somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ মিনিটের বিবেকের দাম যখন তারেক মাসুদের জীবন

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভদ্রলোকের মেয়েকে আমি পড়াতাম। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। প্রাণবন্ত ছোটখাটো মানুষ, সামনে পড়লেই ডেকে ডেকে গল্প শুরু করতেন। সরকারি উচ্চপদস্থ লোকজনের দিকে আমার খানিক বিকর্ষণ আছে (এখনো সেটা পাল্টায়নি তেমন), কিন্তু ভদ্রলোককে ভাল লাগতো বেশ।ছাত্রাবস্থায় টিউশনি করি বলে প্রশংসা করতেন, স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছি বলে উৎসাহ দিতেন, স্মৃতিচারণ করতেন নিজের টিউশনি জীবনের। চার সন্তানের জনক, সুখী পরিবার। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় বছরখানেক পর চলে আসি, যোগাযোগ ছিল অল্পস্বল্প। হঠাৎ এক রাতে প্রাক্তন ছাত্রীর ফোন, মহাসড়কে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার ছোট এবং বড় বোন মারা গেছে, মা এর অবস্থাও ভাল না। চোখের সামনে কিছুদিন আগে দেখা মানুষের মৃত্যুসংবাদে বুঝলাম, অপঘাত মৃত্যু কতটা ভয়াবহ হয়ে বুকে লাগতে পারে। বাসায় গেলাম, কিন্তু সন্তানহারা পিতাকে সান্ত্বনা দেয়ার মত নিষ্ঠুর কোনদিনই হতে পারিনি। মিলাদ হচ্ছিল, এর মাঝেই দেখলাম কিছু পোস্টার লাগানো বাড়ির নিচে, সড়ক দুর্ঘটনা আইনের সংস্কার ও দোষী চালকদের শাস্তির দাবীতে। শুনলাম, দেখলাম, কিন্তু বলার কিছু পেলাম না, এই দেশে কিসে কি হয়!

৩-৪ মাস পরের কথা, দিন-তারিখ মনে রাখি না, কি হবে, এবার ফোন না, পত্রিকার পাতায় খবর, একই মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু। না, অনুমান করতে বুদ্ধিমান হতে হবে না, সেই ভদ্রলোক। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না, কিভাবে সম্ভব? এই সেদিন দেখলাম। একটু পরেই ফোন এল, খবরটা সত্যি। একই পথে, একইভাবে। এবারো গেলাম, কিন্তু এবার আর কথাই বললাম না,সাজানো একটা পরিবারকে এভাবে তছনছ হয়ে যেতে দেখা এই প্রথম। মেয়েটার পরীক্ষা ছিল সামনে, দেয়া হলো না। ভদ্রলোকের সামাজিক মর্যাদার কারণেই হয়তো, পত্রপত্রিকায় ২-৪ দিন লেখালেখি হলো, তার পরিবার নিরাপদ সড়কের দাবীতে কিছুদিন এখানে-ওখাবে ধর্ণা দিল, এরপর ধামাচাপা পড়ে গেল সব।

পরবর্তী দৃশ্যপট সড়ক ও জনপথের মিলনায়তন, সড়ক নিরাপত্তার ওপর সেমিনার হচ্ছে। বিদেশী বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের শিক্ষক, সওজের প্রকৌশলী, অন্যান্য সংস্থার কর্তারাও হাজির। সারাদিন এই নিয়ে ওয়ার্কশপ,বিশেষজ্ঞ (নাম গ্রেগ স্মিথ) একজন অল্পবয়সী ছেলে, আমাদের সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে তাকে ভয়াবহ রকমের উদ্বিগ্ন দেখা গেল। তাদের দলটা কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সড়কের "নিরাপত্তা রেটিং" দিচ্ছে, সবচেয়ে নিরাপদ সড়ক হলো "৫ তারা", সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো "১ তারা", আমাদের মহাসড়কগুলোর মাঝে "৫ তারা" খুবই কম, বেশির ভাগই "২ তারা" বা "৩ তারা",, "১ তারা"র সংখ্যা অনেক। অবাক হলাম না, কারণ হিসেবে বিজ্ঞের মত যখন বলা শুরু করলাম ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কথা, থামিয়ে দিয়ে জানালো, ভাঙ্গা রাস্তা বরং গতি কম রেখে "মুখোমুখি সংঘর্ষ" কমিয়ে মৃত্যুহার কমিয়ে রাখছে। সত্যি বলতে কি, আমাদের ওরকম "উচ্চ গতির মসৃণ" মহাসড়কের প্রয়োজনও নেই, বরং সঠিক দক্ষ প্রশিক্ষিত চালক, "ফিট ভেহিকল" এবং সঠিকমানের "সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্হা" না রেখে এমন "উচ্চ গতি" এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করলে সেটা মরণফাঁদ হয়ে দেখা দিতে পারে।