসাজি কিনা কে জানে ?
সবশেষে জানাতে চাই কোন কারণ ছাড়াই- স্বেচ্ছাসেবীদের একান্ত চেষ্টায় গড়া ‘মজার ইশকুল’ এর মুল কর্মী জাকিয়া সুলতানা, ফিরোজ আলম শুভ ও হাসিবুল হাসান সবুজকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে গত বুধবার আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। আজ রবিবার আদালত তাঁদের জামিন বিষয়ে আদেশ দেবেন।তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন তারা যেন মুক্ত হয়ে সমাজ সেবার কাজ এগিয়ে নিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