somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলিক ময়ূর

১০ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ:

সন্তানের দেশে বড় হয়ো পোনা মাছ
অলৌকিক শিশির ...
জয়া, যশু, হৃদি
----------------------------------------------------------------------------




কংক্রিটের ডানা

আজন্ম জলজ তারা
জাল-ভর্তি ঈশ্বর আসেন
মৎস্যের সমান।

জলের আকৃতি সর্বশক্তিমান।
পুকুরে
পুকুরে
পূর্ণিমার চন্দ্র ডুবে যায়...
মনঃস্তাপে নৃত্যরত কংক্রিটের ডানা, প্রকৃতি।

হাড্ডি-ভাঙ্গা শব্দের দামে
কবি ও কাবিল তারা দুই ভাই
বৃক্ষ রুয়ে যায় সূর্যালোকে।

এই ধুলা
রক্তাক্ত পর্বন মূর্তমান
লোহার নালিয়াক্ষেত, এ শহর
উপচে পড়ে মৃত্যুর সমান।


কবি, কালেশ্বর

জলের আক্রোশে
কবি, কালেশ্বর দূরতম যায় ...
চুম্বন শেষে রণাঙ্গনে
অশ্বারোহী পিতার প্রবাহ।

নিরন্তর পরাজিত, পৃথিবীর পথ
আত্মভোলা কবি
অস্ত্রগুলো রেখে আসে মাতৃজরায়নে।
হায়!
দুই পায়ে জড়িয়েছে ছায়ার পর্বত।



রক্তের কুসুম

বিদগ্ধ ছায়ার হরিণ, ভষ্মবৎ তারা
জন্মদেহে আলোকিত
মৌ-ভোরে
জীবিত জবান ওড়ে স্বপ্নের আকার।

বহুচক্রে দিনমান, ইস্পাতের ধুলা
অতঃপর আলো, আখাউড়ায় যাত্রীবাহী ট্রেনে যাবে বিবিধ মফস্বল।
নক্ষত্রের অতীত যাবে তারা
ডানা-ভাঙ্গা রক্তের কুসুম...



পিতা, পয়গম্বর সমীপে

করুণ আত্মারা বৈকুন্ঠধামে; ক্লেদাক্ত পথে
তাজমহল রচনা করি দেহের গৌরবে।

আগুনের ফিতা পরে
আমার কন্যারা বিদ্যাপীঠে যায়
গুল্ম শিকড়ে তারাও কুড়াতে যাবে
হরিণের পাতা।

বিনিদ্র সাগরে আজও উদ্যত
ঝড়ের জননী
হে পিতা,
এ সংসার কভুও কি নিদ্রাতুর ছিল!



শৈলী

জন্তু সহচরে বেঁচে থাকি রূপের অক্ষর
দৈবালোকে
দ্বিখন্ডিত আপেল, উদ্যানে।

ও হে
তড়পেছে তরুর প্রলাপ,
মানুষেরা কবি হল কবে!

পতাকার পাখা ওড়ে ঘৃণার মাস্তুলে
স্বদেশ, ধর্ম, দ্বেষ ও বিদ্বেষ।
পাপের প্রকৃতি নিয়ে
পাখি সব পুড়ে যায় কুহরা বিভ্রমে।

অর্ধাংশ মানুষ সহ জন্মান্তরে ক্রিমিপাল
গঠন নিয়মে।



অনন্ত শহরের মাঝি

আমার কাফনের মত তার
ফর্সা বুকে চুম্বন করে মেঘ
ধুলা, ভালবাসা নিয়ে
কোন দিনও কি ছিলাম
মেঘের উর্ধ্তন মেঘদূত!

রচিয়া যাই তবে পুবালী প্রার্থনা নামের বিশ্বাসে
আমার মৃত্যু হোক...
বনের নিগূঢ়ে।

নিঃস্ব সীমান্তে পতাকার মত ওড়ে ডিম আর কুসুমের চাদর
দৈবের বার্তা নিয়ে যারা এল
অনন্ত শহরের মাঝি...
আমার মৃত্যু-ধ্বণি বাজে
গ্রহণ উৎসবে।

বিদ্যুতে
জলের গজল কেঁপেছিল
রেখে যাই বনুয়া সুরুজ রিপুর প্রস্তাবে।



ঈশ্বরী

আমার ভালবেসে গেলে
তুমি আরও ঘন হবে।

দীর্ঘ দীর্ঘ রাতে রুয়ে যাবে ফরাসের বিচি
ওহে মৃত্যু-সুখ!
জন্মভর তুমি কাঙ্গালিনী হয়ো।

আমার ভালবেসে গেলে
তুমি আরও নিরাকার হবে।



ধুলার কেশর

আজ আমার রক্ত-মূত্র-জ্বর
মৃত পুস্তকের পাশে নিঃসঙ্গ বসে আছি পিতার কবর।

বনস্পদ রাধিকা রমণ
কায়মনে
বিশাল শিশুরা বৃক্ষ রুয়ে যায় নদী তীরে
জ্ঞাত হই বিশুদ্ধ গোপন।

চরাচরে
ছায়া-সন্তান পরস্পর
দেহাতীত জেগে ওঠে ধুলার কেশর।



নিদ্রা

নিদ্রা ভেঙ্গে ওঠো
হে প্রেম ও পিতা
মদ আর মৃত চাঁদে অর্ধাংশ জাহাজ ভেসে যায়...
হাড় ভেসে যায়...

