কবি মলয় রায় চৌধুরী আজ সকালে মৃত্যুবরন করেছেন। তিনি এই ব্লগের ব্লগার ছিলেন। এই ব্লগেই তার কিছু লেখা পড়েছি আমি। পরে অবশ্য তিনি সব লেখা মুছে দিয়েছেন বা ড্রাফট করেছেন।
কবি মলয় রায়চৌধুরী বহুগুনের অধিকারী ছিলেন। সাহিত্যিক, অনুবাদক, সংবাদিক, প্রবন্ধকার সহ নানা রুপে তাকে দেখা গেছে। তার লেখা কবিতার উপরে গবেষনা করে দেশ-বিদেশে বহু গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তবে তিনি সবচেয়ে পরিচিত "প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার" কবিতার জন্য। এই কবিতা লেখার জন্য তার বিরুদ্ধে ৩৫ সপ্তাহ মামলা চলে, কবিতা লেখার কারনে তাকে হাতকরা পরিয়ে কোমড়ে দড়ি বেধে জনসম্মুখে হাটিয়ে নেয়া হয়। এবং মামলায় কারাদন্ড দেয়া হয়। কবিতা লেখার অপরাধে কারাবাস করে তার খ্যাতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পরে।
তিনি হাংরি আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। হাংরি আন্দোলন সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে একমাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনে মলয় রায়চৌধুরীর সাথে ছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, দেবী রায়, বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, ফালগুনী রায়, সুভাষ ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী, বাসুদেব দাশগুপ্ত সহ আরো অনেকে।
হাংরি আন্দোলনের ম্যানিফেস্টো ছিলো, "মানুষ, ঈশ্বর, গণতন্ত্র ও বিজ্ঞান পরাজিত হয়ে গেছে। কবিতা এখন একমাত্র আশ্রয়। এখন কবিতা রচিত হয় অর্গ্যাজমের মতো স্বতঃস্ফূর্তিতে।"
এই আন্দোলনে শুধু কবিতার মাধ্যমেই প্রতিবাদ হয়নি, বরং কিছু এক্সট্রিম কাজও করেছেন মলয়বাবুগণ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, এমএলএ, সচিব, লেখক- সবাইকে পাঠানো হল মুখোশ। প্রতিটি মুখোশে লেখা ছিলো, "দয়া করে মুখোশটা খুলে ফেলুন।"
কবি সাহিত্যিকদের পাঠানো হল বিয়ের কার্ড। তাতে লেখা "F*ck the Bastard of Gungshalik School of Poetry"
শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনকে উদ্দেশ্য করে,
কবিতা ভাতের মতো কেন লোকে নিতেই পারছে না
যুদ্ধ বন্ধ হলে নেবে? ভিখারিও কবিতা বুঝেছে
তুমি কেন বুঝবে না হে অধ্যাপক মুখ্যমন্ত্রী সেন?
তবে এই আন্দোলনের কবিগনদের ভেতর একতা ছিলো না, তাই আন্দোলন মাঝপথে ভেঙে যায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় সাক্ষী দেন মলয় রায়চৌধুরীর বিপক্ষে। যার কারনে মলয় রায়চৌধুরীর কারাদন্ড হয়।
তারপরেও এই আন্দোলন ছিল প্রচলিত সাহিত্যে এক বড় ধাক্কা। শালীনতার চাদরে মোড়া উচ্চবর্গের সাহিত্যের বদলে সমাজের নিচুস্তরের মানুষের কথা, বিপ্লবী চেতনা আর আদিম চাহিদা উঠে আসে সাহিত্যে।
মলয় রায়চৌধুরীর জন্য শ্রদ্ধা।