'নির্যাতন হজম' শেখানো হয় জেএমবি সদস্যদের
র্যাব-পুলিশকে বিভ্রান্ত করা ও নির্যাতন হজম করার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)- এর সদস্যদের।
গত ১ নভেম্বর রাজধানী থেকে জেএমবির বর্তমান প্রধান সাইদুর রহমানের স্ত্রী নুরুন্নাহার হিমু ও আত্মীয় মিমিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব- ৩।
তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কাগজ, চিঠি ও বই উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যেই লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায় এসব কৌশল ও নির্দেশাবলী।
কৌশলের মধ্যে রয়েছে- র্যাব-পুলিশ ও জনগণের সন্দেহ এড়িয়ে নিরাপদে চলাচল, টহলরত পুলিশ র্যাবকে বিভ্রান্ত করা, ধরা পড়ার পরের কৌশল, জিজ্ঞাসাবাদ মোকাবেলা ও নির্যাতন হজম করার পদ্ধতি।
এসব পদ্ধতিতে জেএমবি সদস্যদের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গল্প করতে করতে রাস্তা চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এভাবে নিরাপদ চলাচলের নির্দেশাবলীর মধ্যে আরও রয়েছে- নিরাপদ এলাকায় হাঁটার সময় লম্বা লাইন তৈরি না করে জড়ো হয়ে হাঁটা, জরুরি অবস্থায় তীর চিহ্ন হয়ে হাঁটা যাতে একে অপরকে কভার দিতে পারে।
অন্ধকারে হাঁটার ক্ষেত্রে সবসময় সামনের জনকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, সাধারণ লোকদের সামনে পড়লে তাদের পাল্টা প্রশ্ন করে ব্যস্ত রাখতে হবে।
এ ছাড়া এসব ক্ষেত্রে কানে কানে কমান্ড গোটা বাহিনীতে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীকে মামা হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য কম্পোজ করা নির্দেশাবলী অংশের নাম (পয়েন্ট) দেওয়া হয়েছে 'মামাদের বিভ্রান্ত করা'।
মামাদের বিভ্রান্ত করা...
আইন-শৃঙ্খলারক্ষী সদস্যদের বিভ্রান্ত করতে তাদের ভুয়া তথ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যেন ভবিষ্যতে তারা কোনো তথ্যে গুরুত্ব না দেয়। সঠিক তথ্য দেরি করে দিতে বলা হয়েছে যেন তারা ঘটনাস্থলে দেরি করে পৌঁছায় এবং জনরোষের সম্মুখীন হয়। তাদের টহলের ওপর মেওয়া (বোমা) ফাটানোর কথা বলা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপন নীতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, যাতে অন্যরা নিরাপদ হওয়ার সময় পায়। সহযোগীদের ভুল নাম বলা, প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের নাম বলা, কথা-বার্তায় কৌশলে আইন-শৃঙ্খলারক্ষী সদস্যদের আতঙ্কিত করার নীতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। একই কথা বারবার বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সামান ও মেওয়া (অস্ত্র ও বোমা) সম্পর্কে কোড পদ্ধতির কথা বলে বিভ্রান্ত করার পদ্ধতিও শিক্ষা দেওয়া হয়।
নির্যাতন হজম করার পদ্ধতি হিসেবে রাশিয়ার একজন বিশেষজ্ঞের মন্তব্য তুলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নির্যাতন হজম করার কৌশল হিসেবে নিজেকে মৃত ভাবতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, মৃত মানুষের বোধশক্তি নেই, শত প্রশ্ন করলেও সে কোনও উত্তর দেয় না।
এরা মিথ্যা কথা বলে
এসব চিঠি ও নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, জেএমবি'র এসব জঙ্গি ইসলামের কথা বলে। অথচ এরা প্রচুর মিথ্যা কথা বলে। ইসলাম বিস্তারের কথা বলে চললেও এরা বারবারই নিজেদের বাবার দেওয়া আসল নাম লুকিয়ে মিথ্যা পরিচয় দেয়।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ইসলামের পথে চললেও এদের অনবরত নির্বিকারে মিথ্যা বলার বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
ক্যামোফ্লেজ, কাভার ইত্যাদি সম্বন্ধে তাদের নির্দশনাবলীতে বর্ণনা রয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মামুন মাহমুদ ফিরোজ চৌধুরী বলেন, "আমরা এখনও তাদের (হিমু ও মিমি)কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তাই তাদের মুখ থেকে খুব বেশি কিছু শুনতে পারিনি।"
তিনি বলেন, "যারা মানুষ খুন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চায় তারা কতোটা নির্মম হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এরা ইসলামের কথা বললেও নিজেরাই ইসলামের বিধান মানে না।"
দেশের বিভিন্নস্থানে এদের অনেকেই একাধিক বিয়ে করেছেন এবং কারও বিয়েরই কোনও কাবিননামা নেই বলে তিনি জানান।
সূত্রঃbdnews24.com