বন্ধু, বেহেস্তীরা
আমায় ভালবেসে দুই চক্ষু খুলে নিল তারা।
মরুশীতে পঙ্গু ঘোড়া একা পড়ে আছি...
এহেন মানব জন্মে আর আমার নিদ্রা হল না পিতা।



কৃষক

বৃক্ষ সহদলে
হরিণেরা পর্দা তুলেছিল
পাপ ও পূণ্য।

আত্মকরুণায়
ধুলা হয়ে দিগিবদিক ওড়ে পাখিদের মগজ
প্রতিজন্মে তারা
নিদ্রা ভেঙ্গে জেগে ওঠে
রথের রমণীরা।

এই আলো, আকৃতি দূরগামী
করুণাময়ের মত নিঃস্ব এবং
পুরাতন কৃষকেরা।



বড় হয়ো পোনা মাছ, অলৌকিক শিশির

বক্ষ জুড়ে কেটে রাখি আল্লা-ভরা আরশের লাল
এই মৃত্যু
আয়ুর বর্ণন...
শিশুর প্রস্তাবে নৃত্যরত
পদ্মার বেড়াল।

লবণাক্ত মনের ভাসান
উত্তরে
দক্ষিণে জাদ্রেল্যমান।
কেউ কি তবে হয়েছিল বীর
নিদ্রা ভেঙ্গে তুলে আনি
পরিমিত পাতার শরীর।



কয়লার কবি

গর্ভাঙ্কে, বিন্দুবোধে
এ জন্ম আলিঙ্গণ করি হাড়ের কৌশলে।

বিভিন্ন বর্ণে রচিয়াছি শানের খেলাপ
একদিন ভালবাসি বিষে
অসীমে
অন্তরে।

মহাপ্রাণ কবিতার পথে
অলৌকিক আলো ওড়ে জননী, জন্মগ্রহে।

ত্রস্ত তৃণমূল...
আকস্মিক ভাঙ্গে রাজহাঁস
কবিতার নির্জন প্রকাশ...



মৌলিক ময়ূর

স্থপতি পিঁপড়ার ডালে
পেখম মেলেছি বন্ধু
পাথরে, নাসারন্ধ্রে দুলে মৌলিক বাতাস
এ রাগ ভাসমান অনিন্দ্য আলোয়।

জানিয়ো
ঘাসের দালানে ঘুমোবে না মাঠ
নির্দয় কলংক নিয়ে কোন দিনও মানুষ বেহেস্তে যাবে না।

এ আমার ঘোর
সজ্ঞানে নৃত্যরত-আলো, আবর্জনা...
মহাকালে কান্না করে মৌলিক ময়ূর।



ভূমিজ

পিঁপড়া হে,
আমার পতন যেন হয় পিতৃ-পৃথিবীর নামে
ভাঙ্গা রৌদ্রের দাগে রাত্রি দিন হেঁটেছিল তারা, মৃত চুম্বন।

ভুমিজ যত
দীর্ঘ ঘুমিয়েছে মাটির জটিলে
ওহে ওম,
মরুভূমে ভেঙ্গে পড়ে মাথা-ভর্তি অসংখ্য ইলিশ।

বেমার কমে না হে,
গ্রহের গর্ত বড় হল বুকে...
আজও বাজারে যাই বিবিধ অসুখে।



পুরাণ

নিশিভোর নিয়ে গেছে কাকের পালক
জরায়ন রোদে রাত্রি নেমেছিল...

আংরা বাতাসে ঘাড় তুলে মরে যায় ফুলের ফণা
হাড় কেঁদেছিল...

পিতা
প্রত্মজীবীর ঘুম ভাঙ্গে ভোরের বিশ্বাসে
আজ দিনে জন্ম হবে মানুষ
প্রজাপতি পুরাণ, সাঁতার কাটে ঝর্ণার জলে
পাখিরা মানুষ হবে বিবিধ কৌশলে।



নৈর্ব্যক্তিক

নিকুঞ্জে নীলবিষ
ওড়ে শূন্যে হরিৎ হরিণ
কবন্ধ রোদে অনিন্দ্য উট...
ছুঁয়ে যায় পোড়া চাঁদ, পায়ের পেখম।

সবুজ গরম দিয়েছিল নদী
বৈশ্ব্য শিকারে পেড়ে আনি জল, দুধের কুসুম।





ধমনীর অধিক
ফুলে ওঠে নদী।
ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ হয়ে তোমারে চুম্বন করি আড়াই মিনিট...


ঈশ্বর নিঃসঙ্গ এখন, বন্ধুবর
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মত একা...



