somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৭

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - সুভদ্রা হরণের কথা... সুভদ্রার ইচ্ছে রাখতে সত্যভামা কৌশলে তার গন্ধর্ব বিবাহ দিলেন অর্জুনের সাথে ... কৃষ্ণ সভায় অর্জুনকে সুভদ্রার জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলে বলরাম ক্রুদ্ধ হল, তিনি দুর্যোধনকে পাত্র ঠিক করলেন ]

দৈবকী-রোহিণী সহ বলরামের কথাঃ



দিন অবসানে সকল যদুরা যে যার গৃহে ফিরে গেল।

সত্যভামা কৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন –হে প্রাণপতি, ভদ্রার বিবাহের বিলম্ব করছ কেন!

গোবিন্দ বলেন –সখি, কিসের বিবাহ! পার্থের নাম শুনলেই বলরামের অঙ্গ জ্বলে। তিনি দুর্যোধনকে পাত্র নির্বাচন করেছেন। তার কাছে দূতও পাঠান হয়েছে।

শুনে সত্যভামা চমকে ওঠেন।
অধোমুখে মাটিতে বসে পরে বলেন –হে দেব এখন কি হবে! সুভদ্রার কারণে দেখছি অনর্থ ঘটবে। সব শুনে অর্জুন যদি পালিয়ে যান, তাহলে কি ভগিণীর অন্য বরের সাথে বিবাহ দেবে! কিছু না বলে চুপ করে আছ কেন! যদুকুলে কি কলঙ্ক দেবে!

গোবিন্দ বলেন –দেবী, গোল কেন করছ! উতলা হয়ো না, আমি ঠিক উপায় বার করব।

সত্যভামা বলেন –আর বিলম্ব কর না। কেউ যদি সব কথা বলরামকে গিয়ে বলে! সেই লজ্জার ভয়ে আমি কাঁপছি। আর যে মুখ দেখাতে পারব না, জলে ঝাঁপ দিতে হবে। স্ত্রীলোকই স্ত্রীলোকের বেদনার কথা ঠিক ঠিক বুঝবে। আমি আগে গিয়ে শাশুড়িমাকে সব জানিয়ে আসি।

এই বলে সত্যভামা উঠে দেবকীর গৃহে গেলেন।

দেবকীকে ডেকে তিনি বেলন –শুনুন ঠাকুরাণী আমার নিবেদন। কুললজ্জার ভয়ে আমি অস্থির। সুভদ্রা বীর ধনঞ্জয়ের প্রতি আসক্তা হয়ে ভয় দেখাল তাকে না পেলে সে প্রাণ দেবে। সে জন্য আমি দ্রুত তাদের গান্ধর্ব বিবাহ দিলাম। এখন শুনছি তার জন্য অন্য পাত্র দেখা হচ্ছে।

সব শুনে দেবকী দেবী বিস্মিত হলেন। রোহিণীর(বলরামের মা) সাথে বলরামের গৃহে যান।

দেবকী বলরামকে ডেকে বলেন –হে হলপাণি, সুভদ্রাকে অর্জুনের হাতে দিচ্ছ না কেন। রূপে, গুণে, কূলে, শীলে সে ভদ্রার যোগ্য। কুটুম্বে কুটুম্বে সম্বন্ধও হবে।

বলরাম বলেন –মা, সব না বুঝে একথা বলছেন। পাণ্ডবদের অবস্থার কথা সবাই জানে। পার্থ আমাদের কুটুম্বের যোগ্য নয়। অযোগ্য সম্বন্ধে মা সব নষ্ট হয়। সে জন্য দুর্যোধনের কাছে দূত পাঠিয়েছি। সে নিষ্কলঙ্ক সুভদ্রার যোগ্য। তিনলোকে সকলে জানে পাণ্ডবরা জারজ সন্তান। এমন জনকে সুভদ্রার স্বামী করতে চাও!

রোহিণী বলেন –পুত্র, সবাই বিচার করেই পার্থকে নির্বাচিত করেছে। কেন সকলের বাক্য অবহেলা কর। সবাই আমরা চাই অর্জুনের হাতে সুভদ্রাকে সমর্পণ করা হোক। পার্থ সাধু ব্যক্তি, ধর্মশীল, সর্ব গুণে গুণী। তাকে না দিয়ে সুভদ্রাকে অন্যের হাতে দেবে! ক্রোধ ত্যাগ কর পুত্র! তুমি যাই বল কাল সকালেই আমি ভদ্রাকে অর্জুনের হাতে তুলে দেব।

মায়ের কথা শুনে বলরামের ক্রোধে অধর(ঠোঁট) কাঁপে। দুই চোখ রাগে জ্বলতে থাকে।
তিনি ক্রোধের সাথে বলেন –আপনারা বাতুলের(পাগলের) মত কথা বলছেন। সকলে গোবিন্দের মতে মত দিয়ে যাচ্ছে। কৃষ্ণের তো জাতিকুলের কোন বিচার নেই। ভক্তি ভরে যে জন ডাকে, কথা কয়, কোন বিচার না করেই সে তার বন্ধু হয়।
অথচ কিছুকাল আগে তার পুত্রের হাতেই দুর্যোধন তার কন্যা দান করেছে। সেই নব কুটুম্বিতায় কৃষ্ণের সামান্য স্নেহও নেই! আমি তাকে শিষ্য বলে অতি স্নেহ করি, তাই সবাই তার উপর ক্রুদ্ধ। দেখি কার কত ক্ষমতা সুভদ্রাকে অর্জুনের হাতে তুলে দেয়! মা আপনারা যান, আমায় আর কিছু বলবেন না।

বলরামের এত কথা শুনে বিষণ্ণ বদনে দেবকী ও রোহিণী উঠে চলে এলেন।

জন্মেজয় বৈশম্পায়ন মুনিকে বলেন –হে মুনিরাজ, কৃষ্ণের কোন পুত্রকে দুর্যোধন তার কন্যা দিলেন! কই আমায় তো সে কাহিনী বললেন না! সে কাহিনী শুনতে মন চায়।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন শুনেন পুণ্যবান।
................................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৬ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×