somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬২

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পান্ডবের নিকট হিড়িম্বার আগমনঃ


নিশাচরী হিড়িম্বা দুর থেকে ভীমকে দেখতে লাগলো। ভীমের সুন্দর দেহ ঘন ঘন অবলোকন করে হরষিত হল। পাহাড়ের মত উচ্চ, শালগাছের তেজী চারার মত তেজ, চাঁদের মত মুখ, পদ্মের মত চোখ, সিংহের বিক্রম, হাতদুটি হাতির মত বলশালী, শঙ্খের মত গম্ভীর স্বর, পাখির ঠোঁটের মত নাক – ভীমের শরীরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সে অনঙ্গ(মদন) বাণে বিদ্ধ হল।

হিড়িম্বা চিন্তা করলো- এমন সুন্দর রূপ ইহলোকে যক্ষ–রক্ষ-মানুষের মধ্যে সে দেখেনি।
সে ভাবল – আমি ভাগ্যবতী আজ বিধি এঁনার সাথে আমায় মেলালেন। এঁনাকেই আমি স্বামীরূপে বরণ করব। ভাই আমার দুরাচারী। এমন সুন্দর মানুষকে মেরে মনের সুখে খেতে চায়! একে আমি বাঁচাব, স্বামীরূপে লাভ করে চিরকাল এর সাথে সুখে কাটাব।


-এতসব কামনা করে কামরূপা নিশাচরী হিড়িম্বা দিব্যরূপে সুন্দরী নারী হল। পূর্ণচন্দ্রের মত তার মুখটি হল, নয়ন হরিণের মত চঞ্চল, ভারি স্তন, সুগঠিত স্থূল নিতম্ব। ভুরুটি কামে ধনুকের মত বাঁকা, তিলফুলের মত সুচারু নাসিকা, কানদুটি শকুনিকেও হারায়, উরু দুটি হস্তির মত যেমন বলশালী তেমনি কলাগাছের মতই সুন্দর, মত্ত হস্তিনীর মত তার চলন। চাঁপাফুলের মত তার শরীরের মোহিত করা অঙ্গ শোভা, দেখে মুনিরাও মোহিত হবেন।
সলজ্জ ভাবে সে ভীমের পাশে এসে বসল ও কোকিলের মত মৃদু সুকন্ঠে বলল – কে তুমি, কোথা থেকে, কি কারণে এ বনে এসেছো! দেবতার মত প্রায় দেখতে এই চারজন যারা মাটিতে ঘুমাচ্ছে তারাই বা কে হন! নিদ্রারতা এই ঘন শ্যামা নিরুপমা নারীই বা তোমার কে হন!
এই ঘনবনে সবাই অচেতনে নিদ্রা যাচ্ছেন- যান এটি একটি রাক্ষসের বাসস্থান। তোমাদের একটুও ভয় নেই, মনে হচ্ছে খুব দু;সাহস! এই বন পাপাচারী ভয়ঙ্কর হিড়িম্ব রাক্ষসের। সে আমার ভাই হয়। আমাকে এখানে তোমাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। মানুষের শত্রু সে, মাংসের লোভী - তোমাদের খেতে চায়।
তোমার দেহ সৌন্দর্য দেখে আমার কাম ভাব জাগ্রত হয়েছে, তোমাকে স্বামীরূপে বরণ করতে চাই। আমি মিথ্যে কথা বলছি না, স্বামী! রাক্ষসের থেকে সাবধান হও। তুমি যদি আজ্ঞা কর এক্ষুনি তোমায় অন্যস্থানে নিয়ে যাই।

হিড়িম্বার কথা শুনে মেঘের মত গম্ভীর স্বরে ভীম বলেন – তোমায় সুলক্ষণী দেখতে, কিন্তু অনীতির কথা বললে যা সভ্য মানুষের মত নয়। মা আর ভাইদের ছেড়ে এক নারীর সাথে চলে যাব এমন দুরাচারী আমি নই। সকলকে রাক্ষসের মুখে ফেলে আমি তোমার সাথে সুখে বাস করবো কামশরে অজ্ঞান হয়ে এমন কাজ করতে, এমন বাক্য বলতে তোমার লজ্জা হল না!

এত শুনে মৃদু স্বরে যোড়হাতে হিড়িম্বা সুন্দরী বলে –আজ্ঞা করুন মহাশয়! আপনার যারা প্রিয় আমি তাদের প্রাণ রক্ষা করব। আমার দুষ্ট ভাই এখনই এখানে আসবে, তাই আমি আপনাদের সাবধান করছি। এনাদের সবাইকে জাগিয়ে আপনারা আমার পিঠে উঠে বসুন। আমি আপনাদের অন্য নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাব।


ভীম বলেন –আমার মা ও ভাইরা সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, তাদের কেন বিরক্ত করব। তোমার ভাইকে! তাকে আমি চিনি না, ভয়ও পাই না। কীটের মত আমি রাক্ষসদের মারি। দেবতা-গন্ধর্ব-যক্ষ কেউ আমার পরাক্রমের সামনে দাড়াতে পারবে না। হে সুন্দরী সুলোচনা, আমার হাতদুটি দেখ, যমও এদের ভয় পান। তুমি এখানে থাকবে কি যাবে তা তোমার ইচ্ছে। তবে ভাইকে গিয়ে পাঠাতেও পার। দেখি সে আমার কি করতে পারে।

ভীম ও হিড়ম্বা যখন আলাপ করছেন তখন ওদিকে বোনের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে প্রচন্ড রেগে হিড়িম্ব রাক্ষস সেখানে উপস্থিত হল। তার অতি ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে মনে হয় যুগান্ত সামনে দাঁড়িয়ে। ঘোড় গর্জন করতে করতে সে এগিয়ে এলো।

ভাইকে এভাবে আসতে দেখে হিড়িম্বা সুন্দরী স্তব্ধ হয়ে গেল। সকরুন স্বরে ভীমকে বললো –দেখ আমার ভাই প্রচন্ড রেগে দুরন্ত বেগে আসছে। সে অতি নিষ্ঠুর, নির্দয়। অনেক মানুষ খেতে দেখেছি তাকে। তুমি আর দেরি করো না। এটা এই রাক্ষসেরই ভূমি। আজ্ঞা কর প্রভূ, আমার পিঠে করে তোমাদের নিয়ে আকাশে উড়ে যাই, যেখানে বলবে নিমেষে সেখানে নিয়ে যাব-আমি মায়াবিনী।

হিড়িম্বের রাগ ও হিড়িম্বার উদ্বেগ দেখে ভীম হেসে বললেন- স্থির হও রাক্ষসনন্দিনী, ভয় করো না, তুমি বসে আমার কৌতুক দেখ। আসুক তোমার ভাই, মুহুর্তে সে পতঙ্গের মত প্রাণ দেবে। আমি দুঃখিত যে কিছুক্ষণ পর তোমায় ভাতৃশোকে মুজ্ঝমান হতে হবে ভেবে।

এই ভারত সঙ্গীত রস শ্রবণ করলে বাড়ে পুণ্য যশ, এটি শুভ ও পরম পবিত্র। কলির কলুষতা নাশ করতেই কাশীরাম রচনা করলেন আদি পর্বে পান্ডব চরিত্র।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬১
Click This Link
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×