somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠি

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বাবা, ১/১৮/২০১৬
আসসালামু আলাইকুম।আশা করি ভালো আছেন।আমিও আপনাদের দোয়াতে বেশ আছি।নতুন করে এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা মন্দ যাচ্ছে না।হলের রুম এখনো পাই নি,আমি আপনার মতন করেই মেস এ উঠেছি।আমার রুমমেট একটা মেধাবী প্রতিবন্ধী ছেলে।ও অন্ধ।আমরা এখনি বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছি। আমি ফ্রি থাকলে ওর রাইটার হিসেবে পরীক্ষা দিই।আমার এই অন্ধ রুমমেট টার নাম রাহান।ও তোমার নাম জানে,তোমার লেখা ও বই পড়েছে।রাহান তোমার অনেক প্রশংসা করে।তারপর আমি সেই জামিল স্যারের সাথে দেখা করে এসেছি।তোমার অনেক কথা বলল।মানুষ টা বেশ ভালো।উনার মতন শিক্ষক পেয়ে আমি আসলেই লাকি।এই এক মাসে আমি উনার কোন ক্লাস বাদ দেই নি।তুমি ঠিকই বলেছ নতুন করে কোন কিছু শুরু করতে আসলেই ভালো লাগে।
রীনা কেমন আছে?জাহান রা সবাই ভালো আছে তো?তোমার নিজের কাজ কেমন চলছে?জানাবে আমাকে।আর টাকার জন্য ধন্যবাদ।আমি হয়তোবা টিউশনি পেয়ে যাবো সামনেই তখন আর এত টাকা লাগবেনা।প্রথমবার তো তাই।
ইতি
রাশিক

চিঠি টা লেখার পর অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলাম।আসলে কি লিখতেছি।কেনই বা?কি দরকার?নিজের অস্তিত্বকে আয়নায় টেনে এনে প্রশ্ন গুলা করলো।শুরুতেই দুইটা মিথ্যা কথা।প্রিয়?বাবা?
মনে মনে হাসলাম।আসসালামু আলাইকুম?প্রিয় বাবা শান্তি বর্ষিত হোক আপনার উপর?
চো* খা খা*কির পোলা।আমার মা কে রেখে দিয়ে নিজের চেয়ে ২০ বছর ছোট ছাত্রীরে যে বিয়া করলি বুক টা কাপলো না।তোর এই মাগীবাজির কারনে আমি ঢাকা ছেড়ে এই কোন গ্রামে এসে যে পড়লাম।
বালের জায়গা একটা,ইন্টারনেট পর্যন্ত নাই।

রাহান এর ব্যাপার কিছু সত্য।শালা,অন্ধ আর রুমমেট আমার।কিন্তু মেধাবী না ছাই।ব্যাটায় অন্ধ ক্যাডার।গতকাল ভাঙ্গছে হাত একই দলের অন্য গ্রুপের পোলাপানের সাথে লাগছে।ওইগুলাও আবার অন্ধ।এই অন্ধ ক্যাডার রা মারামারি করে লাশ ফেলছে গতকালকে।অন্ধ গুলি মারামারি লাগাইছে ছাদের কিনারায়।চোখে না দেখে নাকি রাজনৈতিক পদের জোশে, সেটা নিয়ে টক শো তে বিতর্ক কিংবা ফেসবুকে কমেন্ট যুদ্ধ হতে পারে কিন্তু ঘটনার আউটকাম পরিবর্তিত হবেনা।ব্যালকনী থেকে পরে গিয়ে থেতলে থাকা লাশ টা থেতলেই থাকবে।তার ছবি টাংগানো হবে,কোটায় দুর্নীতি করে চান্স পেলেও তাকে রাতারাতি মেধাবী করে দেওয়া হবে।যার হুকুমে তাকে মারা হয়েছে সে নিজেই জানাজায় যাবে আর মাটি দিয়ে আসবে এবং পারলে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদবে কিছুক্ষন আর বিরুদ্ধ দলের উপর দোষ চাপিয়ে ফোস ফোস করে বিড়ির ধোয়া ছাড়বে।আর রাতের বেলায় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসে বৈঠা চালাবেন পুরা দালান কাপিয়ে।

লেসন নাম্বার ১- বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের লাশের দাম সবচে কম।ছাত্র-ছাত্রীদের পরে আরো কম হল কৃষক,শ্রমিকদের লাশ।আমরা হলাম ৩ নাম্বারে।

মিথ্যে কথা ছেড়ে দিলাম।এরপর জামিল সাহেব এর ব্যাপারে কিছু কথা।আমার গত বছর ঢাকার ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর থেকেই হতাশার জগত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য ফাটাফাটি অষুধ হিসেবে গাজা সেবন শুরু করেছিলাম।হতাশা তো কাটেই না,কেমন জানি ঘোর লাগে।মনে হয় ধোয়ার সাথে কষ্ট গুলো ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু আসলে ধোয়াগুলা জানালা দিয়ে বের হয়ে গেলেও কষ্টগুলা ঘরের ভিতরেই ঘুরপাক খায় আর নিঃশ্বাসের সাথে সাথে আবার ভিতরে ফিরে আসে।শান্তিটা তাই হয় ক্ষনিকের। আমি এই এলাকায় থাকি ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকেই,ঢাকা থেকে পালানোটা খুব জরুরি ছিল,তখন থেকে বড় ভাই আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাঙ্কের উপজাতি কর্মচারিদের সাথে বসে গাজা খাওয়া চলতে লাগলো।ওইখানে ভদ্র-সভ্য কিছু বয়স্ক টাইপ মানুষ আসতো।এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।কঠিন রকমের গাজাখোর।সেইখানে এই জামিল স্যার আসতেন।কিন্তু আমি তখনো জানতাম না উনার পরিচয়।

এরপর জীবনে আরো সম্মুখীন হলাম নয়ের ফিল্ম স্টাইলের টুইস্টের।এই নরকে আসার আগে নরকের পথ প্রদর্শক আমার বাবা বলেছিলেন এখানে আমার নতুন বিভাগে জামিল নামে উনার এক পরিচিত ভদ্রলোক আছেন।আমি এত পাত্তা দেই নাই।লোকের ইতিহাস গুলো বাবা বলেছিলেন এবং কিছু মনে আছে আমার।ভদ্রলোক নাকি অসম্ভব মেধাবী।মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের কঠিন লোক।প্রচুর পড়াশোনা জানা।একই হলে থাকতাম।আমার প্রশ্ন তখন ছিল “বাবা,উনি কি তোমার মতন মুক্তিযোদ্ধা নাকি?”
-না।আরে ধুর।মুক্তিযুদ্ধ করতে কলিজা লাগে,ব্রেইন অত বেশি না।পোলার ব্রেইন ছিলো।
-ও আচ্ছা।না তুমি বললা চেতনার পক্ষের লোক।
-চেতনার লোক মানেই যে মুক্তিযোদ্ধা সেটা ভাবা ভুল।অনেক ফেমাস লোক দেখবা চেতনার ট্যাগ লাগায়া ঘুরতেছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হল যখন খুলে দিছিল ওরা বইসা পি সি এস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিছে।
-জামিল সাহেব লোকটা ওই দলেই পড়েন?
বাবা কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের সাজানো গোছানো অফিস রুমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।চোখের কোনায় লজ্জার রেখা।আমি কিছুক্ষন ভারী নীরবতার চাদর নুজ্জ্ব্য থেকে উঠে দাড়ালাম।
-উঠি,বাবা আজ আমি আর থাকতে পারছিনা।কাজ আছে।
এই অস্বস্তিপূর্ন মূহুর্তটাকে আরো এক লেয়ার দেওয়ার জন্য দেখি আমার বাবার বর্তমান স্ত্রী বাবার অফিসের দরজার সামনে ঠায় দাড়িয়ে।মহিলা বাবার ছাত্রী ছিলেন বর্তমানে কলিগ।আমরা আপু ডাকতাম আর এই মুহুর্তে আমার কাছে এই মহিলা অদৃশ্য।

জামিল সাহেব সম্পর্কে যা বলছিলাম।ভদ্রলোক গাজা খান কিন্তু চমতকার ক্লাস করান।নিয়মিত ক্লাস করান।সকল রকমের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংক্রান্ত কার্যকলাপে উনাকে খুজে পাওয়া যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি,২৬মার্চ, ১৫ আগস্ট ,১৬ ডিসেম্বর সব সময় প্রায় একই বক্তব্য নিয়ে আসেন উনি।কিভাবে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই এক কথা নিয়ে পেচাল পারতেই থাকেন।একই আলাপ মোটামুটি সবখানেই। অনেকটা হেফাজতি কিংবা অনেকটা অবাস্তব রূপে শারীয়াহ শাসন জারি করার জেরবার প্রচেষ্টা চালানো মোল্লাদের মুদ্রার অপর পিঠ এই লোক।আমার দৃষ্টিতে এরা সবাই জংগী; কেউ সেক্যুলার জংগী কেউ ইসলামী জংগী।

জামিল সাহেব এর সাথে সম্পর্ক ভালোই ছিল।উনি আমাকে উনার ক্লাসে দেখে প্রথমে অবাক হয়ে যান এবং অস্বচ্ছন্দ বোধ করতে থাকেন।কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পর নিজের রুমে ডেকে নিয়ে চা নাস্তা খাওয়ান।এরপর থেকে মাঝে মাঝেই তিনি টাকা দিয়ে দেন আমি ডিপার্টমেন্টেই উনার রুমে গাজা ডেলিভারি দিয়ে আসি।

এইধরনের সম্পর্ক গুলোতে এক পর্যায়ে নোংরামির দিকে যাবেই।আমার সাথে এই জামিল সাহেবের ও তাই হল।বেশ কয়েকদিন টানা টাকা ছাড়াই এনে দিলাম এই গাজা।উনি ব্যস্ত আছেন বলে বলতেন টাকাটা পরে নিতে।তো এই তো দুয়েক দিন আগে আমি গেলাম উনার ফোন পেয়ে গাজা নিয়ে।বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন ছিল বন্ধ।ভদ্রলোকের রুমে ঢুকলাম।
জামিল সাহেব হেসে দিলেন।
-এসেছো তাহলে।জিনিস দেখি।
আমি আমার হাতে নিলাম কাগজের প্যাকেট।ওইখানে গাজা ছিলো কিন্তু উনার হাতে আর দিলাম না।
জামিল সাহেব হাত বাড়ালেন
-দেখি,দাও তো।
-আগে টাকা দেন
-আরে টাকা নিবা আর কি।
-নাহ,আগের টাকা গুলা সহ দেন।
-মানে?
-ক্লিয়ার করেই তো বললাম,আগের টাকা গুলা দেন না হয় আমি চলে যাচ্ছি।
-আজ তো টাকা নেই হাতে।টাকা পয়সা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।ছেলেমেয়েগুলাকে নিয়ে আর আমার ওয়াইফকে নিয়ে কোন জায়গায় যেতেও পারছিনা।বাসা ভাড়া,বাজারেই,নেট খরচেই সব চলে যায়।জানোই তো বেতন টা খুবই নূন্যতম।এজন্যি গাজাটা দরকার যাতে স্ট্রেস ফ্রি হয়ে চিন্তা করতে পারি।রিসার্চ এসিস্টেন্টের বেতন কিভাবে দিবো ভেবে বের করতে হবে।তুমি জিনিস টা দিয়ে যাও আমি টাকা দিয়ে দিবো পরে।
-আমার সমস্যা না এগুলা।আমার টাকা লাগবে।
এই বলে আমি বের হয়ে যাচ্ছিলাম,তখন জামিল সাহেব পিছন থেকে ডাক দিলেন।
-দাঁড়াও।
আমি জামিল সাহেবের গলার তেজে মনে মনে বেশ অবাক হলেও কিছুই বুঝতে দিলাম না।মুখটা আগের মতন ভাবলেশহীন রেখে ফিরে তাকালাম।
-বলেন?
-তুমি জানো আমার দৌড় কতদূর?তুমি আমার ব্যবসা বাজী দেখাও?দেশ টা ব্যবসায়ীরা চালায় ভালো কথা।কিন্তু এইটা বিশ্ববিদ্যালয়,বুঝছো?নাম্বার শিট টা আমার হাতেই।আর তোমার বাবার ইজ্জত তো এমনিতেই উনি কচি মেয়েদের পিছনে এবং সামনে ঢেলে দিয়েছেন।উনার ইজ্জত যা অল্প কিছু আছে তা আমি তোমার ড্রাগ ডিলিং দিয়েই পুড়িয়ে ছাই করে দিবো”।
আমি খানিকক্ষনের জন্য রাগে-ক্রোধে অনুভূতিহীন হয়ে গেলাম কিন্তু এরপর হো হো করে হেসে দিতেই জামিল সাহেব আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন।“কি ব্যাপার হাসছো কেন?”
“Am I being funny?What the hell is wrong with you”?
আমি আরো জোরে হেসে দিলাম।
উনি আরো রেগে গেলেন।
“What?Why are you laughing?”
আমি চিতকার করে বললাম “Nothing but remember speaking their language doesn’t make you a Bloody f*&king white trash.You blackmailing piece of shit.You want a professional drug dealer,here you get it.”এই বলে পকেট থেকে রিভলবার বের করলাম।হ্যা,আমার কাছে এখন এই জিনিস থাকেই।তবে কেন সেটার গল্প হবে পরে।
জামিল সাহেব রক্তচক্ষু হয়ে গেলেন।কিন্তু সেই সাথে মুখটাও বন্ধ করে ফেললেন।
আমি হাসতেছিলাম কারন আমি ভাবিনাই আমার দিনটা এইধরনের একটা উতকট একটা টার্ন নিবে।আমাদের ডিপার্টমেন্টের সেরা ৩ টিচারের একজনের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে গাজার দরদাম আর তোমার চরিত্র নিয়ে ঝগড়া করতে হবে ভাবিনি।ধন্যবাদ,বাবা তোমাকে।তোমার মাগীবাজির কারনে আমার জীবনে আরো একটা কুতসিত দিন পার করতে হলো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে দিলাম।ঠান্ডা সরু চোখ করে তাকালাম জামিল সাহেবের দিকে।
-রুমে চলেন
জামিল সাহেব চুপচাপ রুমে ঢুকলেন।
আমি রুমে ঢুকে স্নিকার্স সহ পা তুলে দিলাম উনার টেবিলে।ব্যবসা যখন করতেছি প্রকৃত ড্রাগ ডিলারের ভাব নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।হোক গিয়া জামিল সাহেব হতভম্ব।হোক বেয়াদবী।
মহাজ্ঞানী ইন্টারনেটের Robert Downey Jr.( IRONMAN ) এর মেমে এ বলা আছে “Do anything you want because at the end people will judge you anyways”
এর মানে যাই করোনা কেন মানুষ গাল্লাইবেই।তো আমিও মহাজ্ঞানী ইন্টারনেটের কথা অনুযায়ী কিছু চিন্তা না কইরাই দিলাম পা উঠাইয়া।
“দেখেন জামিল সাহেব।আপনার কলিজা কয়টা আমার জানা আছে।৭১ এর চেতনার যে ধরাবাধা কথা গুলা যে ছাড়েন সেগুলা মেরে আর গ্রেডিং নিয়ে ব্ল্যাকমেইল কইরা আমাকে লাভ নাই।প্রথমত আমি জানি আপনি ৭১ এর যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে বইয়া বইয়া পি সি এস জন্য পড়ছেন”।
ভারী নীরবতার চাদর যেন গলা টিপে মারছে।
জামিল সাহেবের সবসময়ের সপ্রতিভ চোখের শেষ আলো নিভে গেল।
আমি পকেট থেকে গাজা বের করে স্টিক বানালাম।
জামিল সাহেবের দিকে একটা এগিয়ে দিলাম।উনি আতংক গ্রস্ত হয়ে এমন একটা অবস্থায় পৌছে গিয়েছেন যে এত সাধের গাজার স্টিক টাও উনার নিতে হাত কাপছে।
“আরে নেন,জামিল সাহেব।আপনাদের মতন নর্থ আমেরিকান পি এইচ ডি পাওয়া জ্ঞানীগুনি রা যাতে স্বাধীন ভাবে গাজা খেতে পারে সেজন্য তো ৭১ এ গরীব কৃষক,চাষাভুষার ছেলেমেয়েরা লাশ হয়েছে।ওরা লাশ না হলে তো আপনি পি সি এস দিতেন আর বাইরে ডিগ্রী করা হইতোনা।নেন,নেন।টান দেন।ভয়ের কিছু নেই।আজকের টার কোয়ালিটি ভালো”।
জামিল সাহেব রিভল্বারের ব্যাপার টা এখনো মাথা থেকে সরাতে পারেন নি,বুঝা যাচ্ছে।
উনার হাত এখনো কাপছে।
“কি জামিল সাহেব?ভয় পাচ্ছেন?৭১ এর চেতনা আমার সামান্য রিভলবারের ভয়ে জানালা দিয়ে চলে গেলো।মজার ব্যাপার আমি কিন্তু তথাকথিত স্বাধীনতা বিরোধীও না।আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান”।
জামিল সাহেব তাও চুপ।
“মনে হয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবেই আমি আপনার সামনে এরকম একটা সিচুয়েশন এ এসে পড়ছি।মানে ঈশ্বর আপনাদের মতন তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ৭১ এর চেতনা ব্যবসায়ী হিপোক্রিট দের কথায় নয় কাজ দিয়ে ভরকায় দেওয়ার জন্যেই এইধরনের সিচ্যুয়েশনে ফেলাইছে। নিজেরে এখন সুপারহিরো লাগতেছে”।

জামিল সাহেব কিছু বলছেন না দেখে আমি গাজার স্টিক টা ধরিয়ে ঠোটে নিলাম।জোরে একটা টান দিলাম।
চমতকার সেই অনুভূতি সারা শরীর ময় ধাক্কা দিয়ে গেল।ধোয়া ছাড়লাম জামিল সাহেবের মুখ বরাবর।
“দেখুন আপনি কার সাথে কথা বলছেন হিসাব করে বলবেন।আপনাকে আমি চিনি।আপনার বাসা-বাড়ি-স্ত্রী-সন্তান সবার খবর আমি রাখি।আমার বন্ধুদের একটা বড় অংশ জার্নালিজমের এবং কড়া বামগ্রুপ করে,লুতুপুতু ইউনিয়ন কিংবা ফ্রন্ট না এবং এরা সবাই আর্মড।মিডিয়া ওয়ার এন্ড ফিজিকাল ওয়ার দুইটাই চলবে আর আমার বাপের ইজ্জতের কথা বললেন তো?হেহেহে।আমার সার্কেলের মেয়েদের কাউকে দিয়ে এবং হ্যাকার দিয়ে,ফটোশপ দিয়ে ওইরকম স্ক্যান্ডাল বের করা আমার জন্য ৫-১০ মিনিটের ব্যাপার।সো চোদনবাজি না করে টাকা দেন,না হয় জিনিস নিয়েন না।আল্লাহ হাফেজ”।

গাজার প্যাকেট হাতে,রিভলবার পকেটে ঢুকিয়ে হাটা দিলাম আর গাজার জলন্ত কাঠিটা উনার টেবিলে স্তুপ করে রাখা কাগজপত্রের উপর রেখে গেলাম।সবার উপরে আমার লাস্ট ল্যাব রিপোর্ট টা ছিল।আমি দেখেশুনে ওটার উপরেই রাখলাম।
“নাম্বার কম দিতে চেয়েছিলেন,তাই সুযোগ করে দিলাম।দুঃখের ব্যাপার এই যে এই একই ডিপার্টমেন্টে আপনার মতন লোক আছে আবার নোবেল পুরস্কার জন্য শর্টলিস্টেড মাটির মানুষ হাকিম স্যার ও আছেন।নিজেদের সম্মান নিজেদের তো রাখা দরকার।তাই না”?

বের হয়ে গেলাম,নীরবতা তখনো কাটেনি।আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।আশেপাশে কিছু না দেখে মাটিতে বসে চিতকার করে বললাম “আর কত??আর কতদিন স্রষ্টা??আমার কি এমন হওয়ার কথা??এইভাবে রিভল্বার হাতে নিয়ে শিক্ষকদের থ্রেট আর গাজার ব্যবসা???আর ইউ ফাকিং সিরিয়াস??তাহমীদ,রবিন রা সবাই এম আই টি আর ইয়েল এ বসে পৃথিবী বদলাচ্ছে আর আমি??ওদের চেয়ে বেটার রেজাল্ট করেও এই বা* করতেছি?দেশের সেবা??কি সমস্যা তোমার,ঈশ্বর”?
এরপর চুপ হয়ে রিভল্বার পকেটে ঢুকিয়ে ফেললাম।মোবাইল বেজে উঠলো।মেসেজ এসেছে।
“You fucking looser, get lost from my life”.
“ধন্যবাদ ঈশ্বর আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম” বলে উঠে দাড়ালাম।মেসেজ টা নাবিলার।আমার ঢাকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রেমিকা।এখনো আমিও মাঝে মাঝে টেক্সট করে ফেলি,ও করে ফেলে।দুই তিনটা টেক্সট আদানপ্রদান হয়।যার সারাংশ একটাই আমাকে ঢাকা যেতে হবে।শুধুমাত্র লুজার ছেলেরাই নিজের এরকম সর্বনাশ করে।আর কেউ না।তখন আমি একটা কথাই বলি “আমি তাহলে লুজার,আমি ওখানে আমি ফিরতে পারবোনা।”
-কেন ঢাকা আসতে পারবানা?তোমার এডমিশন তো ক্যান্সেল হয় নাই।
তখন আমি ইতিহাস বলি।
এরপর প্রথম মেসেজ টা আসে “Those who blame others for their misfortunes are loosers”.
এরপর এরকম একটা টেক্সট আসে আর আমি সব পিছুটান ফেলে দিয়ে আবারো এই জংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিতেগলিতে নিজেকে খুজতে থাকি।হ্যা,বাবা আমি আসলেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন খুব এঞ্জয় করছি।

চিঠি
পর্ব-২(বাবার কথা)

চারিদিক থমথমে নীরবতায় ছেয়ে গেছে।একটু আগেই যে ঝড় বয়ে গেছে তা বুঝার বিন্দুমাত্র উপায় নেই।মোটামুটি বড় হলরুমটার সাদা দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্ত।নাহ,বেশি না,অল্পই।তারপরেও তো টকটকে লাল রক্ত।ঘরের দুই কোনাতে দুইজন পড়ে আছেন।আরেকজন আহত হয়েছিলেন তাকে কিছুক্ষন আগে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হল।
এমন তো হতেই পারে।হ্যা,হতেই পারে তবে কিনা দেশসেরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগীয় প্রধানের অফিসে এরকম?সেটা কি হয়?না সেটা শোনা যায় না।আমাদের দেশে ছাত্র দের হাতে শিক্ষক নিহত হয় সেই খবর পানসে হয় গিয়েছে কিন্তু শিক্ষক দের নিজেদের মাঝে হাতাহাতির খবর টা এখনো খুব বেশি প্রচার পায় না।উচ্চ শিক্ষায় টাকাও নাই,উচ্চ শিক্ষার কোন খবর ও নাই।

জাহান সাহেব প্রচন্ড বিরক্ত সহকারে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালেন।জাহান সাহেব ১ম পর্বের সেই রাশিকের বাবা।সিগারেট ধরালেন।ধোয়া ছাড়লেন।রুমের চারিদিকে তাকালেন এককোনায় জবুথুবু হয়ে তার স্ত্রী বসে আছেন।অবশ্যি বর্তমান স্ত্রী।আগের স্ত্রী অর্থাৎ রাশিকের মা এর সাথে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে তাও বেশ কিছুদিন হল।ভীত চোখে জাহান সাহেবের স্ত্রী আশেপাশে তাকাচ্ছেন,জাহান সাহেবের সাথে চোখাচোখি পর্যন্ত করছেন না।কিছুক্ষন এদিক ওদিকে তাকিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন তিনি।

জাহান সাহেবের এই স্ত্রীর নাম ইশরাত।মাস্টার্স শেষ করেছেন দুই বছর হচ্ছে।মাস্টার্স শেষ হওয়ার ৬ মাসের মাঝে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।সেই নিয়োগের পিছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন জাহান সাহেব ও তাঁর প্রথম স্ত্রী আয়েশা।জাহান সাহেব এবং আয়েশা ম্যাডাম উভয়েই একই ডিপার্টমেন্টের ছিলেন।ইশরাত দুই জনের ছাত্রী ছিলেন,একদম সরাসরি।দুইজনের চিন্তা ছিল দুইরকম।

আয়েশার ম্যাডামের কথাই না হয় আগে বলি।এই লেখার পাঠকরা ফেসবুকে অনেক বালছাল,চ্যাটের বালের গরীব থেকে বড় কিছু হওয়ার গল্প সবাইরে দেখানির ব্যবস্থা করেন।যারা এগুলা সবাইরে দেখানোর লাইগা শেয়ার মারেন তারা নিজেরা এইসবের স্বপ্নই দেখতে থাকেন।মাইনষেরে বিরক্ত করেন কেন?ব্যাপারটা অনেকটা বাসে যৌন রোগের হার্বাল চিকিতসার ফ্লায়ার গুলার মতন।কোন কামে আসেনা,বিরক্তির উদ্রেক করে আবার চোখেও পড়ে।