এই সড়কগুলো যখন ঠিক হবে, তীব্রগতিতে আসা যানবাহন গুলোর মাঝে "হেড-অন কলিশন" বা "মুখোমুখি সংঘর্ষ" আরো বাড়বে, সাথে বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যা। এবার অবাক হলাম, স্মিথ জানালো, আমাদের সড়কগুলোর জ্যামিতিক (জিওমেট্রিক) ডিজাইনে সমস্যা আছে, নানা রকম বাঁক, কিন্তু তারচেয়েও বড় সমস্যা হলো আমাদের অসচেতনতা এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজকারবার। মহাসড়কগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নিরাপত্তা সরন্ঞ্জাম এবং সাইন-সিগন্যাল না থাকা, এবং থাকলেও সেগুলো বোঝার মত শিক্ষিত চালকের অভাব, রাস্তার দু'পাশে বাজার থেকে পথচারী পারাপার,সব মিলিয়ে আমাদের আসলেই উপরওয়ালার কাছে যাবার সব প্রস্তুতি নিয়েই রাস্তায় নামা উচিত। "হাইওয়ে অ্যাক্ট" অনুযায়ী, মহাসড়কের দুই পাশে যে কোন রকম বাজার, ঘরবাড়ি বা স্থাপনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কিন্তু কখনো রাজনৈতিক, কখনো স্থানীয় জনগণের চাপে বেশিরভাগ সময়েই রাস্তার দু'পাশে "রাইট অভ ওয়ে" রাখা যাচ্ছে না। সহজ উদাহরণ হিসেবে ছবি দেখালো টঙ্গী বা গাজীপুরে রাস্তার দু'পাশে গড়ে ওঠা বাজার, গার্মেন্টস কারখানা, দোকানপাট, এমনকি শপিং মলগুলোকেও। ইদানিংকার আলোচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জায়গায় জায়গায় গড়ে ওঠা বাজারগুলোও দেখুন একবার। উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গাতেই দেখেছি, খানিক পরপর রাস্তার উপর লোকজন ধান-চাল শুকাচ্ছে, গরুও চরায় কোথাও কোথাও।একদিকে এই স্থাপনাগুলো যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে মহাসড়কের ট্রাফিক জ্যাম বাধাচ্ছে,বাজারে থেমে থাকা পণ্যবাহী যানবাহন আর পথচারীদের রাস্তা এপার-ওপার করার জন্য একইসাথে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বা বাজারে আসা লোকজন যেভাবে দৌড়ে রাস্তা পার হয়, অনেকসময়ই উচ্চগতিতে আসা বাস বা ট্রাক এদের বাঁচাতে গিয়েও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। সরাবেন এগুলো? ঘাড়ে মাথা ক'টা আপনার? মন্ত্রী বা স্থানীয় এমপি'র ফোনে যদি বদলী না হন, আমাদের বীর জনগণই যে পিটিয়ে আপনাকে তক্তা বানাবে, লিখে দেয়া যায় সেটা।জানা তথ্য সব, তারপরেও এভাবে গোছানো অবস্থায় দেখে গায়ে কাঁটা দিল। গুগল ম্যাপে দেখিয়ে দিলাম আরো কয়েকটা বিপজ্জনক জায়গা, জানালো, শিগগিরি দলবল নিয়ে সেখানে যাবে।

সেমিনারে এরপর অনেক কথাই হয়েছে, মন্ত্রী এসে বরাবরের মতই বড় বড় কথা বলেছেন, কিন্তু আতংকজনক বিষয়টা হলো, সড়ক নিরাপত্তার কর্তৃপক্ষ যে কারা,সেটা কারোরই জানা নেই। সড়ক ও জনপথে এই বিষয়ে একটা বিভাগ আছে, দেখা গেল, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আইনগত অধিকার তাদের নেই। তবে কি বুয়েটের "দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এআরআই)"? উঁহু, তাদের কাজ গবেষণা, আইনী ক্ষমতা নেই। তাহলে বিআরটিএ? দায়িত্ব নিতে তারাও