দৃশ্য

হাহাকার মাঠে চূড়ান্ত উড়িয়াছে নমরুদের ডানা
জন্মদাগে ন্যুব্জ দিনমান
কাপড় ও কার্পাসের গান।

বয়েসী কারখানা বুনেছিল তারা...
ভাঙ্গা-চোখ, মৃত মার্বেলের দেশে
শূন্য-দেহ ফিরে যায় সূর্যাস্ত বালক।

অদৃশ্যে, তৃণের কীর্তন বাজে
গলে পড়ে বকপাখি, পোষাকী বাগান।



দৈবী

১.
কুহরা সঙ্গীতে যারা নেচেছিলে ঘনিষ্ঠ রুমার পাখি
উত্তরে অগ্নি এবং দক্ষিণে সাগর
কোথায় তোমারে রাখি!

আর তুমি দৈব হতে নিয়ে আস জল ...
দুই-চক্ষু গ্রহণ করি দৃশ্যের চঙ্গল।

২.
তারার তান্ডবে আর ঘুমাতে পারে না রাত
ও মাটি কোলাহল করে।

জল গলে শুরুর সংকেতে...

সেই দিন
আমারেও দিয়ো ভীখ
আয়ু-ভাঙ্গা দেহে দৈবী লিরিক।



বৃষ্টি শুনা যায়

বাতাসে বৃষ্টি শুনা যায়
জলমগ্ন আলোর গরম।

শীতের শিকড়ে অনন্ত টিকটিকি নাচে
কলবের আওয়াজ শুনে
বারংবার ভাঙ্গে প্রার্থনার কাবা।

জিহ্বা উড়ে গেলে
এ অক্ষর পুড়িয়েছি অগ্নিদগ্ধ পাখিদের নামে।
অন্ধকারে লোমকূপ ওড়ে
ঝড়মগ্ন রথের নগর...

ফুলেরা উড়াল শেখে।



ধুলা

দেহের ধুলা ভাসিয়েছি
মেঘ ভাসিয়েছি...

রেণুতে রেণুতে মিলে আমি হেঁটে যাই
চিরতরে যাই...
তারে আমি, আমি জানি
যারে সমুদ্রে হারিয়েছি।

দুই ফোটা চোখে ঘুমাতে পারে না মেঘ
বীজ ফেটে যায়...

আর-তো হল না ঘুঙুর সাধনা
পাখি আর উড়াল দিল না।
পায়ে পায়ে উড়ে যায় পথের খরচ...



যাত্রা ও তৃষ্ণার্ত জলের ঈগল

যতদূর যায় মৃয়মান দীর্ঘ নদী
পাশে পাশে কেঁদেছিল বিগত নারী, শৈশব
ততদূরে আমি যাই তৃষ্ণার্ত জলের ঈগল।

ধানে ধানে তুলে রাখি ক্ষেত আর খামারের ঢেউ
রাত্রি হে, ভেঙ্গে দিয়ো নির্জনে ঘুমের নিরিখ
...আর তারা জেগে ছিল উদ্যত ফণার কবি।
হায়!
বিধুয়া রয়ে যায় অধরা দেহের দাবী।



পাথরের পিতা

মহাশূন্যে ওড়ে বর্ষার জমিন
আমর চুম্বন রাখি তোমার আয়ুমূলে।

মৃত ব্যবিলনে সারারাত ঝরে ছায়াশূন্য ঘোড়া
মৃত মৎস্যকূল ছুঁয়ে যায় তবু স্রোতের চাবুক।

অসীম অন্তরে মাখিয়াছি ভেজা পথ, হলুদপাতা
পাথুরে বণিক যারা
লাবণ্য নিয়ে দূরে যায়, নগরে নগর।

নারী, নক্ষত্রের দাগে দীর্ঘ বেঁচে থাকে পুরাতন মাটি
ইউফ্রেতিস নদী তীরে
আমিও কি তবে জীবিত ছিলাম পাথরের পিতা!


ঈশ্বর

দীর্ঘ রজনীতে প্রাণশূণ্য পালক কুড়িয়েছি...
মোমগাছে নিরলে জ্বলে
পূবালী বাতাস।
জড়-পাখি কত আর উড়াল শিখিবে বল!
সিথানে জেগেছে ক্রন্দন, জিওলের ঝাঁক।

অলিক অনলে ভীনদেশে যায় সোনাদেহী মাছ, রূপালী মাগুর।
চিরকাল ঝড় এল...
ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায় কাক ও কোকিল।
আমার কোনও নাম নেই
আকৃতি পরস্পর
শিশুর ফুসফুসে নিঃশর্ত ঝরে ঈশ্বর ঈশ্বর।



শীত

তুমি
ঠান্ডা

কবরের মত ঠান্ডা

...আর আমার ঠান্ডা লাগে না

পড়িয়ো জল শীতের ত্রিকনোমিতি...



