somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০১

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - পারিজাত হরণের কথা...নারদ পারিজাতপুষ্প কৃষ্ণকে দিলে তিনি তা স্ত্রী রুক্মিণীকে পরিয়ে দেন... সে কথা শুনে সত্যভামার অভিমান হয়...তিনি আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন, কৃষ্ণ এসে তার মানভঞ্জন করেন এবং পারিজাত বৃক্ষ উপহারের আঙ্গিকার করেন...শ্রীকৃষ্ণের সুরপুরী গমন করেন...শ্রীকৃষ্ণের সাথে ইন্দ্রের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়...]



মহাদেবের যুদ্ধস্থলে গমনঃ

গোবিন্দ ও ইন্দ্রের সেই যুদ্ধের যেন আর শেষ নেই। ভয়ংকর শব্দ শুনে শুনে ত্রিলোকের লোক হতজ্ঞান হতে লাগল। দেখে নারদ মুনি চিন্তিত হয়ে ক্ষীরোদসাগরতীরে কশ্যপ মুনির কাছে দ্রুত গেলেন।

নারদ কশ্যপ মুনিকে বলেন –মুনি আপনি কি করছেন! আপনার পুত্র দেবরাজ ইন্দ্রের বড়ই বিপদ। অজ্ঞান হয়ে তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। কৃষ্ণ দয়া করে প্রাণে মারছেন না তাই তাঁর কৃপায় দেবরাজ এখনও বেঁচে আছেন। দেবরাজ তার সব অস্ত্র হেনেছেন। কৃষ্ণ এখনও সংযত আছেন। একবার তিনি সুদর্শন চক্র ছাড়লে ইন্দ্র কিন্তু খন্ড খন্ড হবেন কেউ আটকাতে পারবে না।

শুনে কশ্যপ মুনি চিন্তিত হলেন কি ভাবে এই যুদ্ধ থামাবেন। এঁদের দুজনকে মহাদেব ছাড়া আর কেউ শান্ত করতে পারবে না বুঝে কশ্যপ শিবের স্তুতি শুরু করলেন। কশ্যপের স্তবে তুষ্ট হয়ে ত্রিলোচন হর যুদ্ধ নিবারণ করতে যুদ্ধ স্থানে গেলেন।


একদিকে খগেন্দ্র-উপেন্দ্র, অন্যদিকে গজেন্দ্র ইন্দ্ররাজ, যোগেন্দ্র-মহাদেব বৃষেন্দ্রারূঢ় হয়ে তাদের মাঝে দাঁড়ালেন।

শিব কৃষ্ণকে বলেন –হে শ্রীহরি, শান্ত হয়ে একটু শুনুন। আপনার সঙ্গে কি ইন্দ্র পারেন! আপনিই তাকে দেবরাজ করে স্বর্গে স্থাপন করেছেন। এখন তাকে নিগ্রহ করা আপনার উচিত নয়।

গোবিন্দ বলেন –ইন্দ্র স্বর্গভোগ করেন, করুক। কিন্তু আমায় তো পারিজাত বৃক্ষটি দিতে পারেন! তা উনি দিতে চাইছেন না। তিনি এটি নিজে উপার্জনও করেন নি। ক্ষীরোদসাগর মন্থন করে সুরাসুর সকলে একে তুলেছে। মন্থনের দ্রব্যে সবার ভাগ আছে।
বিশেষ করে বামনাবতারে আমি বামনরূপে তার পরেই জন্মেছিলাম। স্বর্গের যত সুখ সেই ঐরাবত, উচ্চৈঃশ্রবা সব সে ভোগ করছে। আমি সব কিছু থেকে ব্রাত্য। আমি তো কেবল পারিজাত বৃক্ষটি চেয়েছিলাম। তার কি উচিত হল এর জন্য যুদ্ধ করা!

