২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলম্বোতে খেলতে নামল ১৬ বছরের ছোটখাট গড়নের এক বালক । যার খেলার কথা গলির ক্রিকেট সেই কিনা সোজা টেস্ট ম্যাচে !!! দর্শক, লংকান দলের খেলোয়াড় আম্পায়ার সবাই অবাক । সবাই হয়ত কিছুটা তাচ্ছিল্যই করেছিল । জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে কিছুই করতে পারেনি সে । স্কোর ছিল মাত্র ২৬ । তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বিশ্বসেরা বোলার মুরালি আর ভাসদের পিটিয়ে ছেলেটা করল ১১৪ রান । ক্রিকেটের রেকর্ডবুক নতুন করে কাঁটাছেড়া করে লেখা হল ছেলেটির নাম । সর্বকালের সর্বকনিষ্ট টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল । এবং সেটাই ছিল তার অভিষেক টেস্ট
২০০১ সালে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কমবয়সে টেস্ট সেঞ্চুরীর বিশ্বরেকর্ড গড়েন আশরাফুল
২০০৪ সাল । চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে কুম্বলে, পাঠানদের বেধড়ক পিটিয়ে ছেলেটা করল অপরাজিত ১৫৮ । এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানালের সেই ছেলেটির প্রিয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার । ইরফান পাঠানের সাথে যৌথভাবে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিল ছেলেটি । ছেলেটির নাম মোহাম্মদ আশরাফুল
ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৫৮ রানের পথে সেঞ্চুরীর পর আশরাফুল
২০০৫ সালের ১৮ জুন । ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এক বিস্ময়বালক খেলল ১০১ বলে ১০০ রানের ইনিংস । প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারালো বাংলাদেশ । পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দিল কিভাবে এক বিস্ময় বালকের কাছে হেরে গেল অস্ট্রেলিয়া । সেই বিস্ময় বালকের নাম মোহাম্মদ আশরাফুল । আশরাফুলের সেই সেঞ্চুরিটি ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি বড় দলের বিপক্ষে প্রথম
বিশ্ব কাঁপানো সেঞ্চুরী । কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরীর পর আশরাফুল
২০০৭ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট । দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী পেস আক্রমণ কে গুড়িয়ে দিল ছেলেটি খেল ৮৭ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস । প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালো বাংলাদেশ । ছেলেটির নাম মোহাম্মদ আশরাফুল
২০০৭ বিশ্বকাপে । দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশরাফুলের স্কুপ
৮ মার্চ ২০১৩ । গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ছেলেটি খেলল ১৯০ রানের ইনিংস । প্রথমবারের মত শ্রীলংকার সাথে টেস্ট ড্র করল বাংলাদেশ । মুশফিক ২০০, নাসির ১০০ করলেও ড্রয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিল এই ছেলেটিই । ছেলেটির নাম মোহাম্মদ আশরাফুল
গলে ১৯০ রান করার পথে সেঞ্চুরীর পর আশরাফুলের উল্লাস
এটি শুধু মোহাম্মদ আশরাফুলের উল্লেখযোগ্য কিছু ইনিংস । আশরাফুলের সাফল্য তো সেখানেই যেখানে একের পর এক ওয়ানডে ম্যাচ হারতে থাকা বাংলাদেশকে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে এনেছিল সে । সেসময় আশরাফুল ছিল অটমেটিক চয়েজ । প্রত্যেকটি জয়েই বড় ভূমিকা থাকত তার । কখনো নায়ক কখনো বা পার্শ্বনায়ক
সেই আশরাফুলের আজ দুঃসময়, বড় দুঃসময় । ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধটি করে ফেলেছেন তিনি(প্রথম আলো) । এই অপরাধের শাস্তি ক্রিকেট জীবনের মৃত্যু ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্যাপ্টেন হ্যানসি ক্রোনিয়েও ম্যাচ ফিক্সার ছিলেন । নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আজীবনের জন্য । তবুও ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে তার প্রতি ভালবাসা এতটুকু কমেনি । ক্রোনিয়ে ছিলে ট্র্যাজিক হিরো । আমরা কি পারিনা আশরাফুল কে সেভাবে মনে রাখতে ?? প্লিজ