somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র টিফাচুক্তি কিংবা দিন বদলের পয়লা গান

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিফা চুক্তি (Trade and Investment Framework Agreement বা TIFA) বিষয়ে বেশ অনেকদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর কথা-বার্তা চলছে। প্রথমে ২০০৩ সালের অগাষ্ট মাসে, এর পর ২০০৪ সালের মার্চ মাসে এবং সর্বশেষ ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে টিফা চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনা চলে। আওয়ামী সরকার সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই টিফা চুক্তি নিয়ে আবারও নতুন করে কথা বার্তা শুরু হয়। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী মার্কিন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী অব স্টেট রিচার্ড বাউচার বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশে বাউচারের অন্যতম এজেন্ডা হলো এই টিফা চুক্তি। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির কাছে টিফা চুক্তির বিষয়ে বর্তমান সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ, ৪ ফেব্রুয়ারী তিনি আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ(অ্যামচেম) এর মাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় বলেছেনঃ ‍"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) হওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। এখন মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়। টিফা হলে বাংলাদেশী জনগণ উপকৃত হবে ···"। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের এরকম একট চুক্তি হতে যাচ্ছে জনগণের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। বলা হচ্ছে চুক্তি হলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে কিন্তু যে খসড়া চুক্তির উপর ভিত্তি করে আলোচনা শুরু হবে, সেটাই প্রকাশ করা হচ্ছে না। আমরা মনে করি এ ধরনের একটা চুক্তি হওয়ার আগে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন, জনগণের মতামত গ্রহণ প্রয়োজন, প্রয়োজন ব্যপক ভিত্তিতে তার আলোচনা হওয়ার। অথচ সেটা না করে সরকার যেনতেনভাবে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে সম্পূণ অগণতান্ত্রিক একটা চুক্তি। কে জানে এটাই হয়ত এদের দিন বদলের নমুনা !
এটা ২০০৫ সালে তৈরীকৃত TIFA Draft। এইবার তাতে আরো কিছু আর্টিকেল যুক্ত কিংবা বিযুক্ত হয়েছে কিনা তা আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। জানি না আমাদের প্রতি সেই কৃপা এই মহাপরাক্রমশালী ডিজিটাল সরকার করবে কিনা। অথচ এই চুক্তির ডিজিটাল কপি প্রকাশ করে ডিজিটাল আলোচনার মাধ্যমে একটা ডিজিটাল সিদ্ধান্ত নেয়া কতই না সহজ ছিল ! ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে চুক্তির সর্বশেষ যে খসড়াটি করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারী মাসের আলোচনার জন্য, সেটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে আমরা এখানে অনুবাদ করছি। আমরা কেন টিফা চুক্তির বিরোধীতা করছি সে বিষয়েও কিছু যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করব।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ টিফা চুক্তি(খসড়া)
(৩০ জানুয়ারী ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্ভাব্য Trade and Investment Framework Agreement
বা TIFA চুক্তির খসড়া)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-
১) দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন ও সহযোগিতার চেতনা উন্নত করার আকাঙ্খা পোষণ করে;
২) ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এর মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের বৃহত্তর কল্যানের জন্য কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ;
৩) উভয় দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক আন্ত:সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার আকাঙ্খা পোষণ করে;
৪) আন্তর্জতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আকাঙ্খা পোষণ করে;
৫) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অবাধ পরিবেশ তৈরীর গুরুত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করে;
৬) উভয় পক্ষের জন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধি লাভজনক এবং সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উভয় পক্ষকেই এইসব সুফল থেকে বঞ্চিত করে- এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি প্রদান করে;
৭) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায়(WTO) উভয় দেশের সদস্য পদের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে এবং WTO এর প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি Marrakesh Agreement এবং অন্যান্য চুক্তি ও সমোঝাতা এবং এর সাথে সম্পর্কিত ও এর পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় থাকা অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট ইত্যাদির আওতার মাঝে প্রত্যেক পক্ষের নিজস্ব অধিকার ও বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলোকে লক্ষ্য রেখে;
৮)প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাণিজ্য বিকাশ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করা ইত্যাদির জন্য দেশী এবং বিদেশী ঊভয় ধরণের বেসরকারী বিনিয়োগের আবশ্যিক ভূমিকার বিষয়টিকে স্বীকৃতি প্রদান করে;
৯) দুই দেশের মধ্যকার বেসরকারী খাতের কণ্ট্রাক্ট কে উৎসাহিত করা এবং সুবিধাদি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে;
১০) বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সমস্যাগুলোর যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের আকাঙ্খাকে স্বীকৃতি প্রদান করে;
১১) বিনিয়োগ বিষয়ে পারস্পরিক অনুপ্রেরণা এবং সংরক্ষণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাঝে মার্চ ১২, ১৯৮৬ সালে স্বাক্ষরকৃত চুক্তির (Bilateral Investment Treaty) স্বীকৃতি প্রদান করে;
১২) এই চুক্তি প্যারাগ্রাফ ১১ তে উল্লেখিত চুক্তির আওতায় উভয় পক্ষের অধিকার ও বাধ্যবাধকতাগুলোকে অস্বীকার করে না;
১৩) দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক ও উভয়ের অর্থনীতিতে সেবা খাতের বাণিজ্য বৃদ্ধির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে স্বীকৃতি প্রদান করে;
১৪) উভয় দেশের বাজারে প্রবেশের সুবিধাদি বৃদ্ধি করার জন্য অ-শুল্ক বাধা দূর করার প্রয়োজনীয়তা এবং এর ফলে পারস্পরিক সুফল পাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখে;
১৫) বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার বা intellectual property rights (Trade-Related Aspects of Intellectual (Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS) বিষয়ক চুক্তি বা অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি রক্ষার প্রচলিত নীতি ) এর পর্যাপ্ত এবং কার্যকর প্রয়োগ এবং সুরক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে।
১৬) প্রত্যেক দেশের নিজ নিজ শ্রম আইনের পর্যাপ্ত ও কার্যকর প্রয়োগ এবং সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত শ্রমিক ব্যবস্থাপনা (labor standards) আরও ভাল ভাবে মেনে চলা গুরুত্ব স্বীকার করে;
১৭) টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক এবং পরিবেশবিষয়ক নীতি মালা নিশ্চিত করতে ইচ্ছা পোষণ করে;
১৮) আকাঙ্খাকা পোষণ করে যে এই কাঠামোগত চুক্তি (Framework Agreement ) দোহা উন্নয়ন এজেন্ডা সফলভাবে পরিপূর্ণ করার লক্ষে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করার মাধ্যমে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করবে; এবং
১৯) উভয় দেশের বাণিজ্য উদারীকরণ ও নিজেদের মধ্যকার বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দ্বি-পাক্ষিক প্রকৃয়া প্রতিষ্ঠা উভয় দেশের জন্য লাভজনক- এই বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখে।
এ লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিম্নোক্ত বিষয়ে একমত পোষণ করছেঃ