আয়েশা ম্যাডাম গ্রামে বড় হচ্ছিলেন।তাঁর পরিবারের সবাই কট্টর মুসলিম লীগার। ১৯৭১ সালে দেশে শুরু হল যুদ্ধ।আয়েশার বাবা হলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।তো ঘটনা পেচ লেগে গেল।আয়েশার দুই ভাই ছিলেন তাঁদের বাবার থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন মতের।দুই ভাই চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে।এই শকে কিংবা শোকে আয়েশা ম্যাডাম মুসলীম লীগার বাবা আরো কড়া পাকিস্তানপন্থী হয়ে গেলেন এবং আর্মি আসার সাথে সাথে নিজের মেয়েকে তুলে দিলেন আর্মিদের মন জয়ের আশায়।সেইবার প্রথম ধাক্কায় এসেছিল জুনিয়র অফিসার রা বাংলাদেশে।তখনো সবকিছুই তাদের চোখে নতুন।এই লম্বা শ্যামলা সুন্দরী সদ্য কৈশোর পেরোনো মেয়েকে পেয়ে তারা আর নিজেদের ধরে রাখলোনা।মোটামুটি সব ধরনের কৌতুহল মিটিয়ে আবার সব রকমের সুখের আস্বাদ নিয়ে নিল।আয়েশার শরীর টা ঠান্ডা মাটিতে পড়ে থাকল আর সারা শরীরে হাজারো হাতের অদৃশ্য ছাপ,কামড়ের দাগ,বীর্যের ছড়াছড়ি।পরের দিন আবার এই একই অবস্থা।ঘরের উপরে কোনার দিকে ছোট কোনা দিয়ে আলো আসতো।একা থাকলে ওই আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিন কাটতো।একমাসের মাঝে একাকীত্ব মোটামুটি কমে গেল আয়েশার।আরো ৭-৮ টা মেয়ে তার সাথে যোগ দিল এই অত্যাচারের অংশীদার হওয়ার জন্য।পাকিস্তানী আর্মিদের একটা মহিলা ছিল যে কিনা এসে প্রতিদিন মেয়েদের কে দেখে যেতো।তাঁদের শরীরের খবর নিত।কে আজকে ফুর্তির অংশ হবে সেটা যাচাই করতো।এই মহিলার ব্যবহার ছিল ভয়ংকর।সারা শরীরের টিপে টুপে ধরে তার উপর চড় থাপ্পড় লাথি ঘুষি তো ছিলই।বাংগালি এই মহিলা ছিলেন মুসলীম লীগের মহিলা এম পি।

এভাবেই মোটামুটি অত্যাচার চলছিল।দুইটা মেয়ে মারাও গেল।একজনের লাশ তো পচে গন্ধ বের হওয়া শুরু হল।একদিন বৃষ্টির ভিতর হঠাত ঘটনাপ্রবাহের পরিবর্তন।ঠাস করে দরজা খুলে গেল।কড়া আলো না থাকলেও সবার চোখ ধাধিয়ে গেল।পাকিস্তানি এক সিনিয়র অফিসার দাঁড়িয়ে।উর্দু ভাষায় চিতকার করছে।সবাই ভীতদৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে।আয়েশা আগের রাতের অত্যাচারের ব্যথায় উঠে দাড়াতে পারছেন না।হঠাত চারিদিক থেকে গুলির আওয়াজ আসা শুরু করলো। একটু থেমে থেমে গুলির শব্দ ভেসে আসছে।আয়েশা আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন,কিন্তু পারেননা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বাকিদের ও একই অবস্থা।দুই তিন জন বের হতে পেরেছে।

পানির বালতি হাতে সেই মহিলার আগমন।সেই পানি ছুড়ে দেওয়া হল সবার শরীরে।বদ্ধ ঘরটার গুমোট-দূষিত বাতাস ভারী হয়ে এল সবার আর্ত চিতকারে।সবারই শরীর ক্ষত-বিক্ষত খামচি-কামড় থেকে আরো কত না বলা আঘাতে।সবারই শরীর জুড়ে ছোপছোপ রক্ত।গায়ে পানির ছিটা লাগার সাথে আগুনের মত সারা শরীর জ্বলে যাওয়ার যন্ত্রনার চিতকারের প্রতিধ্বনি যেন কিছুক্ষনের জন্য হলেও বুলেটের আওয়াজকে হারিয়ে দিলো।

সবাই উঠে দাড়ালো।উঠে না দাড়ানো ছাড়া আর কিছুই কি করার ছিল?ওই মহিলা আর জুনিয়র এক অফিসার এসে লাথি ঘুষি দিয়ে হাত টেনে সবাইকে উঠালো।সিনিয়র অফিসার তখনো চিতকার করে যাচ্ছেন।উনি নিজেও এসে সবাইকে বের করলেন।বের করে এনে মহিলাকে এবং জুনিয়র অফিসারকে আংগুল তুলে শাসালেন দুই টা থাপ্পড় ও দিলেন।মেয়েদের আটকে রাখার ব্যাপারে যেন তিনি অসন্তুষ্ট।নাহ,আয়েশাদের মোটেও ভালো লাগেনাই।এতদিনের যন্ত্রনা দুইটা থাপ্পড়ে শোধ হয় না।

বাইরে আনতেই দুইটা ছেলে এসে আয়েশাকে ধরে একটা জীপে উঠালো।আয়েশা ঘোরের ভিতর থেকে এতটুকুই বুঝলো এই ছেলেগুলো তার দুই ভাই।বন্দুক হাতে আর তাদের কে বাবার ভয়ে ভীত কিশোর দের মতন লাগছে না।পরিবেশ পারে মানুষ কে বদলাতে।বাবার সামনে আগে আয়েশাই কথা বলার সাহস রাখতো আর তার এই দুই ভাই চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে থাকতো আর আজ আয়েশা শত চেষ্টায় মুখ দিয়ে আওয়াজ ও করতে পারছেনা।ঘোরের ভিতর আয়েশা দেখলো জীপ টা এসে তাদের বাড়িতে থামলো।

-বুবু,আয় নাম,দেখ।
আয়েশা ঘোরের ভিতরে শব্দের উতসের দিকে হাত বাড়ায়।হাত টা চলে যায় শক্ত লোহার স্টেনগানের নলে।এখনো হালকা উষ্ণ।আয়েশা হাত সরিয়ে নেয়।একটু হেটে যায় সামনে।এইবার আয়েশার ঘোর কাঁটে।
মাটিতে সাদা পাঞ্জাবী,মাথায় টুপি আর লাল লুংগি পড়া মাটিতে শুয়ে আছে আয়েশার বাবা।সাদা পাঞ্জাবীর বুকের উপর পুরোটাই লাল।রক্তের লাল।দৃষ্টিহীন চোখ দুটো চেয়ে আছে ঠিক আয়েশার দিকে।
-বুবু তোরে নিয়ে আব্বায় মিলিটারীর কাছে দিয়ে আসছে এইটা আমাদের পাশের বাড়ির এক পোলার কাছে শুনছি।তাই জোর করে এইখানেই আসছি।তোরে ছুটাইবার জন্য।দেরী হইয়া গেছে আমাদের মাফ কইরা দে।
বলে বসে পড়লো দুই ভাই আয়েশার পায়ের কাছে।
-উফফ,খুব মুত লাগছে রে।কি করবো।
একটা অপরিচিত কন্ঠের আওয়াজ শোনা গেল।তারপর ছড়ছড় করে পেশাবের আওয়াজ ভেসে এল।আয়েশা তাকিয়ে দেখে বাবার লাশের উপর বন্দুকধারী এক লোক পেশাব করছে।
-রাজাকারের বাইচ্চা।খা মুত খা।
আয়েশা যেন দেখেও দেখলো না।
এরপরের ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলা যায়।
আয়েশার উপর এক ধনী সন্তানহীন বিদেশী পাগলাটে দম্পতির চোখ পড়ে।রেড ক্রসের পক্ষ থেকে তাঁরা দুইজন এসেছিলেন ভারতে শরনার্থীদের সহায়তা করতে।
আর আয়েশার দুইভাই যুদ্ধের পর চোরাচালানীর সময় বিডিআর এর হাতে নিহত হয়।বিডি আর এর লোকজন ও সব মুক্তিযোদ্ধা।

আয়েশা কিছু বছর বাইরে থেকে আবার দেশে ফিরে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায় সেখানেই জাহান সাহেবের সাথে পরিচয়,পরিনয়,বিয়ে এবং বিচ্ছেদ।

তো আবার বর্তমানে ফিরে যাওয়া যাক।
জাহান সাহেবের বর্তমান স্ত্রী ইশরাতের কথায় ফিরে যাওয়া যাক।আয়েশা ম্যাডাম ভেবেছিলেন ইশরাতের রিসার্চ পটেনশিয়াল ছিল,স্পষ্টবক্তা মেয়ে হিসাবে ভিসি,ডিন সাহেব সবার কাছে গিয়েই তিনি ইশরাতের নিয়োগের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
এদিকে জাহান সাহেবের সাথে ইশরাতের চলছিল ভালোবাসা-ভালোলাগা। প্রথমদিনেই জাহান সাহেবের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল ইশরাত।বর্তমান ভাষায় প্রথম দেখায় ক্রাশড একদম।কিন্তু আয়েশা ম্যাডাম এর সাথে পরিচয় হয়ে দমে গেল ইশরাত।তারপরেও চেষ্টা চলল মন জয়ের।ইশরাত ছাত্রী হিসাবে বেশ ভালো ছিল।
জাহান সাহেবের ক্লাস গুলোয় চমতকার পার্ফরমেন্স দিয়ে এবং সবসময় সামনে বসে মন জয়ের চেষ্টা চলতে থাকল।এরপর অফ টাইমে গিয়ে রিসার্চের নামে অনেক আড্ডাবাজি আলাপ করে যেতে লাগলো ইশরাত।
রাতে আবার কোপা পড়া দিতো যাতে জাহান সাহেব এর ক্লাস এ রেস্পন্স করতে পারে এবং রিসার্চে সাহায্য করে কাছে থাকতে পারে।

কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে যাবে তা ইশরাত ঘুনাক্ষরেও ভাবে নি।ততদিনে ইশরাত মাস্টার্সে থিসিস করছে তার প্রিয় জাহান স্যারের সাথে।স্যারের বাসায় গিয়ে তাজ্জব হয়ে যেতে হল ইশরাত কে।
আয়েশা ম্যাডাম এর চোখ দুটো ফুলে আছে।সারারাত কান্না কাটি করেছেন নির্ঘুম থেকে বুঝাই যাচ্ছে। জাহান সাহেব খুড়িয়ে হাটছেন।রাশিক একদিকে বসে আছে।
-মা,যেও না।
রাশিক ভাংগা গলায় বলে উঠল।
-চুপ থাক।আমার সাথে না গেলে চুপ থাক।
আয়েশা ম্যাডামের তীক্ষ্ণ চিতকার।বসন্তের বাতাসে চুল উড়ছে।লাল চোখের উন্মাদীনীর মতন লাগছে উনাকে।
-মা,প্লীজ।
-চুপ কর।এত বড় সাহস? আবার কথা বলিস?
-আয়েশা থাকো প্লীজ।
জাহান সাহেবের এই প্রবল অসহায় আকুতির উত্তরে আয়েশা ম্যাডাম চোখ মুখ ঠান্ডা করে একটা উত্তর দিলেন
-এত ছোট কলিজার ছোট লোকের সাথে আমি থাকবোনা আর।আমি তোমার সেই টিপিকাল বাংলার বৌ হতে পারবো না।রান্না করে করে খাওয়াবো,ঘরের কাজ করে দিবো,তুমি রিসার্চ করবা আর আমি পোলাপানের যত্ন নিবো?এত সহজ?তাও ওর মতন এত বাজে একটা ছেলের জন্য?কি পারো তুমি রাশিক?না পারো ছবি আকতে,না পারো গান বাজনা, না পারো লিখালিখি কিংবা ফটোগ্রাফি।
পড়ালেখাতেও ঘোড়ার ডিম।বাংলাদেশে থাকবি আর যতসামান্য কিছু করেই ভাবতে থাকবি কত রাজা উজির মারছি।টিপিক্যাল বাংগালী হবি?অনেকদিন সহ্য করছি আর না।আমার ফ্লাইট তিন দিন পর ইচ্ছা করলে আসিস,আমেরিকায় আমি টিচিং এর জব টা নিবো আর তোকে ঠিকমতন মানুষ করব যাতে fucking idiot না হোস।
আয়েশা ম্যাডাম অনেকদিন বাইরে থাকায় কথায় কথায় প্রচুর ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন।
সি এন জি এসে দাড়ালো।
আয়েশা ম্যাডাম সি এন জি তে উঠতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।ইশরাতের চোখের দিকে তাকায় আর বলেন “তুমি আমার মেয়ে হলে ভালো হত”।
আরেকবার রাশিক আর জাহান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আয়েশা সি এন জি তে উঠে বসেন।
ইশরাত,রাশিক আর জাহান সাহেব সি এন জি র পানে চেয়ে থাকলো।এইভাবে চলে কেউ চলে যেতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করাটাই কষ্টকর।

সময়ের ঘোরপাকে রাশিক ভালো ছাত্র হয়ে উঠে এবং বাবার সাথে থেকে বাবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল বেশ ভালো করেই আর ওদিকে ইশরাতের বিয়ে হয়ে গেলো জাহান সাহেবের সাথে।মানুষের জীবনের বাঁক গুলাতেই আসলে সব অন্ধকার কেন লুকিয়ে থাকে সেটা চিন্তা কিংবা গবেষনার বিষয়।আমাদের প্রথম কিস্তির মূল চরিত্র রাশিক তার বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে সত্য,কিন্তু সেটা দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা।মানে,একটা ব্রাক্ষনী ব্যাপার স্যাপার আছে এখানে পড়ার সক্ষমতা অর্জনে।সব মেয়েরা প্রেম করতে চায়,সবার মেয়ের মায়েরা বিয়ে দিয়ে দিতে চায়, সে এক বিশাল যজ্ঞ। কিন্তু রাশিকের বাবার সাথে ছাত্রীর বিয়ের পর ব্যাপার টা উলটো হয়ে দাঁড়ালো। রাশিক কে মোটামুটি আংগুল দেখায় সবাই ফিসফাস শুরু করে দিতো ও যেখানেই যাক না কেন।করবেই না বা কেন?বাংগালী তার নিজের নাম-ইজ্জত রক্ষা করবেনা তা কেমনে হবে?

খেলাধুলায়-শিল্প-সাহিত্যে সারা বিশ্বের সবার কাছ থেকে পিছিয়ে থেকেও বড় বড় কথা বলতেই হবে,নিজের মেয়েরা কলেজে থাকতেই প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে কিংবা ছেলে মাদকের জন্য চুরি করলেও পাশের বাড়িতে কি হয় সেটাই আসল চিন্তা।জাহান সাহেব কিভাবে,কেন ইশরাত কে বিয়ে করলেন সেটাই একমাত্র চিন্তা হয়ে গেল সবার।

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের খামার নিয়ে বসে থেকেও দেশের মানুষ চিকিতসার জন্য ছুটে বিদেশে,ফ্লাইওভার পরে ভেংগে,চলতে থাকে অপরিপক্ক্ব মস্তিষ্কের কল্পনা প্রসূত উন্নয়ন কর্মসূচি,যারা ভালো চাই নিজের তারা বিদেশে পালিয়ে বাঁচি।বাংগালী সবই করে সবই পারে।

এই মানসিক চাপ না নিতে পেরে রাশিক পরবর্তী বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে গ্রামের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিয়ে বাঁচার পায়তারা করলো,তার কি হবে সেটা নাহয় পরেই জানা যাবে।

আমরা ফিরে যাই জাহান সাহেবের জীবনে।জাহান সাহেব ছিলেন বোকা বাঙালি।বিদেশের পড়ানোর সুযোগ পেয়েও দেশমাতার আহবানে সাড়া দিয়ে চলে আসেন সেবা করার নিমিত্তে।কিন্তু এইদিকে দেশ মাতার কুলাংগার দের অনেক ছানাপোনা হয়েছে এবং তাদের সাথে টেক্কা দেওয়ার চিন্তাটা তিনি আর করেননি।অপরিকল্পিত পরিবার যেমন ভালো না(এর কারনে দেখবেন সবচে ঘনবসতি সম্পন্ন দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের কোন বলার মত সাফল্য নেই),অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তও আত্মঘাতি হতে দেরি হয় না।নিজের হাতে গড়ে তোলা বিভাগের সকল অবকাঠামো দিয়ে এবং নিজের হাত দিয়ে বের হয়ে আসা মানুষেরা যখন জাহান সাহেবের বিরূদ্ধাচারন করলো তখনই তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন কিন্তু তখন তিনি আয়েশা ম্যাডামের সাহায্যে মানুষের বিরূদ্ধাচারন রুখে দাঁড়ালেন। আয়েশার সাথে হল ছাড়াছাড়ি,ইশরাতের সাথে বিয়ে হওয়ার পর বিরূদ্ধাচারন রূপ বদল করে ব্যাক্তিগত আক্রমনের রং ধারন করলো।

-“আপনার কথা শুনে কি করবো?আপনার কথার দাম আছে?দেখছি তো কি করছেন”।
- “ও ছাত্রী ভালো কে বলছে?নাকি ওকেও বিছানায় নিবেন?আপনার তো রেকর্ড খারাপ।”
-“নিজের ছেলের খবর নাই,নিজের বিভাগের খবর কি রাখবেন?”
- “আপনার রুমে ছাত্রীদের রিসার্চের কাজে পাঠাই কেমনে?অতীত কি বলে আমাদের তো সব মনেই আছে”

তো এইসব আলাপ শুনে জাহান সাহেব আর ক্রোধ সংবরন করার প্রয়োজনীয়তা পেলেন না।উঠে চেয়ারটাই ছুড়ে মারলেন,মিটিং এর মাঝেই।তারপর যা হওয়ার হলো...

মিটিঙয়ের দিন সন্ধ্যায়,
কথোপকথন চলছে
-না,জাহান সাহেব।আপনি এইটা বলতে পারেন না।
-আমার বিয়ে আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার,ভিসি সাহেব।
-আপনি আমার দলের শিক্ষকের গাঁয়ে চেয়ার ছুড়ে মেরেছেন সেটা আমার ব্যাপার।আপনার করা একটা কাজের কারনে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে সেটা আমার দেখার ব্যাপার।
-আমার কারনে??আপনার পোষা ছাত্ররা শিক্ষকদের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারে তখন কি হয়?
-প্রমান নেই সেইটার।
-রাখেন।আমি আপনার দলের মানুষ,সেটা মনে রাখবেন।
-জাহান সাহেব,এইটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমি আপনাকে চাকরীচ্যুত করতে পারিনা,কিন্তু মাথায় রাখবেন আপনি নিজের কলিগকে বিয়ে করেছেন সেটা সত্য কিন্তু ডিভোর্স দিয়ে সন্তানতুল্য ছাত্রীকে বিয়ে করে কাজটা মোটেও ঠিক করেন নি।

ওরে দলবাজ চো*** পুত তুই খুব ভালো??নিজের বিভাগের চেয়ারম্যানের মেয়েকে পটায় বিয়ে করিস নি তুই?বিয়ের রাতে তো সব এসাইনমেন্ট,টার্ম পেপার,বাসে উঠতে না দেওয়ার কষ্ট,রেজাল্ট দেরী হওয়ার,সেশন জ্যামের সব দুঃখ ভুলে যাওয়ার জন্য, ভাইভার অপমানের কষ্ট দূর করার জন্য প্রতিটা ঠাপ মারিস নাই?প্রতিটা ঠাপের সাথে সাথে এইসবের নাম ধরে চিতকার করিস নি ?এখন ন্যায়ের অবতার সাজিস??কি দুর্নীতি করে ভিসি হইছিস আমি জানি না?কি দুর্নীতি করিস তা কি আমি জানিনা?
যাই হোক ডারউইন নামক ভদ্রলোকের বিবর্তনবাদের উপর সম্মান প্রদর্শন করে পশুত্বভাব বাদ দিয়ে জাহান সাহেব এত কিছু না বলে শুধু বললেন “ভিসি সাহেব,আপনি কিভাবে ওই চেয়ারে আছেন তার সবই আমার জানা,দয়া করে আমার সামনে ন্যায়ের কথা বলা আপনার জন্য ভালো হবেনা।আসি,ভালো থাকবেন”।
এরপর বের হয়ে চলে আসলেন।বৃষ্টির ভিতর ১৫ মিনিট হেটেই ঘরে ফিরলেন।
ঘরে এসে দেখেন ইশরাত এর চোখ ভেজা।হাতে দুইটা ব্যাগ।সিএনজি দাড়িয়ে ঘরের সামনে।
জাহান সাহেবের দেজা ভ্যু হল।আয়েশার চলে যাওয়ার দিনের কথা মনে হলো।
জাহান সাহেবের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।নষ্ট হাতঘড়ির কাটার মতন স্থির হয়ে গেলো।
-কি করো তুমি ইশরাত?
চোখ মুছতে মুছতে ইশরাত বলে
-ঢাকা যাচ্ছি।আমি আর পারছিনা।
-কি পারছোনা?
-তোমার সাথে একসাথে সংসার করতে।
-কেন?
-মানুষের এত কথা আমার শুনতে হবে কেন?আমি তো তোমাকে বিয়ে করেছি।আমার ক্লাসমেট ছেলেটা যে কিনা এখনো বিদেশে এম এস করছে মাত্র তাকে বিয়ে না করে তোমাকে বিয়ে করেছি কারন শুধু একটু শান্তি চাই।কিন্তু??
-কিন্তু কি?
-কিন্তু কি মানে???তুমি কি কিছুই বুঝোনা??কিস জিজ্ঞাসা করো আমাকে তুমি?
-হুম বলো।
-আমি একটু সম্মান খুজেছিলাম এই জীবনে,একটু শান্তিই চেয়েছিলাম।এর চেয়ে বেশি কিছু না।কিন্তু তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা দিন আমার নরকের মতন কেটেছে।ডানে বাঁয়ে সামনে পিছে কোথাও যেতে পারিনি।সবাই বাঁকা চোখেই আমাদের দিকে তাকিয়েছে।আমি পারিনি সমাজের সেই সম্মানের শিখড়ে যেতে।আমি ভেবেছিলাম মানিয়ে নিতে পারবো।তোমার উপর ক্রাশ আমার সেই কবে থেকে,তোমাকে মনে মনে ভালোবাসি সেই কবে থেকে।
-তো ভালোবাসা আর নেই?
-আমারি দোষ বুঝিনি ভালোবাসা আর জীবন এত কঠিন।অনেক কষ্ট হলেও ছেড়ে যেতে হবে তোমাকে।
বালের কথা না বলে চলে যাও।তুমি তো আসছো শুধু টিচার হইতে।আর কি??
নাহ জাহান সাহেব এই কথাগুলাও মনের ভিতর রাখলেন।
-হুম।ভালোবাসা-জীবন-সংসার খেলার পুতুল কিংবা ফেসবুকের স্ট্যাটাসের মতন না এই শিক্ষা আমাদের জেনারেশন কলেজে পেয়েছে আর তোমাদের জেনারেশন মনে হয় না কোনদিন শিখবে...
তো এখন কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
ইশরাত মাথা নিচু করে ফেললো।
-ভাইয়ের বাসায় যাই,উত্তরায়।
-কেন?
-ও প্রাইভেট ভার্সিটি খুলছে ওইখানকার টিচার হিসেবে আমাকে ঢুকিয়ে দিবে বলেছে।
-ভালো।আমি দিয়ে আসবো?
-নাহ।
-ঠিক আছে,আর এসো না তাহলে।
ইশরাত আবার হতবাক।এরপর নীরবেই সি এন জি তে উঠলো।
বৃষ্টিতে সি এন জি আস্তে আস্তে চলে গেল।জাহান সাহেব সিএনজির চলে যাওয়া দেখলেন।রাস্তা জুড়ে সিএনজির আলোর প্রতিফলন দেখলেন।এরপর কানে ফোনটা লাগালেন।ছেলেকে কল দিলেন।
-হ্যালো বাবা।
-কি রে তোর গলা এমন শুনাচ্ছে কেন?
রাশিকের গলা তখন ভার হয়ে আছে।
পাশে থেকে মেয়েলী গলায় কে যেনো বলে উঠলো
-রাশিক এমন করছো কেন?তোমার বাবা ফোন করেছে তো।
জাহান সাহেব ধাক্কার মতন খেলেন।
-আর কতক্ষন টানবি ফোন ধর বেডা।
আরেকটা গলা শোনা গেল। এইটা পুরুষালি অবশ্য।
-বাপে ফোন করছে তোর।
আরেকটা গলা ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো।
-আস্তে বল,শুনে ফেলবে।স্টিকটা এদিকে দে।
-হ্যা,বাবা।বলো।কি হইছে?
-পরে কথা হবে।থাকো বাইরে।
জাহান সাহেব এইবার ছেলে নেশাগ্রস্থ এই জিনিসটা বুঝতে পেরেও খুব বেশি কিছু চিন্তা করলেন না।কি হবে আর চিন্তা করে?সব কিছুর শেষ তো এখানেই তাই না? কি আর আছে?বাবা নাই,মা নাই,দুই বৌ চলে গেল,ছেলে নেশাখোর আর কি?

জাহান সাহেব নিজের টেবিলে বসলেন।কাগজ-কলম নিলেন।নিজের ছেলেকে চিঠি লিখবেন।

প্রিয় বাবা রাশিক,

আমি জানি তুমি আমার এই চিঠি তুমি ফেলায় দিবা।দেখবাও না হয়তোবা।কিংবা টয়লেট পেপার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারো।কে জানে? কথা গুলা যা বলবো সেগুলা যে খুব একটা জরুরি তা নয়।চিঠির সাথে সাথেই তুমি আমার উইল পাবে।বশির আংকেল এগুলা দিবে তোমাকে।চিন্তার কোন কারন নেই।অবশ্য তুমি আমার দেওয়া কিছু নিবে কিনা আমি তাতে সন্দিহান।যাই হোক, আমি আসলে জীবনে এই মুহুর্তে চমতকার একটা সংকটের মাঝে আছি।আমেরিকানরা সবকিছুর গাল ভরা নাম দেয় হয়তো আমার এই অবস্থাটাকেও একটা নাম দিয়ে থেরাপিতে বসাই দিতো।কিন্তু এইটা বাংলাদেশ আর সবার মতন আমাকে আবার চাকরীতে ফিরে যেতে হবে।হতাশাগ্রস্থ হওয়াটা কোন অপশন নয়।তবে হ্যা,আমার তো আর স্ত্রীও নেই,পরিবার ও নেই আমার আর কি চিন্তা,হ্যা ইশরাত আজকে আমাকে রেখে চলে গিয়েছে।

ব্যাংকের টাকা নিয়ে চলে যাওয়াই যায়।কিন্তু তাও কেমনে হয়?ব্যাংকের টাকা তো আগেই বিভিন্ন জনকে দান করে দিয়েছি আর পেনশনের বেশির ভাগ টাকা দিয়ে দিয়েছি বিভাগের বই –অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে।এইগুলাই মনে হয় জীবনের বড় ভুল।নিজের দিকে,পরিবারের দিকে,তোমার দিকে তাকানো আর হয় নি।নিজের স্বার্থ এর দিকে নজর দেওয়া শিখে উঠিনি।জীবন বুঝিনি।আমার প্রবাসী বন্ধুরা ছবি পাঠায় তাদের সন্তানদের এওয়ার্ড পাওয়ার আর আমি পাঠাই আমার ছাত্র-ছাত্রীর এওয়ার্ড প্রাপ্তির পর আমার সাথে তোলা ছবি।হায় জীবন।পেশা এভাবেই সৎ মানুষকে পিষে ফেলে,গিলে ফেলে,হজম করে ফেলে পরে চিবিয়ে সব শুষে ফেলে ছোবড়ার মতন করে রাস্তাঁর আস্তাকুড়ের আবর্জনার মতন করে থুতুর সাথে ছুড়ে ফেলে।তোমার জীবনের সবচে বড় আঁধারের উতস আমি,যেখানে পথ দেখানোর আলো নিয়ে আগানোর কথা ছিল আমার।


মাফ চাওয়া বোকামী,তাও যদি মনে হয় মাফ করে দিও। আমি যাই দেখি ফ্যানের মিস্ত্রিরা ঠিকমতন ফ্যানটা ঠিক লাগিয়েছে কিনা,আর সেই সাথে নতুন তোয়ালের কাপড় টা কেমন তাও দেখবো।ভালো থাকার চেষ্টা করো...
ইতি
তোমার বাবা(যদি এখনো সেই জায়গাটা দাও আর কি,মানুষ হিসেবে শুধুই বায়োলজিকাল সম্পর্ক মুখ্য রাখা বোকামি)

পরের দিন জাহান সাহেবের প্রিয় বন্ধু ও কলিগ বশির সাহেব দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে দেখেন ফ্যানের সাথে জাহান সাহেবের গলাটা বাধা।ওইখান থেকে উনি ঝুলছেন।প্রান নেই দেহে কিন্তু হাতে শক্ত করে একটুকরো কাগজ ধরা...