চঙ্গল

রাত্রি দ্বিখন্ডিত আভূমি অক্ষরে
মৃতফুল
মাছি ও মড়ক সহচরে ক্রমঘোর
তমসাঘোর।

আক্রান্ত পিতা,
প্রজাপতি উর্ধ্বালোকে
ক্ষয়িষ্ণু চিরদিন জল ও অগ্নি
এবং
নিরক্ষর শৈলশিখর।

কবিতা অদৃশ্যমান
দৃশ্যপথে চাঁদ-পাখি, ডানার চঙ্গল।



ছায়া
শক্তজল

বায়ুপুত্র এক
চিরদিন উদ্বেলিত
বক্ষ-খোলা নদীতীরে।

স্নেহ তৃণ-মূল
ওহে পাথর,
বৃক্ষ-সমীরণে বিনিদ্র গৃহকাল
তৃষ্ণার্ত আদর।

অমানিশা
লাবণ্য হে,
জ্যোৎস্নার বাঘ ও বেড়াল মৃতপ্রস্থ
অভেদ্য চিরতরে
শক্তজল, আকৃতি।

ছায়া-শব্দ ঈষাণ ভ্রমণে
সৌরদিনে
হায় ঘাসফুল ! ভষ্মবৎ পলির পেখম !



ধনুস

...আর যত ছায়া-নদ
নিলীন,
হংস পতনের ক্ষণে তারা দোঁআশলা চাঁদ।

প্রতিভূমে ঘর ও অক্ষর
দেবী দূরতম,
রক্তের ওপার কৌরব নগর।

ইহা হরিতালি, ক্ষয়
দৈবী ভালবেসে সঞ্চয় যত
উনুনে-পোড়া সব্জির বিনয় !



রিপু

প্রাণের ভাঙ্গনে মাঠে মাঠে ফাটল ধরেছে...
আজ বুক চৌচির লাগে।
এ দহন তুলে রাখে ফল
হাওয়ায় হাড় ঘষে কে হে তুমি কান্না করেছিলে।

...ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভোর আসে
শিশু সব ঝরিয়েছে মাটির পালক।

আজও জানি
কারা যেন বেঁচে আছে...
বায়ুতে বজ্র ওঠে রিপুর কৌশলে।



অন্বেষা

১.
চিরদিন ক্ষমা কর ক্ষয়
মৃদু-মন
হাওয়ার শরীর দূরে পড়ে রয়।

অনন্ত একক আমি
আকাশে উড়াই
এই দেহে বারে বারে ঈশ্বর পোড়াই।

২.
আমার মরণ হবে এ দেহের দীর্ঘ অভিমানে
ওহে ঘাস,
আলোর আকরে বেঁচে রবে যারা
আর তোমাদের মৃত্যু হবে না...
এ আমার প্রেম, ঈশ্বর-সমান।


উদ্যান

১.
আলোর আঘাতে উদগ্র মেদ ও শিশির ঝরেছে
আমর মরণ যেন হয় শিশুদের মুখের উদ্যানে।

২.
এত আলো, বিভোর বিদ্যালয়ে আমার শিশুরা যায়
হায় !
আমার মৃত্যুর পরে আর যেন মরণ না আসে
এই বৃক্ষে, বিদ্যাপিঠে।

বয়স বাড়ে না হে
এ জন্ম, কচুগাছ ইস্কুলের সমান।



অলৌকিক প্রেমিকারা

এত ছায়া ঘন লাগে
তন্ময় আলোয় ধুলা রুয়ে যাই
এত ছায়া চোখে লাগে।

দুগ্ধবতী গাভীর উলুনে কবর ঘুমিয়েছে
বাতাসে বিদ্যুৎ কাঁপে আলোর ঈঙ্গিতে
এত আলো চোখে লাগে।

...আমিও বেদনা করি
মশার মরদেহ নিয়ে বেদনা করেছিলে যারা
মহাপ্রাণ আমার অলৌকিক প্রেমিকারা।



শরীর

মদে
মনোহরে
চিরন্তন নৃত্যরত
পাতার পরাগ।

তৃণের তান্ডবে
নির্জনে বদলে দিয়ো
জলের গড়ন।

অদৃশ্যে
দৃশ্য ভেঙ্গে যায়
গুটিয়েছি ফুলের ফণা।
প্রতি-পথে মানুষের ভীড়
স্বর্গ হতে নিয়ে আসি নিসর্গ শরীর।



মাইজি

মাতৃজরায়নে ছোট ছোট মেয়েগুলি
দীর্ঘ আচড়ে ভেঙ্গে ফেলে জলের ডানা
অতঃপর তারা ঘ্রাণের কৌশলে পরী হয়ে যায়।
কোনো কোনো ঝড়ের রাতে যখন বাতাসে কেঁপে ওঠে ঘাসের গুঁড়ি
আলোর অক্ষরে মেয়েদের আমি মাইজি বলে নাম ধরে ডাকি
তাদের কন্ঠে ফুটে ওঠে পিতা, অহ পিতা !