আর্টিকেল একঃ
চুক্তিকারী পক্ষদ্বয় এই চুক্তির আওতায় নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা খাত সম্প্রসারিত করবে। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চাহিদা মোতাবেক সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের লক্ষ্যে পণ্য ও সেবা খাত অধিকতর নিরাপদ ও দ্বি-পাক্ষীয় বাণিজ্য সহজতর করার উদ্দেশ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল দুইঃ
চুক্তিকারী পক্ষদ্বয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি ‘কাউন্সিল’ গঠন করবে। কাউন্সিলে দুই দেশেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে। বাংলাদেশ পক্ষের সভাপতি থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী হবে United States Trade Represntative (USTR)। দুই পক্ষই তাদের যথাযথ পরিস্থিতি ও প্রয়োজনানুযায়ী সরকারের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে। কাউন্সিল নিজ কাজের সুবিধার্থে ঐকমত্য সহকারে অথবা আলাদাভাবে Joint Working Group প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
আর্টিকেল তিনঃ
কাউন্সিলের উদ্দেশ্যাবলী হবে নিম্নরূপঃ
১· বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্র সনাক্তকরণ এবং যথাযথ ফোরামে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
২· চুক্তির আওতার বাইরে বিশেষ বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগ ক্ষেত্রে পক্ষদ্বয়কে চুক্তির নিয়মাবলী অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা।
৩· দ্বি-পাক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাধাসমূহ চিহ্নিতকরণ ও অপসারণ
৪· কাউন্সিলের সাথে যুক্ত বিষয়ে চুক্তিকারী পক্ষদ্বয়কে যথাযথ ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টর থেকে প্রয়োজনীয় উপদেশ গ্রহণে সাহায্য করা।
আর্টিকেল চারঃ
দ্বি-পাক্ষীয় এই চুক্তির আওতার বাইরে কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে কাউন্সিল পক্ষদ্বয়ের যে কোন একটির অনুরোধে সুবিধাজনক সময়ে ও স্থানে আলোচনায় বসতে পারে। কোন অবস্থাতেই কোন পক্ষ এককভাবে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না যা দ্বি-পাক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আর্টিকেল পাঁচঃ
এই চুক্তি অভ্যন্তরীণ যে কোন অধিকার ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত যে কোন এক পক্ষের পূর্বনির্ধারিত কোন আইনের কিংবা তৃতীয় কোন এক পক্ষের সাথে করা চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারবে না।
আর্টিকেল ছয়ঃ
চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকেই এটা দুই দেশে কার্যকর বলে গণ্য করা হবে।
আর্টিকেল সাতঃ
এই চুক্তি দ্বি-পাক্ষীয় সম্মতিতে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কিংবা এক পক্ষ দ্বারা অপর পক্ষকে ছয় মাসের পূর্ব নির্ধারিত নোটিশ ব্যতিরেকে, যথাশক্তিতে বলবৎ থাকবে।
সূত্রঃ
Click This Link

