যেকোন কারনে কখনোই ড্যাটা লস হয়নি এরকম কম্পিউটার ব্যবহারকারি দুর্লভ । অপারেটিং সিস্টেমের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে, পার্টিশন করতে গিয়ে, বেখেয়ালে অথবা হার্ড ডিস্কের কোন ফিজিক্যাল ড্যামেজের কারনেও অনেক কারনে এই ড্যাটা লস হতে পারে । নিজের এই মূল্যবান ড্যাটা সংরক্ষনের উপায় নিয়ে এজন্য সব ব্যবহারকারিদেরই ভাবা উচিত । একটা সময় ছিলো যখন একজন সাধারণ ইউজারের ড্যাটার পরিমান খুব কম ছিলো । তখন ইউজারদের কম্পিউটারে কাজের ডকুমেন্ট ছাড়া বলতে গেলে তেমন কিছুই থাকতো না । সময়ের সাথে সাথে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে । এখন ইউজারদের সাধারণ ডকুমেন্টস ছাড়াও মুভি, ছবি, সফটওয়্যার সেটিংস অনেক কিছু থাকে যেটা ব্যাকআপ করাটা একটু কষ্টসাধ্য । এগুলো ছাড়াও পিসির বিভিন্ন সেটিংস, কনফিগারেশন থাকে যেগুলোও ব্যাকআপ রাখা সম্ভব ।
তো এই ব্যাকআপ সিস্টেম গড়ে তোলাটা সহজ হয় সিডি আসার পর । একটা ছোট বহনযোগ্য ডিস্কে তখন অনেক ড্যাটা কপি করে ফেলা যেত । এরপর ফাইলসাইজ রিকয়ারমেন্ট বাড়ার সাথে সাথে বিকল্প হিসেবে ডিভিডি ব্যবহার শুরু করে ইউজাররা । তবে সাধারণ ব্যবহারকারিরা এই বহনযোগ্য সিডি/ডিভিডিতে ড্যাটা ব্যাকআপ রাখলেও এন্টারপ্রাইজ লেভেলে এটা কখনোই প্রচলিত হয়নি কিছু কারনে । কারনগুলো হলো - সিডি/ডিভিডি কোন নির্ভরযোগ্য মিডিয়াম না, এটা হ্যান্ডল করাটা অসুবিধাজনক এবং এর স্টোরেজ ক্যাপাসিটি কম ।
এই অসুবিধাগুলো ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যাকআপ সল্যুশনেও প্রভাব ফেলে নি:সন্দেহে । সিডি বছর দুয়েক ফেলে রাখলেই এর একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়, বারবার ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়লে তাতে স্ক্র্যাচ পড়ে যেটা আস্তে আস্তে সিডিকে আনরিডেবল করে তোলে । এটা ছাড়া দরকার মতো বারবার ট্রেতে ঢোকানো বের করাও ঝামেলার । এই সমস্ত সমস্যার কারনে ব্যাকআপের জন্য হার্ডডিস্ক আস্তে আস্তে অপ্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠছে । এছাড়া প্রতি গিগাবাইট হিসাবে হার্ডডিস্কের দামও প্রায় এক । হার্ডডিস্কের ক্ষেত্রে প্রতি ইউরোতে পাওয়া যায় ৭.৭ গিগাবাইট আর প্রতি ইউরোতে ডিভিডিতে পাওয়া যায় ৭.৪১ গিগাবাইট ।
ব্যাকআপ রাখতে হার্ডডিস্কের আরেকটা সুবিধা হলো আপনি সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনার পছন্দমতো সিডিউল করে ব্যাকআপ প্রসেস অটোমেটেড করে রাখতে পারবেন । ভুলে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাও এখানে নেই ।
লিনাক্সের জন্য ব্যাকআপ রাখার জন্য এরকম বেশ কয়েকটা সমাধান রয়েছে । আমার কাছে এর মধ্যে ব্যবহারবান্ধব মনে হয়েছে এসব্যাকআপকে (sbackup).
এসব্যাকআপ আপনি যে হার্ডড্রাইভে কাজ করেন সেই হার্ডড্রাইভেই ব্যাকআপ রাখতে পারে । তবে আমি পরামর্শ দেবো আলাদা একটা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করার জন্য । এই হার্ডডিস্ক আপনি ইউএসবি অথবা প্রাইমারী স্লেভ বা সেকেন্ডারি মাস্টার/স্লেভ হিসেবেও কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারেন । ফাইল সিস্টেম এনটিএফএস হওয়াই ভালো কারন এটা ৪গিগার বেশী ফাইল সাইজ সাপোর্ট করে । এটা দরকার হবে ব্যাকআপ ফাইল ক্রিয়েট করা জন্য ।
আপনার প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হলে এসব্যাকআপ সফটওয়্যারটা ইনস্টল করে নেয়া । এটার জন্য কমান্ড লিখুন এরকম -
sudo apt-get install sbackup
সফটওয়্যারাটার সাইজ ৫০০কিলোবাইট বা তার কিছু বেশী । দেশের স্লো কানেকশনেও তাড়াতাড়ি ইনস্টল হবে ।
ইনস্টল করার পরে এটা চালু করুন মেন্যুবার থেকে সিস্টেম > এ্যাডমিনিস্ট্রেশন > সিম্পল ব্যাকআপ রিস্টোর কনফিগ । চালু করলে আপনি এরকম একটা ইন্টারফেস পাবেন ।
এখানে ইউজ কাস্টম ব্যাকআপ সেটিংস সিলেক্ট করুন ।
তারপর উপরে ইনক্লুড ট্যাব ক্লিক করুন । এখানে আপনি দেখতে পাবেন কোন কোন ফোল্ডার আপনি ব্যাকআপ করবেন ।
ডিফল্ট হিসেবে /var (আপনার যেসব প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন সেগুলো সেটিংস ক্যাশে), /home (আপনার হোম ফোল্ডার), /usr/local (আপনার ইনস্টল করার সব প্রোগ্রামগুলো) এবং /etc(হার্ডওয়্যার সেটিংস, সফটওয়্যার কনফিগারেশন) সিলেক্ট করা থাকবে । আপনি চাইলে আরোও কিছু ফোল্ডার যোগ করতে পারেন । সেটা করতে এ্যাড ডিরেক্টরি ক্লিক করে দরকার মতো অন্য ডিরেক্টরিও সিলেক্ট করতে পারবেন । (নতুনদের জন্য - লিনাক্সের কোন ফোল্ডারে কি থাকে সেটা জানতেClick This Link target='_blank' > এখানে ক্লিক করুন ) ।
এরপর এক্সক্লুড ট্যাবে যান । এখানে দেখতে পাবেন কি ধরনের ফাইল আপনি ব্যাকআপ রাখতে চান না সেগুলোর তালিকা ।
এছাড়াও আপনি সর্বোচ্চ কত বড় সাইজের ফাইল ব্যাকআপ রাখবেন সেটাও এখানে নির্ধারণ করে দিতে পারবেন । এইখানে একটু চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন । কারন আমরা অনেক সময় অনেক ছবি ও ভিডিও রাখি হোম ফোল্ডারে যেগুলো আমরা ব্যাকআপ রাখতে চাই কিন্তু এখানে এগুলো এক্সক্লুড করা আছে । দরকার মতো ফাইল টাইপ ও সাইজ কনফিগার করে নেবেন যার যার দরকার মতোন ।
এর পরের ট্যাবটি আপনি কোথায় ব্যাকআপ রাখবেন সেটা সিলেক্ট করার জন্য ।
