somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেশা (ছোট গল্প)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিকূল আবহাওয়া । একটা ঝড় বয়ে গেল।তারপর শুরু হলো বৃষ্টি। ঘরে বসে বউ নিয়ে এনজয় করার মতন একটা ওয়েদার।

ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা না করে যারযার মতে সবাই বাড়ি চলে গেছে। রয়ে গেছে দুজন মানুষ ইফতি আর জেসন। আসলে উইকেন্ডে মধ্যবয়স্ক জেসন তার কলিগ ইফতিকে নিয়ে বারে যান।এটা এখন তাদের নিয়মিত রুটিন।দেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ কাজটি তাদের বাদ যায় না। ইফতি কিছুটা অনীহা প্রকাশ কললেও সেটা বাস্তবায়ন হয় না।প্রচন্ড মেন্টাল এনএক্সাইটি উপেক্ষা করে ইফতি বারে যায়।সমস্ত এক্সপেন্স বিয়ার করেন জেসন সাহেব। ইফতি কিছুটা অনীহা প্রকাশ করলে জেসন তাকে জুড়োজুড়ি করে পিকক রেস্তোরায় নিয়ে যায়।

তারা বারে বসে ডেমিনোজ খেলে। ডেমিনোজ খেলায় মাতার মানে ই হচ্ছে একটু বাদে ই গলা পর্যন্ত ব্য্রান্ডি গেলা,মাতলামি সময় দ্রুত কেটে যাবে বটে। ইফতির মন পরে থাকে বাড়ির জন্য।সেখানে বৌটা একা একা নির্ঘুম রাত কাটায়। বউটার সম্প্রতি ব্লগিং এর নেশা হয়েছে। এর জন্য ইফতি নিজেই দায়ী তাকে সময় দিতে না পারায় সেই সময় কাটানোর ওরকম একটি নেশায় আশক্ত হয়েছে। ইফতির প্রেমের আহবান অনেক সময়ই আরিত্রিকা ফিরিয়ে দেয়।কি করছে দেখতে গেলে অন্য পেজ অন করে ফেসবুক ব্লগ পেজ লুকিয়ে রাখে।তার পোস্টের কমেন্ট বেশ কয়েকটি ইফতি পড়েছে।স্বামী হিসেবে বলতে গেলে অনেক ধৈর্য নিয়েই সেগুলো সহ্য করে ইফতি। উইকেন্ডএ তার তার ব্লগিং করে বেশ ভালই কাটে। আর ইফতি সেদিন পিকক রেস্তোরায় মজে থাকে ব্র্যান্ডিতে আর ডেমিনোজ খেলায়। তারপরও আরিত্রিকাকে নিয়ে কিছুটা ভাবনা থেকেই যায়।

ইফতি আমতা আমতা করে ব›ধু জেসন তুমি যে আমাকে প্রতি রাতে মদ গেলাও এ কথা সবাই জানে। কিন্তু রোজ রোজ আমার পিছনে এতগুলো টাকা ফেলে দেয়ার বেনিফিট কি বলতো?

কথাটা শুনে জেসন মুখখোলা হাসিতে চারদিক কাঁপিয়ে তুলে। সামান্য খরচ পাতির ব্যাপারটা তাচ্ছিল্লের সঙ্গে উড়িয়ে দিল।হঠাৎ বন্ধুর একটা হাত চেপে ধরে হাসতে হাসতেই বলে আরে বন্ধু এমন একটা সুন্দর আবহাওয়ায় পেটে কিছু ব্যান্ডি না পড়লে চলে? আরে ধূর ঘাবড়াচ্ছো কেন?ভাবতো তোমার বুড়িটা কি তোমার জন্য বিছানা গরম করে রাখবে?

না বন্ধু । একদিন আমার অবস্থা এমন হয়ে পড়েছিল যে বাড়ির দরজাই খুঁজে পাইনি।শেষ মেষ তারা আমাকে এক নর্দমা থেকে তুলে বাড়ি নিয়ে যায়।

ইফতির হাত ধরে জেসন পিকক রেস্তোরার একটা কোণার টেবিলে বসলো। মূহুর্তমাত্র সময় নষ্ট না করে ডেমিনোজ খেলায় মেতে ওঠে। আর সেই সঙ্গে গ্লাসের পর গ্লাস মদ ঢালতে থাকে। খেলা যত জমে ওঠে মদের গ্লাসও ততই দ্রুত খালি হতে থাকে।

এদিকে একটা অদ্ভুত ব্যাপর ঘটে চলেছে। জেসন যতটুকু মদ ঢালছে তার চেয়ে বেশি খাওয়ার ভান করছে। যে মদের গ্লাস হাতে নিয়ে ইফতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে লাগলো। আর ইফতি একের পর এক গ্লাস মদ গলায় ঢেলে চলল। সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় যেন তার মন ভরে ওঠলো।