সারারাত আমাদের বনেদী বাড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে
মেয়েদেরে কাঙ্খে করে তখনো আমি অন্তরে মাখি বিভিন্ন বাগান।



প্রচ্ছায়া

ঋণ বাড়ে পাতায় পাতায়
বোরউনি-রোদে নিঃসঙ্গ ঝরে জ্যোৎস্নার ফড়িং
আজ ধানক্ষেত, বাতাসে বাতাসে লিখে রূপালী আয়াত।

ঋণ বাড়ে পাতায় পাতায়...

আজ মৌতা দাফনের দিন
তোমাদের জলমগ্ন দেশে আমি একপ্রস্থ উজানী জমিন।



দাঁতের পালক

রক্তাক্ত ঘ্রাণে সমুদ্রতীরে উড়িয়েছি মাছি ও বনস্পদ।
যারা বন্ধু হলে, বিভিন্ন ধর্মে পরাজিত ফুল ও পরাগ কুড়িয়েছ।

শীতের ছত্রাকে
গলে-পড়া জল নিদ্রাহীন দাঁড়িয়েছিল
অজস্র বছর নাওগুলি কোথাও যাবে না আর। মানুষ নাইওরী যাবে।
পথে পথে পড়ে রয় দাঁতের পালক।



গুর্দা-ফাটা কবিতার নামে...

১.
আমার মৃত্যুর চেয়ে বহুদূর...
নির্বংশ দুই হাত পাতি
কবিতা আমার অনঙ্গ বংশের বাতি।

নদীর পলিপুত্র গ্রামে কুয়াশার ডুমুর ধরেছিল
কাঁপে পঞ্চাতন আমার
তারে আমি সমুদ্রে হারিয়েছি।

গলা-কাটা সাপের সড়কে রাত্রি জেগে রয়
এ মরণ দীর্ঘ হয়...
কালের কবজে লুকিয়েছি ছায়ার শরীর।

২.
গুঁড়া গুঁড়া মৃত্যু এলে
আলো ভাঙ্গিয়াছে প্রাণের কম্পনে।
ফলের দোকানে মাটি ঝরে যাবে...
বিন্দু-ঘাসে, এ নদী বয়ে চলে
গুর্দা-ফাটা কবিতার নামে।

পুড়ে পুড়ে চক্ষু ওড়ে...
যারা যায়, অস্পৃশ্য যাই
নক্ষত্ররোদে নিরাকার হয় রাতের নিমাই।






বীজ

বৃক্ষের জড়ে পরাস্থ পালক রেখে যাই
মৃত্যুরে তুচ্ছ লাগে
এ নাম বাজারে বলি বিবিধ মায়ায়
হায় ! কোথায় রক্ত ফেলে এসেছি !

...রতির মুদ্রা নিয়ে কেঁপে ওঠে পূণ্য ও পাপ
আলোর আওয়াজে নিদ্রা ভেঙ্গে গেলে
মাঠে যাব আমি ও বিবিধ বানর।
দুলে ওঠে সমস্বর
কুদাল ভরা কবর, কৃষিক্ষেত
হায় !
কোথায় রক্ত ফেলে এসেছি !



যাত্রা

১.
মাতাল মাছেরা দূরে দূরে যায়
পোড়ানো প্রেমিক যায় সাগরের মুরে
...ফিকে হওয়া রক্তের ওমে
মানুষেরা ফুটে রয় পথের কিনারে...

২.
বন্ধু দূরে যায় দুধফল চাঁদের আকাশ।

অধরা কথার ছায়া তুলে রাখে গাছ
অন্ধকার-বিউগল বাজে...
আলোর উরিবিচি রুয়েছিলে যারা বন্ধু ছিলে।



জলদাস

দুনিয়ার এক দাসপাড়া গ্রামের ভোরের ভাঙ্গনে
রাতের শেষচিহ্ন কুড়িয়ে আনি জলদাস
সে এক বৃষ্টির মাস। রক্ত আর রিপুর চিৎকারে
জল নেচেছিল। নদীতীরে কেউ কেউ ফুলের ফাঁসিতে ভীষণ ব্যথিত হয়।
ছায়ার পাতিলে নাই হয় রোদের জিওল।
বণিক যারা, দূরে নিয়ে যায় গন্ধভরা নাওয়ের প্রবাহ,
আর আমি দীর্ঘ দাঁড়িয়ে থাকি পৃথিবীর সব বিগত মানুষের নামে
প্রেমে আর কামে, আমার জন্ম যেন হয় দাসপাড়া গ্রামে।



চন্দ্রের চাবুক

১.
বনের অভ্যাসে ছাই হল যত অলদিনী সাপ
স্নিগ্ধপ্রাণ কাটার অংকুর ফিরে পেতে চাই
পথে ওড়ে ঘাসবীজ, কাঠের ডানা
এসো ঘোর, বেদনাহত চন্দ্রের চাবুক।

দীর্ঘ বসে আছি নদীতীরে...
ভগ্নভোরে, আজও বুক ফোলে জলে উত্থানে।

২.
দৃশ্য কেটে যায়
দেবী, চক্ষু কেটে যায়
অদৃশ্য দানায়।

মাঠের জঠরে ঝড় উঠেছিল...
সই সই আলোয়
শ্মশান-ঘাটে রেখে আসি কব্জি-কাটা কালের কপাট
হায় ! জন্ম পাখির প্রপাত...

মৃত্যু হয়ে দেবী নেমে আসুক
ভালবেসে গ্রহণ করি চন্দ্রের চাবুক।



গায়েব

১.
গায়েবী আলোয় আমি আর মৃত ভাই
মেদ-চিপে ফসলই ফলাই।

২.
এ দেহের গন্ধ আর লুকোতে পারি না
মৃত মাছ নদে পড়ে আছি...
বারংবার মৃত্যু হল বলে
আমার কভুও যানাজা হল না।

মাংস-ফল ঝরে যাবে উদ্যানে
গম্ভীর আলোয় তক্তা পড়ে রয় চিরকাল...

যাদের যানাজা হয়
প্রিয়জন যুথবদ্ধ তারা
সারাটি জীবন পেখম পেড়েছিল...


আলোর কঙ্কাল

তন্দ্রাঘোর রমণীরা মাছুয়া আলদের মত জেগে উঠেছে। তাদের চরণে মৃত কঙ্কাল ও কমলালেবু নাচে। ...আর আলোর কম্পণে মাছিরাও পরস্পর ভেঙ্গে ফেলে হাড়। হায় ! ঘু ঘু বনে রক্ত ছড়ালে মরুভূমে ভেসে ওঠে কাতারে কাতার উট আর লবণের জাহাজ।

বাতাসের টানে ঠোঁট ছিঁড়ে গেলে দীর্ঘ উষাস ফিরে পেতে চাই। ফিরে আয় রক্তজবা, আঙুলের বাগান।

কত না ঘুরেছি বাজারে বাজারে। দিনমান শেষে তোমার বাগানে এসে মুদ্রা রুপন করেছি। গাছের গুঁড়িতে ছিল ছায়ার চুম্বন। পোড়া মাটি সাথে নিয়ে ঘুমিয়েছে মাঠ।

উদ্যত ফণার চুলে ছিঁড়ে যাবে আলোর প্রপাত। ...আরতো যাবেই যতদূর দৃষ্টি যায়। তুমি না শাসন কর কনকনে হাওর আর লতানো নদী। আর দ্রাবিড় রজনী ধরে বহুদূর যাবে কবির বংশধর। তন্দ্রাঘোরে, আমিও ছেড়েছি মাঠে হাউসের ঘোড়া। রেণু হয়ে ফিরে আয় ঘাস, মাটির বারো মাস।



পাথরের পূর্ণিমা

আঢ়ষ্ট আঁধার ফুঁড়ে পানের বাগানে পাপও পূর্ণিমা ফোটে।
বালিকা সকলে কুসুমের বীজ রুয়ে যায় বনে।
...আর আমার চুম্বন রাশি কবরের মত দীর্ঘ হয়...

চন্দ্রের ছায়ায় দেহসুখে তড়পে ওঠে গ্রহ-বর্ণ-জল।
নির্নিমেষ আলোর চিতা জ্বলে উঠেছে। ঠান্ডা আগুনে
বালক সকলে কুড়িয়েছে পাথরের চাঁদ।

মাটি হে
মাছ ও মানুষ হে
দাঁতে দাঁতে ভরে আছে রোদগাছ, বকুলের ডাল।
ভয়ার্ত-নির্জন,
পাতার পতনে ক্রন্দন করে আকিক পাথর।



ভ্রমণ

তারপর তারা চন্দ্রভূখ নাড়ার আগুনে দেহ পুড়িয়েছে। আলো ধরেছে গাছে গাছে। গোল হয়ে নদীর উৎসমূল বসেছিল পাহাড়ের ডালে। বয়োবৃদ্ধ গাছ আরও সাদা সাদা হলে ক্রমশঃ ভেঙ্গে পড়ে শাখাবৃত্তান্ত; রতজীবী পোকার পাখা ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়।

তাদের কেশরে রাত্রি নেমেছে...চামড়া-খসা-পথে নেউলের প্রাণ একা হেঁটে যায় অগাদ ভাটীতে। সিথানে নিদ্রা রেখে যারা যারা শিকারে যায়, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে শীতের সন্তান।

অতঃপর শিশুদের ফুসফুসে রক্তের শিশির দুলে। মঙ্গাকালে পারদের দানা ঠোঁটে নিয়ে গ্রামে গ্রামে নেমে আসে পারদের পাখি। শিং ভরা বেদনা নিয়ে পরাজিত ষাঢ় বাড়ি ফিরে আসে। ভ্রমণ-ভরা-ভূম নিঃস্ব পুড়ে যায়...আর কোনও দিনও মানুষ বাড়ি ফিরে না।



পিতলের ফণা

দূরের ধানক্ষেতে সারারাত ঝরে কুয়াশার জিকির
সেইতো কে যেন একজন
আজন্ম আসনি তুমি পিতলের ফণা।

কফিক্ষেত ফিকে হল পরে
থেমে থাকা জলে মৃত মাছ, মাছি নিয়ে নুয়ে পড়ে নদী।
হাড়ের মর্মরে
কারা যেন প্রতি অঙ্গে তুলে রাখে জল
কত দিন অনঙ্গে সজিদা করি না !