আমি একটা এক্সটারনাল ড্রাইভে রাখছি এটা যেটার নাম ব্যাকআপ । এছাড়া আপনি যে ড্রাইভে কাজ করেন সেখানেই বা সিকিউর শেল বা এফটিপির মতো রিমোট জায়গাতেও ব্যাকআপ করতে পারেন ।
পরবর্তী ট্যাবে ব্যাকআপ সিডিউল ঠিক করার অপশন পাবেন ।
আমি পরামর্শ দেবো প্রতিদিন আপনি একটি সময়ে ব্যাকআপটা অটোমেটেড করে রাখুন । এই ব্যাকআপ প্রসেস খুবই দ্রুত ও খুব কম রিসোর্স নেয় । আপনি টের পাবেন না কখন এটা ব্যাকআপ করছে ।
এরপর শেষ ট্যাবে আপনি পাবেন পুরনো ব্যাকআপ কিভাবে ডিলিট করে শুধু আপডেটেডটাই রাখবেন সেটা সিলেক্ট করার অপশন পাবেন ।
এতে আমি লগারিদমিক সিলেক্ট করছি । এটাতে পুরোনো ব্যাকআপ ডিলিট না করে নতুন আপডেট গুলো আলাদা আলাদা করে ব্যাকআপ নেবে । অন্য অপশনটাতে পুরোনো ব্যাকআপ ডিলিট করে তারপর নতুন ব্যাকআপ নেবে । ডিলিট করে আবার নতুন করে ব্যাকআপ নেবার সময় পাওয়ার চলে গেলে কি হবে আমি নিশ্চিত না । একারনে এটা না সিলেক্ট করতেই পরামর্শ দেবো । এছাড়া লগারিদমিক অপশনটা দ্রুত কাজ করবে কারন প্রথমবার আমার ল্যাপটপে এটা একটু সময় নিয়ে দেড় গিগার একটি পার্টিশন ক্রিয়েট করেছে । কিন্তু পরবর্তী ব্যাকআপ ফোল্ডারটা তৈরী করেছে মাত্র সাড়ে তিনশো মেগাবাইট । সিম্পল কাটঅফে প্রতিবারই প্রথমে পুরোনোটা ডিলিট করবে তারপর নতুন করে দেড় গিগাবাইট ব্যাকআপ নেবে যেটা সময়সাপেক্ষ ও বাংলাদেশের মতো পাওয়ার সিস্টেমে ঝুকিপূর্ন ।
এই সব গুলো কনফিগারেশন সেট করে সেইভ করুন । তারপর ব্যাকআপ নাউ ক্লিক করুন । একটা ব্যাকআপ শুরু হবার কনফারমেশন আসবে । সেটাতে ক্লোজ ক্লিক করুন । একটু পর চেক করুন ব্যাকআপ ফোল্ডার ।
ব্যাকআপ শেষ হলে আপনি যে ড্রাইভে ব্যাকআপ রাখছেন সেখানে একটা ফোল্ডার পাবেন । এর মধ্যে আপনি একটা files.tgz ফাইল পাবেন । এই ফাইলটা আপনার ডকুমেন্ট সাইজের ওপর নির্ভর করবে । এই ফাইলটা ৪গিগার বেশী হলে এটা FAT ফাইল সিস্টেমে ক্রিয়েট হবে না । এজন্য আপনার দরকার NTFS বা এরকম কোন ফাইল সিস্টেমে ড্রাইভ ফরম্যাট করা যাতে ৪গিগার বেশী ফাইল সেইভ করা সম্ভব হয় ।
কোন কারনে আপনার ব্যাকআপ রিস্টোর করার দরকার হলে এসব্যাকআপে খুব সহজেই আপনি ব্যাকআপ রিকোভার করতে পারবেন । প্রথম আপনার মেন্যুবার থেকে সিস্টেম > এ্যাডমিনিস্ট্রেশন > সিম্পল ব্যাকআপ রিস্টোর এ ক্লিক করতে হবে ।
তারপর রুট পাসওয়ার্ড দিলে আপনি ঠিক এরকম একটা উইন্ডো পাবেন । এখানে রিস্টোর ক্লিক করলেই ব্যাকআপ রিস্টোর হয়ে যাবে ।
আপনি ইচ্ছা করলে এই ব্যাকআপ ভিন্ন নামের ফোল্ডারেও রিস্টার করতে পারবেন । এরজন্য আপনাকে রিস্টোর এ্যাজ ক্লিক করতে হবে ।