একটা বদ্ধ স্যাতস্যাতে ঘর।পচা শেওলার ভেজা আশটে গন্ধ।ঘরের কোনায় কোনায় সবুজ শ্যাওলা আর ছত্রাকে বেড়ে ওঠা।মাটির দিকে তাকালে লাল লাল ছোপ ছোপ রঙ লেগে আছে।এগুলা রঙ কিনা সেটাও বুঝতে পারছেনা রাশিক।একবার মনে হচ্ছে রক্ত আবার পরের মুহুর্তেই মনে হচ্ছে পানের পিক।পানের পিক হওয়ার কথা না।এখানে এসব গ্রাম্য নেশা চলেনা।বিশ্ববিদ্যালয় বলে কথা।ক্যাম্পাসের তরুন বলে কথা।এখানে গাজা চলে,ইয়াবা চলে।শহর থেকে দূর বিধায় মদ টা একটু কম চলে।শহুরে হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করে পোষায় না সবসময়। জানালা দিয়ে বদ্ধ নালার ভিতরে চুইয়ে যেমন করে পানি পড়ে ঠিক তেমন করে চুইয়ে চুইয়ে একটু করে সূর্যের আলো আসছে।কিন্তু খুবই মৃয়মান সেই আলো।

ধোয়াচ্ছন্ন রুমের ভিতর তামান্না,রাশিক,রইস আর আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রুমমেট রাহান। রইস আর তামান্না আমার এইখানকার বন্ধু।রইস আর তামান্না জড়াজড়ি করে বসে আছে।রইসের একটা হাত তামান্নার শস্তা জামার উপর দিয়ে পোকার মত কিলবিল করে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গা গুলোতে ঘুরে বেরাচ্ছে।রাহান দুই হাত দিয়ে গাজার স্টিক টা ধরে টানছে আর কথা বলেই যাচ্ছে। রাশিক ইয়াবা খেয়ে শক্ত হয়ে বসেই আছে।চোখ বড় বড় করে ।
রাহান হাবিজাবি বলতেছে।আমি কানটাকে আরেকটু ফোকাস করলাম,
“এই শুন না,রইস,তামান্নার দুধ পরে টিপিস।আমরা চলে গেলে চুদিস, সমস্যা নাই।তামান্না তুই না ফেমিনিস্ট?এভাবে তোকে এই যে স্ট্রেস রিলিভিং বলের মতন কথাবার্তা ছাড়া টিপে যাচ্ছে তুই কিছু বলতেছিস না? নাকি তুই শহীদ মিনারে গিয়ে হিজাবি দেখলে ফেমিনিজমের হরমোনে হর্নি হয়ে যাস? তখন খালি কথার তুবড়ি ছোটাস?তখন গলা খুব বড় হইয়া যায় আর নারীর প্রতি ইসলামের বিদ্বেষের দু পাতা লেকচার ছাড়িস?”
রইস আর তামান্না না থেমেই রাহান কে বললো “কানাইয়া এত কিছু বুঝোস কেমনে?তুই কুত্তার বাচ্চা চোখে দেখস না। কি বলবি বল না?”
রাহান আবার শুরু করে “আচ্ছা শুন না।আমি না গতরাতে একটা স্বপ্ন দেখছি। দেখি গোলটেবিলে বসে আছি আমি এক কোনায়।ঘরটা অতি সুন্দর। সবুজ মার্বেল দিয়ে পুরো ঘরটা বাধানো।মেঝের মোজাইক টা সবুজ সাদা মার্বেলের।ছাদ থেকে ঝাড়বাতি ঝুলছে দুইটা। টেবিলের উপর অপূর্ব সুন্দর গন্ধওয়ালা কাবাবের বাটি রাখা। বিশাল টেবিল বুঝছিস?বিশাল মেহগনি কাঠের টেবিল আর আমি তাকাইয়া আছি সোজা সামনের দিকে।ওইখানে দেখি তিনজন মানুষ মাথা নিচু কইরা বইসা আছে।আরেকটু খেয়াল কইরা দেখি একজন টেবিলের উপর মাথা দিয়ে রাখছে।পুরা রুমটা এত সুন্দর কিন্তু ডিপ্রেসিং। A perfect circle এর নতুন এলবামের টাইটেল ট্র্যাক Eat the Elephant বাজতেছে ব্যাকগ্রাউন্ডে।পিয়ানোটার প্রতিটা নোট দুঃখ ভরা সাগরের ঢেউয়ের এসে আমাদের কে এলোমেলো করে দিচ্ছে। আমি চিন্তা করার চেষ্টা করতেছি কিন্তু প্রতিটা নোট আমার চিন্তার সুতা চড়কির পার্ফেক্ট গতিপথ কে এলোমেলো করে দিচ্ছে। নতুন করে আবার চিন্তার চাকাটাকে ঠিকভাবে বসাই কিন্তু আবার মায়নার্ডের অদ্ভুত মায়াবী ভূতুড়ে গলার কাছে হার মানি। লোকটার গাওয়া শুনলে মনে হয় চারিদিকে কুয়াশা আর কোন ভাংগা জমিদার বাড়ির সিড়িতে আমি দাঁড়ায় আছি আর কুয়াশার ভিতর দাঁড়ায় কেউ গান গাচ্ছে।
হঠাত করে দরজা খোলার আওয়াজ শুনলাম।দেখি স্টিভেন হকিংস আর রিচার্ড ডকিংস ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু স্টিভেন হকিংস উনার জাদুর চেয়ার দিয়ে রিচার্ড ডকিংসের হাটুতে ঠুসা মাইরা ঢুইকা গেলেন ঘরে আর উনার ভয়েস প্রম্পটার এ শোনা যাইতেছে “ফাক ইউ ডকিংস”।আমি কাছে গেলাম মানুষ গুলার একজন লম্বা চুলের শ্যামলা লোক বসা, আরেকজন উলটা ঘুরে টেবিলে মাথা দিয়ে আছেন,সেই সাথে টাক মাথার সানগ্লাস পড়া এক ভদ্রলোক বসে আছেন।শ্যামলা লম্বা চুলের লোকটা টাক মাথা ওয়ালার তুমুল তর্কে লিপ্ত “তো কি হইছে?আমাদের পাদ্রীরা কি কাউকে খুন করছে recently?তোর পুরুত রা রোহিংগা মেরে সাফ করে ফেলতেছে”। টাক ভদ্রলোকের উত্তর “ তো কি? এখন ৬-৭ বছরের বাচ্চার প্যান্টের নিচে তো হাত ঢুকায় দেয় নি তোর নাম নিয়ে”।
স্টিভেন হকিংস এসে বললেন “এইজন্য ধর্ম কর্ম উঠায় দেওয়া উচিত”।
দুইজন মিলে খেকায় উঠে “স্তালিন তো ধর্ম ছাড়াই সবাইরে মেরে চামড়া উঠায় দিছে। গুলাগে যাবি শালার পুত।বড় দের কথার ভিতর বাম হাত ঢুকাস”।টেবিলে মাথা দেওয়া লোক টাকে দেখায় শ্যামলা লম্বা চুলের লোকটা বলে “জুনিয়র তো আইসিস এর প্রথম এটাকের পর থেকে যে মাথা টেবিলে দিছে আর উঠার নাম নাই”।
টাক ভদ্রলোক বলে উঠেন “ওই ১০০ দেবদেবী নিয়ে রাম কৃষ্ণ, থর,জিউস রাই ভালো আছে। মদ খায়,নাচ গান করে ।পার্টি আর ফুর্তির উপর চলে যাচ্ছে প্রতিদিন।”
“ওই রাহান,থাম।বালের আলাপ কতগুলা করোস।”রাশিক চিতকার করে উঠলো।
“তোর এই স্বপ্নের কথা তিনবার বলছিস আর ভাল্লাগেনা।প্রথমবারও খেত লাগছিলো। রইস-তামান্না তোরা বের হ।এখুনি এখান থেকে বের হ। তোদের দুর্বল ছেসড়া সেক্স দেখে আমার মাস্টারবেশনের ইচ্ছাও মরে যাচ্ছে।নিজের রুমে গিয়ে কর।”
রইস আর তামান্না এতক্ষনে থামলো।রাহান চুপ করে থাকলো।ঘরের কোনায় কনডম,তামান্নার ব্রা, রইস এর ময়লা আন্ডারওয়্যার, দেয়ালে বীর্য এইগুলা দেখে রাশিক বললো “যাওয়ার আগে ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যাবি”।
“না করলে? না করলে কি করবি?” তামান্না উদ্ধত গলায় বলে উঠে।রাশিক দুই হাত পকেটে ঢুকায়।দাড়ানো থেকে হালকা করে নিচু হয় আর তামান্নার মুখোমুখি হয়।
“দেখ,তামান্না তুই এই ঘরে রইসের আনা প্রথম মেয়ে না,শেষ মেয়েও হবিনা।এই চিন্তাটা মাথায় রেখে কথা বলবি।তুই নিজের ভোদায় আংগুল ঢুকায় ফেসবুকে র‍্যান্টেজের ছেলেদের ছোট পুরুষাংগ রিলেটেড লেম জোক পোস্ট করে নিজের দিকে এটেনশন আনতে চাচ্ছিস সেটা আমি জানি।তোর আগের রিলেশন কেমনে ভাংসে সেটা আমি জানি। তুই ছেলেটাকে পছন্দ করতি কিন্তু ছেলেটা স্রেফ খেয়ে ছেড়ে দিছে কারন কি জানিস?তোর বুক দুইটা ছোট এইজন্যে।ফেসবুক একটিভিস্ট ভুয়া ফেমিনিজম আমার সাথে এবং আমার সামনে চোদানো বন্ধ কর। ফাইনালি ঘর পরিষ্কার না করলে তোদের সবাইকে গুলি করে মারবো।”
এই বলে রাশিক রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাশিকের বাবার সুইসাইডের পর থেকে রাশিক আসলে মুখ খারাপ করে গেলে বেশী। জানাজা হয় নি তার বাবার। সুইসাইডের মৃত্যুর নাকি জানাজা হয় না। বাবাকে সে ঘৃনা করে। সুইসাইড হওয়ার পরে ঘৃনার পরিমান দশ গুন বাড়ায় দিছে। এখন বাবার প্রতি ফিলিংস টাই নষ্ট করে দিছে ভিতর থেকে সে নিজের হাতে।
“বাপ, আমার মাগীবাজ।কচি মেয়ে পেয়ে পরিবার কে ভুলে গেছে। আর আমি আটকা পড়ছি এই বালের জায়গা তে।হালায় মরছে ভালো হইছে”।
রাশিক মনে মনে গজগজ করতে করতে দরজার কাছাকাছি আসে।
দরজার কাছাকাছি আসতেই আবার রাহানের গলা “দোস্ত,ইয়ে মানে আমি তো তোর রুমমেট আমাকেও তুই বের হয়ে যেতে বলতেছিস?আমি তো বুঝোসই কানা,একটু সমস্যা”।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাশিক বের হলো।
খুব বেশি হয়ে গেলো কি?তামান্নাকে এগুলো বলা ঠিক হলো কি?এইভাবে করে কেন?এগুলো কি করছি?বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বুঝিনা কেন কি করি,কার জন্য করি। ঢাকার ওকে ফোন করা উচিত।তাই না?
অন্ধকার হয়ে আসছে।চোখ থেকে পানি বের হওয়া শুরু হয়েছে।বুকের ভিতর ইটের বাহী পাটাতনের মতন ভাড়।নিজের ভেতরটা যেন পলকা শরীরওয়ালা ইটবাহা শ্রমিকের মতন হয়ে গেছে। কাঠের পাটাতনে ৩০ টা ভারী ভারী ইট নিয়ে হেটে যাওয়ার সময় যেমন টা লাগে ঠিক তেমন ভার লাগছে ভিতর থেকে।প্রতিটা স্টেপে নিজের বুকের ভিতরের ভাড় যেন বেড়েই চলেছে। ঢাকায় কথা হয় না অনেকদিন।ফোন হাতে নিয়ে রেখে দেওয়াই হয়েছে শুধু। ওইদিক থেকে পুরোনো বন্ধুদের,আত্মীয় স্বজন দের ফোন ক্রমাগত আসছিলো বাবা মারা যাওয়ার পর কিন্তু তখন ওর ড্রামা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না।মস্তিষ্কের নিউরনের হরতালের ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রাম্য জায়গাটাতে চলে আসি।
নায়লা কি করছে কে জানে? বিকাল -সন্ধ্যার সময়। হয়তো টিউশনিতে নাহয় সব ফ্রেন্ডরা মিলে কোথাও গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কন্সট্রাকটিভ আড্ডা অবশ্যই।শর্ট লিভড কন্সট্রাকটিভ আড্ডা আর নাহয় ল্যাবে আছে। ওর লাইফ টা অনেক কন্সট্রাকটিভ।গঠনমূলক কাজে প্রচুর সময় দেয়।
হঠাত করে পিছন থেকে কে জানি ডাক দিল।
সন্ধ্যার আলোতে গ্রামটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।আকাশটা বদলে যায়।আস্তে আস্তে অন্ধকার নামে।পরের দিনের নতুন আকাশ কে স্বাগত জানানোর জন্য সারারাত ধরে যেন প্রস্তুতি নেয়।ধুর বাল,ফিজিক্স এ পড়ে এসব কি আজেবাজে কথাবার্তা ছাড়ি।পিছনে তাকালাম আলো আধারীর ভিতর দিয়ে দেখলাম তারেক ভাই। তারেক ভাই রাশিকের দিকে আসতেছে। তারেক ভাই বেশ সিনিয়র।রাশিক দের মেসেই থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা।বেশ প্রতাপশালী ছিলেন।গত মাস পর্যন্ত।গত মাস পর্যন্ত একেকদিন একেক মেয়েকে নিয়ে এসে রাত ভর ফুর্তি চালাতেন।গান আর চোদাচুদির আওয়াজে টেকা যেতো না।গত এক মাস সব ঠান্ডা। উনার দলের নতুন কমিটি হওয়ার কথা আগামী মাসে। তার আগেই উনার পদের প্রতিদ্বন্দীরা উনাকে খোলা রাস্তায় দিনের আলোয় চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে পুলিশের সামনেই। বেশি না,১০০টার মতন স্টিচ লেগেছিল। রাশিকের কাছে অদ্ভুত লাগলো তারেক ভাই কেন তাকেই ডাকতেছে। দুইজন সম্পূর্ন দুই মেরুর মানুষ।কিন্তু ভদ্রলোক এত দ্রুত কেমনে ক্রাচ এত দ্রুত ফেলে দিতে পারছে সেটা দেখে সে অবাক হলো।
“রাশিক চা খাবো,চল”
এই প্রথমবার এরকম কোন কথা শুনলাম ভাইয়ের মুখে।তারেক ভাই মেয়ে নিয়ে আসতো আর সেক্স করতো আর মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করত আছি কেমন।এতটুকুই সম্পর্ক ছিল।মেয়েরা আর পাত্তা দিচ্ছেনা বলেই আমার কাছে?
“চলেন ভাই।ওই যে কাদের ভাইয়ের দোকান খোলা আছে”।
“নাহ,কাদেরের দোকানের চা এর স্বাদ পেশাবের মতন।বিশ্রি।এই বালের ক্যাম্পাসের সোহাগ ভাই ছাড়া কেউ চা বানাতে পারেনা।রিকশা নে।লেডিস হলের ওইখানে সোহাগ ভাইয়ের দোকানে যাবো।”
রিকশা নেওয়া হল। মোটরের রিকশা।শরীরে সুন্দর বাতাস লাগছে। মোটর রিকশা গুলাতে অসুস্থ অপরাধবোধের জায়গা নাই। খুব আরাম করে চালিয়ে যাচ্ছে রিকশাওয়ালা। যেন রিকশা চালানোর মতন আনন্দের কাজ আর নেই। কিন্তু রিকশা দুইজন মানুষ একদম চুপ করে বসে থাকার মতন আনকমফর্টেবল কাজ পৃথিবীতে আর নাই।
এই অস্বস্তিভাব কাটানোর জন্য রাশিক আগে কথা বলে উঠল “কি ব্যাপার তারেক ভাই?আপনি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন হঠাত?”
“কেন বাম হইছিস বলে কি সরকারি দলের ছেলেপেলের সাথে কথা বলা যায় না?”
“নাহ,আবার মেরে রাস্তায় ফেলে রাখলে?আর আমি তো ভুয়া বাম”
চুপ হয়ে গেল তারেক। ঝুপড়ির সামনে রিকশা এসে গেছে। ধীরে ধীরে নেমে ভাড়া দিল তারেক।
গম্ভীর গলায় ডাক দিল “রাশিক,এদিকে আয়।এখানে এসে বস আমার সাথে।”
দোকানির দিকে গলা বাড়িয়ে হাক দিয়ে বলে উঠে “দুইটা চা দিও এই টেবিলে”।
রাশিক দাঁড়িয়ে রইলো।বসতে গিয়ে বসলো না। তারেক ভাই এর বন্ধুত্বপূর্ন ভাবভংগি একদমই ভাল্লাগতেছেনা।কেন ? এখানে কিভাবে আমরা একইসাথে এসেছি? কি চাইতেছেন উনি? এর আগে তারেক ভাই ক্যাম্পাসের এক কমেডিয়ান কে পিটিয়েছিলেন। বংগবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে কমেডি করার জন্য। কমেডিয়ানের কি অবস্থা আজকাল কে জানে?সুইসাইড করতে চেষ্টা করছিল শুনছিলাম।
তারেক ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কি রে বসবি না?”
রাশিক চিন্তা করলো কি বলবে।কোন উত্তর দিবে কিনা?
নাহ,চুপচাপ বসেই গেল রাশিক।
তারেক ভাই “বয়,তোর সাথে কথা আছে”। তারেক ভাই ক্রাচ টা বেঞ্চের উপর রাখলেন। অন্ধকার হয়ে আসতেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরচেনা লোডশেডিং এর কারনে টিমটিমে মোমের আলোয় বসে আছে সবাই। গরম এসেছে। আশেপাশে সবাই খালি গায়ে বসে আছে।তারেক ভাই শার্টের বোতাম গুলো খুলে দিলেন। সবখানে কাটা দাগ। রাশিক এর তাকিয়ে থাকা দেখে তারেক বলে উঠে “তুই কি গে নাকি?এইভাবে তাকায় আছোস?”
“নাহ,আপনারে ভালোমতন পিটছে”
“হুম”
চা এ চুমুক দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে তারেক।
“আমি জানি তোরা কি করতেছিস।”
“কি করতেছি?”
“সবই জানি”
“বলেন দেখি?”
“তোর ভার্সিটি লাইফের পুরোটার হিসেব আমার কাছে আছে। শুরু করছিলি স্যার দের কাছে গাজা বেচে, এরপর আবার কাস্টোমারদের কে বন্দুক দেখিয়ে থ্রেট দিছিস । বন্দুক কি চালাতে পারিস?শহুরে ইদুর এখানে এসে বড় বড় কাজ করার ধান্দা করতেছিস?”
সিগারেটের ধোয়ায় তারেক ভাইয়ের মুখ ঢেকে গেছে। চারিদিকে একটা কুয়াশা আর সেই সাথে সিগারেটের ধোয়া আর মোমবাতি কমলা ধোয়ায় ছেয়ে থাকা রহস্যের একটা চাদর এসে রাশিক আর তারেক কে জড়িয়ে ধরেছে। দুনিয়াতে যেন এই দুইজন ছাড়া আর কেউ নেই এখন। যদিও আশেপাশে স্বাভাবিক পোলাপান রা বসে চা, বিড়ি, সিংগারা চিবিয়ে যাচ্ছে।
তারেক আবার জিজ্ঞেস করে, “কি কিছু বলবি না?”
রাশিক বলে, “কি বলবো? আপনি যতটুকু জানেন অতটুকুই ব্যাপার। গাজা পাই আর বেচি। স্যার বাটপারি করতে চাইছে আমি আমার ব্যবসা বাচাইছি। এইখানে কথা পেচাইবার কি আছে এতো?
তারেক হাসে “এইটা কি ব্যবসার জায়গা?”
রাশিক বলে “কেন? এইযে চা খাইতেছেন, থাকতেছেন,সবই তো ব্যবসা।”
“একটা বড় অংশ তো করের টাকা খাচ্ছিস,রাশিক। এই এলাকার একটা ট্রাডিশন আছে রীতি নীতি আছে।তোদের এইসব বালছাল এনার্কিজম এঁর ভাত নাই এইখানে।তুই একটা লাইন ক্রস কইরা ফেলছিস।এইবার হিসাব গুলো ভিন্ন হবে।ছাত্রদের কাছ পর্যন্ত বেচবি ব্যাস।”
এবার আরো দুইজন এসে পাশে বসে তারেকের। তাদের হাতে চা আর সিগারেট। আশেপাশের দুই টেবিলের ছেলেরা ঘুরে আমাদের দিকে তাকালো। একজন উঠে গিয়ে বললো “এখুনি এইখান থেকে উইঠা যান সবাই।” প্রথমে আস্তে বললো এরপর চিতকার দিয়ে বললো। তখন সবাই উঠে গেলো কিন্তু একজন গাইগুই করতে গেলে দুই তিনজন মিলে কলার ধরে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিয়ে বের করে দিল। দোকানদার কাদের ভাই একবার তাকায় আবার চা বানাতে লাগলেন নির্লিপ্ত ভাবে। ভাবখানা এমন যে এ আর নতুন কি। একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অবশ্য চাপা ভাবে।কিন্তু কেউ সেটা শুনার প্রয়োজন বোধ করলো না।
একজন এসে এইবার রাশিক এঁর ঘাড় পেচায় ধরলো হাত দিয়ে। রাশিক বুঝার আগেই তার ঘাড় বেকা হয়ে গেল। তারেক উঠে দাঁড়ায় জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে একদম রাশিকের কাছে নিয়ে আসে।রাশিক তার আটককারীর হাতে আটকে থেকেই চোখমুখ দূরে সরানোর চেষ্টা করতে থাকে। এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক গভীর কিছু হয়তো লেখা যেতে পারে কিন্তু রাশিকের মন টা একেবারে আতংক দ্বারা গ্রাস হয়ে আছে। অন্ধ হয়ে যাওয়ার আতংক। তারেক তার সিগারেট রাশিকের চোখের ১ ইঞ্চি দূর থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে হাসতে থাকে। আশপাশে সবাই হোহো করে হেসে দেয় মাটির দিকে আংগুল দেখিয়ে। টপটপ করে পানি পড়া শুরু করছে রাশিকের প্যান্টের নিচে।
“মুতে দিছে, মুতে দিছে” বলে সবাই হাসা শুরু করে দিছে।
রাশিক বুঝতে পারলো ওর মন পুরোপুরি না বুঝলেও শরীর ঠিকই বুঝে গেছে। সে কি পরিমান একটা ভয়ংকর সিচুয়েশনে আছে। এত দিন শহুরে জীবন কাটিয়ে এসে ব্যাংকের চাকমা লুকিং আংকেল দের কাছ থেকে আর ঝুপড়ির দোকানদার দের কাছ থেকে গাঞ্জা কিনে এনে ভাই বেরাদর দের কাছে বিক্রি করা, শহুরে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়ে , পুরানা পিস্তল দিয়ে ভার্সিটির শিক্ষক দের ভয় দেখিয়ে ফলস কনফিডেন্স তৈরি করে খুব কুউল, ডার্ক আর ডিপ্রেসড ভাব চোদানোর ভ্যালু আজকে বের করে দিলো তারেক ভাই আর সরকারী দলের কর্মীরা। তার জীবন টা আসলে ফেইক ম্যাচোইজম এঁর ভিতরেই আটকা। বাপের সুইসাইডের পর তার এই এতদিনে মনে হইলো পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। সত্যিকারের ভয় কে মুখোমুখি করার কলিজা টা এখনো হয় নি।
রাশিকের লম্বা চুল ধরে মাটিতে ফেলে দিলো একজন। নিজের মুতের উপর রাশিক শুয়ে আছে। তার পিঠে পাড়া দিয়ে তারেক বলে “এই অবস্থা? ইউনিয়নের পোলাপান এঁর থেকে তোকে আরো সাহসী ভাবছিলাম।কিন্তু এখন তো দেখি অবস্থা খুবই খারাপ”।
এটা বলে তারেক বেশ শব্দ করে রাশিকের মুখে থুতু ফেলে।
“চল তোর বিচি শক্ত করাবো আজকে।”
এইটা বলে তারেক একজন কে বললো “এই ওরে ধর। নিয়ে চল পাহাড়ে।”
“চল,শালার পুত।বেডা হাফ লেডিস গাঞ্জা বিক্রি কইরা ফাপড় লস? উঠ।”
এরপর রাশিক কে টেনে ধরে মাটি থেকে উঠানো হল। এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় ও কিছু দেওয়া হলো।
সামনে একটা পাহাড়। ছোটোখাটো পাহাড়। টিলার মতো। টেনে ধরে রাশিক্ কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাহাড়ের দিকে। সবার সামনে তারেক ভাই। সিগ্রেট ফুকতে ফুকতে তারেক ভাই ডান বামে তাকাচ্ছেন। আর সবাই উনাকে ফলো করতেছে। সবাই হাটতে হাটতে এগুচ্ছে সামনের দিকে। চারিদিকে খুব সুন্দর মোলায়েম একটা আলো আধারীর একটা খেলা চলছে। ভার্সিটির লিটারেচার বিভাগের আর সায়েন্সে পড়া ওয়ানাবি বেকার কবি রা এই আলোটা দেখলে হয়তোবা কবিতা চুদে ফেলতো একটা। রাশিকের সেইসব হচ্ছেনা। পিশাবের কারনে জিন্সের প্যান্ট টা ভিজে হয়ে গেছে ভারী। এটা পড়ে হাটাহাটি করতে খবর হয়ে যাচ্ছে।এছাড়া সারা গায়ে হয়ে গেছে ব্যথা। ঠোট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। মুখে একটা লোহা লোহা স্বাদ পাচ্ছে। কিন্তু এখন থামা যাবেনা। এখান থেকে বের হতে হবে। দ্রুত।
রাশিক একটু করে দাঁড়ায়। ওরা সবাই এখন পাহাড়ের উপরে। নিচ টা দেখা যাচ্ছে। দৌড় দিবে কিনে ভাবে। ভাবতে ভাবতে চটাস করে একটা চড় খেয়ে ফেলে।
“এই,চল।এইখানে দাঁড়ায় থেকে কি ভাবিস?হাট,শালার পুত”।
রাশিক আশেপাশে আরেকবার তাকালো। চারিদিকে তাকে ঘিরে ৮-১০ জন দাঁড়ায় আছে। ওর হাটার জন্য অপেক্ষা করছে। রাশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুতে ভেজা প্যান্ট পড়া অবস্থায় হাটা ধরলো। পা টেনে টেনে সে আগাতে থাকলো। অন্ধকার হয়ে আসছে। আরেকটু আগানোর পর পিছন থেকে আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা। আশেপাশে তাকায় তারেক ভাই আর তার সাংগোপাংগো ছাড়া আর কেউ নাই। ঘন জংগল দিয়ে ঢাকা আশপাশ দিয়ে। তারেক ভাই দাঁড়ায়। সে দুই তিন পা আগায় যায়।
তারেক বলে “রাশিক এইদিকে দেখ।”
রাশিক এঁর তখন মাথা ব্যাথা শুরু হচ্ছে। মাথা নিচু করে ছিলো। মাথার উপর মনে হচ্ছে তার ডিপার্টমেন্টের আলুর সিংগারা খাওয়া মোটকা পোলাগুলা বসে আছে।
তারেক আবার চিতকার দিয়ে বলে “এই রাশিক কুত্তার বাচ্চা এইদিকে তাকা।”
রাশিক মাথা উঠালো।
পুরোপুরি অন্ধকার হচ্ছে।গাছপালার ভিতর দিয়ে অল্পস্বল্প আলো আসতেছে। তবে আলোটা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। অন্ধকার দ্রুত গ্রাস করছে। গাছের নিচে অন্ধকার এ একটা ছায়া ছায়া অবয়ব দেখা যাচ্ছে।তারেক ভাই ওই ছায়া অবয়বের পাশে দাঁড়ায় আছে। রাশিক ফোলা চোখ দিয়ে তাকায় বুঝার চেষ্টা করতে থাকে। কয়েক সেকেন্ড তাকানোর পর রাশিকের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। ভয়ে হাটু ভেংগে আসতে লাগলো। ঠান্ডা ঘাম আসা শুরু করলো কপাল দিয়ে। হার্টবিট ও বেড়ে গেলো।
তারেক ভাই, এঁর হাতে লম্বা চাকু। ক্যাটস আই এঁর শার্ট পড়া জিনস পড়া পরিপাটি জামাকাপড় পড়া। কিন্তু সারা মুখে আর গলায় রক্ত।
“এরে চিনিস?”
রাশিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা কি বলবে। তারেক ভাই তার দলের যে মাথা তার গলাতে ছুরি ধরে রাখছে। যার কারনে তারেক ভাই দলে তার কাংখিত পজিশন পায় নাই তার গলাতেই ছুরি ধরে দাঁড়ায় আছে।
নীরবতা আরো শক্ত করে সবাইকে জড়িয়ে ধরে ফেলতেছে। বাতাস শুরু হয়। শো শো করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে বাতাস শুরু হয়। একটু দূরে কিছুটা শো শো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাশিক মাথা তুলে তারেক ভাইয়ের চোখের দিকে তাকায় থাকে। তারেক ভাইয়ের চোখের মাঝে খুনী ঠান্ডা ভাব নেই কিন্তু তার চোখে একটা আনন্দ এবং এক্সাইটমেন্ট খেলা করতেছে। তারেক ভাই এঁর চোখে রাশিক একটা অন্ধকার মাখা স্বপ্ন দেখে।রাশিক যেখানে বড় হয়েছে সেইখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন টিনএজার পোলাপান দের গায়ে হাত দিতেন। টিন এজার দের দেখে ওই ভদ্রলোকের চোখ যেমন জ্বলজ্বল করে উঠতো ঠিক সেভাবে তারেক ভাই তাকায় আছে। অল্প অল্প করে হাসতেছে।
“কিরে চুপ মেরে গেলি?”
রাশিক এঁর গলা তে আটকে গেলো কথা। “কি বলবো?”
“এরে চিনিস কিনা বল?”
“হা”
“কে এটা?”
“ইয়াসির ভাই;আপনার সভাপতি”
“চিনিস দেখি”।
“এটার কি দরকার ছিল” এটা বলতে গিয়ে রাশিকের গলা শুকায় গিয়ে ঘরঘর আওয়াজ ছাড়া কিছু বের হলো না।
হঠাত করে ইয়াসির ভাই নড়েচড়ে উঠে। ঘরঘর আওয়াজ করে একগাদা রক্ত বমি করে দেয় ইয়াসির ভাই।
“তারেক আমারে ছেড়ে দে। আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাবো। তুই যা ইচ্ছে করিস। আমি তোকে সব ক্ষমতা দিয়ে যাবো। তুই আমাকে জানে মারিস না।পায়ে পড়ি” এটা বলে তারেক ভাইয়ের পায়ের উপর পড়তে গেল ইয়াসির ভাই। কিন্তু আটকে গেল। রাশিক আবার খেয়াল করে দেখে ইয়াসির ভাইয়ের গলায় দড়ি দেওয়া আর সেই দড়ি গাছের ডালের সাথে উচুতে বাধা।
তারেক ভাই ঘুরে বলে “নাহ,ইয়াসির তোরে ছাড়া যাবেনা। তোকে নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান।এতদিন ধরে জাতীয় তে দল ক্ষমতায় আর এখনো এইখানে পোলাপান রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মেসে মেসে থাকে। কোনোভাবেই আমরা ক্ষমতায় যাইতেই পারতেছি না।তোর মতন বলদ চোদা দিয়ে কিছু হবেনা”।
ইয়াসির ভাই এঁর মুখে একটা ঘুসি পড়ে। ইয়াসির ভাই তখন বলে “ কিন্তু তুই আমাকে কেন মারতেছিস?”
তারেক ভাই হাসে।
“হো হো হো হো।কি বলিস রে? কিরে কি বলে?”
এটা বলে তারেক ভাই বাকি সবার দিকে তাকায় বলে “দেখছিস এই বলদ টা বুঝতেছে না। কি হচ্ছে?”
বাকিরাও হাসতে থাকে।
“ইয়াসির, তোর লাশের দাম তোর থেইকা যে বেশী,এটা বুঝতেছিস?”
ইয়াসির ভাই কাশতে কাশতে জোরে রক্তমাখা কফ মাটিতে থুতু দিয়ে ফেলে। উনার শরীরের শেষ শক্তিটা একসাথে করে চিতকার করার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত ঘরঘর করে বললেন “কেউ মানবে না। আমারে দলের সবাই মিলে ভোট দিয়ে বানাইছে সভাপতি। তুই ভোটে হারছিস। তুই প্রথমেই বাটপারি করতে গেছিলি তখন তো তোরে ছেচা দিছে মনে নাই? কেউ মানবো না তোকে”।
তারেক ভাই চাকুটা নিয়ে ইয়াসির ভাই এঁর গলায় আবার চালায় দেয়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে থাকে ঢাকা হাতিরপুলের পানির ফোয়ারা গুলার মতো। নাকি সংসদ ভবনের মতো পানির ফোয়ারার মতো? সংসদ ভবনে পানির ফোয়ারা কি আছে? কে জানে। তবে এটা বুঝি, সংসদ ভবনে ইয়াসির ভাইয়ের গলার মতন করেই গনতন্ত্রের গলা কাটা হয়। ওইটাই হোক।
তারেক ভাই চাকুটা নিয়ে সংসদ ভবনে যেভাবে গনতন্ত্রের গলা কাটা হয় ঠিক সেভাবে করে ইয়াসির ভাইয়ের গলাটা কেটে ফালিফালি করে দিলেন। ইয়াসির ভাই অবাক দৃষ্টিতে তাকায় থাকলেন তারেক ভাইয়ের দিকে। কিছু বলতে গিয়ে যেন আটকে গিয়েছেন।
মাথাটা ঝুলে গেল। সিনেমাতে যেরকম দেখায় কিংবা বই প্ত্রে যেমন পড়ি ঠিক তেমন রোমান্টিক কিছু ছিল না উনার মৃত্যুতে। খালি চট করে মাথাটা ঝুলে গেল। কোনো বালের মনোলোগ, মন্টাজ, আত্মা চলে যাওয়ার বাতাস এসব কিছু হয়নাই। রাশিক তাকায় থাকলো আর ভাবতে লাগলো এইবার কি আমার পালা? চাকু কি আমার গলায় যাবে?
তারেক ভাই এইবার আমার দিকে তাকালো।
“কিরে রাশিক, কি অবস্থা তোর? কেমন লাগতেছে? আবার মুতে দিছিস?”
রাশিক কিছু বলেনা। চুপ করে থাকে।
“তোকে আজকে মারবো না। চিন্তা করিস না। তোকে আমার লাগবে। তুই হবি আমার সাইড বিজনেস। অং চং দের কাছ থেকে নিয়ে গাজা বিক্রি করে টাকা যা পাবি তার ভাগ আমাকে দিবি।অং চং মানে বুঝছিস তো?”
রাশিক বুঝতে পারছে। অং চং বেসিকালি বর্নবাদী স্ল্যাং। পাহাড়ি দের কে বুঝানোর জন্য অনেকেই ব্যবহার করে। রাশিক সেটা জানে। রাশিক আস্তে করে মাথা নাড়ে।
“এত আস্তে মাথা নাড়ছিস কেন?ওই হলুদ মাইয়া দের বডি খুব দারুন লাগে। দেখলেই খেয়ে দিতে ইচ্ছে করে। দুই টাকে খাইছি অলরেডি।খুবই সেরা মাল। আমি আবার ওদের এত শত গ্রুপ কে আলাদা করে দেখিনা। সবগুলো উপজাতিরে এক সাথে করে অং বং চং ডাকি। কি? সিস্টেম ঠিক আছে না?”
রাশিক আবার মাথা নাড়ে। তারেক ভাই এক পা এগিয়ে এসে থাপ্পড় লাগায় দিয়ে বলে “বল ঠিক আছে না?”
“জি ভাই”
তারেক আশেপাশে তাকালো। একটা চেংড়া দেখতে ছেলেকে কাছে ডাকলো।
“এই তুই ফার্স্ট ইয়ার না?”
মোচ গজাচ্ছে সদ্য। ফর্সা সুন্দর মত শুকনা করে একটা ছেলেকে উত্তর দিলো
“জি ভাই”।
ছেলের চোখ গুলো এখনো মরে যায় নি। জ্বলজ্বল করছে অপাড় সম্ভাবনা নিয়ে। মাত্র তো ফার্স্ট ইয়ার। আত্মার মৃত্যুর প্রসেস টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুরু হয় ২ বছর পর। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ ব্যবস্থার সব মিথ্যে গালগল্প গুলো চোখে পড়া শুরু করে। প্রথমে সায়েন্স পড়তে হবে,এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে নাহয় ডাক্তার হতে হবে। আবার যাদের কে স্কুল কলেজে আর্টস কমার্সের যেসব পোলাপান কে চুতমারানীদের মতো ট্রিট করছো তাদের সাব্জেক্ট এম বি এ পড়তে হবে নাহয় তাদের চাকরী গুলো খেয়ে দেওয়ার জন্য বিসিএস প্রস্তুতি নিতে হবে। এরপর দেখা যাবে যেসব গাঞ্জাখোর,সিগারেট খোর, মদ খাওয়া মানুষ দের থেকে মা-বাবারা মেয়েদের কে দূরে রাখতো তাদের একটু সফল ভার্সন দের সাথে ক্লাসমেট ক্রাশ আর প্রেমিকাদের একের পর এক বিয়া হইতে থাকবে। আর এই ছেলে ইসলামের ইতিহাস পড়ে মাস্টার্বেশন করে মাথার চুল পাকিয়ে ফেলে ধ্বজভংগ হয়ে ঘুষ দিয়ে কলেজের শিক্ষক হবে। যেখানে পোলাপান তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা ছাড়া আর কিছু করবেনা।

