শাহরুখ খান অভিনীত আলোচিত মুভি ''ডানকি '' মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। অবৈধ অভিবাসন কৌশলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে ছবিটি । জীবনের রঙ্গীন স্বপ্ন পুরনের হাতছানিতে প্রচুর মানুষ এই উপমহাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ পথে পারি জমায় অজানা বিদেশের পথে। '' ডানকি '' হচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর বিপদজনক পথ। ছবিতে তিন তরুন ও এক তরুনীর পাঞ্জাব থেকে লন্ডনে অবৈধভাবে যাবার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। আমরা প্রায়শই নিউজপেপারে পড়ে থাকি সমুদ্রপথে ট্রলারে , নৌকায়, জাহাজের কন্টেইনারে বা বর্ডারে অবৈধভাবে বিদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রচুর অভিবাসন প্রত্যাসী প্রান হারায় ।''ডানকি'' মুভিতে দেখানো হয়েছে এর বাস্তব চিত্র । অত্যন্ত দুঃখজনক যে , অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাসী এই মানুষগুলো আমাদের সমাজের স্বল্প শিক্ষিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। আর তাইতো মানব পাচারকারীরা এত সহজে তাদের গাধা বানাতে পারে।
ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে পাঞ্জাবের এক ছোট শহরে তিন তরুন ও এক তরুনির পরিবারের সকল স্বপ্ন পুরনের আশায় লন্ডন যাবার বাসনার মধ্য দিয়ে। স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্র হবার কারনে তাদের বৈ্ধ পথে বিদেশ যাওয়ার সকল চেষ্টা বিফলে যায়। ফলে তারা বেছে নেয় বিকল্প '' ডানকি'' পথ। স্বপ্ন পুরনে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয় জীবনের সকল সঞ্চয়। প্রথম দফায় পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানে পৌছায় কিছুটা অংশ নৌকায় ও বাকিটা সাঁতার কেটে। আর্মি চৌকির কাছ দিয়ে সাঁতরে যাবার সময় তাদের ডুব সাঁতার দেবার প্রয়োজন হয় কিন্ত তাদের কাছে নেই কোন ডুবুরির পোষাক। এজেন্ট তাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল কিছু পাইপ। সেই পাইপের সাহায্যে পানির নীচে দম ফেটে মরে যাবার পরিস্থিতি তৈরী হলেও কোন প্রকারে ফাকি দিতে সমর্থ হয় আর্মির চোখ। বর্ডার জোয়ানদের হাতে টাকা গুজে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পৌছায় ইরানের মরুভুমিতে। তপ্ত সেই মরুভুমি হেটে পারি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে। পুলিশের গুলিতে তৎক্ষনাত মারা পড়ে দলের তিন অভিযাত্রী। শাহরুখ খান ও তার তিন সঙ্গী বেচেঁ যায় শাহরুখের হিরোইজমের কল্যানে। ইরান থেকে এরপর তাদের তোলা হয় লন্ডনগামী জাহাজের কন্টেইনারে। বদ্ধ সেই কনটেইনারে তারা দেখা পায় আরো বহু মানুষের যাদের মাঝে আছে মহিলা ও শিশু! প্রায় একমাসের সেই সমুদ্র যাত্রায় কন্টেইনারের অভ্যন্তরের বিভীষিকাময় জীবন দেখে ভয়ে আতঁকে উঠতে হয়। খাওয়া দাওয়া , মলমুত্র ত্যাগ সব একই জায়গায়। পৃথীবির ভয়ঙ্কর কারাগারও মনে হয় এর চাইতে বিভীষিকাময় নয়। কন্টেইনার থেকে খালাস হয়ে সিনেমার চরিত্রগুলোকে এরপর গাড়ির বুটে ভরে নিয়ে আসা হয় স্বপ্নের লন্ডনে !!
বিগ বেন ও টেমস নদী দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠা এই অবৈধ অভিবাসীদের আনন্দ বেশিক্ষন স্থায়ী হবার সুযোগ হয় না। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কোনমতে বেচেঁ থাকা ইল্লিগাল ইমিগ্রান্টদের আরেক কঠিন জীবন সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। স্বল্প মজুরিতে কঠিন পরিশ্রমের কাজ করে দেখা মেলে স্বপ্নের পাউন্ডের। নিজে মানবতের জীবন বেছে নিয়ে মজুরির সিংহভাগ পাঠিয়ে দেয় দেশে। যে স্বপ্ন পুরনের প্রত্যাশায় ছেড়ে এসেছিল প্রানপ্রিয় মাতৃভুমি, সেই স্বপ্নের কিছুটা পুরন হয় স্বজনদের মুখে হাসি ফুটিয়ে। বছরের পর বছর পেরিয়ে যায় , কিন্তু চাইলেও আর ফেরা হয় না প্রিয় মাতৃভুমিতে -------
শাহরুখ খান ও অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রীর প্রানবন্ত অভিনয় জীবন্তভাবে তুলে ধরেছে অবৈধপথে এই ভয়ঙ্কর বিদেশ যাত্রা । মুভিটা দেখে আমার মনে হয়েছে ছবিটি আমাদের দেশের গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র দেখানো উচিৎ । দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষ অলীক স্বপ্নের মোহে কিছু না জেনেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানব পাচারকারীদের ক্ষপ্পরে পড়ে। একমাত্র প্রান হারালেই শুধু তারা সংবাদের শিরোনাম হয়। কিন্তু দুঃখখজনক যে পরিবারের কাছে কখনই পৌছায় না সেইসব অভিযাত্রীদের লাশ। আমাদের দেশেও চলচিত্র নির্মাতাদের এই পটভুমিতে এই ধরনের ছবি বানানোতে উৎসাহী হওয়া প্রয়োজন । ''২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ২,৫০০ অভিবাসী '' ট্রাকের কন্টেইনারে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৩৯ অভিবাসীর মৃত্যু, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত-রক্ষীদের পাইকারী হারে গুলি , পানির তেষ্টা মেটাতে মুত্রপান ট্রলারে ভাসমান অভিবাসীদের, প্লেনের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে করুন মৃতূবরন জাতীয় সংবাদ শিরোনামগুলো আসলে মানবতার চুরান্ত সীমা লংঘনের উদাহরন। দেশ ডিজিটাল ও স্মার্ট হবার চাইতেও বেশি জরুরী এই ধরনের মানবতা বিরোধি কর্মকান্ডগুলো প্রতিহত করা ----
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩৭