সকালে উঠে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো আজ আমার জন্মদিন । দেশে থাকতে ভালো খারাপ কোনরকমে জন্মদিনটা কোনরকমে পার করে দেয়া যেতো । ১৫ বছর আগে যে কিশোরী আমার প্রতিটা জন্মদিনে উইশ করবে বলে কথা দিয়েছিলো তার কথা মনে করে মন একটু খারাপ হলেও মোটের ওপর ভালোই কাটছিলো জন্মদিনের দিনগুলো । বাইরে এসেই বিপত্তি বেধেছে । এখানে যাবতীয় জায়গায় নামের সাথে জন্মতারিখটা হলো বড় পরিচয় । সেসব যায়গায় যে জন্মতারিখটা লেখা থাকে সেটা আমার আসল জন্মতারিখ না। এখনকার যুগে অবস্থার একটু উন্নতি হলেও সেকালে আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে স্যারেরাই ঠিক করতেন আমি কোন দিনে জন্মেছি । ক্লাস নাইনে এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার সময় ক্লাস টিচার ঠান্ডু কাশেম (আরেকজন ছিলো গরম কাশেম, বাচ্চা কাচ্চা পোলাপাইনরে পিটায়া তক্তা বানানোর জন্য ঐ লোকের সুনাম ছিলো) আমাদের বললেন জন্মতারিখের ঘরটা ফাকা রাখতে । আমরাও রাখলাম । পরে যখন রেজিস্ট্রেশন কার্ডটা হাতে পেলাম তখন দেখলাম আমার বয়স ১৩ মাসের কিছু বেশী কমেছে । অর্থাৎ, ১৩ নভেম্বর ৭৬ এর বদলে সেটা ২৫শে ডিসেম্বর ৭৭ হয়েছে । আমাদের এই বলা হলো যে বিসিএস দেবার সময় এটা নাকি কাজে লাগবে । তখনকান দিনে বিসিএস আর আর্মিই ছিলো মধ্যবিত্তের স্বপ্নের জায়গা । প্রাইভেট সেক্টর তখনও ডেভেলপ করেনি। তো বিসিএসের নাম শুনে ভালো মানুষের মতো মেনে নিলাম এই ভেবে যে মুরুব্বিরা যা করে ভালোর জন্যই হয়তো করে । কয়েকদিন পরে মুরুব্বি স্যারেদের প্রতি শ্রদ্ধা আরো বাড়লো যখন দেখলাম আশে পাশের কিছু স্কুলে পড়া বন্ধুদের সবার জন্মদিন গণহারে ১লা জানুয়ারী ৭৭/৭৮ হয়েছে । রীতিমতো হাসির পাত্র তখন তারা । ওখানকার স্যারেদের মাথায় এই অবাস্তব চিন্তা কিকরে খেললো সেটা আমি আজও বুঝতে পারি না । আমাদের ব্যাচ বা আশেপাশের ব্যাচে এরকম অনেককে পাওয়া যাবে যাদের এরকম পহেলা জানুয়ারিতে জন্ম । আমাদের অনেকের মুরুব্বিরাই আমাদের এভাবেই দুর্নীতিতে হাতেখড়ি দিয়েছেন । এই আমরাই যদি দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন না হই তাহলে হবেটা কে !
