somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের গল্প-আসমত আলী ভুইয়া

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসমত আলী ভুইয়াকে আপনারা চিনবেন না। উনি এ ব্লগের সব চেয়ে সিনিয়র যিনি তার চেয়েও হয়তো সিনিয়র। তাছাড়া উনি আজ আমাদের মাঝে আর নেই!
উনাকে কেমন করে চিনতাম সে এক কাহিনি। তখন সদ্য পাশ করে চাকরি শুরু করেছি। ঢাকার ৫৩ মতিঝিলে অফিস, বর্তমান শাপলা চত্তর থেকে সামান্য পশ্চিমে। এক সকালে আমার এক সহপাঠি বন্ধু এল, জিজ্ঞেস করল আসমত আলী ভুইয়াকে চিনি কিনা, তার সাথে দেখা করতে চান। সহকারী প্রকৌশলী, আমাদেরই অফিসে কাজ করে। একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের‌ই আরেকটা অফিস আছে আল্লাহ ওয়ালা বিল্ডিংএ, সেখানে কাজ করেন।
কাছেই, বন্ধুকে নিয়ে হেঁটেই র‌ওয়ানা হলাম।
পথে যেতে যেতে বন্ধু বলল, তার এক প্রতিবেশীর মেয়ের সাথে বিয়ের একটা কথা হচ্ছে, ওকে বলেছে একটু দেখতে ও খোঁজ নিতে!
আল্লাহ ওয়ালা বিল্ডিং এ গিয়ে কোথায় বসেন খোঁজ করে রুমে ঢুকে দেখি ঐ রুমে দুজনের বসার ব্যবস্থা, একটাতে কেউ নেই, আরেকটাতে আমাদের‌ই আরেক বন্ধু শাহাবুদ্দিন বসা। সাধারণ কুশলাদি বিনিময়ের পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম ভুইয়া সাহবে কোথায়? ও বলল, সকাল থেকে দেখেনি, কখন আসবে বা আদৌ আসবে কিনা ঠিক নেই! একটু অবাক‌ই হলাম! আমরা কি কাজে এসেছি, ও কোন হেল্প করতে পারে কিনা জানতে চাইলে ব্যাপারটা ওকে বলতে শাহাবুদ্দিন বলল, আসমত আলী ভুইয়া আমাদের ক বছরের সিনিয়র, আর দশ জনের মত সম্পূর্ণ সুস্থ না, কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন, বসেরা সবাই জানে, সেইজন্য তাকে কেউ কোন কাজ‌ও দেন না, তিনিও কোন দিন খুশি হলে আসেন, কোন দিন আসেন না। আরো বলল, উনি আগে একটা বিয়ে করেছিলেন, উনার এ অবস্থার কারণে স্ত্রী চলে গেছেন!
এর পর আসমত ভাই এর সাথে আমার অনেক বার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। এক সময় আমাদের সব অফিস স্থানান্তরিত হয়ে রমনায় সড়ক ভবনে আসলে উনি আমার উপর তলায় বসতেন। আসা যাওয়ার পথে দেখা হতো, কখনো বা উনার রুমে গেলেও দেখা হতো। উনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। উনি আমাদেরই এলাকার লোক, পাশাপাশি থানায় বাড়ি।
একদিন বললেন, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার কথা ভাবছেন। জিজ্ঞেস করলাম কিসের ব্যবসা?
জুতার কালি বানাবেন! দু একজনের সাথে কথাও বলেছেন জুতার কালির ফেক্টরী স্থাপন নিয়ে। আমি একটু মজা করার জন্যই বললাম, নাম কি দিবেন, আসমত আলী জুতার কালি? উনি দেখলাম সিরিয়াস, বললেন, কি যে বলেন? আসমত আলী নাম দিলে এ কালি কেউ কিনবে? ভাবছি একটা ইংরেজি নাম দিব। আচ্ছা জেনিথ দিলে কেমন হয়?
এর পর আমি ঢাকা ছেড়ে চলে আসি। কয়েক বছর পর ঢাকা গেলে একদিন সড়ক ভবনে গেলাম আগের বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করতে। বি ব্লকের দোতালায় সেই আগের রুমেই দেখা পেলাম আসমত আলী ভাই এর। আমাকে দেখে দারুণ খুশি! পিওনকে চা বিস্কুট আনতে বললেন। আমাকে নাকি অনেকদিন ধরেই মনে মনে খুজছেন। আজকাল কি করছেন জানতে চাইলে জানালেন একটা ব‍ই লিখছেন, বাংলা ভাষার উপর ! দুই একজন প্রকাশকের সাথে নাকি আলাপ‌ও করেছেন। সমস্যা দাঁড়িয়েছে মিনিষ্ট্রীর পারমিশন নিয়ে, সরকারি কর্মকর্তাদের ব‍ই প্রকাশ করতে হলে নাকি অনুমোদন লাগে! গত কিছুদিন ধরে এ নিয়েই ব্যাস্ত।
আসমত আলী ভাই এর সাথে সেই আমার শেষ দেখা। এর পর আরো বেশ কটি বছর কেটে গেছে। উনার কথা মনে হতো মাঝে মাঝেই। খোঁজ নেয়ার সুযোগ হয়নি। একদিন সড়ক ভবনে কাজ করা আমাদের‌ই এক বন্ধুর কাছে উনার কথা বলতে গিয়ে তার‌ই কাছে জানলাম উনি আর নেই, মারা গেছেন বেশ অনেকদিন‌ই হয়ে গেছে!

মনে হলো এ ধরণের লোকেরা অযত্ন অবহেলায় কি তাড়াতাড়িই মারা যান? পরিবার সমাজ কি তাদের প্রতি আরো একটূ সহানুভুতিশীল, আরো একটু যত্নশীল হতে পারতো?

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:৫৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×