দীর্ঘ নিশি কোলে করে আজও রাত জাগি
নিঃস্ব বিলাপ নির্ঝরে ধ্বণিত হলে
ভেঙ্গে পড়ে পুকুরের পাড়, আল্লার আরশ
এ জীবন দীর্ঘ হে
এ জীবন দীর্ঘ হে


দ্বৈত পিরাকী

চৌথা আসমানে আমারও মেমানদারি হয়
আমি জিন্দাপীর হলে
আমারে বন্ধু মানো ফুলগাছ, রাতের শিরিষ।

সিনার শরমে নির্জনে রাখি মোসাফের মাটি
ভালা থাকিয়ো তুমি
আমার মোকামে নির্মোহ দিয়ো কুয়াশার আতর।

আমি জিন্দাপীর হলে
সালামের আলেক লও, হে বেট-ফুল, হযরত গরম দেওয়ান।


ফুলের কুঠার

তৃণাত্মা দোলে
আসমুদ্রে আমার কঙ্কাল ওড়ে টুকরা বাতাসে।

একদিন মৃত পাখিরাও জেগেছিল
নিধুয়া পবন ছিঁড়ে বাগইন বাজারে...
প্রতিঅঙ্গে অহ !
জন্মভরভর মাখিয়াছি রাতের বাকল।

জানিয়ো ঘাস
চিরতরে রক্ত কাটিয়াছি ফুলের কুঠারে।

চূর্ণাত্মা দোলে...
দেহ-ভরা লালবিষ, ছায়ার হরিৎ।



জ্বর

আসমানী জ্বরে পুড়ে যায় পাখির পরাণ
তাহারা গোসল করিয়াছে ভুল বৃষ্টিতে।

এ জন্ম, আদি অন্ত সমস্বর গানে...
কুয়াশার মাছ হাতে
আদিম জেলেরা দাঁড়ায় টঙ্গির উঠানে।
কাঠ খুড়–লী যত
বৃক্ষ খুঁড়ে সঞ্চয় করে অনাগত দুখ
সন্তান পাখির ডর ডর করে
ভেঙ্গে পড়ে ঘন-জ্বর, প্রাণের প্রতাপ।



প্রণয়

একদিন আমিওত তোমার তবরুখ ছিলাম
তোমাদের উরুবতী পাহাড়ের পাশে নিঃশর্ত রাখি পরাজিত পালক
আর আমি নাই কোনও দ্রৌপদী দিনে...
তুমিও পিরানী হয়ো।

সমূহ রজনী জেগে জেগে দেখি পাহাড়ী-মাটি, বৃষ্টির ক্ষয়
ভগ্ন মন্দিরের পাশে রেখে এসেছি আমার প্রাচীণ প্রণয়।



জলধাত্রী শিরোনামে

নিঃসঙ্গ মাড়িয়ে যাব মৃতপ্রাণ নক্ষত্রের ছায়া
কোন দিন দেখি নাই তারে
আর কি দেখিব তারে
অনঙ্গ আমার মহাপ্রাণ মায়া!

পরাস্থ কপালে দীর্ঘ দীর্ঘ সজিদা লুকিয়েছে
আর
নিঃস্ব নদীপার চিরদিন ভাঙ্গে জলধাত্রী শিরোনামে।

চন্দ্রালোকে
আমার উঠানে দেখা যায় কাঁঠালের চাঁদ
কোন দিন ঘুমোতে পারি না আর
মৃত মন, মাছির চিৎকারে।



চুড়ান্ত শালিক

প্রমত্ত পদ্মার ধ্বণি আরও মৃদঙ্গে বহে
আমার জন্ম হল না, তবু
পিতার জন্ম দিয়েছি দুর্জন গ্রহে।

অস্তিত্বের দেশে
আমিও সাঁতার কাটি ভীষণ বাতাসে
কি তাহার প্রাণের বিস্তার?
লৌহবনে
নি®প্রাণ দাঁড়িয়েছি চূড়ান্ত শালিক।

এ ভূমি দ্বিখন্ডিত...
জন্মাবধি মৃত চাঁদ পরস্পর
আভূমি দাঁড়িয়েছি পিঁপড়ার চাদর।



চিহ্ন

১.
গ্রহের গভীর হতে উঠে আসি মীন
কে হে তুমি বাতাস রাখালি কর !
তোমার জমিনে রাখি কান্নার কাবিন।

২.
আমার অস্তিত্ব ছিল না মনোহর ভবে
সন্তান জন্ম দিয়েছি
বিষাদ উৎসবে।

৩.
নিরিখ বান্দিয়া দেখি আমি অজানা
ধবল বাতাসে ওড়ে অর্ধাংশ ডানা।

৪.
তবু সে আসে...
মৃত লক্ষিন্দর আরও ভাটিতে যাব
কোন এক বারিষা মাসে।

৫.
মাঠে মাঠে আমার মেয়েরা পরে রক্তের ফিতা
তবুতো পুরাণ
চক্ষু হয়ে ঘিরে রাখি ঘাসের পিতা।

৬.
আলোয় অংকুরিত দ্রোহক্ষণ
গ্রহ, জন্মান্তরে
বায়ু হতে তুলে আনি বৃক্ষের বদন।

৭.
আমার মোকামে আজ নজরানা রাখে কেহ কেহ
ও পাথর,
নিধুয়া পাথারে তুমিও সন্ন্যাসী হয়ো
আয়ুমূলে ভালবাসিয়াছি দেহাতীত দেহ।

৮.
আমিও কি তবে লিখে যাব আমৃত্যু !
নিরক্ষর বোধে
আম্মা ও অক্ষরের সমান।

৯.
ক্রৌষ্ণবিষাদে
প্রতিখোপে কেঁদেছিল পায়রা জননী
এ বেদনা মুজিব ইরম কাব্যবান জানে
প্রত্মপৃথিবীতে
বৈদগ্ধ লেখাবিল, মনুর উজানে।

১০.
আজও কি তারে মায়া করি !
ছিঁড়ে আনি মোহন জলবায়ু
যে আমি যন্ত্রণার হরিণ রাখালি করি।




চার বোনের চতুর্দশকথা

আসমানের তীরে নির্জন উমরপুরে পড়ে আছি পঙ্গু পাখি
একজন্ম চোরাটানে পাথরের ডানা ভাঙ্গে অগাদ ভাটিতে
হায় সোনাভান ! স্নেহের ঘ্রাণে বড় হয় শবরির বাগান।
একটুকরা ছায়ায় আমিতো প্রাণের বাকল শুকোতে দিয়েছি
কী আর আমার কথা, অসুস্থ কাটাজামিরের কথা!
সাগরের তীরে, বেতবনে একখন্ড গোরস্থান ঘুমিয়েছে
জলভরা চোখের কবরে রাত জেগেছি আমি কালের কান্না।
তোমার মহাপ্রাণ ঘ্রাণে সারাবেলা জেগে রয় ক্লেদাক্ত ভিটা
ঝরে পড়া ফসল হয়ে আর কি দেখা হবে জমিনের রূপ
চোখের জোড়া-টানে উপচে পড়ে দুগ্ধভরা গাভীর উলুন।
ভূমি ও আভূমি একত্র যায়, একদিন দু’চোখ পচে যায়।

ধুলার পৃথিবীতে মানুষ ও ফেরেশতারা কতদিন বাঁচে
সাত আসমানের নির্জন দ্বীপে ঈশ্বরের লাশ পড়ে আছে।

২.

সাতকরা-রং রাতে বাড়িয়েছি হাত
রূপচাঁদা জলে উগলে পড়েছে চাঁদ
হায় প্রেম ! সারাদিন বিনীত সপ্রাণ
ঘাসে ঘাসে তড়পে ওঠে প্রাণের জবান।
গাঁও ভরা দিনে কে নেবে আলোর কণা
গাড়ল-মুঠোতে ঘুমায় স্বর্পের ফণা
গাছ ভরা নিম-দাঁতে পিছলে পড়ে লোভ
আলোর কামড়ে ফোটে ফলের বিক্ষোভ।
আমরাও শিখি আজ দগ্ধ উপাসনা
হাড়ের পিঞ্জরে কাঁপে প্রকাম্য বাসনা
ছায়ার চুম্বনে নাচে হরিণের লোম
শীতের সঞ্চয় নিয়ো, সীনা-ভরা ওম।

এ আমার প্রেম, ঈশ্বরের অর্ঘ্য না
মৃতু-নামে লিখি হৃদয়ের পরগনা।


৩.

ভাইবোন, বৃক্ষপাতা, পশুপাখি মিলে
আরতো জানিনা কি-যে পূণ্য কি-যে পাপ
মৃত টিকটিকি ভাসিয়েছি মৌন ঝিলে
গাছের আকরে ধরে ছায়ার প্রলাপ।
ঈশ্বর, দ্বিশ্বর তারা চার বোন মিলে
একত্রে আহার করে বিদ্যুতের ফণা
আমার কাঙ্খের জল নদনদী গিলে
নাকের নোলকে রাখি আলোকের কণা।
অদৃশ্য ঈশ্বর দুনিয়ার দ্রোহদিনে,
বেঁচে রই আমি আর জলপাই গান
এত আলো ছাই হয় নূরের আগুনে
ভাই বোন লিখে রাখি অব্যক্ত বয়ান।

আমার মানুষে-দেখা ত্রৈপদী দিনে
ঈশ্বর বাঁচিয়ে রাখি মানুষের ঋণে।

-------------------------------------------------------------------------------
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০০৬
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা।






সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৪:০২
৩৩টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×