রাজি নয়। মোটের উপর সেমিনার শেষ হলো অনেক ভাল ভাল কথা এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে, কিন্তু কারা যে এগুলো বাস্তবায়ন করবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হলো না। সাধারণ মানুষ নিজে থেকে ট্রাফিক আইন মানবে এমন আশা করাই অন্যায়, পশ্চিমা বিশ্বে এত কঠোর আইন, সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরা, হাইওয়ে পুলিশ থাকার পরেও সুযোগ পেলেই যেখানে লোকজন গতিসীমা ভাঙে, সেখানে আমাদের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত লোকজন মানবে সেটা অসম্ভব। প্রয়োজন ব্যাপক পরিমাণে সচেতনতা কার্যক্রম নেয়া এবং তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন সেগুলোর প্রয়োগ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে লোকবল এবং সম্পদ নিয়োগ করা। কিন্তু করতে গেলেই কখনো এর স্বার্থে, কখনো ওর স্বার্থে ঘা পড়ে, আর যা-ও বা করা যেত, সেটাও করা হয় না আমাদের তথাকথিত "শিক্ষিত দায়িত্বশীল" শ্রেণীর দায়িত্বহীনতার কারণে, এটুকু কাজ করতে অন্যের জীবন ও সম্পদের প্রতি যতটা সহানুভূতি থাকা দরকার, সেটা আমরা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি।পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, রাস্তা বানানোর বা মেরামতের বাজেটে "সড়ক নিরাপত্তা' খাতে "রোড সাইন" বা "রোড মার্কিং"য়ের জন্য যে বাজেট রাখা হয়, পরিকল্পনা কমিশন সেটাকে কেটেকুটে মোটামুটি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসে, এগুলোর যে দরকার হতে পারে, হুজুরদের মোটামাথায় সেটা কোনমতেই ঢোকানো যায় না।জানি না স্মিথদের তারা গোনা শেষ হয়েছে কিনা, কিন্তু এই পিংপং খেলা দেখে সে যদি এর মাঝেই চোখে আকাশের তারা না দেখে থাকে, স্যালুট! সেমিনারে অনেকের মতই একজন নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন, ইলিয়াস কান্ঞ্চন, বরাবরের মত নিরাপদ সড়কের দাবীতে অটল। ভদ্রলোকের অভিনয়ের জন্যই কিনা, অনেকে তাঁকে নিয়ে হাসছিলো, আমি হাসতে পারলান না, চেনা মানুষের অপঘাত মৃত্যুই যেখানে সহ্য হয় না, সবচেয়ে কাছের মানুষের মৃত্যুকে যে বয়ে বেড়ায় আর বিচারের দাবীতে দ্বারে দ্বারে ঘোরে, তাকে নিয়ে হাসার মত অমানুষ এখনো হয়ে উঠতে পারিনি।

এগুলো কয়েক মাস আগের কথা, এসব সেমিনারের যে কোন ফলাফল আসে না সেটা সবাই জানি এবং যা কথা হয় সব ভুলে যাই, আমরাও ভুলে গেলাম। রোজই পত্রিকার কোণায়কানায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২-১ জনের মৃত্যুর খবর দেখি, কাঁধ ঝাঁকিয়ে এড়িয়ে যাই, আমার কেউ তো মরেনি, এখনো তো বেঁচে আছি। তবে কিছু দুর্ঘটনায় জাতি মাঝে মাঝে একটু নড়েচড়ে বসে, কারণটা বিবেক, এমন বোধ হয় না, সম্ভবত সংবাদ হিসেবে সেটা চান্ঞ্চল্যকর বলে। সেরকম একটা দুর্ঘটনা দেখে সবার মত একটু গা ঝাড়া দিয়ে বসলাম, মিরেরসরাইতে ট্রাক উল্টে ৪০ জন স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর খবরে। মানুষের জীবনের দাম যে কত কম সেটা আরেকবার দেখা গেল, অন্য কোন দেশে হলে সম্ভবত জাতীয় শোক দিবস হয়ে যেত, আমাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরা গেলেন অনেক দেরিতে, হেলেদুলে, কিছু মেকি শোকের প্রকাশ দেখা গেল, কেন অতজন এক ট্রাকে উঠেছিল সেটা নিয়ে খানিক বয়ান হলো, চালকও গ্রেপ্তার হলো, মিডিয়াতে ২ দিন হইচই, তারপর আবার সব ব্ল্যাকআউট। শোনা গেল চালকের লাইসেন্স নেই (যেন এটা নতুন খবর!), সে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল (রোজই তো দেখি, আমরাও গাড়ি আর মটরসাইকেল চালানোর সময় কথা বলি, কেউ কি কখনো প্রতিবাদ করেছেন?), কিন্তু শেষমেশ এই মামলা চলবে কিনা, চালক জামিন পেয়ে গেল কিনা, তার কোন খবর পাওয়া গেল না। "আল্লাহ"র অনেকগুলি "মাল" কে আল্লাহ নিয়ে গিয়ে দেশের জনসংখ্যার বোঝা কমিয়ে দিয়েছেন, এই ভেবে হয়তো কর্তারা স্বস্তিও পেলেন খানিক, কিন্তু মূল ইস্যু যে সড়কের নিরাপত্তা, সেটা নিয়ে কেউ টুঁ শব্দটিও করলো না। কে করবে, আমরা এতই নির্লজ্জ স্বার্থপর জাত, নিজের না মরে ভাইয়েরটা মরলেও আমরা ফিরে তাকাই না, কার মায়ের বুক খালি হয়ে গেল,, সেটা দেখার সময় কোথায় আমাদের?

মৃ্ত্যুর মিছিলে সর্বশেষ সংযোজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর, সাথে আরো ৩ জন। খ্যাতিমান, এবং অনেক বেশি স্টেকহোল্ডার আছে বলেই তাদের মৃত্যুতে হল্লাটা একটু বেশি হচ্ছে, আবেগটাও আমাদের বেশি। জাতির যে সূর্যসন্তানরা আমাদের সর্বস্ব দিয়েছেন, অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে তাদেরকে বন্ঞ্চনা ছাড়া কিছুই আমরা কখনো দিতে পারিনি, এই দু'জনই বা তার ব্যতিক্রম হবেন কেন? এখন তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা হবে, জীবনেও যারা তাদের নাম শোনেনি তারাও এখন চোখের জলে তাদের শ্রদ্ধান্ঞ্জলী লিখবে, চালকের গ্রেপ্তার ও ফাঁসীর দাবীও তুলবে কেউ কেউ। চালক গ্রেপ্তার হয়েছে ঠিকই, বদমাশটাকে দেখা গেল নিজের সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করতে, করুণা বোধ করলাম, মূর্খ অমানুষটা জানেও না তার মত ১৬ কোটি অপদার্থের চেয়েও ১টা তারেক মাসুদ, এমনকি মিরেরসরাইয়ের ১টা কোমল প্রাণও অনেক বেশি মূল্যবান ছিল। এর মাঝেই আমাদের অপদার্থ যোগাযোগমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়েছেন, এবং বলে এসেছেন, জোট সরকারের ব্যর্থতার কারণেই রাস্তার এই হাল। বলি, আড়াই বছর গবেষণা করে কি এটাই বের করলেন হুজুর? এখানেও শেষ হলে কথা ছিল, আহত দিলারা জলি, যার স্বামী ঢালী আল-মামুন একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যশয্যায়, তাকে মন্ত্রীমশাই বলে দিলেন, আপনাদের চালকের ভুলেই এই দুঘটনা, এভাবে চালানো ঠিক হয়নি! কতখানি অমানুষ হলে সব হারানো একজন মানুষকে এভাবে বলা যায়, ভেবে পেলাম না। কোন এক অর্বাচীন তাকে মনে করিয়ে দিল, পুলিশ বলেছে চালকের ভুলে এই দুর্ঘটনা, সাথে সাথে পীরসাহেবের জামাতার জবাব, পুলিশ বললেই হলো! তাই তো, তিনি বুজুর্গ মানুষ, পুলিশ আবার কি, তার কথাই তো এজাতির জন্য ঐশীবাণী, এটাই আমাদের পাওনা।

তবে তারো আগে কাজ সেরে রেখেছেন আমাদের নৌপরিবহন মন্ত্রী। জলপথের দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি সড়কপথের ব্যাপারেই বেশি উৎসাহী, কারণটাও দুর্বোধ্য নয়, জনাব ছিলেন পরিবহন শ্রমিক নেতা। দুনিয়ার মজদুরদের দিকে শ্রদ্ধা রেখেই বলতে পারি, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মত দুর্নীতিগ্রস্থ দলবদ্ধ অমানুষ দেখার মত দুর্ভাগ্য এই ক্ষুদ্র জীবনে কমই হয়েছে। নেতা হিসেবে অনুসারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং একই সাথে ভোটব্যাংক সুরক্ষিত করার বিষয়ে তিনি সচেতন, কাজেই