তারেক ভাই ছেলেটাকে কাছে টেনে নিয়ে। কানে কানে কি যেন বলতে লাগলো। গাছের পাশে ইয়াসির ভাইয়ের লাশের কাছে নিয়ে গিয়ে দাড় করালো।
ছেলেটা হঠাত চিতকার করে দৌড় দিতে গেলে পিছন থেকে তারেক ভাই জোরে আটকে ধরে গলায় পোচ দিয়ে দেয়। ছেলেটা ডাংগায় আনা মাছের মতো তড়পাতে থাকে। একদম একই রকম মোশনে। স্রেফ মাছের আশটে গন্ধটা নাই। সবাই এইবার একটু অবাক হয়। কি ব্যাপার, এটা কি হলো? এটা কেমনে হইলো? রাশিকের আশপাশে সাংগোপাংগো রা এইবার একটু নড়ে চড়ে দাঁড়ায়। কি ব্যাপার? কেন হইলো? ওই ফ্রেশার ছেলের কি দোষ?
তারেক ভাই ছেলেটাকে মাটিতে শোয়ায় দেয়। তারপর আরেকটা দড়ি বের করে। ছেলেটার চোখ এঁর পাতি গুলো বন্ধ করে দেয় তারেক ভাই। এরপর আশপাশে তাকায় আর বলে
“কিরে স্ট্যাচু মেরে গেছিস কেন? এইটাতো প্ল্যানে ছিল। ইয়াসির ভাই এঁর ব্যাপার টা তে তো নর্মাল ছিলি।এইডা কেন এমন লাগতেছে? আয়, এরে বান্ধি।গাছের সাথে ঝুলাইতে হবে তো। আয় তো”।
রাশিক এঁর বমি আসা শুরু করতেছে।মাথা ঘুরাচ্ছে। পা ভেংগে বসে পড়ে রাশিক। পোলাপান গুলো তারেক ভাইকে সাহায্য করতে থাকে। ইয়াসির ভাই কে আর অন্য ছেলেটাকে ওরা গাছের ডালের সাথে বেধে ঝুলিয়ে দিচ্ছে।
রাশিক এটা দেখে শুয়েই পড়ছে মাটিতে। আর দাড়াতে পারতেছেনা।
তারেক ভাই এবং তার দলের লোকজন ওই দুইজন কে গাছে উঠাচ্ছে। মট মট করে গাছের ডালে লাশের ওজনের কারনে চাপ থেকে আওয়াজ হচ্ছে। দড়ির সাথে গাছের ডালের ঘর্ষনের চড় চড় করে আওয়াজ আসছে।
বাধাবাধি ঝুলাঝুলি শেষ করে তারেক ভাই বলে
“ফেসবুকে লিখ ইয়াসির আর এই ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছেনা।অপোজিশনের লোকজন গুম করছে বলে শুনা যাচ্ছে।তারপর আলতু ফালতু স্লোগান লিখে দে একটা। ইয়াসির কে না পেলে জ্বলবে আগুন হলে হলে। এইটাইপ বাল ছাল লিখে সবাই মিলে শেয়ার দে।”
এরপর রাশিক তার ভাড় হয়ে থাকা মাথা একটু উঠিয়ে দেখে তারেক ভাই ফ্রেশার ছেলেটার মানিব্যাগ থেকে কয়েকটা টাকা বের করলো। এরপর নিজের মানিব্যাগ থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে একজনের হাতে দিয়ে বলে “এই টাকা গুলো ওর পরিবারে পাঠানোর ব্যবস্থা কর”
টাকা টা যার হাতে দিলো তারেক ভাই সে বলে উঠলো “ভাই, এটা তো আবার বেশী গরু মেরে জুতা দান হয়া গেলো না?”
তারেক ভাই তখন বলে “তো কি টাকা টা মাইরা দিলে ভালো হবে,খানকির পোলা? আমাদের একটা ইজ্জত আছেনা?একটা নীতির ব্যাপার আছে না? যাহ, বেশী কথা বলিস ন এখন।”
“একে কি করা যায়?এরেও কি কতল কইরা দিবো?কথা বললে?” আরেকটা গলা পাশ থেকে বলে।
তারেক ভাই রাশিকের দিকে আসে।
“এটাকে নিয়ে চল।মেসের সামনে ফেলে রাখবো।সবাই ভাববে গাঞ্জা খেয়ে পড়ে আছে।বাইকের পোলাপান রা আসছে নাহ?”
“জী ভাই। আর রহিম ভাই ভার্সিটির এম্বুলেন্স নিয়ে আসতেছে।”
“আচ্ছা,চল”।
রাশিক কে চ্যাংদোলা করে উঠানো হইলো।এরপর আর রাশিকের কিছু মনে নাই আর।


“এইযে ভাই উঠেন, উঠেন তো।এইভাবে মাডিতে পইড়া থাইকেন না তো। গায়ে থেকে গন্ধ আইতাছে আপনার।কি খাইছেন কন তো?বাপ-মা এগুলির জন্য আপনাদের কে এইখানে পাঠাইছে? দেখি উঠেন।”
রাশিক চোখ খুলতে গিয়ে আবার বন্ধ করে ফেলে। এতো আলো কোত্থেকে আসতেছে? সকাল হয়ে গেছে? গতকালকের সবকিছু কি দুঃস্বপ্ন ছিল? সবকিছু কি আগের মতোই আছে? একটু খুশী হতে গিয়ে রাশিক ভাবলো নাহ, এত আনন্দ কপালে নাই। গতকাল রাতের সবকিছুই আসলে সত্য। এরপর নিজের দিকে তাকায় দেখে ওহ,হ্যা তাইতো। সেই মুতের কাপড়। ময়লা শরীর, মুখে রক্ত,মাথা ভাড় আর ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে রাশিক উঠে দাঁড়ায়। খুব বাজে একটা দুস্বপ্ন যেন ফিরে ফিরে ঘুরে ঘুরে আসতেছে। আমড়া বিক্রির একটা ভ্যানওয়ালা এসে উঠাইছে রাশিককে।
রাশিক পাত্তা না দিয়ে উঠে মেসের ভিতর ঢুকলো। গোসল দরকার গায়ের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য। রাশিকের পিছনে রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে দলে মানুষ জন ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে মিছিল করতে করতে। তারেক ভাইয়ের প্ল্যান আস্তে আস্তে মনে হয় বাস্তবতা পাচ্ছে। মানবতা আর সামাজিকতা আসলে দিনশেষে একটা বুলশিট। নোংরা পৃথিবীর নিয়ম এটাই যে নিজের স্বার্থ হলো এক নাম্বার। হুদাই আসলে মানবতা কে হাইলি রেইট করা হয়। জেনোসাইডের উপর জেনোসাইড,খুনের উপর খুন,ধর্ষনের উপর ধর্ষন এঁর পাহাড়ে ঠেলে দিয়ে মানুষ একটু একটু করে আগানোর চেষ্টা করে এবং আবার একই জায়গায় এসেই পৌছায়। একই কাজ গুলোই করতে থাকে। সেইখানে আবার নতুন নতুন ক্রাইম করবে সবাই নতুন নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করে। মানুষ আসলে বদলায় না।

রাশিক এভাবে করে একটু নিহিলিস্ট ভাব ধরতে গিয়ে ভিতর থেকে নিজের পুরোনো মানবিক অংশ টাকে ফেলে দিতে ব্যর্থ হয়। মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে পড়ে যেতে থাকে আবার। দুইজন মানুষ কে রাশিকের সামনে এভাবে মিনিংলেস ভাবে মেরে ফেললো আরেকটা মানুষ। তাও কিসের জন্য? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার স্ট্রাগলে জেতার জন্য?
কিন্তু রাশিক নিজে কি করতেছে?
বালের টেকা পয়সার নাই অভাব তারপরেও আমি পুরান জং ধরা পিস্তল নিয়ে ভাব চোদায় গাঞ্জার ব্যবসা করতেছে। নাহ কোনো কিছু তেই আসলে কোনো ভিন্নতা নেই। রাশিক নিজেও চায় পাওয়ার স্ট্রাগলের পুরো কেক টার এক কানা কঞ্চি । সবাই একটু ইম্পর্টেন্স দিবে। এটাকি রাশিকের বাবা মা নিজেদের গেঞ্জামের কারনে ওকে যে সময় দিতে পারে নি সেটার কারনে তৈরি হওয়া এটেনশন এঁর ইনসিকিউরিটির কারনে করতেছে?
নাহ, চেটের বালের ক্লিশের মতো সবকিছুর দোষ বাবা মা এঁর উপর চাপায় দেওয়া হইতেছে।
রাশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেসে ঢুকে। কানাইয়া রাহান ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। রুমে ব্যবহৃত কনডম গুলো পড়ে আছে। সারা রুমে বীর্যের গন্ধ। রাশিক এইসব অগ্রাহ্য করে গামছা নিয়ে গোসলে ঢুকে। গা সাবান দিতে দিতে গা চুলকাচ্ছে। সেই সাবান দিয়ে কালো কালো ময়লা পানি ধুয়ে গা বেয়ে পড়তেছে। আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রাশিক। ভয় দুঃখে কান্না চলে আসে। তার মনে হইতে থাকে কোনোভাবে কিছুই যেন আর মিলাতে পারছেনা সে। এভাবে মেরে ফেললো? এভাবে?
তার জীবনের মানে কি দাড়ালো? ফ্রেশার ছেলে মারা গেলো স্রেফ একটা পাওয়ার প্লট কে আরো শক্ত করার জন্য? এটা কিভাবে একটা কারন হয়? এভাবে করে একটা মানুষের জীবন এভাবে শেষ হয়ে গেল? এতদিনের এত সিনেমা,সিরিজ,ভিডিও গেমস আর পর্নের সবরকমের ভায়োলেন্স আসলেই কোনোরকমের সত্যিকারের জীবনের ভায়োলেন্সের জন্য মোটেও প্রস্তুত করে না। মোটেও না।রাশিক উঠে দাঁড়ায়। গোসল শেষ করে। ওকে ব্যাক করতে হবে। নাবিলার কথা ঠিকই ছিল।
গা মুছে কাপড় চোপড় পড়ে মেসের ভিতরে খাটের উপর গিয়ে বসে রাশিক ফোন চেক করে। অন্ধকার হয়ে গেছে। চার্জে লাগায় রাশিক ফোন অন করে । এরপর নাবিলা কে কল দেয়। নাবিলা কল কেটে দেয়। আবার দেয় কল রাশিক। আবার নাবিলা কেটে দেয়। আবার রাশিক কল দেয়। নাবিলা আবার কেটে দেয়।
নাবিলার টেক্সট আসে,
কল দিবানা
কেন?
দিবানা বলছি।কোনোদিন দিবানা আর। সব শেষ। আমি তোমার নাম্বার ব্লক করবো
কেন? কেন? কেন?
...চুপ
কেন?কেন?কেন?
কথা বলবানা
কেন?কেন?কেন?
চুপ করো
কথা বলো প্লিজ
আমি ব্যস্ত আছি।
কি নিয়ে? আমার কথা বলার দরকার এখন
কথা আর হবে না। আমরা শেষ। আমি এখন নতুন একজনের সাথে।
কি?
হ্যা
আমি এখন বেড়াতে আসছি নতুন মানুষের সাথে
কি??কি বলো?কেমনে বলো?কিভাবে পারো? এগুলো কি বলো?
হ্যা
মিথ্যা বলতেছো?
নাহ
মিথ্যা বলতেছো
নাহ
আমি বিশ্বাস করি না
নাহ,সত্যি বলতেছি
আমি বিশ্বাস করি না। তুমি আমাকে জাস্ট টর্চার করার জন্য এগুলো বলতেছো।
একটা সেলফি আসে যেখানে নাবিলা সাদা ব্রা আর প্যান্টি পড়া বেডে শুয়ে আছে। ঠোটে ঠোট লাগায় কালো আন্ডারওয়্যার পড়া একটা ছেলে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে এবং ওর দুধ গুলো টিপতেছে।
রাশিক ছুড়ে ফেলে দেয় ফোনটা। রাশিক একবার চুমু খেতে চেয়েছিল দেখে চড় থাপ্পড় খেয়েছিল। আর এখন। এই অবস্থা। দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছিল ফোন টা রাশিক। কিন্তু রাশিক আবার উঠে ফোন টা দেখে।
রাশিক, এই ছেলে টা তুমি যা নও তাই। সাক্সেস্ফুল, স্মার্ট,ক্যারিয়ার ইজ অন দা রাইট ওয়ে। আমি এটাই চাই,এরকমই চাই। এরকমই কাউকে আমি আমার ভিতরে রেখে দিতে চাই। ভালো থাকো। ছবি নিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইলে করতে পারো।কিছু আসে যায় না। ভ্যালুলেস কাজ কারবারে আমার কিছু আর আসে যায় না। আমি তোমার থেকে মুক্তি পেয়েছি তাতেই খুশি।