তো এই দুইরকম জন্মদিনের কারনে জন্মদিনের সময়টা আমি সাধারণতঃ কোথাও ডুব মেরে থাকি এখানে । সাইবার যুগে জন্মদিন লুকানো আসলে সম্ভব না । ফেইসবুক, লিঙ্কডইন, হাই৫, ফ্রেন্ডস্টার ইত্যাকার হাবিজাবি থেকে মানুষজন সহজেই জন্মদিনের খোজ পেয়ে যায় । কয়েকবার এরকম প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে যে আমার জন্মতারিখ আসলে কোনটা । ইওরোপিয় ভদ্রতার আড়ালে প্রশ্নটা হলেও সেটা আমাকে যথেষ্টই বিব্রত করে । সকালে কামলা দেবার জায়গায় গিয়েও দেখলাম আমার জন্মদিনের ব্যাপারটা চাউর হয়ে আছে । একেকজন এসে উইশ করে আর আমি আতঙ্কের সাথে তাদের মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করি অন্য জন্মদিনের খবরটা তারা ওয়াকিবহাল কিনা । ভাগ্য সদয় ছিলো যাহোক এবার । কেউ প্রশ্নটা তোলেনি ।
এরকম শুভেচ্ছা দিয়ে ওপাড়া এপাড়ায় সহব্লগাররা পোস্ট দিয়েছেন । মুকুল ভাই ও অছ্যুৎ বলাইকে এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ । মুকুল ভাই তার পোস্টে সেই পোস্ট পছন্দ করি কিনা সেটা নিয়ে ভয়ে ছিলেন । ফেইসবুকে ইশতিয়াক রউফ একই আতঙ্কে ছিলেন । অনুমান করি ফেইসবুক এ্যাকাউন্টে আমার প্রোফাইল পিকচার দেখে উনাদের এই ধারনা হয়েছে । তাদেরকে জানাতে চাই যে ঐ মেসেজটা শুধু ফেইসবুকের জন্য । পুলাপাইন ছবি, ফ্ল্যাশ, হাবিজাবি দিয়া খুবি ত্যক্ত করে । ঐজন্যই ঐ ঘোষণা । কমরেড সুমন চৌধুরী, আনোয়ার সাদাত শিমুল, ইমরুল হাসান, অমিত, সুজন চৌধুরী, প্রকৃতিপ্রেমিক, কনফুসিয়াস, এস্কিমো, বিবর্তনবাদী, শওকত হোসেন মাসুম, নাজিমউদ্দিন, প্রশ্নোত্তর, মনিটর, জোনাকি, প্রত্যুতপন্নমতিত্ব, মাথামোটা, প্রচেত্য, ছায়ার আলো, রাশেদ, বন্ধনহীন, তীরন্দাজ, শাওন, মাহমুদ রহমান, কুদরত আলী, নিজের আয়না, সাইফুর, আহমেদ শরফুদ্দিন, নরাধম, শাহেদুর রহমান, অচেনা বাঙালি, অন্যরকম, বিহংগ, তবুও একাকি, মানুষ, সুশান্ত, শাহেদুর রহমান, রিজভী, জেবীন, আনিকা, ললিতা, নীলাঞ্জনা, তবুও একাকি, মানুষ সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এপাড়া ওপাড়া মিলিয়ে পোস্টদুটিতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ।
তো, জন্মদিনের পোস্ট পড়তে গিয়ে প্রথমেই দেখলাম অছ্যুৎ বলাই তার পোস্টে ভুল করে একটা ছবি পোস্ট করেছেন (এপাড়ার পোস্ট দ্রষ্টব্য) যেটাতে দেখা যাচ্ছে একটি বাচ্চা মেয়ে হাপুস হুপুস করে আনন্দের সাথে একটা কেক খাচ্ছে । এই ভুল ঢাকার জন্য অছ্যুৎ বলাই মিথ্যার আশ্রয় নেয়ায় তার জন্য বরাদ্দ ভার্চুয়াল কেকের অর্ধেকটা প্রত্যাহার করে নেয়া হলো । সেই সাথে ইন্ধন দেবার অপরাধে মাহবুব লীলেন, থার্ড আইয়ের জন্য কেকের সাথে কোকের বদলে পানি সুপারিশ করলাম । এপাড়ার মতো, ওপাড়ায়ও মিথ্যার হাত থেকে আমার পবিত্র জন্মদিনটি রেহাই পায়নি । ব্লগার মম দাবি করেছেন এ জন্মতারিখটাও নাকি ভুয়া ! তিনি নাকি আমার জন্মের সময় ছিলেন সেখানে ! যাইহোক মমকে আজকে সন্ধ্যায় ঘন্টা দুই সময় দেবার জন্য সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হলো । ১৮ তারিখে তার জন্য আগাম জন্মদিন । ১৬ তারিখে মুকুল ভাইয়ের জন্মদিন । তাকেও শুভেচ্ছা । এপাড়ার আরেক বটবৃক্ষ নজমুল আলবাবের জন্মদিনও এমাসেই । শুভ জন্মদিন নজমুল আলবাব । আরোও যেসব পুরনো বন্ধুদের জন্মদিন এ মাসে তাদেরকেও শুভ জন্মদিন । উহারা সুখে থাকুক ।