আমরা মনে করি টিফা চুক্তিকে সামনে রেখে বেশ কিছু বিষয়ে কিছু প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন, যেমনঃ বাংলাদেশের মত একটি দেশ বহুপাক্ষিক চুক্তির বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর মত একটি পরাশক্তির সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে যাবে কি যাবে না, যদি যায় তাহলে তার মূল উদ্দেশ্য ও ভিত্তি কি হবে, সে সব চুক্তি করার প্রক্রিয়া কি হবে, জনগণের মতামত কিভাবে মূল্যায়িত হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। আপাতত চুক্তির খসড়া বিষয়ে কয়েকটি কথা বলে রাখা জরুরী মনে করছি:

১) আর্টিক্যাল ৮, ৯ ও ১৩ মিলিয়ে পড়লে বোঝা যায় বাংলাদেশের সেবা খাত মার্কিন বেসরকারী পুজির বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, জ্বালানী, বন্দর, ডাক ও যোগাযোগ খাত এমন শক্তিশালী হয়ে যায়নি যে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে। এই সব সেবা খাতে আমাদের মোট শ্রম শক্তির ২১.৪০ ভাগ নিয়োজিত এবং মোট দেশজ উতপাদনের ৪১.৩৭ ভাগ আসে এখাত থেকে। টিফা চুক্তি হলে এসবই চলে যাবে মার্কিন পুজি-বিনিয়োগ কারীদের হাতে, এদের মুনাফার স্বার্থে কাজ হারাবে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক।

২) ১৪ নং পয়েন্ট এর মানে হলো বাংলাদেশ এবং আমেরিকার বাজার পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া। এর আগের বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুসারে আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের মতো স্বল্পন্নুত দেশ গুলোকে বিশেষ ব্যাবস্থায় ৯৭% বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা। কিন্তু আমেরিকা ৩% এর সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের রপ্তানী পণ্যের উপর বিভিন্ন অ-শুল্ক বাধা আরোপ করে রেখেছে। এখন এই ৩% বাজার সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশকে ১০০% বাজার খুলে দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের মত একটি দেশ তার উদীয়মান শিল্পগুলোকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন অ-শুল্ক বাধা আরোপ করবে এটাই স্বাভাবিক। আজকের শিল্পন্নোত দেশগুলো এ অবস্থানে এসেছে কিন্তু বাজার সংরক্ষণের নীতির মাধ্যমেই।নিজেরা যে পথ অবলম্বন করেছে, বাংলাদেশের মত দেশকে তারা তার উল্টোটি করতে বাধ্য করছে।আমরা মনে করি বাজার উন্মুক্ত করে দেযার কোন চুক্তি বাংলাদেশের করা মানে হলো নিজের পায়ে কুড়াল মারা।

৩) ১৫ নং পয়েন্ট হলো টিফা চুক্তির মধ্যে ট্রিপস চুক্তির কাজ আদায় করে নেয়া। অথচ বাংলাদেশ সহ অন্যান্য এলডিসি দেশগুলো ডব্লিউ টি ও এর আওতায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সম্পর্ক আইনের আওতার বাইরে থাকার সুযোগ পেয়েছে। আর ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো পেয়েছে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। টিফা চুক্তি সেই সব বহুপাক্ষিক চুক্তির তুলনায় অগ্রাধিকার পাওয়ার ফলে বাংলাদেশ বরং আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পরিস্কার বলে দেয়া যায় টিফা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস, কম্পিউটার-সফ্টওয়ার খাত সহ( নীল ক্ষেত তো বটেই) বিভিন্ন শিল্প আমেরিকার কম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির বহন করতে করতে দেউলিয়া হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এর বিষয়ে আরও কিছু কথা বলে নেয়া দরকার। আমরা মনে করি, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এর ধারনাটাই বিরাট এক লুটপাটের পরিকল্পনা। কে কবে কোন জিনিস নিজের একক জ্ঞানে আবিস্কার করেছে? আজকে কোন একটা যন্ত্র বা কৌশল যে কোম্পানী আবিস্কার করছে তার পেছনে আছে হাজার বছরের মানুষের নানা আবিস্কারের অবদান- বিজ্ঞানের যে সূত্র, যে প্রকৃয়া তারা ব্যবহার করছে,তা নিউটন, আইনস্টাইন, গ্যালিলিও তো বটেই, অসংখ্য সাধারণ মানুষের এবং গোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনের চর্চা এবং অভিজ্ঞতার ফলস্বরুপ পাওয়া জ্ঞান- তাহলে এগুলো কিভাবে কারও ব্যাক্তিগত ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? যারা একদিকে এই সব বুদ্ধিবৃত্তিগত সাধারণ সম্পদ ব্যবহার করবে, নিমগাছের প্যাটেন্ট করবে, বাসমতি চালের পেটেন্ট করবে, আদিবাসীদের ব্যবহ্রত তুলার প্রজাতি ব্যাবহার করে বিটি কটন নাম দেবে, মানুষের যুগ যুগের ভেষজ ও আয়ুর্বেদীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ওষুধ তেরী করবে আর আমরা এসব আমাদের মত করে ব্যবহার করতে গেলেই বলবে চুরি হয়ে গেল বুদ্ধি বৃত্তিক সম্পদ, এর চেয়ে অদ্ভুদ ও হাস্যকর কথা আর কিছু হয়না।