রাশিক ফোন হাতে নেয়। আবার টাইপিং শুরু করে। তারপর কেটে দেয়। আবার লিখে আবার কেটে দেয়। ৩০মিনিট এইটা করতে থাকে রাশিক। কি বলবে?
গাঞ্জা ডিলার? গ্রামের গাঞ্জার ডিলার এঁর সাথে নাবিলার কি মিলবে?মেধা ছিল কিন্তু সবাই তো বালের মেধাবী।
কোন মরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অমেধাবী ছিল। আজকের দুইজন ও তো মেধাবীই। রাশিক উঠে দাঁড়ায়। আর হচ্ছে না। না,আর হচ্ছে না। এখান থেকে বের হতে হবে। আর হচ্ছে না। বের হয়ে যেতে হবে। একাকীত্বের ভাড়ে কোনোরকমে মাথা তুলে দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে রাশিকের। রুমের দিকে তাকায় রাহান কে দেখে। রাহান মাদারচোদ খেচতেছে ঘুমের ভিতরে। বাল। এগুলো কাকে রাশিক নিজের আশেপাশে এনেছে?
দুই চোখ যেদিকে যায় সেইদিকে চলে যেতে হবে। তারেক ভাইয়ের গাঞ্জার ডিলার হওয়ার শখ আর নাই। ডিগ্রি এঁর মারে চুদি। রাশিক হাতের কাছে যা পেয়েছিল তা ব্যাগে ভরে ফেললো। মেসের দরজা খুলে সে ভয় পেয়ে যায়। এইটা কি হচ্ছে এইখানে? বিশাল মিছিল হচ্ছে।দুইটা লাশ নিয়ে শত শত মানুষ মিছিল করতে করতে যাচ্ছে। তারেক ভাই লাশ ধরে ধরে কাদতে কাদতে যাচ্ছে। অনেকেই উনাকে স্বান্তনা দিচ্ছে। মানুষজন মিছিল করে হল গুলোর দিকে যাচ্ছে। সবার হাতেই কিছু না কিছু অস্ত্র। হকিস্টিক, রাম দা,চাকু এগুলো সবকিছু নিয়ে ক্রুদ্ধ চোখ মুখ নিয়ে শত শত ছেলেমেয়ে হেটে যাচ্ছে হল গুলোর দিকে।
রাশিক কিছু না বলে উলটো হাটা দিয়ে সিএনজি তে উঠে।
“কোথায় যাবেন ভাই?”
“জানি না”
----------------------------------------------



তারেক ঘুম থেকে উঠে। ডান দিকে তার স্ত্রীর দিকে তাকায়। এখনো ঘুম। ঘুমানোর কথাই তো। সকাল বাজে ৫ টা। তারেকের বিয়ে হলো তিন বছর হচ্ছে। রেহানার সাথে তার কাগজের জন্য বিয়ে। টার্জান ভিসা নিয়ে আমেরিকায় ঢুকার পর পার্মানেন্টলি থেকে যাওয়ার জন্য এই কাজ করা লাগছে। ১৮ টা দেশ ঘুরে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে কাচাবাজার এ কাজ করতে গিয়ে মহিউদ্দিন সাহেবের (এখন শ্বশুর) সাথে পরিচয়। কাজ ঠিকমতো করতো। উনিও তারেক কে পছন্দ করতেন। সেই সুযোগে ইনিয়ে বিনিয়ে তারেক কাগজের কথা বলায় এক ধাক্কায় বিয়া দিয়ে দিছিলেন।
“একটা ভালো বাংলাদেশী ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত থাকি।মেয়েটা উচ্ছৃংখল হয়ে যাচ্ছে”।

সেই থেকে কুইন্স এর সেমি বেইজমেন্টে শ্বুশুরবাড়িতে ঘর জামাই এর মতো করে থাকা হয়। সরকারি সাহায্য পায় তারেক আর টাকা জমাইতেছে একটা এপার্টমেন্টে উঠবে। সেইখানে আবার একটু আলো আসবে। হাটা হাটি করা যাবে। বারান্দা আর জানালার পাশে একটু গাছ রাখা যাবে। তারপর টাকা পয়সা জমাইয়া ডেলাওয়ার অথবা মিশিগান গিয়া বাড়ি কিনা হবে। গাড়ি থাকবে। আমেরিকান ফোর্ড মাস্ট্যাং। মিশিগান সেকেন্ড হ্যান্ড ভালো আর সস্তা ফোর্ড মাস্ট্যাং থাকে শুনছে ফেসবুকে। সেই মিশিগানের বাড়ির কথা কল্পনা করে তারেক। সামনে সবুজ উঠান। পিছনেও জায়গা থাকবে। নদীর পাশ ধরে লং ড্রাইভ করে লেকের পারে বিচে বইসা দিন কাটবে। স্ফটিকের মতো নীল পানির লেকে তাকায় থাকবে। চোখ বন্ধ করে তারেক কল্পনা করে। কিন্তু কোনোভাবেই তার পাশে নিজের বিয়ে করা স্ত্রী কে কল্পনা করতে পারে না। একটা শুন্যতা কাজ করে। মাঝে মাঝে কল্পনা তে সামিহা কে দেখে কিন্তু ইদানীং সামিহার চেহারাও ভুলে যাচ্ছে তারেক। সামিহা কে ফেসবুকে খুজে তারেক মাঝে মাঝে। কিন্তু পায় না। সামিহার কথা ভাবতে ভাবতে তারেক তার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকায়। কি ব্যাপার সামিহা কেন ওর পাশে শুয়ে আছে। তারেক কাছে যায় কিন্তু ঠোটের দিকে যেতে যেতে মুখ টা আবার বদলে যায়। তারেকের স্ত্রীও ঘুরে যায় উলটো দিকে।

নুসরাত হইলো তারেকের স্ত্রীর নাম। নিউ ইয়র্কে জন্ম,বেড়ে উঠা। ফাকিং “নিউ ইয়র্কার” ওর কথা অনুযায়ী। এখানকার মেয়েদের মতোই রাতে ১টা-২টা পর্যন্ত বাইরে বাইরে ঘুরা ফিরা। হুক্কা বারে গিয়ে তাস পেটানো। মাঝেমধ্যে ফ্রেন্ডস দের সাথে মদ টদ খাওয়া। সর্বোচ্চ যেটা হইছিলো তা হলো গিয়া একবার পাকিস্তানি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ম্যানহাটনে এক সপ্তাহ থাকছিলো। এখনো বিকাল সন্ধ্যা কাটায়। যদিও সেটা কেউ জানে না।এটা তারেক বিয়ের পর পর জানতে পারছে। যখন নুসরাত রাত বিরাতে হাওয়া হয়ে যাইতো তখন তারেক জিজ্ঞেস করে জানতে পারছে। তারেক কাজ করে এসে দেখতো নাই তার বউ। কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে এবং কেউ জানে না সে কই। আস্তে আস্তে মেনে নিয়ে আগাইতে থাকে তারেক। জীবন তো আর বসে নাই।
মাঝে মাঝে বাসার সামনে গিয়ে চিতকার চেচামেচি করে নুসরাতের সাথে।
“কই ছিলা?”
“তোমার কি?আমি যেখানেই থাকি না কেন?”
“মানে, আমি তোমার স্বামী। আমাকে বলবা না তো কাকে বলবা?”
“ তুমি তো আমাকে কাগজের জন্য বিয়া করছো।”
তারেক থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠায় ফেললো।
“মারবি?মার। এখুনি ৯১১ এ কল দিয়ে ফ্রড ইমিগ্রেশন এর কথা বইলা নগদে চুদে দেশে পাঠায় দিবো।”
তারেক চুপ হয়ে যায়। এভাবেই চুপ করে সংসার নামের এই দিন গুলো কেটে যাচ্ছে। তারেক বিছানা থেকে উঠে। ফোন চেক করে। মেসেজ বক্সে বাবা মা বোনের টেক্সট জমে আছে। টাকা পয়সা জমি জমার ঝামেলা। ভাল্লাগেনা। ফ্রেশ হয়ে নেয় তারেক। সাইকেল বের করে। উবার ইটস এর ব্যাগটা কাধে নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়। জ্যাকসন হাইটস এর ভীড় ভাট্টা এখনো শুরু হয় নাই। সাইকেল চালায় প্রথমে যায় শ্বশুরের কাচাবাজারের দোকান টায়। সারাদিনে তিনটা জব করে তারেক। দুপুর তিনটা পর্যন্ত কাচাবাজারে। তিনটা থেকে আটটা পর্যন্ত একটা দেশী রেস্টুরেন্টে। সেইখানে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত উবার ইটস এর ডেলিভারির কাজ করে তারপর বাসায় গিয়ে ঘুম। সপ্তাহে ২ দিন কাজ করে না। টাকা জমাচ্ছে সে। কাগজ পত্র পার্মানেন্ট এই নিউ ইয়র্ক থেকে সে চলে যাবে। কুত্তার বাচ্চাদের শহরে আর একদিনও না। এটা আরেকটা ঢাকা। শুয়োরের খামার এর মতো করে বাংলাদেশীরা থাকে আর ভাবে কিছু একটা হয়ে গেছে। তারেক মিশিগান যাবে। আর ফিরে তাকাবেনা। ঠিক যেভাবে সে বাংলাদেশ ছেড়ে দিয়ে আসছিলো। খবিস খাটাস সন্দীপি আর নোয়াখাইল্লা দিয়ে ভরা। পকেটে হাত দেয় তারেক। মিশিগান লেখা একটা ফ্রিজ ম্যাগনেট। সেখানে গ্রেট লেকস এর ছবি। সেটার দিকে একবার তাকায় বিসমিল্লাহ বলে সাইকেলে উঠে যায় তারেক। একটানে দোকানে।
দোকানের সামনে দাঁড়ায় আছে। মহিউদ্দিন সাহেব চলে আসছেন। অপেক্ষা করতেছেন তারেকের জন্য।
“আপনি এত তাড়াতাড়ি চলে আসছেন?”
“সাবওয়ে লইছিলাম।ঘুম হইছে তুমার,বাবা?”
“যতখানি হওয়া দরকার হইছে। আজকে তো মুরগী আসবে শুনছি”।
“শুধু মুরগী না।গরু ও আসতেছে।জমিরের কাছে আসবে। আহমেদের সাথে কথা হইছে। ও রাস্তায়। বেশীক্ষন লাগবে না”।
“আচ্ছা”
এই ঠান্ডার ভিতরে কপাল দিয়ে ঘাম আসা শুরু করছে তারেকের। তারেক কপাল মুছে আস্তে আস্তে সাইকেল টা বাধে। হাত পা কাপাকাপি করতেছে একটু। তারেক ঢোক গিলে। একটু পানি খায়। ভার্সিটির কথা মনে পড়ে ওর। কত পলিটিকাল অপোনেন্ট দের নির্দ্বিধায় কাইটা কাইত করে দিছে। তার কোনো হিসাব নাই। যদিও কেউ জানেনা। কাইটা আবার দড়ি দিয়ে গাছের সাথে ঝুলায় দিতো। চড়চড় করে আওয়াজ হইতো। সেই আওয়াজ টা পাশ করার পর আর পাইতো না। চাকরি খুজতে খুজতে জুতার তালু শেষ হয়ে গেছে। এরপর তো নরকের মধ্যে দিয়ে দালাল দের রাস্তায় আমেরিকায় আসা। এখন যখনই গরুর বড় বড় রান দড়ি দিয়ে বেধে উঠাতে শুরু করে তারেক তখনই মনে পড়ে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। গরুর রান এর জায়গা দখল করে ইয়াসির ভাইয়ের ডেডবডি নড়ে চড়ে। অন্ধকার চোখ গুলো তাকায় থাকে। গরুর মাথা কোপ দিতে গিয়ে একদিন তারেক আটকায় যায়। চোখ গুলো মনে করায় দেয় এক জুনিয়র এর কথা যার চোখ উপ্রে ফেলছিলো তারেক। মারামারির সময়। ভার্সিটির সময় গুলো অন্যরকম ছিল তারেকের জন্য। ক্ষমতা ছিল, নারী ছিল সব ছিল। কত দিকে কত দিকে মেয়ে খাইছে তারেক তার কোন হিসাব নাই। শেষদিকে এসে সামিহার জন্য নিজেকে বদলে ফেলছিলো। কিন্তু কি থেকে কি আর?
তারেকের চিন্তার সুতোয় ছেদ পড়ে। একটা ট্রাক এসে দাঁড়ায় সামনে। আরবী গান বাজতেছে।
“বাবা, আসো চইলা আসছে”
আহমেদ ট্রাকের ভেতর থেকেই জানালা নামায় ভারী প্যালেস্টিনিয়ান এরাবিক টানে বলে “আসসালামু আলাইকুম ব্রাদার, এইতো তোমার জিনিস রেডি। আমার বাকি টাকা কই?”
“ওয়ালাইকুম সালাম ব্রাদার। এই যে নাও।”
মহিউদ্দিন সাহেব ক্যাশ আগায় দিলেন আহমেদের দিকে।
তারেক ট্রাক থেকে জিনিস নিয়ে যায় ভিতরে।প্যাসেজ দিয়ে পাশে জমিরের দোকানে যায়। ওইখানে কাটাকাটি শুরু করে। প্রতিটা পিস কাটে আর তারেকের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। হাড় হাড্ডির গুড়োর সাথে সাথে অন্ধকার স্মৃতি গুলো ছিটকে ছিটকে আসতে থাকে। মেশিন দিয়ে মাংস আর হাড় হাড্ডি কাটার সময় প্রতিটা ধাক্কায় তারেকের সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে যাইতেছিলো। প্রত্যেক সপ্তাহ এ নরকের ভিতর দিয়ে যাইতে হয় তারেক কে। প্রতিবার কাটা শেষ করে সে মার্কোস কে পিস গুলো বুঝায় দেয়। মার্কোস স্পেনিশ হারলেমে থাকে। কেন বাংলাদেশী দের সাথে কাজ করে কে জানে।
তারেকের শ্বশুরের অনেক পুরাতন পরিচিত লোক। কাটাকাটি শেষ করতে করতে বেলা দোকান খুলে গেল। ধরা ধরা কাস্টোমার রা এসে তাদের মাংস নিয়ে গেলো। নিয়াজ আর রশিদ আসলো। দোকানে এরা দুইজন কাজ করে। তারেকের শ্বশুর বাড়ির লোকজন এরা। নোয়াখাইল্লা কুত্তার বাচ্চা দুইটা। একটু একটু করে প্রতিদিনই টাকা পয়সা মারে ক্যাশ বক্স থেকে। মহিউদ্দিন সাহেব বুঝে কিন্তু কিছু বলেনা।
“ পরিবারের জন্য অনেক কিছু ছাড় দিতে হয় বাবা। আমি এদের কিছু করলে এরা কই যাবে?”
তারেক এগুলোর উত্তর দেয় না। আজকেও দেখতেছে ওই দুইটা কাজে ফাকি দিতেছে। তারেক বাইরে দাঁড়ায় বিড়ি খাইতে। বালের আমেরিকাতে কোনো বিল্ডিং এর ভিত্রে বিড়ি খাওয়া যায় না।

