শুরুতেই তিন স্তর বিশিষ্ট সতর্কবাণী:
১। টাইটেলেই বলা আছে এটা ভারত স্তুতিমূলক পোষ্ট তাই ভারতের নামে যাদের গায়ে জ্বালা ধরে তারা দুরে থাকুন।
২। আমি বিশেষজ্ঞ নই, এটা নিতান্তই একজন সাধারন মানুষের মনের এলোমেলো কথা, তাই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হতে বিরত থাকুন।
৩। লম্বা পোষ্ট পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই, কমেন্ট করাও জরুরী না। তবে একান্তই যদি কমেন্ট করতে হয় পোষ্ট পড়ে তবেই কমেন্ট করুন।
পাঠক, প্রথমে বন্দে মাতরম গানটি ডাউনলোড করে নিন, আর আপনি আধুনিক ডিজ্যুস টাইপ হলে http://www.youtube.com/watch?v=piWMN_VNg3Y' target='_blank' >জেয় হো গানটি ডাউনলোড করুন, এবারে যেই গানটি ডাউনলোড করেছেন সেটি হাল্কা ভলিউমে চালিয়েদিন, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুব জরুরী।
প্রথমে বাজারের লিষ্ট:
১। পেঁয়াজ
২। রসুন
৩। ডাল
৪। চাল
৫। চিনি
৬। লিষ্ট হবে ইনফিনাইট, কারন কি নেই ভারতীয় আমাদের বাজারে?
একটাদিন বাজারে গিয়ে একটু সময় নিয়ে সব দেশি পণ্য আর ভারতীয় পণ্যের দামের পার্থক্যটা দেখুন একবার। নিম্নে দুটাকা থেকে উর্ধে চল্লিশ টাকা পার্থক্য পাবেন একই পণ্যের কিলো প্রতি দামে।
নিম্নবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত বলে দুটো "জাত" আছে দেশে, আমার হিসেবে দেশের সবথেকে বড় জনগোষ্ঠী নিম্নবিত্ত, তারপরেই নিম্ন মধ্যবিত্তের স্থান। যাদের সারাটা জীবন কাটে স্বল্প আয়ে পরিবার চালিয়ে শরীর মন দুটোই শেষ করে ছেলেপুলে মানুষ করে শেষ বয়সে ছেলেমেয়ের বোঝা হয়ে গ্লানির জীবন। অথচ দুটো পয়সা সেভ করতে হলে ভারত ছাড়া গতি নেই আমাদের।
আন্ডারওয়্যার থেকে শুরু করে যাবতীয় কাপড় একটু সস্তায় পেতে ভারতীয় কাপড়। ভারতীয় শাড়ী এসে স্রেফ লাথি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে দেশের টেকসই মোটা কাপড়।
খাবারের বাজারের কথা তো আগেই বলেছি। এবারে আমিষ। আমরা কিন্তু যথেষ্ট গরুখোর, তাই না? ভারত থেকে গরু এসে আমাদের পাতে জুড়ে না বসলে কোথায় পেতাম এই সহজলভ্য গোমাংশ? ভারত গোমাতার পুজারী হলেও সীমান্তে রীতিমত ফার্ম করে গো-রপ্তানী করছে বাংলাদেশে।
আর কুরবাণীর কথা তো বলাই বাহুল্য, ভারতের গো-রপ্তানী না হলে দেশের কত মানুষের ঘরে কুরবানী স্রেফ ছাগল অথবা আরবের উঁটের ভরসাতে বসে থাকতে সেটা আন্দাজ করে নিন আপনারাই।
চিনি নিয়ে লম্বা লেখা যায়, সংক্ষেপে বলছি, ভারতীয় মনহর দর্শন ঝরঝরে চিনি খেদিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশী লাল মোটা দানার চিনি। আর ভারতীয় চিনি আমদানীর চাইতে চোরাই পথে আসে বহুগুন বেশী। দক্ষিনের সীমান্তের কমিউটর ট্রেনে দেখেছি বস্তা ভরা চিনি, বস্তায় ভরপুর লোকাল কম্পার্টমেন্ট, চিনির বস্তার ওপরে খেলতে থাকা চোরাচালানকারিনীর শিশু নিদারুন আনন্দে হিসু করে ভিজিয়ে দিচ্ছে চিনির বস্তা, সেটাই হাত ঘুরে আসছে আপনার আমার চায়ের কাপে।
এবারে আসুন ইয়ং জেনারেশনের মাস্তিতে। বর্ডারে বাসা এমন পরিচিত ইয়ংস্টার, যাদের হাতে একটু পয়সা আছে, সন্ধের পরেই দেখেছি ওপারের শুরাতে গলা ভিজিয়ে সময় কাটাতে, আমাদের দেশে ট্যাক্সের পাহাড় থাকলেও দাদাদের দেশে কিন্তু বেশ শস্তা! আর বর্ডারের বার্টার সিস্টেম কে না জানে!