ইফতি বেহেড মাতাল হয়ে গেছে। তার পেটের বোতামগুলো খোলা।মদের নেশায় তার সর্বাঙ্গ দুলছে।পা দুটো বেঁকে ।তার একহাতে তাস আর অন্য হাতটা বারবার দুলছে, শক্তি লোপ পেয়ে যেন অবশ হয়ে গেছে।

মালিক ভদ্রলোক জেসনের পিঠে হাত রেখে বলল কেমন বুঝছো । জেসন ভেতরে কেমন লাগছে।কতক্ষণ গ্লাসের পর গ্লাস মদ গিললে রাতে মেজাজ শরীফ বোধ হচ্ছে তো?
না চাহিদা মেটেনি। আরও আরও মদ চাই।বুকটা যেন পুরোপুরি ভেজেনি ,শুকিয়ে রয়েছে।

তোমার ভাই ইফতির কি হাল হয়েছে? সে এখন কোথায় ? জান কি?

ব্যস্ত হবার কিছু নেই সে বহাল তবিয়তে গরম আছে। উভয়ে মিলে জেসনকে নিয়ে আরও রঙ্গ তামাশা করলো।

তারপর রেস্তোরার মালিক বলল তোমাদের জন্য মদের বোতল রেখে আমি যাচ্ছি। অন্য দিনের মত মদ খাওয়া শেষ হলে দরজায় তালা দিয়ে চাবিটা জানালার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ফেলে দিও বুঝলে।

বুঝলাম তুমি নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারো।

রেস্তোরার মালিক তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল।

জেসন আর ইফতি টেনেই চলছে। একটু বাদে ইফতি বোতল থেকে মদ ঢেলে জেসনের গ্লাসটা ভরে দিল।

জেসন মদের গ্লাসটা উপুর করে তলায় ঢেলে দিয়ে খালি গ্লাসটা টেবিলে রাখার সময় দেওয়াল ঘড়িতে বারোটার ঘন্টা বাজলো।

ইফতি হাতের তাসগুলো গোছাতে গোছাতে বলল “ জেসন বারটা বেজে গেছে। চল এখন বাড়ি ফেরা যাক।"

ইফতি এবার একাই চলতে চলতে পথ পাড়ি দিতে লাগলো, বরাতের জোড় আছে সে হাতড়ে হাতড়ে দেওয়াল পেয়ে গেল। এবার সেটাকে ধরে এগুতে লাগলো ।

তারপর চারিদিকে অন্ধকার নির্জন একটা বাড়িতে প্রবেশ করলো । আরিত্রিকা এতকক্ষণে ঘুমিয়ে পড়ার কথা । ঘুট ঘুটে অন্ধকার ঘর। একটা ছায়ামতন মনে হচ্ছে। সেটি নড়ছে।এগিয়ে আসছে বোধ হয়। নেশার ঘোরে এমনটি হচ্ছে কি না ইফতি ভাবছে। ছায়াটি তার শরীরে ধাক্কা দিয়ে বাইলে গেল। ইফতি বুঝে ফেলে এতো মানুষ ! জলজ্যান্ত পুরুষ মানুষ । তাহলে কি? ছি আরিত্রিকা এত জঘন্য । তার অনুপস্থিতিতে এই পুরুষটাকে নিয়ে ! প্রচন্ড রেগে যায় ইফতি।ছায়াটি বেড়িয়ে নাগালের বাইরে চলে গেছে।

মাথায় উল্টা পাল্টা অনেক কিছু খেলে যাচ্ছে । ফেসবুক ব্লগিং পরকীয়া। ওতো কাউকে বাসার ঠিকানা দিত না। সব মিথ্যা । নিশ্চিৎ কারো সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। আজ আরিত্রিকাকে হত্যা করবো। এত ভালবাসার আরিত্রিকা।সে কিনা!

আস্তে বেডরুমের দিকে অন্ধকার ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকে।এখানেই শুয়ে আছে আরিত্রিকা। অবিশ্বস্ত স্ত্রীলোক।হাতে একটা চেয়ার ছুড়ে মারে ফ্লোরে।সেটি ভেঙ্গে টুকরোটুকরো হয়ে যায়।নেশার ঘুরে টলে পড়ে গভীর নিদ্রায়।

রাত পেরোলো। জানালা দিয়ে ভোরের তীক্ষ্ণ আলো ঢুকে পড়েছে একেবারে ইফতির মুখের উপর।ঘুম ভেঙে যায় ইফতির।ধীরে ধীরে চোখের পাতা খোলে। বিছানার দিকে চোখ পড়ে। চোখগুলো বড় হয়ে যায়। আরিত্রিকার নগ্ন রক্তাক্ত দেহ বিছানায় পড়ে আছে ।তার দেহে অনেক গুলো আঘাতের চিহ্ন।বক্ষের বামদিকে একটা চাকু গেঁথে আছে নাইনটি ডিগ্রী এংগেলে।রক্ত ফ্লোরে পড়ে জমে আছে। পাশেই তার সাধের ল্যাপটপ।রক্তের ছিটে ফোটা সেটার মধ্যেও বিদ্যমান।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২১
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×