somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৮

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন .......পঞ্চপান্ডবরা গৃহে উপস্থিত হলে মা কুন্তী ঘরের ভিতর থেকে বললেন –যা এনেছ তা পাঁচভাই ভাগ করে নাও।...পরে ভুল বুঝে বিলাপ করতে থাকেন.....দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদীর শোকে অভিভূত...পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে প্রবোধ দেয়...রাজা দ্রুপদ পুরোহিত পাঠিয়ে পঞ্চপাণ্ডবদের আমন্ত্রণ জানান....যুধিষ্ঠির বলেন মায়ের বচনানুসারে দ্রৌপদীকে পাঁচভাই বিবাহ করতে চান....যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে দ্রুপদ চিন্তিত হন..]



দ্রুপদ রাজার নিকট মুনিগণের আগমনঃ

দ্রুপদরাজ যখন তার কন্যার বিবাহ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত, সে সময় অন্তর্যামী সর্বজ্ঞ মুনিরা পান্ডবদের বিবাহের উদ্দেশ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন।
শিষ্যসহ মহাতপস্বী পরাশর মুনি [ব্যাসদেবের পিতা ও ধর্মশাস্ত্রের সঙ্কলয়িতা],
জমদগ্নি [সপ্তর্ষির অন্যতম, পরশুরামের পিতা, রেনুকার স্বামী],
জৈমিনি [মীমাংসাদর্শনপ্রণেতা মুনি(এঁনার নাম বজ্রপাত নিবারক, এই বিশ্বাসে বজ্রপাতের সময় লোকে এই মুনির নামকীর্তন করেন)],
শ্রী অসিত দেবল [দক্ষকন্যা বসুর আট পুত্র অষ্টবসুর অন্যতম প্রত্যুষের পুত্র],
কৌন্ডমুনি মান্ডব্য [যম দ্বারা ভুল বশত শাস্তি পান। এঁনার শাপে যম বিদুর রূপে জন্মান।(কথাচ্ছলে মহাভারত-৪১ Click This Link)],
ভার্গব [ভৃগুবংশজাত, পরশুরাম],
গর্গ মুনি [ইনি কৃষ্ণের নামকরণ করেন],
অগস্ত্য [এঁনার স্ত্রী লোপামুদ্রা, যিনি বিদর্ভরাজকন্যা, তপস্বিনী। এঁদের পুত্র দৃঢ়স্যু। অগস্ত্যমুনি বিন্ধ্যপর্বতের গুরু],
দুর্বাসা [অত্রি ও অনসূয়ার সন্তান। অল্পে রেগে যান ও অভিশাপ দেন। ঔর্বমুনির কলহপ্রিয় কন্যা কন্দলীকে বিবাহ করেন। একশত দোষ ক্ষমা করে এবং পরে তাকে ভষ্ম করলে ঔর্বমুনি শাপ দেন দর্পচূর্ণের],
লোমশ [সারা দেহ লোমে ঢাকা। ইনি বিমানে করে ঘুরতেন। ইনি যুধিষ্ঠিরকে অর্জুনের ইন্দ্রলোকের খবর জানাতেন],
জরদ্গব, আঙ্গিরস, দ্বৈপায়ন প্রমুখ এত মুনি এলেন যে বর্ণনা করা যায় না।

দ্বারী(দারোয়ান) এসে দ্রুত দ্রুপদকে সে কথা জানালে রাজা উঠে এসে দ্বার থেকে মুনিদের নিয়ে আসেন। ভূমিষ্ট হয়ে সকলকে প্রণাম জানান।
সকলকে বসার আসন দিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য করে দীপ-ধূপ-গন্ধে পূজা করে বলেন –আমি খুবই ভাগ্যবান, আপনারা কন্যার বিবাহের কারণে উপস্থিত হয়েছেন। আমার এই বিবাহ নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিয়েছে। আপনারা অবশ্যই এর বিধান ঠিক করে আমাকে চিন্তা মুক্ত করবেন।

মুনিরা বলেন –আমরা আর কি ঠিক করব। বিধাতা পূর্ব থেকেই সব ঠিক করে রেখেছেন। কৃষ্ণার পঞ্চপতি বিধির লিখন। সুরভির শাপ ও পশুপতি শিবের বরে সতী কৃষ্ণা পঞ্চপতি পাবেন।
মুনিদের মুখে একথা শুনে দ্রুপদ স্তব্ধ হলেন।

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে –এমন তো সংসারে দেখা যায় না। লোকে যা করে না, আমরা কি ভাবে তা হতে দিতে পারি! এই বিবাহ দিলে লোকে উপহাস করবে, নিন্দা করবে।

যুধিষ্ঠির বলেন –এত সব জানি না। মায়ের বচন আমাদের কাছে বেদবাণী।
মুনিদের কাছে পূর্বে শুনেছি জটিল নামে এক সর্বশাস্ত্র জ্ঞানী ব্রাহ্মণ ছিলেন তিনি দ্বিজদের সর্বশাস্ত্র-বেদ-গ্রন্থ-ব্যাকরণ পড়াতেন। তিনি বলেছিলেন -যত শাস্ত্র পাঠ করলাম সার কথা জেনেছি মার আজ্ঞা যত্নে পালন করতে হবে। মনে দ্বিধা রাখা চলবে না-এ বেদের বচন। লোকের থেকে গুরু শ্রেষ্ঠ আর সর্বগুরুর শ্রেষ্ঠ জননী। জননী আমাদের পাঁচজনকে ভিক্ষা ভাগ করতে বললেন। ধর্মাধর্ম কে বোঝে। অধর্মেও ধর্ম আছে, ধর্মও পাপ করেন। অধর্ম কর্মে আমি মন দিতে পারি না। মায়ের আজ্ঞা পালন করতেই আমার মন সম্মত। তাকে আমরা খন্ডন করতে পারব না।

বৃকোদর ভীম বলেন –কার শক্তি এই ধর্মের বিরোধ করে! আমাদের সবার কর্তা যুধিষ্ঠির তিনি যা বলবেন আমরা তাই প্রাণপণে পালন করব। হে পাঞ্চালরাজ আপনাকে অনেক সহ্য করেছি। আপনি তখন থেকে কেবল যুধিষ্ঠিরের কথার বিপরীত বলে চলেছেন। অন্য কেউ হলে আজ তার প্রাণ নিতাম। সম্বন্ধে শ্বশুর তাই গুরুজন ভেবে নিজের ক্রোধানল শান্ত করে নিচ্ছি। লোকে কি বলবে তাতে আমরা ভীত নই। আজ থেকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির যা বলবেন তাই আমাদের কাছে সর্ব শাস্ত্র। দেখি কে তা খন্ডন করতে পারে।

ভীমের গর্জন শুনে কুন্তী বেরিয়ে এসে মুনিদের প্রণাম করেন।
ব্যাসের চরণ ধরে কেঁদে বলেন –আমাকে আমার এই আজ্ঞা থেকে মুক্ত করুন। যুধিষ্ঠিরের কথাই সত্য। আমার বাক্য পুত্রেরা কিভাবে
লঙ্ঘন করবে! সবের মূলে আমিই রয়ে গেলাম।

মুনি বলেন –ভয় ত্যাগ কর। রোদন করো না। তুমি কোন অন্যায় কর নি এবং মাতৃ আজ্ঞাও পুত্রেরা লঙ্ঘন করবে না।

মহাভারতের কথা সুধার সাগর, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন সাধু নর।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৭ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×