এসএম মাহবুব মোর্শেদ অনেক দিন বেঁচে থাকার জন্য আশির্বাদ করেছেন । তাকে বলি, আমি অনেকদিন বেঁচে থাকতে চাই না । চোখের সামনে প্রিয়জনদের চলে যাওয়া দেখতে হবে তাহলে । সেটা বড় কষ্টের ব্যাপার হবে । এ কষ্টটা পেতে চাই না । ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন মা, আমায় তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে' তাদের তরফে শুভ জন্মদিন । ফারুক ওয়াসিফ, এতো সহজে ফিরিয়ে নেবো না নিজেকে । নিশ্চিত থাকবেন ।
আর সবার মতো হিমুও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । তবে সেইসাথে জানতে চেয়েছেন বাসায় শুকনো কাথা আছে কিনা । তাকে আমি বিনয়ের সাথে জানাতে চাই যে হিমুর দরকারে বান্দা হাসিব সবসময় হাজির । হিমুর দরকারে কাথা নতুন করে বানিয়ে দেয়া হবে ।
গুরুজী নিধিরাম সর্দার আশা করেছেন আমি পটকা মরিচের মতো ফুলে গিয়ে ফাইটা যামু । জন্মদিনে গুরু কি চামে বদদোয়া দিলো কিনা বোঝা গেলো না ।
মৈথুনানন্দ এক ফাকে মুকুল ভাইয়ের পোস্টে জেনেফারকে ফোন দিতে বলেছেন । বিশিষ্ট এক মহিলা ব্লগারের এক পোস্টেও তিনি এধরনের শিবের গীত গেয়েছেন । তার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে এই নামে কোন মেয়েকে আমি কোনদিন দেখিনি বা এ নামে কারো সাথে পরিচয় নাই । ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানালাম সেই সাথে ।
সাইফুর সাহেব দোয়া করেছেন অনেক বড় হবার । সেইসাথে আবার ৬ ফুটের বেশী বড় যাতে না হই সেটার সতর্কবানী দিয়েছেন । আমি তাকে জানাতে চাই যে অনেককাল ধরেই এক ইঞ্চি কম ৬ ফুট উচ্চতায় আটকে আছি । এক ইঞ্চির জন্য ৬ ফুটি হওয়া গেলো না এই আক্ষেপ আমার অনেকদিনের ।
জেনারেল লোহার খাটের শুভেচ্ছা দিয়েছেন । মানে পুরা ভেজাইল্লা শুভেচ্ছা । দিলে দিবো সেগুন কাঠের শুভেচ্ছা। তা না দিয়া রট আয়রণ দিয়া কাম সারনের চিন্তা । তীব্র নিন্দা জানাই । কুদরত আলিও সমপরিমান অশ্লীল শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন । একসহস্র হুর পাঠাবে নাকি সে আমার জন্য ! অস্তাগফেরুল্লাহ.. । লানত পড়ুক পোড়া মুখগুলোতে ।
ব্লগের মতো ফেইসবুকেও অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । মাহবুব সুমনকে ধন্যবাদ সবার আগে ট্রেন ধরার জন্য। জন্মাবার দুইদিন আগেই উনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । আরোও ধন্যবাদ অনুজ মুনতাসির হাসান ও জিকোকে । ধন্যবাদ জুয়েল, সহব্লগার মাহবুব মোর্শেদ, সহপাঠি কামরুল হাসানকে (অলৌকিক হাসান) ।