দুর্ঘটনাস্থলে না গিয়েই জানিয়ে দিলেন, দুর্ঘটনা চালকদের দোষে হয় না। আহা, অমৃতবাণী! বাঁধিয়ে রাখুন, কারণ এরপরেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা গেল, বাসের চালক ওভারটেক করতে গিয়েই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছে। মন্ত্রীর উক্তির কারণ বোঝা যায়, এ বছরই তিনি কোনরকম পরীক্ষা নেয়া ছাড়াই ২৪ হাজার "ভারি যানবাহন" চালনার লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করেছেন। বিআরটিএ কে দায়ী করতে পারেন অনেকে, এটা যে এক দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান সেটা আমরাও জানি, কিন্তু মন্ত্রী সুপারিশ করার পর তাকে লাইসেন্স দেবেনা, কার ঘাড়ে কয়টা মাথা বলুন তো? আর মন্ত্রীর দোষ-ই বা দিচ্ছি কেন, আমাদের মাঝে কয়জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে তারা পরীক্ষা দিয়ে বিধিসম্মতভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছেন? কয়জন বলতে পারবেন যে তারা গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালাবার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলেন না, বা তাদের চালক কথা বললে বাধা দেন না? ট্রাফিক আইন মেনে চলি আমরা কয়জন? সুযোগ পেলেই দুম করে রংসাইডে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়া, ইউটার্ন নেয়া, ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়া, আমরা আমজনতাও কম যাই না, অশিক্ষিত চালককে আর কি বলবো?

তবে এসব বললে কর্তৃপক্ষের দায় কমে না। কমে যায় না ২৪ হাজার অদক্ষ চালকের হাতে মৃত্যুবাণ তুলে দেয়ার পাপ। কেন ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামে, সম্ভবত বিআরটিএ'র কোন কর্তাই এর সন্তোষজনক জবাব দিতে পারবেন না, সে মুখ তাদের নেই। কেন মহাসড়কের বেহাল দশা, সেটার সন্তোষজনক জবাবও যেমন প্রকৌশলীরা দিতে পারবেন না। রাজনৈতিক চাপ, প্রশাসনিক জটিলতা, অর্থাভাব নানা কারণ আছে, কিন্তু প্রকৌশল বিভাগগুলোর বড়কর্তারা তাদের নিজেদের দায় কি এড়াতে পারেন? বেশি কথা বললে কোথা থেকে কার ফোনে কোনদিকে বদলি হয়ে যায়, বা চাকরিবিধির নানা প্যাঁচে পড়ে কিভাবে নাজেহাল হতে হয়, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন, এখানে আর সে প্রসঙ্গ না-ই টানলাম। এত মৃত্যু, এত কথা, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তার কোন জাতীয় বিধি আজ পর্যন্ত হয়নি। যতবারই এরকম কোন পলিসি নেয়ার কথা উঠেছে, গাড়ির ফিটনেস টেস্ট, চালকদের দক্ষতার পরীক্ষা নিয়ে কথা হয়েছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মন রাখতে গিয়ে সরকার পিছিয়ে গেছে।মহাসড়কগুলোর পাশে কেন দুর্ঘটনারোধী ব্যারিয়ার নেই, কেন মহাসড়কগুলোর জিওমেট্রিক ডিজাইন সঠিকভাবে হচ্ছে না, সড়কগুলোর ট্রাফিক সার্ভে কিভাবে হচ্ছে, তার কোন জবাব কারো কাছে পাওয়া যাবে না। গত ১২ বছরে সরকারী হিসেবে লোক মরেছে ৩৮ হাজার, বেসরকারী হিসেবে সংখ্যাটা দ্বিগুণ। তা মানুষ মরছে, মরুক না, ১৬ কোটি মানুষ, ক'টা মরলে কি হয়, অন্যের জীবনের ফুটো পয়সা দাম দিলে তো এদেশে ওপরে ওঠা যায় না! আর সব কথার শেষ কথা তো আছেই, সব আগের সরকারের দোষ, নিজেরা সাধু। কিন্তু এক্ষেত্রে সব সরকারই এক পথের যাত্রী, চালকের দোষে নরহত্যা হলে আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান