somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লেটোর ‘ইউটোপিয়া’!

২৭ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস ইউরোপের দর্শনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী হিসাবে পরিগণিত হলেও তার শিষ্য প্লেটো তাকে ছাড়িয়ে যান। প্লেটোর সাথে তার ‘ইউটোপিয়া’ও বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়। ‘ইউটোপিয়া’ বলতে বুঝায় একটি আদর্শ রাষ্ট্র বা সমাজকে। ‘ইউটোপিয়া’ শব্দটিকে প্রথম পরিচিত করেন বৃটিশ আইনবিদ স্যার থমাস মোর ১৫১৬ সালে তার বই ‘ইউটোপিয়ার’ মাধ্যমে। তবে প্রথম যে আদর্শ রাষ্ট্রের কথা লিপিবদ্ধ পাওয়া গেছে, তা প্লেটোর রিপাবলিক’তে। পরবর্তীতে আদর্শ কোন ব্যবস্থার সমার্থক হিসাবে ‘ইউটোপিয়া’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

প্লেটোর বর্ণিত রাষ্ট্র শ্রেণীবৈষম্যমূলক। তার মতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্তঃ জনসাধারণ, সৈন্যবাহিনী ও অভিভাবকগণ। অভিভাবকদের প্রতি প্লেটোর পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করার মতো। পারিবারিক পরিচয়ের দিক থেকে প্লেটো আসলে অভিজাত শ্রেণীরই একজন।

প্লেটোর মতে অভিভাবকদের সংখ্যা হবে সবচেয়ে কম, প্রথমে তারা বিধায়কদের মাধ্যমে মনোনীত হলেও তারপর স্বাভাবিকভাবে বংশানুক্রমিকভাবে অভিভাবকত্ব লাভ করবে। তবে ব্যতিক্রমকেও স্থান দেয়া হয়েছে, যেমনঃ অধঃস্তন শ্রেণীর কেউ উর্ধ্বতন শ্রেণীতে আসতে পারে, তেমনি অভিভাবক শ্রেণীর কারো সন্তানের যোগ্যতা অসন্তোষজনক হলে তাকে নিম্নশ্রেণীতে নিয়ে আসা হতে পারে। অভিভাবক হিসাবে যোগ্যতা লাভ করার জন্য কঠোর অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত কোন পাপ বা কদর্যতা দেখতে পারবে না, কিন্তু একটা বয়স পর তারা সেসবের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

সংস্কৃতি ভদ্রলোক বানায় আর এই ভদ্রলোকরা সমাজের সবচেয়ে সুবিধাভোগকারী অভিজাত শ্রেণী। এই অভিজাতরা সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদায় উচ্চাসনে আসীন, যদিও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিচারে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নাও থাকতে পারে। কিন্তু প্লেটোর ‘ইউটোপিয়া’তে এই অভিজাত শ্রেণীর শাসন ক্ষমতাও অবাধ।

ইউটোপিয়া নাগরিকদের প্রায় সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, এমনকি পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোকেও। যেমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা কেমন গল্প শুনতে পারবে তার সীমারেখা টানা আছে। উদাহরণস্বরূপ, তাদেরকে কেবল অনুমোদিত গল্প শোনানো যাবে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে, যেসব সঙ্গীত দূঃখ প্রকাশ করে সেগুলা নিষিদ্ধ হবে, অন্যদিকে যেসব সঙ্গীত সাহসিকতা ও মিতাচারের কথা বলবে সেগুলোই কেবল অনুমোদিত হবে। খাবার দাবারের ক্ষেত্রে শুধু রোস্ট ছাড়া অন্যভাবে রাধা মাছ বা মাংস খাওয়া যাবে না, আর শারীরিক প্রশিক্ষণ হবে কঠোর ও অনাড়ম্বর। এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না। সাবালক হবার আগে বালকরা যুদ্ধ দেখবে কিন্তু নিজেরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। খারাপ লোকদের অনুসরণ করা যাবে না, শুধু তাই নয় নারী, দাস বা সমাজের নীচু শ্রেণীর কাউকে অনুসরণ করা যাবে না। বিবাহপ্রথার মৌলিক পরিবর্তন হবে। জনসংখ্যা ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর-কনেকে কোন উৎসবে দল বেঁধে হাজির করা হবে আর তাদেরকে ব্যবহার করা হবে সুপ্রজননের ভিত্তিতে। উদাহরণস্বরূপ, সর্বোত্তম সিরিজগুলো থেকে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক সন্তানের জন্ম দেয়া হবে। জন্মের পরই তাদেরকে পিতামাতার কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হবে, যাতে তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক দানা বাধতে না পারে। এমনকি রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া যৌনমিলনের ফলে জন্ম নেয়া সন্তান অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। মায়ের বয়স ২০-৪০ ও বাবাদের বয়স ২৫-৫৫ এর মধ্যে হবে। যৌনসঙ্গমের স্বাধীনতা কেবল এই সময়ের মধ্যে, কিন্তু তা গর্ভসঞ্চার করলে গর্ভপাত বা শিশুহত্যা হবে বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্র বিবাহের ব্যবস্থা করবে আর তাতে বর-কনের কোন বক্তব্য থাকতে পারে না। সন্তান বাবা মাকে চিনে না বিধায় বাবার বয়সী যে কোন পুরুষকেই বাবা ডাকবে। পিতা ও কন্যার মধ্যে বা মাতা ও পুত্রের মধ্যে সাধারণত বিয়ে হবে না, তবে এই নিয়ম চূড়ান্ত নয়। তবে ভাই-বোনের বিয়ের ক্ষেত্রে চরম নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। তবে প্লেটো নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে সাম্যবাদের প্রয়োগ করতে আগ্রহী ছিলেন, তাদের সমানাধিকারের কথা বলেছেন, বিশেষত রাজনীতির ক্ষেত্রে, তাদের মধ্যে সুষ্পষ্ট পার্থক্য স্বীকার করেই।

প্লেটোর বর্ণনাকৃত রাষ্ট্র ‘ইউটোপিয়া’ বা আদর্শ রাষ্ট্র বলা হলেও সে রাষ্ট্রকে ‘জনগণের জন্য নয়’ বরং ‘রাষ্ট্রের জন্য জনগণ’ বলেই প্রতীয়মান হয়। রাষ্ট্রকে পাওয়া যা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী চরম স্বেচ্ছাচারি একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে। এমনকি রাষ্ট্রের মিথ্যা বলাকে প্লেটো সমর্থন করেছেন, দেখেছেন অধিকার হিসাবে। এরকম একটা মিথ্যা ধারণা যা সে বদ্ধমূল করতে চেয়েছে তা হল, ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন তিনপ্রকারেঃ সর্বোত্তমরা সোনার তৈরী, দ্বিতীয় সারির লোকেরা রূপার তৈরী আর সাধারণ জনতা পিতল ও লোহার তৈরী। জাপানীদেরও আঠারশো শতকের দিকে শিক্ষা দেয়া হত যে পৃথিবীর অন্যান্য অংশের চেয়ে জাপানের সৃষ্টি আগে, আর দুই প্রজন্মের মধ্যে তা জাপানীদের মধ্যে বদ্ধমূল হয় মিথ্যা প্রচারণার ফলে। এই মিথ্যা অহমিকা শেষ পর্যন্ত তাদের পতনের কারণ হয়!

সূত্রঃ
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Utopia
[২] Click This Link

নোট: লেখাটি ইতিপূর্বে সদালাপে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি সেখানে শামস নামে লিখি।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×