বাইরে এসে দাঁড়ায়। মানুষের ভীড় বাড়তেছে ধীরে ধীরে। ট্রাকে করে বাংলাদেশীরা যাচ্ছে। ম্যানহাটনের দিকে। কন্সট্রাকশন এর কাজে। ভাবী আর আন্টিরা বাইর হইছে কাচাবাজার করতে। একপাশে কালাইয়া একটা রাস্তায় শুয়ে চিতকার করতেছে। দুই দিন পর পর আসে এইডা। কোনোদিন সভ্য হবে না এরা। তারেক তার ভাংগা ভাঙ্গা ইংরেজী তে বলে “এই মাদারচোদ উঠ। পুলিশ ডাকবো”।
কালা লোকটা তাকায় বলে কড়া টানে ইংরেজী তে বলে “ চুপ থাক মাদারচোদ। আমার দেশ আমার যেখানে খুশি শুয়ে থাকবো। যা শালার পুত ইন্ডিয়া চলে যা”।
তারেক আগায় যায়। কলার চেপে ধরে কালা বেডার।ওই মুহুর্তেই মহিউদ্দিন সাহেব পিছন থেকে ডাক দেয়।
“বাবা ছাইড়া দাও ওরে। পাগল ছাগল কি বলে না বলে।নতুন একটা কাস্টোমার আসছে আমাদের এলাকার।দেইখা যাও”।
তারেক দাতে দাত লাগায় চিবায় বলে “আজকের মতো বাইচা গেলি”
“গায়ে হাত দিলি? দেইখা নিবো তোকে।”
তারেক উঠে চলে আসে।
গালি দিতে থাকে কালা বেটা। তারেক পাত্তা দেয় না। উঠে ভিতরে চলে যায়। নিয়াজ রে দেখা যায় পিছে গাঞ্জা বিক্রি করতেছে লুকায়। এখন তো লিগ্যাল কিন্তু তাও কেন? বাংলাদেশী কমিউনিটি এখনো নিতে পারে না আসলে। নিয়াজ নিশ্চয়ই এখনো ফেসবুকে নিজেরে এন্টারপ্রেনার লিখে। ভিতরে গেলো তারেক। কাজে লেগে গেলো। ঘন্টা খানিক দোকানে কাম কাজ সারলো। কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্ট এ গেলো তারেক। ওইখানেই খাবে তারপর কাজ শুরু করবে।
সাদা ভাত, খাইসসা দিয়ে রুই মাছ আর ডাল তারেকের প্রিয় মেনু। ভাত নিয়ে বসে ও টেবিলে। আরাম করে তারেক কাটা বেছে বেছে খেতে থাকে। আশেপাশে পরিচিত সব মুখ। তারেক এদের সবাইকেই কোনো না কোনো ভাবে চিনে। কেউ দোকানে কাজ করে, কেউ কিছুই করে না বসে বসে ওয়েলফেয়ার এর উপর চলে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ কনস্ট্রাকশন এর কাজ করে। হঠাত দরজা খুলে যায় একজন ফোনে ইংরেজি তে কথা বলতে বলতে ঢুকে। তারেক জমে যায় সিটে বসে।গলায় খাবার আটকে যায় তারেকের। কাশতে শুরু করে।
ফোন ধরে রাখা ভদ্রলোক কাশির শব্দ শুনে তারেকের দিকে তাকায়। মুখ হা হয়ে যেতে থাকে ওই ভদ্রলোকের। স্পষ্ট আমেরিকান ইংলিশে ছেলেটা ফোনে বলে,
“হানি, আমি ফোন টা রাখতেছি। আমি তোমাকে একটু পরে কল দিচ্ছি। লাভ ইউ”।
ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে তাকায় থাকলো কিছুক্ষন ছেলেটা। কেমন একটা দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করতেছিলো মনে হইলো। ডান বাম তাকিয়ে বসে পড়লো। তারেকের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করেই। তারেক ঢক ঢক করে পানি খেয়ে আধা খাওয়া প্লেট টা নিয়ে উঠে যেতে গেলে ছেলে টা বলে,
“তারেক ভাই বসেন।” ছেলেটার গলায় একটা অস্বাভাবিক জোর ছিল যা কিনা দোকানের বাকিদের কে তাকাতে বাধ্য করলো।তারেক বাড়তি মনোযোগ চাচ্ছিলো না। তাই বসে গেলো।
ছেলেটা ঈষত হাসলো “ভাই কেমন আছেন?কতদিন পর দেখলাম আপনাকে”
তারেক মুখ নিচু করে রাখলো কিছুক্ষন। চুপ করে থেকে তাকায় ছেলেটার দিকে। গাল থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত লম্বা কাটা দাগ।হাতেও লম্বা লম্বা কাটা দাগ।
“ভাই মনে পড়ে আমাকে?ওই যে দুই নাম্বার গেইটে?জুন মাসের মারামারিতে? শ্যামল যে মারা গেছিলো?খেয়াল আছে?”
তারেক চুপ করে থাকে।
“ভাই,তাকান আমার দিকে।”
তারেক চুপ।
“আরেহ ভাই, কত বছর আগের কথা।এত নার্ভাস হইয়েন না তো।”
“হ্যা,মনে আছে আমার”।
“আপনি আমারে মাটিতে ফালায় দিছিলেন। সামনাসামনি ছুরি মারছিলেন। মনে আছে?”
তারেক কিছু বলে না। আশপাশে তাকায়। সবাই তাকায় আছে। খুবই আন আমেরিকান ব্যাপার। বাংগালীর অভ্যাস বদলায় না। তারেক নিঃশ্বাস আটকে আসতে থাকে। মনে হচ্ছে চারদিকে অদৃশ্য দেয়াল গুলো চেপে ধরে আসতে থাকে।তারেক তাকায় ছেলেটার দিকে।
“হ্যা, শাওন আমার মনে আছে”।
তারেক চুপ করে থাকে এটা বলে।
“সবই মনে আছে আমার।দুইটা ছুরি ছিল।তোমার চোখে মারতে চাইছিলাম। সরে গেছিলা। তখন গালে দাগ পড়ছিলো।পরে পেটে মারতে গেছিলাম, হাতে লেগে গেছিলো।সোহরাওয়ার্দী হল দখলের সময় হইছিলো গেঞ্জাম টা”।
“আরেহ, মনে আছে দেখি আপনার। আর কি কি মনে আছে?”
গলা নামায় আশপাশ দেখে শাওন বলে “মুরগি জবাই করার মত করে কল্লা নামায় দিছিলেন যাদের সেগুলো মনে আছে?তড়পাইতেছিলো যে মাটিতে মনে আছে?”
তারেক এর প্রত্যেক এর কথা চোখে ভাসতে থাকে।একটার পর একটা ধইরা ধইরা কতল করছিলো। নিজের দলের ভিতরে বাইরে কেউ বাদ যায় নাই। একবার একটা মসজিদে গিয়ে ঢুকে একজন কে কুপাইছিলো তারেক। অন্ধকার ভরা একটা সময় গেছে তখন। ভাবতে পারে না এখন আর তারেক।
হাত কাপা শুরু হয়ে যায়।শাওন সেটা খেয়াল করে। হো হো করে হেসে দেয়।
“ভাই এর পিটিএসডি হইছে নাকি?”
“পিটিএসডি মানে?”
“বাদ দেন। বুইঝা লাভ নেই।আপনি আছেন কেমন সেইটা বলেন?”
“এই তো আছি”। তুমি কেমন আছো?”
“আমি মাশাল্লাহ ভালোই আছি।বিয়া শাদী করে এখন মিশিগান থাকি।ডেট্রয়েটের বাইরে।”
“মিশিগানে?মিশিগানে কি করো?”
“এইতো ভাই পিএইচডি করতেছি।প্রায় শেষের দিকে এখন ইন্টার্নশিপ করতেছি একটা। আশা করি চাকরি হবে”।
“ওহ, স্টুডেন্ট ভিসা?”
শাওন চুপ করে থাকে। একটু অবাক হয়ে তাকায়। চোখ ছোটো ছোটো করে।
“হ্যা,স্টুডেন্ট ভিসা। আপনি?”
“আমি এইতো ফ্যামিলি এর থ্রু তে”।
“ওহ,আংকেল আন্টি এইখানে তাইলে?”
“নাহ, আমার ওয়াইফ ইউ এস সিটিজেন”।
“আরেহ সেরা,তো ভাই তুমি। ছক্কা মাইরা দিছো।লাগাইলা তো লাগাইলা একদম সিটিজেন।আমিও এই ধান্ধায় আছি।দেশের খেলোয়াড় এখানেও খেলা ছাড়ো নাই।”
তারেক হাসে। অনেকদিন পর এরকম নির্ভার হাসি দিছে। পুরোনো যুদ্ধের সাথী শ্ত্রু হলেও তার সাথে একটা অদ্ভুত বন্ধন থেকে যায়। মিউচ্যুয়াল সাফারিং এর ভিতর দিয়ে গেলে একসাথে যা হয় আর কি।
“আরে নাহ,এরেঞ্জ”।
“আমিও চেষ্টা চালাইতেছি। বিয়া করলে কাগজের বিয়া করাই ভালা।ফিলিংস এর মতো বালছাল জিনিসের দাম নাই।”
এটা বলে সাদা চামড়ার সুইমস্যুট পড়া একটা লাল চুলের মেয়ের ছবি দেখালো তার ফোনে শাওন।
“আমি এইটারে সাথে লাগবার চেষ্টা করতেছি।একটু বলদ আছে।এখনো বয়স কম।মিশিগানে নেওয়ার ব্যবস্থা করতেছি।”
শাওন এরপর হাত দিয়ে কাটা দাগ গুলো ধরে বলে “আপনার দেওয়া এই উপহার গুলো খুব কাজে আসতেছে। খুব কুউল মনে করে। এখানে ট্যাটুর বদলে এইটা দিয়েই কাম চলতেছে।কত মেয়েরে যে এটা দিয়ে বশ করাইছি এইখানে।টাকা পয়সা খুজে অনেক কিন্তু কাগজ হইয়া গেলে আমার আর কি।চাকরি তো হবেই ইনশাল্লাহ।হেহে”।
শাওন এর কথা শুনে তারেক কিছু বলে না। তারেকের নিজের রেজাল্ট ভালোই ছিল শুরুতে। এরপর আস্তে আস্তে জড়ায় গেলো ক্ষমতার খেলাতে। দাবার ঘুটির মতো নিজেই ছকে আটকা পড়ে গেলো। তারেক ভাবছিলো সেই রাজা হইছে কিন্তু খেলাতে আসলে দেখা গেল সে এখনো সাধারন সৈনিক।
শাওন জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কি করতেছেন?পড়াশোনার লাইনে তো আছেন নাকি?”
“নাহ, আপাতত নাই।প্ল্যান করতেছি।মিশিগানে মুভ করার ইচ্ছা আছে।ওইখানে গিয়ে টেকনিক্যাল কিছু পড়বো”।
“সেরা তো। মিশিগান চলে আসেন। অনেক বাংলাদেশী।ভাবী তো বাংগালী তাই না?”
“হা”
“তাইলে তো ভালোই হয়। আমিও ওইখানেই সেটল হবো।মিশিগান সেরা। লেইক আছে,নদী আছে,এত সুন্দর বরফ পড়ে,হরিন বের হয়।ড্রাইভ করে যে কি আরাম। ভালো সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি সস্তায় পাওয়া যায়। আমি নিজেই মাত্র ৮০০ ডলারের ফোর্ড গাড়ি কিনছিলাম।কি যে ভালো ছিল।চলে আসেন,বুঝছেন।”
“সেটাই চেষ্টা করছি।আপাতত দোকানে কাজ করতেছি।টাকা জমাচ্ছি মুভ করার মতো”।
“ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে।”
“তুমি এইখানে কার কাছে এসেছো,শাওন?”
“এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে আসছি।আমাদের ভার্সিটিরই আপনাদের ব্যাচের হবে।”
“নাম কি?”
“সামিহা আপা আর উনার হাজব্যান্ড সুমন ভাই”। দুইজনই আপনাদের ব্যাচের।”
তারেক নিজের কান রে বিশ্বাস করতে পারলো না প্রথমে সামিহা নাম টা শুনে। তারপর আবার ভাবলো। আরেহ, কত সামিহা আছে। এটা কি আর সেই সামিহা হবে?তারেক তাও আশাবাদী হয়ে জিজ্ঞেস করে
“কোন সামিহা এটা?”
“আপনাদের ব্যাচের এটা শিওর। সোসিওলজি তে।হলে থাকতো। প্রীতিলতা তে।”
“তিন তলায়?”
“ভাই,সেটা তো জানি না।”
তারেক একটু আশাবাদী হয়।
“দেখি ছবি দেখাও তো।”
“এই যে ভাই”।
তারেক হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলো কিছুক্ষনের জন্য।এটাইতো।এইতো। সামিহা,তার জামাই একটা ফুটফুটে ছোট্টো বাচ্চা।রক্তশুন্য হয়ে তারেকের মুখ কিছুক্ষনের জন্য।কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না তারেক।
চোখ এ পানি চলে আসতেছিলো তারেকের। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। পুরোনো কথা কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারেক বড় একটা নিঃশ্বাস নেয়।
“হ্যা চিনেছি।”
“আমি জানতাম আপনি চিনবেন”।
“এখানে কি করতেছে?”
“সুমন ভাই টেক্সাস এ ভার্সিটি টিচার ছিলেন।এই এক সপ্তাহ আগে একটা এক্সিডেন্ট হইছে উনাদের। তাই উনারা চইলা আসছে নিউ ইয়র্কে ছুটি নিয়া। এক মাসের জন্য”।
“কি হইছে?”
“অনেক বড় সমস্যা হইছে”।
“উনার বাচ্চা মইরা গেছে।আমি ডিটেইলস জানিনা।যাইয়া শুনবো। আম্মা দেশ থেকে ফোন কইরা বলছে যাইয়া দেখা করে আসতে।তাই যাইতেছি।কাহিনী বুঝার জন্য।”
“আচ্ছা আচ্ছা।”
শাওন এরপর ফোন বাইর করে সময় দেখে। এরপর উঠে গিয়ে বলে
“ভাই উঠা লাগবে।এইখান থেকে মিষ্টী নিয়া যাবো।”
তারেক বলে , “আরেহ, বসো কই যাও।”
শাওন বলে “নাহ,ভাই আসলেই যাওয়া লাগবে।”
তারেক বললো “তুমি কি সামিহা দের ওইখানেই উঠছো নাকি?”
“হ্যা,ভাই ওইখানেই থাকবো। ২-৩ দিন থাকবো।”
“তাইলে আমাকে ঠিকানা টা দিয়া যাওতো। তোমার সাথে কথাই হইলো না ঠিকমতো। মিশিগান যাইতে হইবো তো আমার।তোমার সাথে কথা হবে এইগুলা নিয়া।”
“আরেহ সেরা। আপনার ফোন নাম্বার টা দেন। টেক্সট কইরা দিবো নে।”
তারেক ফোন নাম্বার টা বলে। শাওন সেভ করে নিয়ে টেক্সট করে দেয় ঠিকানা। শাওন মিষ্টি কিনে বের হয়ে যায় দোকান থেকে। তারেক অনেকদিন পর একটু এক্সাইটেড এবং ইয়াং বোধ করতে থাকে।
সামিহার সাথে তার শেষ দেখার কথা মনে পড়ে।
সামিহার সাথে তার অনেক স্মৃতি। বিছানা তে যাওয়া, পড়ালেখা করা,রাজনীতি থেকে পালায় ঢাকার দিকে চলে আসা। সবই ছিলো ওর সাথে। বিসিএস পড়েছিলাম দুইজন একসাথে। এর বাইরেও অনেক সরকারি স্পেশালাইজ চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছিলো তারেক।
এন এস আই এর পরীক্ষার পর হঠাত সেন্ট্রাল কমিটি থেকে ডাক পড়ে তারেকের। ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে তিন চারজন সিনিয়র নেতা তারেক কে নিজেদের মাঝে বসায়। সবাই ফিটফাট হয়ে আসছে।চরম স্মার্ট,কোনো আঞ্চলিকতার টান নাই কথায়। দামী ব্রান্ডের ঘড়ি হাতে।
“তো তারেক,কেমন আছেন?” মাঝের জন বললেন।
“জি ভালো।”
“চাকরি খুজছেন,তাই না?”
“জি,এইতো চেষ্টা করছি।বাকিটা স্যার ম্যাডাম আর আপনাদের উপরে”।
সবাই একসাথে হেসে উঠে।
“তাই নাকি?”
একজন উঠে দাঁড়ায়, তারেক কে ঠাস করে থাপ্পড় বসায় দেয় গালে।আরেকজন ফাইলপ্ত্র গুলো নিয়ে নেয়। রেস্টুরেন্টের বাকি মানুষেরা তাকায় থাকে কিন্তু কিছু বলেনা। সবাই যার যার মতো চুপ করে নিজের খাওয়াতে মগ্ন থাকে।
“তারেক আপনার খবর আমরা সব রাখি।দেশে আপনার সরকারের কোনো চাকরি হবে না। আমি বলে দিচ্ছি।আপনি লিখে রাখুন। চেষ্টা বাদ দেন।”
“আমি কি করছি ভাই”?
আবার আরেকটা থাপ্পড় চললো তারেকের গালে।
“আবার জিজ্ঞেস করিস?”
তারেক মাথা নিচু করে ফেললো।
“একটা কথা মনে রাখবেন। পাপ কোনোদিন পিছু ছাড়ে না। আপনি যেই কুতুব হোন না কেন। সে আসবে।সে ফিরে আসবেই।আপনি নির্বাচিত লিডার কে মারছেন ক্ষমতার জন্য। মেরে ভাবছিলেন কিছু হবেনা?কেউ কিছু বলবেনা? সবাই আপনার চামচা?আমাদের কাছে একাধিক রিপোর্ট আসছে। বিরোধী দলের পোলাপান আমার ক্লোজ। তারপরও হিসাব এবং ইমেজ ঠিক রাখার জন্য আমরা সব চলতে দিছি।কিন্তু সরকারি অফিসে আপনার কোনো জায়গা নেই। মনে রাইখেন জিনিস টা।”
তারেক ওইখানে কান্নাকাটি করে,হাতে পায়ে ধরেও কিছু করতে পারেনা। পরে তাকে বের করে নিয়ে পাশের গলিতে নিয়ে এলোপাথাড়ি পেটানো হয়।
শেষে ওর কাগজ পত্র গুলো ছিড়ে ছিড়ে মাটিতে ফেলে দেয়।
“তুই আদম ব্যবসায়ী ধর।ওইভাবেই তোর ফিউচার আছে। এটা ছাড়া কিছু নাই।”
এটা বলে দুই টা লাত্থি মেরে চলে যায় এরা।
তারেক উঠে দাঁড়ায়। সরকারি চাকরি না হইলে সামিহা কে পাবে কিভাবে? সামিহার হাসি,সামিহার মুখ-চোখ তো ভুলতে পারেনা।সামিহা কে ছুয়ে দেখতে না পারলে কিভাবে রাত দিন কাটবে তারেকের? ওর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে চুলের গন্ধ না পেলে তারেক তো বাচবে না। কিন্তু সরকারি চাকরি ছাড়া সামিহা কে কিভাবে পাবে? সামিহার পরিবারের কাছে কি জবাব দিবে?
তারেক এইসব পুরান কথা চিন্তা করতেছে আর রুটি বানাচ্ছে।
“এই তারেক কি করো?পুড়ে যাইতেছে সব”
“ওহ,স্যরি স্যরি ভাই”
তারেক খেয়াল করে এখন যে তাওয়াতে রাখা রুটি পুইড়া কালা হয়ে গেছে। তারেকের জীবন টাও এখন এরকম হয়ে গেছে। রান্নাঘরে ইদুর দৌড়াচ্ছে। এর মাঝে ইউনিফর্ম পড়ে ও রুটি সেকতেছে। কি জীবন হতে পারতো কি জীবন হইলো।
কিন্তু সামিহা তো আসছে আবার। ওর শহরে। নতুন আশার সঞ্চার হয় ওর তারেকের মাঝে । শাওন ঠিকানা পাঠায় দিছে অলরেডি।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। চিন্তা করতে থাকে তারেক কি করবে।
“কিরে তারেক?আবার রুটি পুড়ায় ফেললা?”
তারেক চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ শুরু করে।
শেষ হয় দিনের কাজ। অন্ধকার হয়ে আসতেছে। এই ডে লাইট সেভিংস দিয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত সূর্যাস্তের অপেক্ষা টা কিরকম একটা ব্যাপার হইলো?
সিগ্রেট ধরায় তারেক। ঠিকানা টা দেখে সামিহার। খুব বেশি দূরে না। তারেক একটা বুদ্ধি আটে। ডেলিভারির ব্যাগ টা কাধে এনে রাখে। একটা পাকিস্তানি দোকান থেকে চাপালি কাবাব আর ভাত নেয়। এই দোকানের খাবার খুব চলে। এড্রেসে চলে যায়।
দরজায় নক করে। হাত পা কাপাকাপি চলছে তারেকের। তারপরেও তারেক আবার নিজেকে সামলায়। একটা ছেলে এসে দরজা খুলে।একদম নিউ ইয়র্কের স্টাইলে ইংরেজি তে বলে,
“আপনি কে? কাকে চান?”
“ডেলিভারি সামিহার জন্য”
“ও,আচ্ছা।আমাকে দেন”
“নাহ, পিন কোড প্রটেক্টেড ডেলিভারি। উনাকেই ইন পার্সন দেওয়া লাগবে,স্যরি”।
“আচ্ছা,ঠিকাছে।”
ছেলেটা চিতকার করলো,
“সামিহা আপু, তোমার জন্য ডেলিভারি আসছে”।
তারেক দাঁড়ায় থাকে।চুল ঠিক করে। মুখ থেকে ঘাম মুছে। হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়ায় থাকে সামিহার জন্য। সামিহা সিড়ি দিয়ে নামে। চোখের নিচে কালি জমে আছে। সামিহা আরো সুন্দর হয়ে গেছে। শরীর টা যেনো আরো ভরাট হয়ে গেছে। নীল রং এর হাতে কাজ করা একটা থ্রি পিস পড়া। সময় যেন অনেক দীর্ঘ হয়ে গেলো। প্রতিটা স্টেপে সামিহাকে এগিয়ে আসা টা যেন তারেক স্লো মোশনে দেখছে। সামিহা মুখ উঠিয়ে তারেক কে দেখে। প্রথমে একটু কনফিউজড হয়ে যায়। এটা কে? এখানে কেন?
নিজেকে সামলায় সামিহা বলে “তারেক তুমি এইখানে কেন?”
“সামিহা,কেমন আছো?” তারেক সামিহার চোখে চোখ রাখে।
“তুমি কেমন আছো?” সামিহার অবাক হওয়া গলা টা পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওর গলায় সেই ভার্সিটির তরুনী প্রেমের প্রেমময় কন্ঠ চলে আসে। মাসল মেমোরি আর আমাদের মস্তিষ্ক আসলে খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস। তারেকের চেহারা দেখামাত্র কেন সামিহার গলার স্বর সহ এভাবে বদলে যাবে? হার্টবিট এর গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে কেন?
“তুমি ঠিকানা পেলে কিভাবে?”
“শাওন দিয়েছে। ওর সাথে একটা দোকানে দেখা হয়েছে।”
সামিহা তার পিছনে দরজা টেনে দেয়। ওর ভিতরে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তরুনী যেন মাথাচাড়া দিলো। ইদানীং সময়ের ঘটে যাওয়া ভয়ংকর জিনিস গুলো যেন হারিয়ে গেলো মস্তিষ্কের অন্ধকারে।
“তারেক তুমি এখানে কেন আসছো?”
“তোমাকে দেখতে”।
“আমার হাজব্যান্ড আর ফ্যামিলি সবাই এইখানে।এখনো তোমার সেই সাহস গেলো না”।
“তুমি দেখতে আরো সুন্দর হইছো,সামিহা।কেমন আছো তুমি?”
সামিহা একথা টা শুনে নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। কিন্তু বাসার দিকে তাকায়। নাহ,এখনো কেউ আসছে না। রাস্তাতেও কেউ নাই। কিছু সাদা মানুষ জন হাটাহাটি করতেছে।কিন্তু এছাড়া আর কেউ নাই।
“আমি ভালো নেই,তারেক। তুমি আমাকে রেখে চলে আসলা কিভাবে?তুমি আমাকে রেখে চলে আসলা কিভাবে?”
তারেক উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে রাখে।
“আমার আর কোনো উপায় ছিলো না।দেশে আমার কিছু হচ্ছিলো না। তোমার সামনে মুখ দেখানোর উপায় ছিলো না আর।”
সামিহা ঠাস করে থাপ্পড় মারে।
“আমার বাচ্চা টা মারা গেছে,তারেক। ওর চোখ উঠায় ফেলছে।সব তোমার দোষ”। বলে আরেকটা থাপ্পড় মারে সামিহা ওকে।
তারেক চুপ করে থাকে।
“আমার সাথে যাবা?মিশিগানে?”
সামিহা বলে “কি?”
“যাবা আমার সাথে?নতুন জীবন শুরু করবো দুইজনে?লেকের পাড়ে বাসা হবে আমাদের। বরফ পড়বে।ফুটফুটে বাচ্চা থাকবে আমাদের একটা বরফে হাটবে। লেকে সাতার কাটবো আমরা একসাথে”।
সামিহা শুনে সব কথা। ওর ভেতর টা কেমন করে উঠে।ও যেন তারেক কে জড়ায় ধরতে চায় দৌড় দিয়ে।আবেগগুলো একটা দলা পাকিয়ে গলা দিয়ে কান্নার মতো বের হয়ে আসতে চায়।পিছনে বাসার দরজার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলায়।
“আমি এখানে আর এক মাস থাকবো। কালকে দেখা করি ম্যানহাটনের দিকে। ওইখানে বাংলাদেশী কম থাকবে। বসে সময় নিয়ে কথা হবে।”
সামিহা ফোন নাম্বার টা দেয় তারেক কে।
তারেক খাবার টা দিয়ে বের হয়ে আসে।মনের ভিতর নতুন করে বেচে থাকার আশা নিয়ে সাইকেলে চড়ে বসে। কিছুদূর গিয়ে আরেকটা সিগ্রেট ধরায়। ধোয়া ছাড়ে।সেই ধোয়ার ভিতরে নিজের ভবিষ্যত দেখে। ধোয়ার পাকে তারেক লেইক মিশিগানের নীল পানি দেখে। একটা ফোর্ড মাস্ট্যাং কনভার্টিবল দেখে। কনভার্টিবল এ ও নিজেকে আর সামিহা কে দেখে। ডেট্রয়েট রিভারের নীল পানি তে মাছ ধরা দেখে।
বরফের ভিতর মোটা জ্যাকেট পড়ে হাটাহাটি করতে দেখে নিজেদের কে।
তারেক সাইকেলে উঠে যায়। ট্রেইনে উঠে। ম্যানহাটনে যায়। চায়নাটাউনে। ওইখানে অনেক ভালো ডেলিভারি খাবারের মার্কেট। এপ অন করে। পিং করে আওয়াজ আসে। খাবার পিক করে। নতুন তাড়নায় আগাইতে থাকে।নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায়। আরো টাকা হবে,আরো, আরো। তখন মিশিগান যাবো আমরা… সামিহাকে টেক্সট করে তারেক এই স্বপ্ন গুলোর কথা।
হঠাত করে ঠাস করে ছিটকে মাটিতে পড়ে তারেক সাইকেল থেকে। সামনে একটা ফোর্ড মাস্ট্যাং গাড়ির দরজা খোলা। সেই দরজার সাথে লেগেই উলটে পড়ে তারেক। দাড়াইতে পারেনা আর তারেক। চারজন বের হয়ে আসে সেইখান থেকে। তারেক প্রথমে দেখে না তাদেরকে। সাইড ওয়াকে ছিটকে পড়ছে। হেলমেট ছিল দেখে মাথা টা ফাটে নাই তারেকের। হাটু আর কোমড়ে ভয়ংকর ব্যাথা পাইছে সে। উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। পারেনা। আফ্রিকান আমেরিকান টানে একজন বলে
“খাবার গুলো নিয়ে নে। খুদা লাগছে ভালো। ওই দোকান টা ভালো আছে আমার খুব প্রিয়”।
আরেকজন আগায় আসে। তারেক ওর মুখটা দেখে। এটা তো মহিউদ্দিন সাহেবের দোকানে কাজ করে ছেলেটা। নিয়াজ নাম। গা থেকে গাঞ্জা আর এলকোহলের গন্ধ । সেই গন্ধে তারেকের নাড়িভুড়ি উলটে বমি আসতে থাকে।
নিয়াজ কাছে আসে তারেক কে দেখে। হাহা করে হাসে।
ইংরেজীতে বাকি দের বলে,
“এই যে দেইখা যা। এই শালার পুতের কথা বলতেছিলাম। আমার কো ওয়ার্কার। খালি ফাপড় ধরে। নিজেকে কিছু একটা মনে করে।”
নিয়াজ তারেক কে দেখে। তারপর কষে দুইটা লাথি মারে পেটের মাঝে।তারেক ককিয়ে উঠে। এরপর বাকি দুইজন আসে। সাদা দুইটা ছেলে। সারা গায়ে উল্কি করা। কালো ছেলেটারও একইরকম। নিয়াজ বলে এরে কি করা যায়। এ তো আমাকে চিনে।
আইরিশ ইংলিশ টানে সাদা ছেলে গুলোর একজন বলে
“তোরা আমেরিকান হিস্ট্রি এক্স সিনেমাটা দেখছিস?”
“হ্যা”।
“ওইখানে একটা জায়গা আছে । এডওয়ার্ড নর্টন একটা কালাইয়া কে রাস্তার কিনারে দাত লাগায়া লাথি মেরে মুখ ভেঙ্গে দেয়। আমরা এইটা করতে পারি।”
“মার্ডার করবো?”
“হ্যা”
“কিন্তু পুলিশ যদি জানে?”
“জানলে কালাইয়ারে আর নিয়াজ পাকি রে বলবো টিভিতে গিয়া ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার লিখে নিয়ে কান্নাকাটি করতে আর পুলিশ এবিউজ ফুটফাট দুইটা কথা বলতে।এখানে কেউ নাইও আমাদের দেখবে। ওর ফোনটা নিয়ে হাডসনে ফালায় দিমু।ব্যস”
এইটা বইলা আরো কিছুক্ষন এলোপাথাড়ি লাত্থি ঘুষি চলে তারেকের উপর। তারেক ভাবতে থাকে।এভাবেই শেষ হবে তাইলে সবকিছু?তারেক তার নিজের ভিক্টিম দের কথা ভাবে। তাদের কিরকম লাগছিলো? তারেকের কান্না আসতে থাকে।মিশিগান,সামিহা,ফোর্ড মাস্ট্যাং সব ভেবে চোখে পানি আসে। হাউমাউ করে কাদতে থাকে।
“নিয়াজ ভাই,আমার আমি কাউরে কিছু বলবো না।আমি ছাইড়া দে,প্লিজ”
“এই চুপ।একদম চুপ। শাট আপ মাদারফাকার”। বলে নিয়াজ আবার মারে তারেক কে।
সাদা পোলাটা আগায় আসে। তারেকের গলায় ছুরি ধরে। তারেক ওই ছেলের জায়গায় নিজের মুখ দেখে। আতংকে চোখে পানি অঝোরধারে পড়তে থাকে।
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ,আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।” তারেক ভাংগা ভাঙ্গা ইংরেজি তে বলে।
“চোপ,মাদারচোদ। মুখ হা কর। হা কর বলতেছি।নইলে জিহবা টাইনা কাইটা ফেলবো।” তারেক কে ধরে মুখ হা করায় নিয়াজ। আরেকজন ধরে সাইডওয়াকের উচা জায়গা তে মুখ টা লাগায় তারেকের। তারেক কিছু করতে পারেনা। অস্ত্রের সাথে সাথে সে ট্রেনিং টাও জমা দিয়ে আসছে।নিজের ভিক্টিম দের কতা মনে পড়ে। কি মিনিংলেস সব মৃত্যুর কারন ছিল ও নিজে। আজকে নিজের অর্থহীন এই মৃত্যুর স্বীকার হবে ও নিজে।


তারেক চিতকার করার চেষ্টা করে। দুইটা চায়নিজ কে চোখের কোনা দিয়ে দেখে তারেক কিন্তু ওরা এই গেঞ্জাম দেখে সরে যায়।
তারেক মনে মনে দোয়া পড়তে চেষ্টা করে। হঠাত একটা মৃদু আওয়াজ আসলো। একটা ডিম কে হাতের মুঠোয় নিয়ে টিপে ফাটালে যেরকম আওয়াজ হয় ঠিক তেমন। তারেক মুখ এর যন্ত্রনা শুরু হলো। রক্ত গড়াতে থাকে। তারেক ধীরে ধীরে সংজ্ঞা হারায়। নীল পানির মিশিগান লেকে ডুবে যায়। ভগ্ন মুখে একটা অস্পষ্ট হাসির রেখা আসে।
কানে শেষ শব্দ যেটা শুনে তারেক সেটা হইলো আইরিশ টানের ইংলিশে
“আরেহ সেরা ছিল। THIS WAS FUCKING AWESOME”

সামিহা ফোন হাতে বসে আছে। টেক্সট দেখে তারেকের। সামিহা তার হাজব্যান্ড সুমনের দিকে তাকায়। সুমন দাড়ি কাটে না অনেক দিন। সামিহা দের বাচ্চা টা মারা গেছে এক মাসের মতো হচ্ছে। টেক্সাস এ প্রতিবেশি একজনের বাসায় রেখে সামিহা ক্লাস করতে গেছিলো। আন্টি রা নিউ ইয়র্ক থেকে আসছেন ৬ মাসের মতো হচ্ছে। সামিহা ক্লাস শুরু করছে মাত্র। আন্টি ক্যাশে বেবিসিটিং এর কাজ করতেছিলেন। সুমন গেছে অফিসে। নতুন জব।পিএইচডি শেষ করার আগেই জব। সুমন তারেকের এন্টিথিসিস পুরুষ একদম। প্রফেশনাল জীবন থেকে শুরু করে বেড পর্যন্ত। তারেকের বিপরীত পুরুষ একদম। বোরিং, সৎ, প্রচন্ড হার্ডওয়ার্কিং,একদমই স্বপ্নালু নয়। প্রচন্ড রকমের বাস্তববোধ সম্পন্ন।
নিজেদের বাচ্চার সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্যই সে কাজ শুরু করে।
রেগুলার যার কাছে বাচ্চা রেখে যায় উনি মাত্রই বাংলাদেশে গেছেন তাই এই আন্টির কাছে রেখে সামিহা কাজে যায়। ওই আন্টির ২১ বছরের ছেলে আসছে। সামিহা তখনো বুঝে নাই। ওই বাড়িতে আন্টির দুই মেয়ে,আন্টির শ্বাশুড়ি সবাই থাকে।সবাই মিলে মিশে সামিহার বাচ্চা কে দেখে রাখে।
ওইদিন সে প্রতিদিনের মতোই রেখে যায় বাচ্চা কে।তারপর ভার্সিটি চলে যায়। ক্লাস চলতে থাকে। বিকালের দিকে ফোন তারস্বরে বাজা শুরু করে। প্রফেসর কে এক্সকিউজ মি বলে সামিহা বাইরে আসে।
“আপু তুমি এখুনি আসো।এখুনি আসো তুমি।” কান্না মাখা একটা গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।প্রথমে সামিহা চিনতে পারেনা।
সামিহা পরে বুঝে এবং চিনে। এটা সেই বেবিসিটার আন্টির মেয়ের গলা।
সামিহাও ভয়ে কান্না শুরু করে চিতকার করে,
“কি হইছে?কি হইছে?বলো আমাকে।বলো প্লিজ”
প্রফেসর বের হয়ে আসে। শুদ্ধ ইংরেজি তে বলে
“কি হইছে?সামিহা?কি সমস্যা?”
“বেবিসিটার এর মেয়ে আমাকে কল করে আসতে বলতেছে।আমার খুব ভয় লাগতেছে,প্রফেসর। আমি যাইতে পারি?”
“শিওর শিওর।যাও।”
সামিহা দ্রুত বের হয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল এক্সিলিরাটর দিয়ে সাই করে চলে গেল। পুরোটা রাস্তায় কাদতে কাদতে দোয়া পড়তে পড়তে যায় সামিহা। বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশের গাড়ি তে পুরো রাস্তা বন্ধ। সামিহা নামে গাড়ি থেকে আর দৌড় দিয়ে যায়।
“আমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা কই?”
মেয়েটা দৌড়ে আসে।
“আপু সবাইকে মেরে ফেলছে।ভাইয়া সবাইকে মেরে ফেলছে। আম্মা,আব্বা,দাদী,বড় আপু আর শামাকেও মেরে ফেলছে”
সামিহা স্তব্ধ হয়ে যায়।সুমন মাত্র এসে পৌছায়। পিছন থেকে সামিহা কে জড়ায় ধরে।
সবার ডেডবডি বের করে আনা হয়। সবার বুকে গুলি আর চোখ উপড়ানো। বেবিসিটার আন্টির মেয়ে শেষপর্যন্ত ল্যাম্প দিয়ে মেরে ছেলেটাকে অজ্ঞান করে আশপাশের সবাইকে ডেকে জড়ো করে।পুলিশ কে কল দেয়। ছেলেটা এগুলো দেখে আত্মহত্যা করে।
সামিহা শামার লাশ খুজে পায়। লাশ হাতে নিয়ে দেখে শামার চোখ গুলোও উপড়ানো। স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবদূত যেন মানুষের অন্ধকার দিক দেখে নিজের চোখ উপড়ে ফেলছে।
যাতে আর এসব দেখতে না হয়।খুনী ছেলেটার ব্যাকগ্রাউন্ড খবর নিয়ে দেখা যায় অনেকদিন ধরেই স্কিতজোফ্রেনিক। কিন্তু কেউ জানতো না। ড্রাগস ও নেয় অনেকদিন ধরে। এইখানে এসে বিগড়ে গেছিলো। সেইখান থেকে এই হত্যাযজ্ঞ। সামিহা আর পারে নি এইসব কাহিনী ফলো করতে।