ছিল, সেটা রদ করে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান করা হয়েছে। চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিয়েই রাখে, চালকের সিটের নিচে নাকি ইট রাখা থাকে জানালা ভেঙে পালানোর জন্য, কারণ সবাই জানে, একবার গণপিটুনি থেকে বেঁচে পালাতে পারলেই তার আর কিছু হবে না। কেন? কারণ চালকের দোষে মানুষ মারা গেলেও সেটা এদেশের আইনে জামিনযোগ্য অপরাধ, চালক জানে, তার মালিক তাকে ২ দিনেই ছাড়িয়ে আনবে যদি ধরাও পড়ে। এরা এমন বিবেকহীন একদিনে হয়নি, এদের প্রশ্রয় দিয়েছে এদেশের আইন, আশ্রয় দিয়েছে আমাদেরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপের চেয়েও বেশি দরকার সামান্য সচেতনতা, সামান্য কাণ্ডজ্ঞান, খানিকটা বিবেক, আর আইনের কঠোর প্রয়োগ। আমাদের মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য হাইওয়ে পেট্রল নেই, কাজেই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়াও খুবই সহজ। আমাদের নেতাদের বিদেশ সফরে যাবার জন্য কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া যায়, কিন্তু জনগণের জীবন রক্ষার এসব উদ্যোগের জন্য তাদের বরাদ্দ মেলে না।সত্যি বলতে কি, মানুষ মনে করলে তবে না মিলবে, আমরা নিজেরাই কি নিজেদের মানুষের পর্যায়ে রেখেছি? নয়তো দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি থেকে যখন আহতরা সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছিলেন, একটা গাড়িও তাদের সাহায্য করার জন্য থামেনি কেন? আমরা কোথায় যাচ্ছি?

যাকগে, এত কথা বলছি কেন? আসলে তো কিছুই হবে না, কখনোই কিছু হয় না। এ এমন এক দেশ, যেখানে শিশু হত্যা হলে মন্ত্রী বলেন, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন। আমরা এমন-ই জাতি, সব জায়গায় লাথি খেয়ে আমাদের বীরত্ব ফলাই ১৬ বছরেরকিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে। খাদ্যমন্ত্রী যখন কম খাওয়ার পরামর্শ দেন, আমরা দাঁত কেলিয়ে সেটা শুনে সেই ক্ষোভ মেটাই এক টুকরো রুটি চুরি করে ধরা পড়া দু'টি শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মানুষ মরার পরেও আমাদের নৌমন্ত্রী আরো ২৪ হাজার অবৈধ লাইসেন্সের জন্য সুপারিশ করেন, আমরা ভাবি, এ সুযোগে আমার চেনা কাউকে লাইসেন্সটা করিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না। আমরা আমাদের বোন আর মেয়েরা শিক্ষকের হাতে ধর্ষিতা হবার পরে বলি, জামাকাপড় ঠিকমত পড়লেই তো বদনজর লাগে না! আমাদের ৪০টি শিশু খাদে পড়ে ডুবে যাওয়ার খবর শুনেও আমাদের মনে বিকার হয় না। ক্ষীণস্মৃতি বাঙালি বীরগণ, একটু মনে করে দেখুন তো, একটা ঘটনারও বিচার হয়েছে কিনা! না, ছোটখাটো আমার-আপনার মত আমজনতার কথা বাদ দিন, খুব বড় আলোড়ন তোলা ঘটনার বিচার হয়েছে কি?মনে করতে পারেন? পারবেন না, কারণ বিচার হয়নি, হবার সম্ভাবনাও নেই, বিচার চাইবার মত মেরুদণ্ড আমাদের অনেক আগেই ভেঙে গেছে। যখন তারেক মাসুদের মত কেউ মারা যান, ৫ মিনিটের জন্য আমাদের বিবেক একটু গুঁতোগুঁতি করে, তারপর কেঁচোর মত গুটিয়ে যায় ঘরের কোণে, আশায় থাকে আকাশ থেকে কেউ নেমে বিচার করে দেবে, আর আমরা সেই গায়েবি কুদরত দেখে বগল বাজাবো। ক'টা দিন এখন আমরা নিজেদের বিবেকবান প্রমাণ করতে চাইবো, ব্লগে-ফেসবুকে ঝড় তুলবো, কিন্তু সাহস করে কেউ আমাদের নেতাদের নোংরা মুখে জুতো মারতে পারবো