প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মনে হয় আজকেই হয়তোবা আত্মহত্যা করে ফেলা যায়। উপরের সিলিং ফ্যান টা একদম নতুন লাগানো হইছে। ওইটা একটা দেশী, বাংলাদেশের কালচারের সাথে মিলে যায় এরকম একটা উপায়। ঘুমের ওষুধ,কিংবা গুলি করে নিজেকে মারাটা একটু পশ্চিমা বেপার হয়ে যায়। তরুন তরুনীরা যারা একটু খেত তারা অবশ্য হাত কাটে খুব। হাত কেটে সেই রক্ত দিয়ে চিঠি পাঠায় প্রেমিকার কাছে। রিসিপিয়েন্ট প্রথমে আবেগাপ্লুত হয়,ভয় পায়,কান্না করে তারপর বিয়ে করে ফেলে রক্ত মাখা সেন্ডার কে বিয়ে করে। এরপর তার হাতে মার খায় পোস্ট দেয়।
“একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে আবেগে আমাকে মেরে কাদতে পারে?”
একদিন মার খেতে খেতে মরে যাবে কিন্তু চিঠির ভালোবাসার আবেগে মুখে হাসি নিয়ে মরতে যাবে ঠিক তখুনি প্রেমিক এসে কানে কানে বলবে “আমি আমার হাত কেটে তোমায় চিঠি লেখি নাই। ওইটা মুরগির রক্ত ছিলো”
আমাদের জীবন গুলো এরকমই মিনিংলেস।
যাই হোক যা বলছিলাম আত্মহত্যার কথা।
আমি সকালে উঠে চেয়ারে বসে ল্যাপটপ খুলে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি। সবাই ঘুমিয়ে গেলে কিংবা ঘুম থেকে উঠার আগে ফাস দেওয়া যায় কিনা। তখনই বউ এসে “বাচ্চা অসুস্থ,ডাক্তারের কাছে যাবো”
আমি তখনই আবার উঠে গেলাম। নাহ, আগামী কয়েকদিন বাচ্চা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সুইসাইড করা যাবে না। আমার বউ অফিস করে ক্লান্ত হয়ে আর অসুস্থ বাচ্চা দেখাশোনা করতে পারবেনা। তিন নাম্বার একটা কাজের মেয়ে অবশ্য রাখা যায় এই কাজের জন্য। একজন রান্না করে,আরেকজন ঘর পরিষ্কার করে। তিন টা রাখাই যায়।
অথবা আমিও করতে পারি কাজ টা। কিন্তু আমি একজন ভার্সিটির শিক্ষক। আমার আর সময় কই/? সকাল ৯-১২ টা পর্যন্ত ক্লাস নিই,সপ্তাহে ২-৩ দিন। এরপর তো ফেসবুকে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে পোস্ট করা আর সেইসাথে তর্ক বিতর্ক তো আছেই। তারপর ইউটিউবে ভিডিও দেখা লাগবে, বউ কে গোল্ডের দোকানে যাওয়া তো আছেই। শ্বশুরবাড়ি আবার ১০ মিনিট দূরেই আমার সেইখানেও দিনে ২ বার বউ কে নিয়ে যাওয়া লাগেই। বাচ্চা দেখাশোনা আর কেমনে করি? নাহ, আরেকটা কাজের লোক লাগবেই। দেখি আমাদের দুই নাম্বার ড্রাইভার কে বলে দেখি। আমার আবার ড্রাইভার ২ টা। ভাগাভাগি করে আসে তারা। বাজার ও করে আনে এরা।ড্রাইভার গাড়ি চালায় আর আমি ফেসবুক চালাই। আর ফোনে সিম্পল ইন্সট্রাকশন ১০ বার করে বুঝাই কলিগ দের আর অফিসার দের কে। ভারি মজা আসলে জীবন টা। কেন যে সকালে সুইসাইড করতে চাচ্ছি বুঝতেই পারছি না!
যাই হোক,ক্লাসের সময় হইলো। ল্যাপটপে আমার আমেরিকার পিএইচডি জীবনের কোর্সের স্লাইড গুলো আছে। ওইগুলোই রিডিং পড়ে চলে আসবো। পোলাপান দুই একটা প্রশ্ন করলে একটু আমেরিকার গল্প করে দিবো।
আমেরিকার কথা মনে হইলে, বুক টা খালি হয়ে যায়।সুইসাইডের ইচ্ছা প্রবল্ভাবে ফিরে আসে। গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করা হতো,বাজার নিজেই খুজে করা হতো।কাজের একটা মিনিং ছিলো। এইখানে এসে এইধরনের ল্যাব বানানোর স্বপ্ন দেখাও ভুল। মেইনটেইনেন্স তো নাই বললেই চলে।মানুষজন প্রমোশন এর জন্য নিম্ন মানের কোনো রকমের প্রকাশনা করেই সাবাড়। সবাই মিনিংলেস সুখে থাকে।
আমিও বউএর ইচ্ছার জন্য দেশে চলে এলাম। প্রতি দিন ২ বার করে যাই শ্বশুড় বাড়ি তে। নিজের বাসায় বছরে দুই বার যাই, তাও মনে হয় সময় টা পুরোপুরি নষ্ট করে আসা হলো।
সম্ভাবনার রাস্তা সব বন্ধ করে এইখানে চলে আসছি। এখন নিজের অপূর্ন স্বপ্ন অন্যদের কে দেখাই। তারা সেগুলো পূরন করে আমাকে ফোন দেয়।
“আমি তো এইখানে জয়েন করলাম”
“মাশাল্লাহ,খুব খুশি হলাম” [ভিতরে মনে হচ্ছে হাত কেটে রক্ত দিয়ে ফেইক প্রেমিকা কে চিঠি পাঠায় মরে যাই]
আপাততঃ সমাধান হিসেবে কিছু মিথ্যে বিভ্রম তৈরি করেছি।
পরিবার কে সময় দেই- আমি না থাকলে কে করবে?[ভিতরে ভিতরে জানি আমি না থাকলেও ম্যানেজ হয়ে যাবে]
অমুক তমুক কে টাকা দিই - যদিও জানি আমি না থাকলেও ম্যানেজ হবে…
এইধরনের মিথ্যে গল্প গুলোই বাচিয়ে রাখছে।
কিন্তু তাও সিলিং ফ্যান দেখলে মনে হয় একটু নাড়ায় দেখি আমার ভাড় নিতে পারবে কিনা।