সামিহা আর সুমন ছুটি নেয়। নিউ ইয়র্কে পরিবারের কাছে চলে যায়। অশান্ত মনে সামিহা তারেক কে দেখে আসলে বুঝতে পারে নি কি করবে? তাই ডেটিং এর কথা বলে ফেলছে। নিজের জীবন থেকে পালানোর জন্য অতীতের চেয়ে ভালো অপশন কি হতে পারে? তারেক তো ওর অতীতের পার্ফেক্ট প্রতিচ্ছবি। তারেক চলে যাওয়ার পর দরজা খুলে যেন সামিহা ফিরে আসে বর্তমান ও বাস্তবতায়। সুমন বসে আছে ঘরের কোনায়।চুপচাপ। সামিহার কাজিন রা লাফালাফি চেচামেচি করতেছে। রান্নাঘরে জামাইয়ের জন্য রান্না চলতেছে। সামিহা সব দেখে।তারেকের দেওয়া খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে দেয়। সামিহা শুয়ে পড়ে। তারেকের কথা মনে করে। ভার্সিটির ওদের উত্তাল সময়।ঘরে বাইরে,রিকশা তে,অন্ধকার গলিতে,রেস্টুরেন্ট এর বুথে।এসব চিন্তা করতে করতে সামিহার শরীর গরম হয়ে উঠে,দুই পায়ের মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় আবার অনেকদিন পর।বাচ্চার মৃত্যুর পর থেকে এই অনুভূতি হারিয়ে গিয়েছিল কতদিনের জন্য।
কিন্তু আবার মনে পড়ে যখন তারেক ওকে কিছু না বলে চলে যায়। বাবা তখন কতরকমের প্রেশার শুরু করে কিন্তু কিছু করতে পারেনা সামিহা। তখন সে সুমন কে খুজে বের করে। সুমনের কাছে হাত জোর করে।সুমন ওকে আগেই পছন্দ করতো। একবার বলার পরেই রাজি হয়ে যায় সে।
সুমন খালি একটা প্রশ্নই করে,
“তারেক ফিরে আসলে কি তুমি আমার সাথে থাকবা?”
সামিহা তখন নিজের দিক ঠিক রাখার জন্য,চোখের পাতা না ফেলে বলে “হা,তোমাকে বিয়ে করেছি তোমাকে ছাড়বো না আর আমি”।
সামিহার ঘুম ভাঙ্গে।ভোর হয়ে আসছে। সুমন পাশে ঘুমাচ্ছে। সামিহা তার ফোন চেক করে। তারেকের টেক্সট দেখে।
সামিহা একবার সুমনের দিকে তাকায়। তারপর টেক্সট লিখে,
“তারেক তোমাকে দেখে অনেকদিন পর আমার মনে হয়েছিল আমি আবার আগের সেই সামিহা হয়ে গেছি।আমাদের হলের সামনে সন্ধ্যাবেলায় প্রথম চুমু।আমার জীবনে প্রথম পুরুষের স্পর্শ ছিলে তুমি। কত স্মৃতি,কত স্বপ্ন ছিলো আমাদের। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেংগে তুমি চলে গেলা। তুমি পুরুষ থেকে গেছো।স্বামী হও নি আমার।আমি কালকে আবেগ থেকে যা বলছি তা ভুলে যাও।যোগাযোগ করো না আমার সাথে আর কখনো”।
এটা লিখে সামিহা টেক্সট করে। ফোন বন্ধ করে। সুমন কে জড়ায় ধরে। সামিহা হিসাব করে দেখে ওর আজকে অভুলেশন চলছে।সবকিছু ঠিকভাবে করলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সুযোগ অনেক। সুমন কে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় ঠোটে।
নতুন করে জীবন শুরু করা দরকার সামিহার।খুব দরকার...
------
ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা নিয়ে ফোন টা ধরে কানের কাছে নেয় শিহাব। সোমার নাম্বার থেকে কল আসতেছে ক্রমাগত। এই মেয়ে কে নিয়ে যে কি করবে শিহাব বুঝে পায় না। কাল রাতেও ওর পুরো পরিবার কে গাড়ি করে পাশের শহর থেকে ঘুরায় নিয়ে আসছে। তাও উনাদের কম্পলেইন করা বন্ধ হয় নাই। বাসায় আসার পর বলতেছে এই রকম জায়গায় না থেকে নিউ ইয়র্ক চলে যাইতে। ঘিঞ্জি হইলেও ওইখানে নাকি জীবন আছে। বাল আছে। রাস্তায় দাঁড়ায় পচা পানির ফুচকা খাইতে চাইলে শিহাব বাংলাদেশেই ফিজিক্স পইড়া ব্যাংকের খাতার হিসাব গুনতে পারতো। সোলার সেলের এফিশিয়েন্সি বাড়াইয়া পৃথিবীর বদলানোর স্বপ্ন তার মাঠেই মারা যাইতো। পাশের ঘিঞ্জি কাদা ওয়ালা শহরে সোমার হাত ধরে হাটলেও বাংগালীরা তাকায় থাকে।সেইখানে কেউ বাংলায় প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। তাদের কে সিলেটি না হইলে চিটাংগা ভাষায় জিজ্ঞেস করতে হয়। আরো এক ডিগ্রি বাড়ায় বললে একদম ইংরেজী তে প্রশ্ন করা লাগে যেকোনো কিছু।
আমেরিকার বোকাচোদা ইমিগ্রেশন পলিসির আগা পাশ তলা বাংলাদেশীর ছিড়ে খুড়ে খেয়ে নিচ্ছে। আইস দিয়ে ডিপোর্ট করে সাড়তে পারতেছে না সরকার। সেই সাথে আবার এই এলাকায় চলে হিউম্যান ট্রাফিকিং। সেইখানে আবার মাস্টার্স করতেছে এক ভাই ড্রাইভ করে মাল ট্রান্সপোর্ট করে। প্রথমে বুঝে নাই। পরে দেখে গাড়ির ট্রাংক ভর্তি ছোট ছোট বাচ্চা।
সেই ট্রমা বেশি দিন লাগে নাই কাটতে। বউ সহ দেশে যাবে দেইখা ৫০০০ ডলারের শপিং করতে হচ্ছিল তাই আবার আল্লাহু আকবার বলে নেমে গেছিলো ভাই হিউম্যান ট্রাফিকিং এর ভ্যান গাড়ি চালাইতে। এখনো পুলিশ ধরে নাই একবার এটা নিয়া মসজিদে গলাবাজি করতেছিলেন ভদ্রলোক। পরে পুলিশে জানানো হইলে এক কাপড়ে দেশে পাঠায় দিছে। এখন অবশ্য ভালোই আছে। বিদেশী ডিগ্রি থাকায় প্রাইভেট ভার্সিটীর টিচার হয়ে গেছে।
সোমা কল করেই যাচ্ছে।ওর ফ্যামিলিকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসা লাগবে। বালের দেশ,বালের জীবন। কেন যে এইসব প্রেম করি?
-কি?
-ঘুম থেকে উঠছো?
-হ্যা,কি লাগবে?
-আব্বা আম্মাকে নিয়ে যাওয়া লাগবে এয়ারপোর্টে।
-হ্যা,জানি।
-তুমি এভাবে কথা বলতেছো কেনো?
- এমনি।
-থাক তোমার যাওয়া লাগবে না। আমার বোঝা হয়ে গেছে।
- কি বুঝছো?
-আসতেছি। বেশি কথা বইলো
বাংলাদেশের নাটক আর গল্পের বইয়ের মেয়ে রা নেকু নেকু হয়। আসলে বাস্তবতায় সব মেয়েরা মোটেও এরকম না। শিহাব এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখে গেছে। ওর আগের গার্লফ্রেন্ড যখন ইয়াবা খেয়ে গিয়ে রাত বিরাতে ঘরে পোলাপান ঢুকাইতো তখনই শিখে গেছে। ওরা দুইজনেই উত্তর বংগ থেকে একসাথে আসছিলো। শিহাব পড়তো পাবলিকে।একটা জংগলে ছিলো তার ইউনিভার্সিটি।তার আগের সেই গার্লফ্রেন্ড থাকতো শহরে।একটা ফ্লাট এ।
সেইখানে শিহাব ও যাইতো। শিহাব দুই তিন বছর সিনিয়র ছিল। যখন চাকরি হচ্ছিল না ওইসময় কণা (তখনকার গার্লফ্রেন্ড) সুন্দর মতো আরো প্রেম করা শুরু করে। সেই ছেলেও কণার ঘরে যায়। ওই সময় আবার শিহাব কে টেক্সট করে কণা। প্রথম নাকি ওই ছেলে ঘরে আসছে।


“এই যে ও আসলো মাত্র।কাপড় ছাড়তেছে এখন”।

শিহাব এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতো। গা গুলিয়ে বমি আসতো। প্রথম কয়েক মাস কষ্ট হইলেও শিহাব আর সবার মতো সব ভুলে গিয়ে নতুন প্রেম করতো একটার পর এঁকটা।নতুন নতুন মেয়ে নতুন নতুন গল্প। নতুন নতুন চুলের গন্ধ,গায়ের গন্ধ। কিন্তু দিনশেষে বেকার যুবক। অনেকদিন এভাবে যাওয়ার পর জি আর ই এর খবর পেয়ে শিহাব জি আর ই দেয়। কোনোরকম একটা স্কোর মাঝারী একটা ইউনিভার্সিটি তে যায়। সেখানে ১০-১২ জন বাংলাদেশী আছে।একজন বাংলাদেশী প্রফেসর আছে মোটামুটি প্রতাপশালী এবং বাংলাদেশীদের কে কাজ জানলে ফান্ড দিয়ে দেয়।

ওইখানে প্রথমেই এলাকার বুড়া আংকেল আন্টিদের দাওয়াতে গিয়ে যখন দেখে বেসিকালি একটা কলোনীর নিম্ন মানের আড্ডা ছাড়া আর কিছু হয় না । আবার বেশিরভাগই বিএনপি শিবির মাইন্ডের মানুষজন। সব ভালো কাজ জিয়া করছে। আর কেউ কিছু করে নাই দেশে। শিহাবের রুমমেট ছিলো হিন্দু। তাকে নিয়ে গেছে। তখন এক মহিলা বলা শুরু করলেন

“এই হিন্দু রা সব নষ্টের মূল। আমার একদম পছন্দ নাহ হিন্দুদের। সব চাকরিতে এখন খালি হিন্দুরা”
আরেক বিসিএস ভাই ছিলেন। উনার শখ হইলো কয়দিন পর পর ডিগ্রি করতে আসা। সরকারের টাকায়। এইখানে এসে বড় বড় গপ্পো। তার মাঝে একদিন মারামারি হাতাহাতি হয়ে গেলো। বিসিএস ভাই বললেন “ট্যাক্সের টাকায় পড়ে এসে এইখানে সেবা করেন খারাপ লাগেনা?”
সবাই চুপ হয়ে যায়। এক ভাই ছিলেন উনি সাধারনত কথা বলেন কম।
উনি মুখ খুললেন “নাহ,লাগেনা। ট্যাক্সের টাকায় যা পড়ছি সেটা এক বছরে ফেরত দিছি। ওই ট্যাক্সের টাকার পড়ালেখার যেই মান আমি দেখছি।তার থেকে একটু টাকা দিতাম তাও যদি কিছু পড়ালেখা হইতো।আপনি যে ট্যাক্সের টাকায় নিজের ছেলেমেয়েকে এইখানের সিটিজেন বানায় সেটল করাচ্ছেন সেটার কি হবে?তাদেরকে ট্যাক্সের টাকায় দেশে পড়ান।হিপোক্রিসি করেন কেন?”
এরপর উচু গলায় চেচামেচি থেকে শুরু হয়ে গেলো হাতাহাতি।


এরপর থেকে শিহাব এগুলোতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী দের দাওয়াতে গিয়েও খালি টাকা পয়সা আর মার্ভেল মুভি নিয়ে আলাপ। মরুক গিয়ে সবাই। কেউই পড়াশোনা রিসার্চ নিয়ে ইন্টারেস্টেড না একফোটা। কত অপরচুনিটি আছে সেগুলো নিয়া চিন্তা নাই। আছে শুধু শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার ধান্ধায়। আর আছে ইমিগ্রেশন বেশ্যার দল।এরা পুরুষ নারী দুইরকমেরই হয়। এদের ধান্ধা এইখানে সিটিজেন পাত্র-পাত্রী জোটানো। পরে অবশ্য সুন্দর হাসিমুখে ছবি দেয়। জীবন সুন্দর মতোই আগায়। বড় স্ট্রেস কেটে গেলে জীবন সুন্দর না হয়ে যাবে কই?

এক মেয়ে এক বার জিজ্ঞেস করলো
-ভাইয়া,আপনাদের ল্যাবে শন ছেলেটা কেমন?
-কেন?
-টিন্ডার ডেটে গেছিলাম। ভালো লাগছিলো খুব।
- মানুষ তো ভালোই।
-ভাইয়া মানুষ দিয়ে কি হবে? ফিউচার কেমন?
শিহাবের ইচ্ছা হইলো নিজেকে চড় মারতে। আমেরিকায় এসে ও ভুলে গেছে যে সে আসলে বাংলাদেশী।
শিহাব বললো,
“হুম ভালো। ইউ এস সিটিজেন। সায়েন্টিস্ট হওয়ার ধান্ধায় আছে ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স এর।”
মানে? বেতন কেমন হবে?
১২০কে বছরে।
তার মানে আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসা যাবে দ্রুত।
হুম।
থ্যাংক ইউ শিহাব ভাইয়া। ইউ আর এ গ্রেট হেল্প।
এক মাস পর বিয়ে হয়ে গেলো। সাদা ছেলে হাটু গেড়ে শর্ট স্কার্ট এর বাংলাদেশী অপুষ্ট বাদামী বেমানান হাটু ওয়ালা মেয়ে কে প্রপোজ করার একটা ছবি দিছে। আরেকটা দিছে কাচাহাতে পড়া লাল শাড়ি পড়ে সাদা বেটা কে জড়ায় ধরা অবস্থার ছবি। সাদা পোলাপানরাও খুব বাদামী শিক্ষিত মেয়েদের পছন্দ করে।আমেরিকান অনেক মেয়েদের তুলনায় লো মেইন্টেইনেন্স করা লাগে। আমেরিকান মেয়েরা পৈ পৈ নিজের হিসাব ঠিক রাখবে। বাংলাদেশী মেয়েরা অনেক সময় রোমান্টিসিজমে ভুগবে,আবেগ দেখাবে,সেই সাথে একটু রান্না বান্নাও করবে। সোজা কথায় কম স্পয়েলড হবে। এটাই ভাবে অনেক সাদা আমেরিকান।কিন্তু দিন দুনিয়ার অনেক পরিবর্তন হইছে।

অবিবাহিত সিনিয়র ল্যাব মেট বাংলাদেশী আপু এই পোস্ট দেখে লাইক দিয়ে অকারনে শিহাবের উপর রাগ করে দুইটা ঝাড়ি মেরে ল্যাব থেকে চলে গেলো। এরপর দেখা গেল ফেসবুকে সলো গার্ল ট্রিপ দিচ্ছেন ন্যাশভিল, টেনেসি তে। ছেলেদের হিসাব নিকাশ ও অদ্ভুত। এই সাদা মেয়েদের পিছে ঘুরে কিন্তু পাত্তা পায় না তাই নিউইয়র্ক, “বার্জিনিয়া” আর এল এ অর্থাৎ ফেরেশতা দের শহরে গিয়ে এরা ফার্স্ট জেনারেশন আমেরিকান সিটিজেন মেয়েদেরকেই খুজতে থাকে। কপাল খুলে যায় যদি দেখে মেয়ে কিছুদিন বাংলাদেশেও থাকছে। তাইলে তো মামা ছক্কা।

এর মাঝে সোমা আসে ইউনিভার্সিটি তে। শিহাবের পাশের ল্যাবে। শিহাব এর সাথে সোমার দেখা হয় ল্যাবের সামনে।
বরফ পড়ে চারিদিক সাদা হয়ে গেছে।
সোমা তখনো বাংলাদেশী জিন্স পড়া। এইখানকার শীতের কাপড় নিয়ে ক্লিয়ার আইডিয়া হয় নাই বুঝা যাচ্ছে পোশাক আশাক দেখে।
এইভাবেই প্রথম সোমার সাথে পরিচয় হয় শিহাবের।
জিন্স আর সাদা টপস পড়া মোটামুটি সাস্থ্য ওয়ালা মেয়ে টার প্রতি আকর্ষন বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে শিহাবের। পাশের ল্যাবে কাজ করায় প্রায়ই কথা হতো। সিনেমা,গান,গল্পের বই,এনিমে,মাংগা,জীবন,সমাজ সব বিষয়ে বেশ জমতো। কিন্তু গল্প গুলো একদমই সারশুন্য হীন। ধীরে ধীরে কথা গুলো অন্যদিকে ঘুরতে থাকে।
একদিন রাতে ১১টা বাজে। ল্যাব থেকে শিহাব বাসায় যাবে। স্নো এর ভিতর সোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লিফট দেয় শিহাব।
“খুব ঠান্ডা,তোমার গাড়ি নাই?”
সোমা শিহাবের এই প্রশ্নের উত্তরে বলে, “নাহ,সবসময় বাস নিয়ে থাকি।কিন্তু আজ কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে গেলো”
“এরকম হলে,আমাকে জানাবে।আমি প্রায়ই ল্যাবে রাতে থাকি। আমি লিফট দিবো”।
সোমা চুপ করে বলে “শুধু লিফট দিবে?”
গাড়ি ধীরে ধীরে স্লো করে ইমার্জেন্সি তে দিয়ে শিহাব সোমার দিকে ঝুকে যায় আর সোমা ও ওরদিকে এগিয়ে যায়। ঠোটের সাথে ঠোট মিলে যায়। এই বরফ ভেজা সন্ধ্যায় ভালোবাসার এই রূপ এর সূচনা দেখা যায়।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভালোবাসার প্রকোপ। একজন আরেকজন এর বাসায় থাকে প্রায়ই। শিহাব এর রুমমেট রাশিক ভাই কিছুই বলেন না অবশ্য। উনি বেশিরভাগ সময় ল্যাবেই কাটান। রাতে রাতে হঠাত চিতকার চেচামেচি করেন।শিহাব তখন উনাকে ঘুম থেকে উঠায়। তাই লজ্জায় ল্যাবেই ঘুমান বেশির ভাগ দিন।রাশিক ভাইয়ের সম্পর্কে কেউই কিছু জানেনা।উনিও কারো সাথে মিশেন না,কথা বলেন না।শুধুমাত্র সোশাল মিডিয়ার গ্রুপ গুলোতে আছেন।কারো কোনো দরকার পড়লে কথা বলেন।

সোমা একাই থাকে একটা স্টুডিও এপার্টমেন্টে। এই মিডওয়েস্ট সবকিছু এতো সস্তা যে কোনো বেপারই না। সব খরচ করেও সোমা দেশে তার কলেজ শিক্ষক বাবা কে ৫০০ ডলার পাঠাতে পারে। তার মা হাউজ ওয়াইফ। সোমার অনেক স্বপ্ন গ্রাজুয়েশনের জন্য বাবা মা কে আমেরিকায় আনবে।অবশ্য এই মুহুর্তে মা এর নামে নিউইয়র্কের আত্মীয় স্বজন দের ইমিগ্রেশন কেস চলছে যেকোনো গ্রিন কার্ড চলে আসতে পারে। সোমা অনেক চিন্তা করে পড়তে এসেছিলো। কিন্তু এইখানে আসার পর আর পারছেনা। ফোকাস করতে কষ্ট হয়। তলপেট থেকে শুরু করে সব গরম হয়ে থাকে সারাক্ষন। মাথার ভিতর শিহাবের কথা ঘুরতে থাকে। এটা সোমার প্রথম সম্পর্ক। দেশে পছন্দ ছিলো অনেক। কিন্তু এইটাই প্রথম সম্পর্ক। শিহাব তার প্রথম পুরুষ। নিঃশ্বাস আটকে আসে আর মাথা ঝিমঝিম করে কেমন জানি।
তাই সে মাথা ঠিক রাখতে পারেনা একদমই। কোনোরকম পাশ করে যাচ্ছে।পিএইচডি করার স্বপ্ন থেকে এখন তার চিন্তা মাস্টার্স করে জব,বিয়ে,বাচ্চা।
আর সেইসাথে শিহাব কেও চাই তার। বালের পিএইচডি করে কি হবে? শিহাব এর দরকার নেই পৃথিবী বদলানোর। শিহাব কে সোমার নিজের করে চাই। ওকেও মাস্টার্স করায় বের করে নিতে হবে। হোক, ওর বড় বড় স্বপ্ন আছে। তাতে কি হইছে?
শিহাব কে বুঝতে হবে, পিএইচডির স্বপ্ন বেশি বড় নাকি সোমাকে ওর জীবনে রাখাটা বেশি বড়?
সোমা ভাবে “শিহাব নিশ্চয়ই আমাকে চাইবে”
তারপর সোমা ভাবে, যদি তারপরেও শিহাব আমাকে না চায়,পিএইচডি করতে চায়,তাহলে?
ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এই এপার্টমেন্ট এ নিয়ে আসতে হবে। টেবিল চেয়ার ছাড়া ও কিভাবে কাজ করবে? আমার বাবা মা আসলে সব দায়িত্ব ওর হাতে দিয়ে দিবো। সব খরচ ওর হাতে চাপায় দিবো। তখন বুঝবে পড়াশোনা করার অবস্থা ওর আর নাই। চাকরি দরকার এইসব খরচ চালানোর জন্য।তখন ও জব করবে এবং আমাকে আর পরিবার কে সময় দিবে।এইটা ওর জন্যেই দরকার। এটাই ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স।

রাশিক চিতকার করে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ভাগ্যভালো ল্যাবে ঘুমাচ্ছে। নাহয়, শিহাব কে আবার উঠতে হইতো। শিহাব দুপুরের দিকে ল্যাবে যায়। সন্ধ্যায় খেয়ে দেয়ে ঘুম যায় আর ভোরে উঠে পড়ালেখা করে। তারপর ল্যাবে যায়। রাশিক ঘুম থেকে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।
ও একটা কমন দুঃস্বপ্ন দেখে। প্রায় প্রতি রাতেই এটা দেখে।
একটা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে রাশিক হেটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কাপড় চোপড় সব ভিজে আছে। সূর্যাস্ত এর সময় সব কিছু হলুদ আলোতে ছেয়ে গিয়েছে। কেউ যেন জোর করে টিভির রিমোট জীবনের স্যাচুরেশন বাড়ায় দিছে। রাশিক স্বপ্নের ভিতর খোড়াচ্ছে। কিছুক্ষন হাটার পর সামনে একটা লেক দেখতে পায়। লেকের পানি লাল। পাহাড়ের প্রান্তে গাছের পাশে রাশিকের স্ত্রী তাকায় আছে ওর দিকে।তার চারিদিকে কচু পাতা সবুজ রঙের গাছ থেকে ফাস দেওয়া লাশ ঝুলছে। হালকা বাতাসে নড়ছে লাশ গুলো।
রাশিকের স্ত্রী কাদতে কাদতে বলে, “কেন ? কেন? কেন মারলে আমার মেয়ে কে?”
রাশিক বলে, “তুমিই তো বললে ইমিগ্রান্টের বউ হইতে চাও নাই। বাচ্চা কে চাও নাই তখন। আমাকে আর পরিবার কে গালাগালি করলে। আমাকে পুরুষত্বহীণ বললে প্রেগন্যান্ট করে দিছি বলে।তুমিই তো সাইন করে দিলা ডাক্তারের অফিসের কাগজে।”
“চুপ কর। তুই খুনী। তুই একটা খুনী।”
এই কথা বলে রাশিকের স্ত্রী চিতকার করে কান্না শুরু করে মাটিতে বসে। এই কান্নার আওয়াজেই কিনা রাশিক হঠাত করে খস খস আওয়াজ শুনে। ঝুলতে থাকা লাশ গুলো নড়তে থাকে। আকাশ তখন হলুদ থেকে কড়া লাল হয়ে যায়। রক্তের মতো টকটকে লাল আকাশ কে পিছনে রেখে ঝুলতে থাকা লাশ গুলো কালো আলখাল্লা পড়ে চিতকার করতে থাকে
“খুনী,খুনী।তুই একটা খুনী”
লাশ গুলোর চোখ জল জল করতে থাকে।লাশ গুলোর গলা সে চিনতে পারে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়ের পরিচিত রা। সবাই এরা মৃত।বিভিন্ন রাজনৈতিক কনফ্লিক্টে সময়ে সময়ে মারা গিয়েছে এরা রাশিকের চোখের সামনে।

ঝুলন্ত লাশ গুলো স্ট্রাগল করতে থাকে গলার ফাস ছিড়ে রাশিকের কাছে আসার জন্য।রাশিকের স্ত্রী চিতকার করতে থাকে। রাশিক্ তখন ভয়ে দৌড় দিয়ে লাল রক্তের মতো রঙের পানির লেকে লাফ দেয়।
পানি ছিল হাটু পানি। ডুব দিয়ে আবার রাশিক উঠে দাঁড়ায়। কে জানি রাশিকের আংগুল ধরে টান দেয়। ও পিছনে তাকায়।সাদা কালো ফ্রক পড়া একটা বাচ্চা রাশিকের আংগুল ধরে টান দেয়।
“বাবা,আমাকে মেরে ফেললা কেন?কি দোষ ছিলো আমার?”
“বাবা,বাবা,বাবা।কথা বলছো না কেন?”