না। কেউ প্রশ্ন করবে না, ২৪ হাজার মৃত্যুবান তুলে দেয়ার অধিকার কে আপনাকে দিয়েছে হে হারামখোর মন্ত্রী? কেউ বলবে না, আইন নেই তো কি হয়েছে, বিচারকদের রায়েও তো আইন হয়, এই দু'টো দুর্ঘটনায় ধৃত চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে নতুন আইন তৈরি করুন না! দুর্ঘটনা প্রতিরোধী পদক্ষেপ নিতে "রকেট সাইন্টিস্ট" হতে হয় না, খুবই, প্রায় হাস্যকর রকমের সহজ কিছু কাজ করলেই দুর্ঘটনার হার অবিশ্বাস্য রকমের কমে যেতে পারে। যে জায়গাটায় তারেক মাসুদ নিহত হয়েছেন, বাঁকটা প্রায় সমকোণী, অনেকেই বলছেন সেখানে "সাইট ডিসট্যান্স" যথেষ্ট নেই, কিন্তু নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি সেখানে যতখানি প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নেয়া আছে। মহাসড়কের বাঁকের কাছে এবং স্পর্শকাতর জায়গাতে রোডসাইনদেয়া থাকে যেখানে লেখা থাকে ওভারটেকিং নিষেধ, রাস্তার ওপর সাদা রেখা বা "ফার্ম লাইন" টানা থাকে যার মানে হলো এখানে ওভারটেক করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ, এবং দেশের প্রতিটি মহাসড়কেই এই "রোড মার্কিং"গুলো দেয়ার কষ্ট টুকু অন্তত আমাদের প্রকৌশলীরা করে রেখেছেন।নানা কারণে অনেক সময়ই সড়কগুলো সোজা করা যায় না, কিন্তু বাঁকের কাছে গতি কমাতে হয়, এবং যথেষ্ট পরিমাণ "ব্রেকিং ডিস্ট্যান্স" যাতে থাকে ঐটুকু গতির বেশি তোলা যায় না, এগুলো মহাসড়কে যানবাহন চালানোর অতি সাধারণ নিয়ম। এবার বলুন তো, যারা "হানিফ" বা "শ্যামলী" বা "এস আলম" নামধারী পরিবহণ গুলোতে যাতায়াত করেন, এদের একটা চালকও এই নিয়মগুলো কখনো মেনেছে কিনা? এই অতি সাধারণ "ওভারটেক নিষেধ" মানার মত সচেতন না হয়েই যেখানে আমাদের হাজার হাজার চালক লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে "অতি উচ্চ ক্ষমতার' সুপারিশে, তখন দায়টা কার উপর বর্তায়, সেই ক্ষমতাবানের উপর, নাকি আমরা যারা তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতাবান বানাচ্ছি তাদের উপর?আইন বা নিয়ম থাকলেই হয় না, সেগুলো মেনে চলার মত সচেতনতা দরকার, আমাদের নিজেদের বা এদেশের চালকদের সেটা মেনে চলার মত সচেতনতা, বিবেক বা প্রশিক্ষণ নেই, বাজি ধরে বলা যায়। এদেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে "ভারি যানবাহন চালনা"র লাইসেন্স পাওয়া যথেষ্ট কঠিন, ৩ থেকে ৪ টি ধাপ পার হয়ে প্রায় ৯-১০ বছর ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকার পরেই সেটা পাওয়া সম্ভব, কিন্তু আন্তঃজেলা বাস বা ট্রাকচালকদের কতজনের সেঅভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে? আবার যোগাযোগমন্ত্রী মিনমিন করে জানিয়েছেন, আচ্ছা, একটা পরীক্ষা নিয়েই নাহয় লাইসেন্সগুলো দেয়া হবে। অদ্ভুত, আইন অনুযায়ী তাহলে যে প্রায় ১০ বছরের "ছোট, মাঝারি" যানবাহন চালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়, সেটা কোথা থেকে আসবে? এটা নিয়ে কেউ আমাদের নেতাদের চাপ দিতে পারবেন? পারবেন বিনা পরীক্ষায় দেয়া ২৪ হাজার লাইসেন্স ফিরিয়ে নেয়ার দাবী তুলতে? টকশো গরম করা পা-চাটা বুদ্ধিজীবিরা কেউ পারবেন অমানুষটার বিচার দাবী করে একটা মামলা ঠুকে দিতে, জনস্বার্থে? আর যদি কেউ ঠুকেই দেন, এই দানবদের আক্রমণ থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য কি তখন আমরা রাস্তায় নামবো?