শপিং করবেন? ঈদের? বিয়ের? রাজস্থানী পাগড়ী বেশ হিড়িক তুলেছিলো বছর দশ আগে, আর এখন সিরিয়ালে দেখা মাছাক্কালি-ঘষেটি ড্রেস ছাড়া ঈদ হয় নাকি? বিয়েতে কণে এখন হয় লেহেঙ্গা পরেন অথবা সানন্দা স্টাইল আর ভারতীয় "আনকমন" শাড়ী। হলুদ, বিয়ে আর বৌভাতে শাড়ী আর লেহেঙ্গা আর বরের শেরোয়ানীতে ভারতের ডিজাইনের অথবা খোদ ভারত থেকে কিনে আনবার গলা উঁচানো গল্পের গর্ব কি মিথ্যে?
বিয়ের শপিং এ ভারতে যেতে চেয়ে সামুতেই পোষ্ট ছিলো দিন কয়েক আগে, মনে পড়ে?
আমার পরিবারের একটা ঘটনা বলি এবারে। দেশের সব থেকে বড় বিশেষজ্ঞ একবছর ট্রিটমেন্ট করবার পরেও রোগীর অবস্থার কোন উন্নতি নেই, বরং স্লো অবনতি দেখে ভেলোরে পাঠানো হলো। সেখানে গিয়ে জানা গেল দেশে লক্ষ লক্ষ মুদ্রা ব্যায়ে হয়েছে অপচিকিত্সা, ভেলোরে সেটা মোটে হাজার কুড়ি দাদাদের তঙ্কাতেই একাবারে সেরে গেল!
তাহলে দেশে কি চিকিত্সক নেই? বছর বছর সরকারী পয়সায় পাশ করে কি গরুর ডাক্তার গজাচ্ছে কেবল? (আমার ধারনা গরুরও চিকিত্সা করতে পারবেনা শালারা)।
দেবদাস এসে বাজার গরম করে রেখেছিলো ২০০২ তে, মনে আছে ভাইসকল? ঐশ্বর্যের সেই "ইশ", আমদানী করা দেবদাস শাড়ীর এক প্যাঁচ স্টাইলে মগ্ন বালিকাদের পথে ঘাটে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানে কথায় কথায় "ইশ" আর সেই "ইশ" শুনে মুগ্ধ বালকদের হৃদয় ভাঙা "আহা" এখোনো কানে বাজে। আমি অবশ্য পার্ট টাইম বসতাম ভাইপোর সিডির দোকানে, দেবদাস মুভিটা বিক্রি করে বছরের টোটাল প্রফিট একসিজনেই তুলে ফেলেছিলাম মনে পড়ে।
তারপর আছে সিরিয়াল নামক বাংলা যাত্রার ভারতীয় সংস্করন। যাত্রা তবু কোনমতে দেখা যায়, তবে সিরিয়াল দেখলে স্রেফ বমি আসে। তবু আমাদের নারীরা সেই নেশায় বুঁদ, ঘরে রান্না না হোক, "সিরিয়াল খাওয়া" চাই। আর ছোটরা ক্লাসে এসে বুক ভাসায় বান্ধবীর সাথে আলোচনা করে, আগের দিন মেয়েটাকে বয়ফ্রেন্ড কি নিষ্ঠুর ভাবে ডিচ করেছে সেই কাঁদুনি গেয়ে অথবা ওমুকের ড্রেসটা কি দারুন নিদারুন ছিলো আর সেটা কোথায় পাওয়া যেতে পারে, ঈদে কোন কোন সিরিয়ালের নতুন ড্রেস বানাতে হবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনায়।