এইসময়েই রাশিকের ঘুম ভাঙ্গে।

রাশিক তার অতীত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অনেক বছর ধরেই। কিন্তু কেন জানি হচ্ছে না। নিজের স্মৃতি থেকে পালিয়ে কোথায় যাবে আসলে? ল্যাবের একটা মেশিনের আওয়াজে তার একদিন প্যানিক এটাক হয়ে গিয়েছিলো কারন সেটার আওয়াজ অনেকটা পিস্তলের ট্রিগার চাপ দেওয়ার মতো।
রাশিকের স্ত্রী এইখানেই ছিলো। কিন্তু ছয় মাস আগে মারা গেছে ।
আসলে এবরশনের জন্য বেপারটা হয়েছিলো তা নয়। এবরশন এর ডিসিশন টা খুব কঠিন হওয়া স্বত্তেও দুইজন মিলে নিয়ে নিতে পেরেছিলো। কিন্তু অতীত যখন ফিরে আসলো তখন সবকিছুই সমস্যাক্রান্ত হয়ে গেলো।

কয়েক মাস আগে,
নতুন একটা মেয়ে মুভ করলো এই শহরে। যে কিনা রাশিকের পুরনো বান্ধবীর রুমমেট ছিলো। এই মেয়ে রাশিকের অতীতের সবকিছুই জানতো। পরিবার, ড্রাগস,খুনোখুনি,নারী সবকিছুই রাশিকের বান্ধবী এই মেয়ের সাথে শেয়ার করেছিলো। উইকেন্ডের বাংলাদেশী দাওয়াতে গিয়ে প্রথম এই মেয়ের সাথে পরিচয় সবার। মেয়েটা সবার সামনে রাশিক কে জিজ্ঞেস করে উঠে।
“ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি নাবিলার রুমমেট।নাবিলার সাথে আপনার আর যোগাযোগ আছে?”
সবাই চুপ হয়ে যায়।
মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করে, “ভাই, আমি সানিকা। আমি নাবিলার রুমমেট। আমাকে চিনছেন?”
রাশিক একবার তার স্ত্রীর দিকে তাকায়,আরেকবার বাকিসব বাংলাদেশী দের দিকে তাকায়। রাশিকের স্ত্রী রাশিকের অতীত নিয়ে একদম কিছুই জানেনা।
রাশিকের স্ত্রী তখন মেয়েটা কে বলে, “আপনি মনে হয় ভুল করছেন”
মেয়েটা তখন বলে, “নাহ,আপনি রাশিক ভাইয়া না?”
রাশিক তখন একটা দ্বন্দে পড়ে যায়। সানিকা কে অস্বীকার করে আগায় যাবে। নাকি অতীত কে মেনে নিবে। নিজের স্ত্রী এবং সমাজের উপর এতটুকু ভরসা কি করবে?
রাশিক তখন বলে “হ্যা, সানিকা আমি তোমাকে চিনেছি।নাবিলা তোমার কথা বলতো। নাবিলার সাথে যোগাযোগ নেই অনেক বছর।”
রাশিক নিজের স্ত্রী কে কাছে টেনে এনে বলে “এই যে আমার স্ত্রী”
সানিকার মুখ লাল হয়ে গেলো লজ্জায়।
“স্যরি ভাইয়া।আমি বুঝি নাই। নাবিলা তো আমেরিকাতেই আসছে।তাই আপনি কিছু জানেন কিনা ভাবছিলাম।”
সানিকা লজ্জামুখ নিয়ে রাশিকের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে “ভাবী আমি খুবই স্যরি”।
রাশিকের স্ত্রী মুখ নামিয়ে ফেলে। লজ্জাতে ওর মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রাশিক এর স্ত্রী হেটে বের হয়ে যায়। রাশিক ওর পিছে পিছে যায়।
দুইজনেই গাড়িতে উঠে। পুরো রাস্তায় দুইজন একদম চুপচাপ যায়। বাসায় গিয়ে কাপড় ছাড়ে একদম নীরব থেকে। এরপর আসে ঘুম।
মাঝরাতে রাশিকের ঘুম ভাংগে দূর থেকে ভেসে আসা কান্নার আওয়াজ থেকে।পাশে নাবিলা নেই। তড়াক করে রাশিক উঠে দাঁড়ায়। ট্রাউজার আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে দৌড় দিয়ে বাসার সামনে আসে। নাবিলা এপার্টমেন্টের সামনে বসে আছে ফোন হাতে।ফোনের আলোতে নাবিলাকে দেখতে মনে হচ্ছে সাদা মুখের জাপানিজ হরর মুভির ভূতের মতো। রাশিক ওর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়।
কাদতে কাদতে তামান্না (রাশিকের স্ত্রী) বলে “তুই এত বড় কাহিনি লুকাইছিস কেন আমার কাছ থেকে?”
রাশিক কিছু বলেনা।
“তুই নাবিলা মাগী কে মনে মনে এখনো চাইতেছিস?”
রাশিক চুপ থাকে।
“এজন্য বাচ্চা নষ্ট করাইছিস?যাতে নাবিলা মাগীর পেট বাধাইতে পারিস?”
তামান্নার চিতকারে আশপাশের বিল্ডিং গুলোর মানুষেরাও সব বের হয়ে আসতে থাকে।এইখানে পিএইচডি স্টুডেন্টরা আর পোস্ট ডক রা থাকে বিভিন্ন দেশের। অনেকেই মাথা বের করে তাকিয়ে তামান্নার কান্না মাখা চিতকার শুনতেছে।
রাশিক বলে “বাচ্চা তুই নষ্ট করছিস।নিজের হাতে সাইন করছিস। ইমিগ্রান্টের বউ বানাইছি বলছিস”
তামান্না চিতকার করে “চুপ কর হারামজাদা। নাবিলার কথা ভুলতে পারিস নাই এখনো আমি জানি তো। ইন্সটাগ্রাম এ ঠিকই ওর ছবি দেখিস আমার পাশে শুয়ে থেকেই।”
রাশিক মোটেও শুয়ে শুয়ে নাবিলার ছবি দেখে না। আজকে সানিকা বলার পর সব সোশ্যাল এ নাবিলা কে খুজে দেখলো। আর কিছুই না।
কয়দিন পর তামান্না সুইসাইড করে গলায় দড়ি দিয়ে। ল্যাবের সিলিং থেকে।
রাশিক এর ঘোর কাটে ফোনের আওয়াজে। শিহাব ফোন দিছে।
“হ্যা,শিহাব।কি খবর?”
“ভাইয়া, সোমার বাবা মা আসতেছেন পরশু দিন। আমি ওর সাথে বাজার করতে যাচ্ছি। আপনার জন্য কিছু লাগবে?”
রাশিক চিন্তা করে। কিছু জিনিস লাগতো কিন্তু কাউকে কিছু বলতে ওর ইচ্ছে করে না আর। তামান্নার কথা মনে পড়ে “কারোর থেকে কিছু নিবা না, দেওয়ার চিন্তা করবা সারাক্ষন”
রাশিক বলে, “অনেক ধন্যবাদ।কিছুই লাগবে না”।

সানিকা এর সারারাত ঘুম হয় নি।উইকেন্ডের সকাল। স্নো পড়তেছে। মাত্র বাংলাদেশ থেকে এসে এখনো খুব বেশি খাপ খাওয়াতে পারে নাই এইসব কিছুর সাথে। নতুন করে যেন নিজের শরীর কে এই পরিবেশের সাথে বেচে থাকা শিখাতে হচ্ছে। সানিকা খুবই সাধাসিধে শান্ত মেয়ে। খুব বেশি চাওয়া পাওয়া নেই। অল্প তেই খুশি থাকার চেষ্টা করতে থাকে। তবে কেন জানি আসার পর থেকে প্রচণ্ড ডিপ্রেশন চেপে ধরতেছে। প্রতিদিন মনে হয় ঘুম থেকে উঠে ফ্লাই করে দেশে চলে যাবে।
প্রতিবার থালা বাসন ধোয়ার সময় একবার দেশের কথা মনে পড়ে,রান্নার সময় মা এর কথা মনে পড়ে, চা খেতে গিয়ে যখন বিস্বাদ চা বানায় তখন ও দেশের বাসায় কাজ করা খালার কথা মনে পড়ে। এই যে ডাক দিলে খাবার, চা চলে আসতো ঘরে এটা খুব মিস করতেছে।
সারাদিন শুধু পড়ালেখা,ফেসবুকে দিন টা কাটতো। আর রাতের বেলায় শরীফের সাথে ফোনে ফোনে ভালোবাসার দেওয়া নেওয়া শুরু হতো। শরীফ ওর ক্লাসমেট ছিলো। এখন আমেরিকাতেই আছে। গার্লফ্রেন্ড হইছে সাদা চামড়ার। বিয়েও করে ফেলবে। মেয়ের বাড়ি মিশিগানের লেকের পাড়ে। ছবি গুলো অনেক সুন্দর। নীলাভ সবুজ পানির পাশে দাঁড়িয়ে শরীফ আর মেয়েটা চুমু খাচ্ছে এটা দেখে সানিকা ভিতরটা ভেংগে যেতে শুরু করে। এমন যেন একশ টা হাত ওর সারা শরীর ঘুরে এসে মুখের ভিতর ঢুকে ছুরি দিয়ে ওর কলিজা টা কে খুচিয়ে খুচিয়ে মারছে।এই অনুভূতি টা এক সপ্তাহ ছিলো।
বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দিলো। শরীফ কে বাসাতেও পছন্দ করতো খুব সবাই। কিন্তু কিছুই আর হলো না। সানিকার স্টুডেন্ট ভিসা নেওয়াই ছিলো। দুই জায়গাতে এডমিশন হইছিলো। একটা ছিলো শরীফের কাছে আরেকটা ছিল দূরে।
দূরেরটাতেই চলে গেলো সানিকা।
সানিকার সাথে শরীফের শেষ কথা গুলো ছিল এরকমঃ
তোমার সাথে প্রেম করেছি ঠিক আছে।কিন্তু এমন তো না আমরা বিবাহিত ছিলাম। আমাদের ভিতরে তো তেমন কিছুই হয় নাই যে আমাদের সারাজীবন একসাথে থাকা লাগবে। ওগুলো আসলে ক্ষনিকের আকর্ষন আর শরীরের বেপার। আমার চেয়ে কত ভালো ছেলে আসবে তোমার জীবনে।দেখবা খালি।

কয়দিন পরে অবশ্য শরীফের এনগেজমেন্ট এর ছবি আসে। এক বছরের প্রেমের ফসল আজকে তুললাম।
তার মানে সানিকার সাথে “সম্পর্ক”থাকার সময়ে এসব করেছে শরীফ। নাবিলার বেপার টা মনে পড়ে যায় সানিকার। নাবিলা তার রুমমেট কত রকমের কত ছেলের সাথে কত জায়গায় গিয়েছে, আর সে এত ভালো থেকে তার কি লাভ টা হইলো? মাত্র একটা ছেলের সাথে প্রেম করেছে।তাও হইলো না কিছু।
এখন একটা হাজব্যান্ড যোগাড় করতে না পারলে যে কি হবে ওর।
একা জীবন টার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবো কি? এগুলো ভাবতে ভাবতে সানিকা বিছানা থেকে উঠে। বাসার চারিদিক সাদা হয়ে আছে। কি যে করবে সারাদিন বুঝে উঠতে পারছেনা।হঠাত করে সানিকার রুমমেট এক সাদা বিদেশী মেয়ে এসে খুব এক্সাইটেড ভাবে বলে “দেখো দেখো।কি সুন্দর স্নো পড়ছে।চলো আমরা বের হই।”
সানিকার এখনো ইংরেজী বুঝতে কষ্ট হয়। নাটক সিনেমা দেখে অনেক খানি বুঝে কিন্তু বিভিন্ন এলাকার টান গুলো বুঝতে কষ্ট হয়।
“স্যরি,বুঝি নি।”
মেয়েটা বুট পড়ে রেডি হইতে থাকে।
“আমি এরিজোনা থেকে এসেছি।ওইখানে নর্থ ছাড়া কোনো স্নো নাই। এরকম স্নো আমি এত কাছ থেকে দেখি নাই। তুমি কোত্থেকে আসছো?ওইখানে স্নো হয়?আমার সাথে চলো বের হই।”
সানিকা বলে “না,আমাদের ওইখানেও স্নো হয় না।চলো বের হই”।
শীতের কাপড় পড়ে দুইজনেই বের হয়। স্নো বল ফাইট থেকে শুরু করে স্নো এর ভিতর শুয়ে থাকলো,দৌড়াদৌড়ি,হাটাহাটি সবই করলো। মাঝপথে ওদের তিন নাম্বার রুমমেট যোগ দেয়।আফ্রিকান এই মেয়েটাও কোনোদিন স্নো দেখে নাই।
ঘন্টা খানিক এভাবে চললো। এরপর মেয়ে গুলো বললো “চলো পাবে যাই”।
সানিকা ইতস্তত করে, “পাবে গেলে কি মদ খেতে হবে?”
“তোমার ইচ্ছা না করলে খাবা না।কেউ কিছু বলবে না।সাধারন খাবারও পাওয়া যায় ওইখানে।”
সানিকা ওদের সাথে যায়। বেশ ভালো লাগে। এতদিনে এসে আমেরিকা ওর কাছে জমজমাট লাগা শুরু করে। নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হয়। একটা ছেলেকে একটু করে ভালোও লেগে যায়। ওরা ফোন নাম্বারও আদান প্রদান করে। ছেলেটা এখানেই পিএইচডি করছে।
সানিকা স্বপ্নের মতো একটা দিন কাটায় বাসায় ফিরে।
ফেসবুকে শরীফের মেসেজ।
“হাই”
সানিকার বুক কেপে উঠে।কি করবে,কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। মেসেজ আইকনে শরীফ আর তার ওয়াইফের ছবি আবার ওইদিকে এত রাতে তাকে মেসেজ দিচ্ছে।
সানিকা লিখে
“হাই?”
“কি খবর?”
“এইতো”
“তুমি নাকি আমেরিকাতে আসছো?বিয়ে করে আসলা নাকি?”
“নাহ,একাই”
“কোথায় আসলা?”
“এইতো আসছি আর কি এক জায়গায়,তুমি জেনে কি করবা?”
“নাহ,জেনে রাখি”
“নাহ”
“আমার প্রতি রাতে তোমার কথা মনে পড়ে।তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে?”
সানিকার অভিমানে চোখে পানি চলে আসে। আবার বুকের ভিতরেও ধুকধুক করতে থাকে। কথা পরের টা খুব সাবধানে বলতে হবে।
শরীফ মেসেজ দিতে থাকে
“আমার ওয়াইফ তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী কিন্তু কথা বলার কিছু নাই।একদম বিরক্তিকর।”
সানিকার রাগ উঠতে থাকে এখন।আবার মনে মনে একটু আশাও দেখা যায়।
শরীফের মেসেজ আসতে থাকে
“তোমার সাথে কথা বলার আনন্দ টাই অন্যরকম ছিলো। কতকিছু জানতা তুমি। টিভি সিরিজ থেকে শুরু করে বই সবকিছু নিয়ে কথা বলা যাইতো।একটা মনের মিলের বেপার ছিলো।সবকিছু আমরা একইভাবে চিন্তা করতাম”
সানিকার চোখে পানি টপটপ করে পড়তেই থাকে।এগুলো কেন বলতেছে শরীফ? কেন?
কিন্তু রাগ টাও ভিতরে ঘুরতে থাকে।
শরীফের মেসেজ আসে,
“সুন্দর হলেও কি আর। তোমার মতো না আসলে।কি বেপার উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
“কি উত্তর দিবো?”
সানিকার মন ট একটু কেমন জানি হয়ে আসে। একটু আশা দেখে মনে হচ্ছিলো।
শরীফ এরপরের মেসেজ টা সবকিছু শেষ করে দেয়
“তুমি খুব স্পেশাল কিছু জিনিস করতে পারতা। যেটা আসলে আমি আর পাচ্ছিনা।”
এরপরে একটা পূর্নাংগ শিশ্নের ছবি পাঠায় শরীফ।
সানিকা হতভম্ব হয়ে যায়।
“এটার কথা মনে আছে?কিভাবে চুষে দিছিলা গাড়িতে?আমি ভুলতে পারতেছিনা”
সানিকার চোখের পানি বন্ধ হয়ে যায়।
“আমি তোর বেশ্যা না,খানকির পোলা।”
সানিকা এরপর ব্লক করে দেয় শরীফ কে। সব প্লাটফর্ম থেকেই ব্লক করে ওকে। সানিকা ভাবতে পারেনা এই ৭/৮ বছরের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত এই ব্লোজবে পরিসমাপ্তি।এটাই তার ৭/৮ বছরের সম্পর্কের লিগেসি। একমাত্র জিনিস যেটা শরীফ মনে রাখছে? জাস্ট ব্লোজবের জন্য সানিকা কে শরীফের মনে লেগে আছে?
এ কেমন জীবন?
সানিকা উঠে দাঁড়ায়। আজকের ছেলেটাকে টেক্সট করে। ওর সাথে কথা বলা শুরু করে। আর পিছে তাকাবে না সানিকা, ঠিক করে। অতীত কে মাঝে মাঝে গুলি করে মারা দরকার, নাহয় অতীত উঠে এসে পিঠে ছুরি মারার ক্ষমতা রাখে।


শিহাব গাড়ি চালাচ্ছে।সূর্যাস্তের আলো গাড়ির জানালা দিয়ে চুইয়ে পড়ছে । গাড়িতে পিছনে সোমার বাবা এবং মা বসে আছেন। সোমা শিহাবের সাথে না এসে ল্যাবে গিয়েছে।ইমার্জেন্সি কাজে।যদিও সেটা শিহাবের বিশ্বাস হয় নি।তার বাবা মা এর সাথে একলা টাইম কাটানোর ব্যবস্থা করছে সোমা। চুপ করে। শিহাব বরফ ঠান্ডা স্লাশি খাচ্ছে। বেসিকালি বরফের গুড়ো। এগুলো খাচ্ছে কারন শিহাবের মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ। এই দুই বুড়ো বুড়ি মেজাজ টা খারাপ করে দিছে। এই এক সপ্তাহ উনাদের কে নিয়ে ল্যাবের কাজ বাদ দিয়ে দিনে রাতে ঘুরছে। পাহাড়,নদী,লেক,রেস্টুরেন্ট, দাওয়াত সবখানেই নিয়ে গেছে আর নিয়ে আসছে।
কিন্তু বিয়ের জন্য ইনকোয়ারি করতেছে কিন্তু পিসড অফ করে দিচ্ছে।
“বাবা মা এর রোজগার কত? আত্মীয় স্বজনেরা কি করে? এই বাজে স্টেট থেকে মুভ করে কবে নিউ ইয়র্কে আসবা? বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কি চিন্তা সোমার?
সোমার সমান থাকতে আমার এম এ ডিগ্রি শেষ, বাচ্চাও ছিলো একটা।”

শিহাব এক বাক্যে উত্তর করে যাচ্ছিলো প্রতিটা কথার। প্রতিটা উত্তর দিয়ে শিহাব নখ দিয়ে স্টিয়ারিং হুইল জোরে খামচে ধরছিলো।দাগ পড়ে যাচ্ছে সেইখানে।রাগ উঠলে শিহাব এই কাজ টা করতে থাকে। অজস্র খামচির দাগ স্টিয়ারিং হুইল আর তার আশপাশে।শিহাবের বাবা তেমন কিছু করেন না। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে আরো অদৃশ্য মনে হতে থাকে শিহাবের নিজেকে। যেনো শিহাব কেউ না। শিহাবের প্রশ্নের প্রতিটা উত্তরে সোমার বাবা মা এর রিএকশন গুলো, দীর্ঘশ্বাস গুলো শিহাবের কানে আসতে থাকে। সে বুঝতে থাকে কত বড় ভুল করেছে সে। কেন সোমার সাথে প্রেম করতে হলো তার?
এয়ারপোর্ট থেকে আর ১০ মিনিট দূরে, তখন সোমার বাবা আবার মুখ খুলেন।
“সোমা কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারলে খুব ভালো লাগতো। নিউ ইয়র্কে আমাদের সব আত্মীয়। পুরা বাংলাদেশের মতো পরিবেশ। একটু নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।
শিহাব আবার খামচে ধরে স্টিয়ারিং হুইল। রাগে দুঃখে হতাশায় মুখ টা কালো হয়ে গেছে। রিয়ারভিউ দিয়ে তাকায় দেখে সোমার বাবাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
কথা বলা শুরু করে আবার সোমার বাবা,
“পরশু দিন ওই আমার বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম তাদের কে আমার খুব ভালো লাগছে। অন্য অনেকে আছে অতিথি আসলে এক পর্যায়ে মুখ কালো করে ফেলে। কিন্তু ওরা পুরো সময়ে হাসিমুখে আমাদের আপ্যায়ন করলো।কি যে ভালো। ওরকম কারো সাথে সোমার বিয়ে দিতে পারলে খুব ভালো হতো। বিয়েশাদী অবশ্য আল্লাহর হাতে। “
এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আবার সবাই চুপ। এয়ারপোর্টে নেমে শিহাব লাগেজ নামায় দিলো উনাদের। উনারা বিদায় নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।
শিহাব কিছুক্ষন গাড়িতে চুপচাপ বসে থাকলো। সোমাকে টেক্সট দিলো, উনারা এয়ারপোর্টে। আমি আজ রাতে আর আসবো না।আমার বাসায় থাকবো।”
গান ছাড়লো।
মবি এর “শট ইন দা ব্যাক অফ দা হেড”
Instrumental….
গাড়ি নিয়ে রওনা হলো। অন্ধকার হয়ে গেছে চারিদিকে। পুরান গাড়ির হেডলাইট দুর্বল। শিহাবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে। এত টা অপমান কোনোদিন ওর লাগে নাই। পুরো গা যেন ময়লা হয়ে গিয়েছে।বাসায় গিয়ে ডলে ডলে এত অপমান আর লজ্জা ধুয়ে ফেলতে হবে সব।
শিহাবের হঠাত ইচ্ছা করলো বাবা মা কে ফোন দিয়ে গালাগালি করতে। কেন এরকম লুজার বানাইছে আমাকে? শিহাবের এক্স গার্লফ্রেন্ড এটা করতো। শিহাবের একবার রেজাল্ট খারাপ হলো তখন তার এক্স গার্লফ্রেন্ড বললো তোর মা কে এখুনি ফোন কর। আর বল “আমাকে লুজার বানাইছেন কেন? নিজেরা লুথা বলে আমাকেও বানাতে হবে নাকি?”
প্রেমের টানে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে শিহাব কল দিয়ে এসব বলে। এটা দেখে এক্স গার্লফ্রেন্ড বলে “আমি বলছি বলে কি কল দেওয়া লাগবে? অকৃতজ্ঞ সন্তান তুই”
শিহাব ফোন রেখে দেয়।
সোমা কে কল দেয়। সোমা কেটে দেয়। টেক্সট দেয়।
“আমি অনেক ব্যস্ত। কথা বলতে পারবো না”
শিহাব টেক্সট দেয় “ ওকে। তবে আমাকে কল দিও না আর কোনোদিন। আমাদের ভিতর আর কিছু নাই”
এটা লিখে শিহাব ফোন রেখে গাড়ির সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বিশাল এক হরিন।শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো আত্মার গভীরে সব দেখে ফেলছে। গাড়ি থেকে মাত্র ৫-৬ ফিট দূরে। কড়া ব্রেক দেয় শিহাব। কিন্তু কাজ হয় না। গাড়ি টা ঘুরানোর চেষ্টাও চলে। গাড়িটা হালকা ঘুরে যায় কিন্তু তাও হরিনের গায়ে সজোরে গিয়ে ধাক্কা লাগে শিহাবের গাড়ির। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গাড়িটা ঘুরে হাইওয়ের পাশে খাদে পড়ে যায়। শিহাবের আর কিছু তখন মনে নাই।

শিহাবের ঘুম ভাঙ্গে হাসপাতালে। রাশিক তার পাশে বসা।
শিহাব উঠতে গেলে রাশিক দৌড় দিয়ে ডাক্তার আর নার্স ডেকে আনে।ওরা শিহাব কে থিতু করে।
শিহাবের সারা শরীর ব্যান্ডেজ এ মোড়ানো।
শিহাবের সময় লাগে স্বাভাবিক হতে।
স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রথম প্রশ্ন ছিল “সোমা কই?”
রাশিক গম্ভীর ভাবে বলে “নেই”
“মানে?”
“নিউ ইয়র্ক চলে গেছে গতকাল,ব্যাগ বোচকা সব নিয়ে।”
শিহাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে “অবাক হলাম না”
রাশিক বলে “অবাক হইও না। আমরা ছেলেরা একরকম ভয়ানক।মেয়েরা অন্যরকম।একটা ঘটনা বলি।
আমার তখন ভয়ংকর কাজের চাপ।তোমার ভাবির সাথেও টুকটাক গেঞ্জাম চলতেছে। ল্যাবে আসছি। সেই সকালে আসছি মাঝখানে টেক্সটিং হইছে তোমার ভাবীর সাথে কিন্তু কথা হয়নাই।রাতের বেলা হঠাত ফোন।”
কান্নামাখা কন্ঠে তোমার ভাবি বলে “আমি এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।দেশে চলে যাবো। তোমার সাথে এভাবে আর থাকা যাবে না।”
“আমি বোকা হয়ে যাই।দৌড় দিয়ে গাড়ি নিয়ে ১ ঘন্টা দূরে এয়ারপোর্টে যাই। ওইখানে তন্নতন্ন করে ওকে খুজি। এরপর আমাদের বাসায় যাই। বাসা লন্ডভন্ড। আমার পরিবারের সব ছবি টুকরো টুকরো করে ছিড়া।আমি ওকে না পেয়ে চলে যাই বাসা থেকে।ল্যাবের মেঝেতে ঘুমাই।পরের দিন মিটিং এ দেখি তোমার ভাবীর কল। ও স্যরি বলতেছে।কারন ও আসলে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আসলে ক্লজেটে লুকিয়ে ছিলো।ওইদিকে ওর বাবা মা বোন দুলাভাই সবাই ওর কথা শুনে আমাকে ফোনে করতেছে আর বকতেছে”।
এটা বলে রাশিক হাসে।
“কিছুই করার নাই।তা তোমার এক্সিডেন্ট কেমন হলো?”
“হরিনের সাথে লেগে। এরকম বিশাল হরিন আমি আগে দেখিই নাই। কেন জানি মনে হচ্ছে হরিন টার সাথে এক্সিডেন্ট করায় আমার জীবন নতুন করে শুরু হলো।”
রাশিক বলে “আমারও এরকম এক্সিডেন্ট দরকার যাতে মনে হয় নতুন কিছু শুরু হলো জীবনে। রিস্টার্ট এর মতো।”
দুইজনেই জানালা দিয়ে বাইরে সূর্য ডুবতে দেখে।
------------
রাশিক পরে আর কোনোদিন বিয়ে করে নাই। এখনো ওর রাতে ঘুম ভাংগে দুঃস্বপ্ন দেখে। সেই বাচ্চা টা এখনো রাশিকের স্বপ্নে এসে জিজ্ঞেস করে “বাবা আমাকে খুন করলে কেন?”

শিহাব দেখে বিশাল এক হরিন ওর গাড়িকে পিছন থেকে আক্রমন করার জন্য ছুটে আসছে।

সোমা নিউ ইয়র্কের রাস্তার ফকির দের মাঝে প্রায়ই সারা গায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া শিহাব কে দেখে।

অতীতের দুঃস্বপ্ন গুলোই আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখায়। এরা কোনোদিন সাথ ছাড়ার নয়…

























সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×