না, আমাদের বীরত্ব তখন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, ফেসবুকে আধ্যাত্মিক আর প্রেমময় স্ট্যাটাস দেয়াতে আমরা যতটা পারদর্শী, কাজের বেলায় তার সিকিভাগও নই। অন্যের দোষ ধরাতে আমরা যতটা পটু, নিজে এগিয়ে সেটা করার বেলায় ততটাই পিছপা। বরং এই সুযোগে ক'টা দিন নিজেদের সচেতন সংস্কৃতিবান নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য "মাটির ময়না'র পাইরেটেড ডিভিডি কিনে আনবো, "মুক্তির গান" দেখে আহা-উহু করবো, বুদ্ধিজীবিরা টক শো'তে গরম বুলি ছাড়বেন, সেমিনার হবে বিশাল বিশাল, আবারো মন্ত্রী-এমপিরা সেখানে সচিবদের লিখে দেয়া ভারি ভারি বয়ান করবেন, বিশেষজ্ঞরা সরকারী পয়সায় লান্ঞ্চ করে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে আলোচনা করবেন পূর্ণিমার খাবার ভালো নাকি সোনারগাঁয়ের। আমাদের ইলিয়াস কান্ঞ্চন বৃথাই আবারো দৌড়াবেন নিরাপদ সড়কের দাবী নিয়ে আর আমরা তাঁকে হেসেই উড়িয়ে দেব, আর নিশ্চিতভাবেই পরবর্তী নির্বাচনেও এই জারজ নেতাদেরই ভোট দিয়ে আরো একবার তাদের সামনে পশ্চাদ্দেশ পেতে দেব, যারা আবারো সবচেয়ে অযোগ্য অদক্ষ লোকগুলোই যাতে আমাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব পায় সেটা নিশ্চিত করবেন। আমরা ভুলে যাবো, কিন্তু আমরা আরেকজন তারেক মাসুদ পাবো না, আমরা ইলিয়াস কান্ঞ্চনের দুঃখ বুঝবো না, বাবা-বোনকে হারিয়ে তছনছ হয়ে যাওয়া পরিবারটির কষ্ট আমাদের স্পর্শ করবে না, ৪০ টি উজ্ঝ্বল সন্তানের মুখ আমাদের মনে পীড়া দেবে না, কারণ বিবেকের দংশন হয় মানুষের, সম্ভবত আমরা নিজেদের "মানুষ" বলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি।

নিরীহ শান্তিপ্রিয় ভদ্রলোকগণ, আসুন আমরা চুপ করে বসে থাকি, বসে অপেক্ষা করি, টিভি সেটের সামনে বসে আহা-উহু করি, হয়তো কোন একদিন সকালে খবরের কাগজে আরেকটি চান্ঞ্চল্যকর খবরের অংশ হবার সৌভাগ্য হবে--"অমুক মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অতজন নিহত"।

তারেক মাসুদের মত বরেণ্য ব্যক্তির জন্য যে জাতির বিবেক জেগে ওঠে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য, আপনার-আমার মত অজ্ঞাতকুলশীলের জন্য তাদের বিবেক ৫ সেকেন্ডের জন্যও কাঁদবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না বলে অত্যন্ত দুঃখিত।

[সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও কারিগরি ধারণা দিয়ে সাহায্য করার জন্য বন্ধুবর তানভীর রাহাতের কাছে কৃতজ্ঞতা]
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×