মৌসুমকে বিশেষ ধন্যবাদ দুছত্রের দারুন শ্লোকটির জন্য । মৌসুম ছড়া কবিতা লিখলে ভালো করতেন মনে হয় । সিংহপুর থেকে মনে করে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য টিয়াকেও ধন্যবাদ । যদ্দুর মনে পড়ে এক যুগ ধরে পরিচয় থাকলেও এবারই প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ছিলো এটি । টিয়া ও কমরেড নাসরিন সিরাজ এ্যানি ফেইসবুকে ফ্রি গিফট পাঠিয়েছেন বলে আলাদা ধন্যবাদ । ফেইসবুকে কোনরকম গিফট নেব না বলে প্রতিজ্ঞা করায় গিফটগুলো দেখা হয়নি । ছোটবোন মুনিয়াকেও ধন্যবাদ মনে করে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য । ভালো থাকো মুনিয়া ।
লেইটকামার আনিকাকেও ধন্যবাদ ট্রেন মিস করে হলেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ।
মেইলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হোসেইন, এস্কিমো, অমিত, আরণ্যক যাযাবর । জন্মদিনের উপহার হিসেবে একশত হুরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরণ্যক । সায় দিয়েছেন অমি রহমান পিয়াল । সময় হলে কড়ায় গন্ডায় আদায়ের প্লানটা মাথায় টুকে নিলাম। হাসান রায়হান এরকমই হুর পরিবেষ্টিত এক কৃষ্ণের ছবি পাঠিয়ে আমার জীবন সেরকম হোক সেটা কামনা করেছেন । ছবিতে এক সরোবরে হুরদের সাথে কৃষ্ণ জলকেলি করছেন সেটা দেখা যাচ্ছে । (সঙ্গত কারনে সেটা এখানে শেয়ার না করা হলেও ছবিতে যা দেখলাম সেটা বলছি) । ছবির সরোবরটি শ্যাওলায় পরিপূর্ন । পানি পুরোটাই সবুজ । জায়গাটা ম্যালেরিয়ার মশা প্রজননের উৎকৃষ্ট স্থান সেটা বলাই বাহুল্য । মশার শুককীট মুককীটের সাথে সেখানে দুচারটা ব্যাঙ পরিবার থাকাও বিচিত্র কিছু না । এহেন সরোবরে মশা মাছি ব্যাঙের সাথে জীবন কাটানোর কামনায় মোটেও খুশি হতে পারলাম না বলে দুঃখিত ।
যাইহোক, সারাদিন ব্যস্ততা আর অদ্ভুদ এক মন খারাপে কাটলো । অদ্ভুদ একারনে যে এই মন খারাপের কোন বোধগম্য কারন নেই । এমন না যে দেশে থাকতে জন্মদিন কাটতো বিশাল কেক কেটে হুলস্থুলভাবে । সত্যি কথা বলতে কি দেশে খুব অল্প লোকজনই আমার জন্মদিনটা সঠিকভাবে জানতো বা জানার আগ্রহ রাখতো । নিজেরও অনিচ্ছা ছিলো এসব ফালতু উদযাপনে । কেন জানি সারাদিন ধরে অফিসে বসে করে মুখ গোমড়া করে মেইল মেসেজ পড়লাম । বাসে করে বাসায় ফেরার পথে এই মন খারাপের ডায়োগনিসই করছিলাম। রাস্তায় দেখা এক পুরনো আরবাইটসকলেগিনের সাথে । আমাকে দেখে এতো হৈচৈ করে উঠলো যে খানিক বিব্রতই হলাম ।
গোমড়ামুখো ডয়েশে মানভর্তি সবাই একনজর দেখলো কি হচ্ছে । বিব্রত হলেও সাথে সাথে বুঝলাম সারাদিনের মন খারাপের কারন । দেশে যে অবস্থায়ই থাক সারাদিন কোন না কোন খুশিমুখ দেখতাম । সেইসব খুশিমুখই শান্তিতে রাখতো আমাকে যেটা আমি এখানে ভয়ানক মিস করি । কৃতজ্ঞতা কলেগিন, আমারে দু’দন্ড শান্তি দেবার জন্য ।
(এই লেখাটা ঐ পাড়ায় প্রকাশিত ভোখেনব্লাট - ৫ এর অংশবিশেষ । রচনা একটু খেলো প্রকৃতির হওয়াতে দুর্যোগের সময় এটা প্রকাশ করা হয়নি । )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১২:৫৬