গোবিন্দের কথা শুনে দেবপঞ্চানন-শিব ইন্দ্রের কাছে গেলেন।
ইন্দ্রকে গিরীশ(=গিরি+ঈশ[ঈশ্বর]) শিব বলেন –ইন্দ্র আপনি কি জ্ঞান হারিয়েছেন! জানেন না নারায়ণ পুরুষ-প্রধান! তার সাথে দ্বন্দ্বে আপনার কোন কল্যাণ নেই। আমার কথা শুনুন হে সুরপতি, এ যুদ্ধ বন্ধ করুন। যদুবংশপতি কৃষ্ণ যদি পারিজাত চান তাকে তাই দিয়ে বন্ধুত্ব করুন তার সাথে।

ইন্দ্র বলেন –হে পশুপতি অবধান করুন! ঐরাবত, উচ্চৈঃশ্রবা প্রভৃতি যত যান, বজ্র, শচী, নন্দনকানন, পারিজাত এসব নিয়েই আমার স্বর্গের ইন্দ্রত্ব, আমার ভূষণ। দেবকীকুমার কৃষ্ণ যদি পারিজাত বৃক্ষ নিয়ে নেন তবে আমার স্বর্গের ইন্দ্রত্ব আর কি রইল!


মহেশ বলেন –হরি তো অবতাররূপে খর্ব আপনার চেয়ে। বামনরূপে তিনি তোমার কনিষ্ঠ ভাই, অদিতির উদরে তোমার সহোদর। সেই কনিষ্ঠের অধিকারে নারায়ণ আপনার কাছে তার ভাগ চাইছেন। তাকে পুষ্পরাজ দিয়ে এযুদ্ধ শেষ করুন।

ইন্দ্র বলেন –আপনার বাক্য অমান্য করব না। কৃষ্ণ যদি আমার কনিষ্ঠ ভাই হন তবে জ্যেষ্ঠ ভাইকে যেমন সম্মান করার না করে এমন বলপ্রয়োগ করছেন কেন! এতটুকু মান্য না করে বলে টেনে নিয়ে ভূমণ্ডলে ফেললেন।


এতশুনে গোবিন্দের দিকে তাকিয়ে শিব বলেন –আমাকে দেখে অন্তত ক্রোধ ত্যাগ করুন, হে যদুনাথ! অজ্ঞান হয়ে দেব সুরপতি ইন্দ্র আপনার সাথে যুদ্ধে মত্ত হয়েছেন। আপনিই তাকে ইন্দ্রত্ব দিয়েছেন। বারবার বিপদে তাকে রক্ষা করেছেন। নিজের অর্জিত বৃক্ষ যদি বিষবৃক্ষ হয় তবু তাকে নিজে হাতে নষ্ট করা সমুচিত নয়। পারিজাত পুষ্প নিয়ে যেতে চান যান।
কিন্তু ইন্দ্র সম্পর্কে আপনার জ্যেষ্ঠ ভাই, সে সম্মান তাকে আপনার দেওয়া উচিত। আমার অনুরোধ রাখুন।

নারায়ণ শিব বাক্য স্বীকার করে শিবকে নিয়ে ইন্দ্রস্থানে গেলেন। কৃষ্ণ বিধান মত কনিষ্ঠ হওয়ায় ইন্দ্রকে প্রণাম করলেন।


হৃষ্ট মনে দেবরাজ ইন্দ্র কৃষ্ণের কোলে পারিজাত বৃক্ষ দান করে বলেন –যতদিন আপনি অবনীমণ্ডলে(পৃথিবীতে) থাকবেন ততদিন এই বৃক্ষ আপনার সাথে থাকবে। তারপর পারিজাত বৃক্ষ পুনরায় স্বর্গপুরে ফিরে আসবে।
এই বলে দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গে চললেন।
সত্যভামার দিকে তাকিয়ে ইন্দ্রাণী শচীদেবী হাসলেন।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম কহেন, সাধু সদা তা করেন পান।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০০ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×