৪) ১৬ এবং ১৭ নং পয়েন্টের শ্রম আইন এবং পরিবেশ বিষয়ক নীতিমালা আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও এগুলোর মাধ্যমে মূলত নীতিগত ভাবে আমেরিকা তার বাজার যেসব ক্ষেত্রে খুলে দেবে, কার্যক্ষেত্রে সে সব খাতে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে বাধা আরোপে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত তৈরী করবে। যে দেশ একবছরের মধ্যে বিনা নোটিশে লাখ লাখ শ্রমিক ছাটাই করাটা ব্যাবসায়ির স্বাধীনতা বলে গণ্য হয় এবং যে দেশ কোন বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তি মেনে নেয় না, সেই আমেরিকার মুখে শ্রম আইন ও পরিবেশ বিষয়ক নীতি মালার কথা ভুতের মুখে রাম নাম এর মতই শোনায়।

কিছু উদাহরণ:
থাইল্যান্ড টিফা চুক্তি করে ২০০২ সালের অক্টোবরে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই থাইল্যান্ডকে বাধ্য করা হতে থাকে আমেরিকার কর্পোরেট মনোপলির স্বার্থে এর বিভিন্ন সেবা খাত বেসরকারী করে দিতে। Electricity Generating Authority of Thailand (EGAT) বেসরকারী করণের উদ্যোগ নেয়া হয়। শুধু তাই নয়, EGAT বিক্রির পরমর্শক দের মধ্যে অন্যতম কর্পোরেশন Morgan Stanley, Citigroup and JP Morgan Chase and Co. অন্যান্য রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান যেমন Metropolitan Waterworks Authority, Provincial Waterworks Authority, the Government Pharmaceutical Organization, the Port Authority of Thailand, the Expressway and Rapid Transit Authority of Thailand ইত্যাদি বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। জনগণের তীব্য আন্দলন সংগ্রাম এর কারণে এগুলো এখন্ও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ১৯৯৯ সাল থেকে থাইল্যান্ড জেনিটিক্যালী ইঞ্জিনিয়ারড বীজ আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মুক্ত বাণিজ্যের নামে মনসান্টোর বিটি কটন আর রাউন্ড আপ রেডি কর্ন থাইল্যান্ডের বাজারে ঢুকানোর জন্য আমেরিকা ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করছে। আবার ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এর আওতায় থাইল্যান্ডের সুগন্ধি চাল জেসমিন এর ও পেটেন্ট করার চেষ্টা চলে। আবার শ্রীলঙ্কার সাথে ২০০২ সালে টিফা চুক্তির সময় আমেরিকা গার্মেন্টস পণ্যের কোটা মুক্ত সুবিধার কথা বললেও বাস্তবে তা না দেয়ার জন্য নানান শর্ত চাপিয়ে দেয়-যেমন রুলস অব অরিজিনের এমন শর্ত যে শ্রীলঙ্কার উৎপাদিত গার্মেন্টস পন্য তেরী হতে হবে আমেরিকান ফ্যাব্রিক্স ব্যবহার করে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস বাস্তবায়ন ইত্যাদি। ২০০৩ সালে পার্লামেন্ট এ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস সম্পর্কিত আইন পাশ করতে গেলে তীব্র বাধার সম্মুখীন হয় এবং এক পর্যায়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয় এবং আদালত মামলা কারীর পক্ষেই রায় দেন। এরকম উদাহরণের শেষ নেই, যেখানেই টিফা স্বাক্ষরতি হয়েছে সেখানেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে, অবিলম্বে প্রতিরোধ করা না গেলে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোন কারণ দেখছিনা।



১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×