কি? শুধু মেয়েদেরকেই গাল দিচ্ছি? না হে বাপু! ছেলেগুলোও কম না, যে ছেলে ইডিয়ট গাল শুনে হয় ক্ষেপে মারতে আসতো নয়তো লজ্জায় গলায় দড়ি দিতে চাইতো, সে এখন ফেসবুকে নিজেদের বন্ধুর সংখার শেষে ইডিয়টস লাগিয়ে গর্ব করে, আর গজনী স্টাইল পার্ফেক্ট না হলে নাপতা বেটাকে পারলে শুলে চড়ায়।
বলিউডের কল্যানে আর কিছু না হোক, সমাজের একটা অংশের পুরো একটা প্রজন্মের মেয়ে গুলো হট হতে গিয়ে হচ্ছে স্লাট, আর ছেলে গুলো বলিউডি স্মার্টনেসের অন্ধ অনুকরনে হচ্ছে খাঁটি বাংলা "ফার্মের বলদ"।
ভারত আমদের চ্যানেল বন্ধ করে রেখেছে তো কি হয়েছে? আপনি করুনতো একদিন ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ! কেবল ব্যাবসায়ী কেউ থাকলে একটা রাতের জন্যে বন্ধ করে রাখুন সনি-জিটিভি, সকাল নাগাদ গালির তোড়ে ভেসে যাবেন, পরদিন ও বন্ধ থাকলে দেখবেন লাইন ছেড়ে দিয়েছে সবাই।
আর ইদানিং এফএম এর বিকৃত বাংলার সাথে সাথে দেখছি বিভিন্ন চ্যানেলে উঠতি মডেলদের মিউজিক ভিডিওর অবস্থা। একটাও দেখি না বলিউডের অন্ধ অনুকরন ছাড়া কিছু আছে। আর অনুকরন করতে গিয়ে যা হচ্ছে সেটা এক দেশের বাইরে থাকা এক কো-ব্লগারের ভাষাতেই বলছি "এই ভঙ্গি শুধু বাংগালী সমাজে নয় বাইরের কেউ দেখলেও বলবে লাল এরিয়ার মেয়ে এরা। এখানে স্লাটরা ঐ মুখ ভঙ্গি করেন। কাপড়ের দিকে গেলাম না।" কমেন্ট ১২।
ভাইরে! হট লুক আর স্লাটি লুক জিনিষ দুইটা যে আলাদা সেইটা কি এরা বুঝে না!?
সোজা ভাষায়, আমাদের সাংস্কৃতি প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে আমাদেরই হাতে, ব্যাক্তি স্বাধীনতা আর মুক্তমনা হবার ছুঁতোয়। আর সেটা যতটা না বিশ্বের অন্যান্য দেশের অনুকরনে তার থেকে হাজার গুনে বেশি আমাদের বলিউড প্রেমের কারনে।
ভারত কি করছে? স্রেফ কিস্যু না, যাষ্ট নিজেদের পণ্যের সবথেকে বড় মার্কেট বানিয়ে রাখছে আমাদের। আর আমরা সেই তালে লাফিয়ে নিজেরাই খুন করছি আমাদের কৃষি, শিল্প, সাংস্কৃতি এমনকি ভবিষ্যত প্রজন্মকেও।
সংক্ষেপে শেষ করি, আমাদের মতন এমন বলদ জাত আর দেখি নাই, রাজাকার বুক ফুলায়ে পতাকা উড়িয়ে দেশ শাসন করে, আর বৈদেশি মালের প্রীতির কারনে দেশটা একটু একটু করে ধ্বংস হতে থাকে আমাদেরই সুবিধেবাদী উদারমনা মুখোশের কারনে।