somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে মোহর - মোহরানা বা দেন মোহর !

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামে "মাহর", প্রচলিত ভাষায় মোহর, মোহরানা বা দেন মোহর, বলতে বুঝায় বিয়েতে বর কনেকে যে উপহার দেন। মেয়েদের অধিকার (Right) যা দেয়া অত্যাবশ্যক (Required)! আল্লাহ পাক সূরা নিসার ৪ নং আয়াতে বলেন,

وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
"আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।"
আয়াত নং ২৪ এ আল্লাহ বলেন,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَن تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

"এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে -ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা বিবাহ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।"

এ সকল আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে আলেমগণ একমত যে কনেকে খুশীমনে এ মোহর দেয়া বরের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম মালেক সহ কারো কারো মতে মোহর ধার্য্য না হলে বিয়ের চুক্তি অপূর্ণ ও বাতিল ! এ মোহরানার হকদার একমাত্র কনে, কনের বাবা বা অন্য কেউ তা নেয়ার অধিকার রাখেনা ।
মোহর প্রকৃতপক্ষে ইসলামে বিয়ের একটা অপরিহার্য্য পূর্বশর্ত হলেও তার পরিমান বিয়ের আগেই সাব্যস্থ না করেও বিয়ে হয়ে যেতে পারে,(দেখুন নিচে সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৬, যেখানে বলা হয়েছে, ‘…..কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও …” অর্থাৎ মোহর নয়তো তালাকের প্রশ্ন আসতো না.)

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের সমাজে বিয়েতে 'মোহরানা' বর ও কনে পক্ষ মিলে একটা ধার্য্য করে ঠিকই কিন্তু তা আদায় করার বিষয়ে কেউ আন্তরিক হন না । গয়না কাপড়চোপড় বাবদ কিছু আদায় দেখিয়ে একটা বড় অংশ পরে দেয়ার অঙ্গীকার করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয় এবং পরবর্তীতে হয় বর কনের কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেন নয়তো আজীবন বাকী থেকে যায় ! এ এক গর্হিত প্রথা, এখানে কনের হক নষ্ট করা হয় . যার জন্য বর পরকালে দায়ী হবেন।

এ মোহরানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণত কনের ব্যাক্তিগত যোগ্যতা, পারিবারিক মর্যাদা, পরিবারের অন্য কাছাকাছি সময়ে বিবাহিত বোন বা চাচাতো খালাতো বোনদের মোহরানার পরিমান এবং বরের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা হয় । যদিও ইসলাম এর পরিমান কোনো সীমিত করেনি, মনে রাখতে হবে মোহর মেয়ের দাম বা মূল্য নয়, এ তার সম্মানী ! এমন বেশি ধার্য্য করা যা বর আজীবন কামাই করেও শোধ করতে পারবে না কোনো মতেই ইসলাম সম্মত হতে পারে না । উভয় পক্ষের সম্মান, সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় এনে এর পরিমান নির্ধারণ করাই উভয়ের জন্য কল্যাণকর, এবং আল্লাহ এতেই বরকত দান করবেন আশা করা যায় । নবী (স) একে সঙ্গতির মাঝে রাখাকে উৎসাহিত করেছেন, Click This Link

আমরা যদি এ মোহরানা অবশ্য পরিশোধ যোগ্য হিসাবে গ্রহণ করি তবে তা মাত্রাতিরিক্ত নির্ধারণের যে বর্তমান প্রচলিত রীতি আমাদের সমাজে দেখা যায় তা একটা সহনশীল পর্য্যায়ে নেমে আসবে এবং আমাদের যুবসমাজও মোহর বিয়ের সময় বাকি না রেখে নগদ পরিশোধে উৎসাহিত হবে ।

এ প্রসঙ্গে আরো দু একটি বিষয় জানা দরকার, স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে দেয়া মোহর, সে যত বেশিই দেয়া হয়ে থাকুক না কেন, তা থেকে কিছুই ফিরিয়ে নেয়া হারাম, আল্লাহ বলেন ,
وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلاَ تَأْخُذُواْ مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَاناً وَإِثْماً مُّبِيناً
"যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করবে?" (৪:২০)

তালাকের পরিস্থিতির উপর প্রদেয় মোহর সম্বন্ধে সূরা বাকারার ২৩৬ ও ২৩৭ নং আয়াত দুইটিও এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো ,
لاَّ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاء مَا لَمْ تَمَسُّوهُنُّ أَوْ تَفْرِضُواْ لَهُنَّ فَرِيضَةً وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدْرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ
"স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব।"

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إَلاَّ أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَأَن تَعْفُواْ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَلاَ تَنسَوُاْ الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ إِنَّ اللّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
"আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তাহলে যে, মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য যদি নারীরা ক্ষমা করে দেয় কিংবা বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি ক্ষমা করে দেয় (অর্থাৎ স্বামী যদি তার অংশ ছেড়ে দিয়ে পুরো মোহরানা দিয়ে দেয়) তবে তা স্বতন্ত্র কথা। আর তোমরা পুরুষরা যদি ক্ষমা কর, তবে তা হবে পরহেযগারীর নিকটবর্তী। আর পারস্পরিক সহানুভূতির কথা বিস্মৃত হয়ো না। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সেসবই অত্যন্ত ভাল করে দেখেন।"

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×