বাংলাদেশে সপ্তাহান্তের ছুটি মেলে শুক্রবারে , আর বিদেশে শনি/ রবিবারে। সারা সপ্তাহের ব্যস্ততা শেষে একটু রিলাক্সের সুযোগ মেলে উইকএন্ডে । বাসার কাছের এক ইন্ডিয়ান রেস্তোরায় আয়েশ করে পরোটা খেতে খেতে ভাবলাম সকালের নাশতা নিয়ে একটা পোস্ট লিখি । ডাক্তাররা সমসময় বলেন যে সকালের নাশতায় নাকি সবচেয়ে ভারী খাবার খেতে হয়। কিন্ত বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে ব্যস্ততার কারনে সকালের নাস্তা একপ্রকার খাওয়াই হয় না। যখন স্কুলে ছিলাম তখন , খুব ভোরে উঠে স্কুলের জন্য তৈরী হতে হতে নাশতা খাওয়ার সময় থাকত না। মা টিফিন বক্সে খাবার ভরে দিতেন। কখনো বোম্বে টোস্ট , কখনো নুডলস , পরোটা ডিম ইত্যাদি। সকাল সাড়ে নয়টায় স্কুলের টিফিন পিরিয়ডই ছিল আমাদের সকালের নাশতা খাবার টাইম। সেকালে বন্ধুত্ব বড় নির্মল ছিল। যে যেমন টিফিনই আনতো , সবাই মিলে সেটা ভাগ করে খাওয়া হত। আবার অনেক সময় বন্ধুদের সবার টাকা একসাথে জড়ো করে দলবেধে টিফিন টাইমে স্কুলের মাঠে চটপটি, বরফের আইস্ক্রীম কিনে খাওয়া হত। সবুজ রঙ এর সেই আইসক্রিম খেয়ে জিভ সবুজ হয়ে যাওয়াটায় সবাই খুব মজা পেতাম। ঝাল্ মুড়ি , চানাচুর মাখা বিক্রি হত স্কুলের সামনে । স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে এই জিনিষ না খেয়ে ফেরা হত ন । বড় সুন্দর ও রঙ্গীন ছিল দিনগুলো।
ভার্সিটিতে গিয়েও একই অবস্থা। কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দৌড় দিতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস ধরার জন্য। ভোরের ক্লাস শেষে ব্রেক পিরিয়ডে দলবেধে ক্যফেটোরিয়ায় যেতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত চা চপ সিঙ্গারা খেতে। সাইন্স লাইব্রেরীর পেছনে একটা টি স্টল ছিল। সেখানেও চা সিঙ্গারা পাওয়া যেত। আবার মাঝে মাঝে খিচুরি ও ডিম ভাজাও পাওয়া যেত। অমৃতের মত স্বাদ ছিল সে খিচুরির। টিএসসির ডাস এর নাস্তাও খুব মজার।
দেশের সকালের নাশতাটা বড় মিস করি এই দূর প্রবাসে। পাউরিটি জিনিষটা ছুয়েও দেখতাম না তখন। আর বিদেশে সকালের নাশতা মানেই পাউরুটি ডিম , জ্যাম নাহয় দুধের সাথে কর্নফ্লেক্স। একমাত্র উইকেন্ডে এলে একটু ভাল মন্দ নাশতা খাওয়া হয়। বাসার বেশ কাছেই একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে। উপড়ের ছবিটা সেই রেস্তোরার। পরোটাকে এখানকার স্থানীয়রা বলে রোটি প্রাটা। আর পরোটা এরা আমাদের মত ডিম , ভাজি বা মাংশ দিয়ে খায় না। পরোটা এখানে সার্ভ করা হয় শুধু ঝোল দিয়ে। তবে অনেক প্রকার পরোটা আছে যেমন এগ প্রাটা, চীজ প্রাটা, গারলিক/অনিয়ন প্রাটা ইত্যাদি। মচমচে পরোটা হালকা টক মিষ্টি স্বাদের ঝোল দিয়ে খেতে বেশ লাগে।
উপড়ের ছবিটা একটা কাস্টার্ড জাতীয় ডেজার্টের । বাহারী নাম আছে এসব ডেজার্টের। রেস্টুরেন্টে নাশতা বা লাঞ্চের পর একটা ডেজার্ট খাওয়া এখানে খুব প্রচলিত। ছবির ডেজার্টের নাম '' বুরবুর চাচা '' । নাড়িকেল দুধে মিষ্টি আলু, ফল ও জেলী দিয়ে তৈরী এই ডেজার্ট। অসাধারন টেস্ট। বাসায় বানিয়ে দেখতে পারেন।
দেশে এখন শীতের আমেজ। ফেসবুক খুললেই খালি দেখি পিঠা পুলির ছবি। সকালের নাশতায় ভাপা, চিতই গরুর মাংশ খাওয়ার সময় হাজির হয়েছে। ব্লগারদের নাশতার গল্প শুনতে চাই। ছবিসহ দিলে আর ভাল। দর্শনেই অর্ধভোজন এ কথা কে না জানে!
ছবি সুত্রঃ আমার মোবাইল ক্যমেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৮