somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুকুর

০২ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ টান দিয়ে হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় কাশেম। গলার মাফলারটা খুলে আবার ঠিক করতে করতে বাশেঁর মাচা থেকে এক পা নীচে নামিয়ে স্যান্ডেলটা অন্ধকারে অনুমানে খুঁজতে থাকে। যেদিকে সিগারেটটা পড়েছিলো ওদিকে তাকিয়ে ছিল রজব। কাশেমের নড়াচড়া দেখে উৎসুকভাবে সেদিকে তাকায়, ঠিক করতে পারে না এখন উঠবে কিনা। তারপর আবার পড়ে থাকা আমগাছটার উপর নড়েচড়ে বসে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যার পর থেকেই দুজন এখানে জঙ্গলের মধ্যে বসে আছে। এখন সময় কত হবে আটটা-সাড়ে আটটা। শীতের রাত, ঠান্ডাটা একটু একটু করে বাড়ছে। কুয়াশাও বাড়ছে। কয়াশা আরেকটু বাড়লে আরো ভালো হত। আসার আগে দুজনকে দুই প্যাকেট সিগারেট কিনে দিয়েছিলো নবীন। প্যাকেটের মুখ খুলে ভিতরে দেখে, এখনও কয়েকটা আছে। একটা বের করে ধরাতে গিয়ে আবার কাশেমের দিকে তাকায়। কাশেম সেন্ডেল খুঁজে পেয়েছে, কোমড়ের কাছে গামছাটা খুলে হাতে নিয়ে পুর্বদিকে মাঠের ওপাড়ের দিকে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দুপা হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। হাতের আড়ালে ম্যাচ জ্বেলে সিগারেটটা ধরিয়ে রজবও ওদিকে তাকায়। শীতের রাত, চাঁদও নেই আকাশে। দুরের বাড়িটা একটা ঘন অন্ধকারের ঝোপের মতো দেখা যায়। সবুর চাচার বাড়ী ওটা। নবীন ঐ বাড়িটার আশেপাশেই কোথাও আছে। টর্চ জ্বেলে সংকেত দিলেই কাশেম আর রজব রওনা হবে।

সবুর আলীর বাসায় পল্লীবিদ্যুতের লাইন। বিকেল থেকে বিদ্যুৎ নেই, কখন আসবে তারও ঠিক নেই। সন্ধ্যা থেকে হারিকেন জ্বালিয়ে ফিরোজা বই নিয়ে বসে আছে। মেয়েকে একবার নিষেধ করতে গিয়েও করে না সবুর। সামনে মেয়েটার পরীক্ষা। এইবার এসএসসি দিবে। পরীক্ষাটা শেষ হলেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে, ভাবে সে। মেয়েটা লক্ষী, পড়াশুনায়ও ভালো। কিন্তু যেভাবে বড় হয়ে যাচ্ছে, আর বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে না। এর মধ্যেই লম্বায় মেয়েটা তার মাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গ্রামদেশ, তার উপরে মেয়েটা যেমন সুন্দর, রাতে চিন্তায় সবুরের ঘুম আসতে চায় না। সবুর মিয়া তার বাজারের দোকানের আয় দিয়ে আর সামান্য কিছু জমির ফসল মিলিয়ে পাঁচজনের সংসার মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছে। মেয়ের বিয়েটা একটা খরচান্ত ব্যাপার হবে, সেটাও একবার ভাবে। রেহানা দ্রুত হাতে রান্না শেষ করছে। গামলায় ভাত বাড়তে বাড়তে মেয়ে ফিরোজাকে ডাকে। এতক্ষন ছোট ছেলেমেয়েদুটো এখানেই বসে ছিল। এখুনি খাবার দেয়া হবে বলে দুজনই উঠে গিয়ে বারান্দার চৌকিটাতে বসে আছে। ফিরোজা রান্নাঘরে এসে উঁকি দেয়, তারপর চুলার পাশে বসে মায়ের সাথে হাত লাগায়। অন্ধকারে উঠোনটা পার হয়ে আসতে ওর গা-টা ছমছম করে উঠছিলো।

সবার খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে হারিকেনটা নিয়ে পাশের ঘরে টেবিলে আবার পড়তে বসে ফিরোজা। মা তার কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। বাবা আর ভাই-বোন দুটো মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। মায়ের কাজ শেষ হতে হতে বই-পত্রগুলো গুছিয়ে মায়ের সাথে ছোটকাজ সেরে আসবে। বাথরুমটা রান্নাঘরের পাশে, একটু দূরে। রাত হলে একা যেতে একটু ভয় ভয় লাগে, তাই মায়ের জন্য অপেক্ষা করে ফিরোজা।

মাঠের মাঝের আল ধরে রজব আর কাশেম দ্রুত হাঁটে। চাদর দিয়ে মাথা-মুখ ঢেকে নিয়েছে, তারপরেও ঠান্ডা বাতাস ঢুকে নাকে মুখে ঝাপটা মারছে। নবীন ঐ সবুর চাচার বাড়ির এ পাশের বেগুনক্ষেতটার কোথাও থাকবে। চাদরের নীচে শরীর একটু গরম লাগছে রজব আর কাশেমের। সেটা হাঁটার জন্য নাকি উত্তেজনায়, বুঝতে পারে না ওরা। বেগুন ক্ষেতটার ঢালে ছোট একটা ঝোপের আড়ালে বসে অস্থিরভাবে আবার মাঠের দিকে তাকায় নবীন। মাঠের মাঝে কেউ আসছে কিনা অন্ধকারে ঠিক ঠাহর হয় না তার। ওপাড়ের জঙ্গলের দিকে তাকায়। কালো ঝোপ ছাড়া কিছু বোঝা যায় না সেদিকেও। কিছুক্ষন আগেই রান্নাঘর থেকে ফিরোজা খাবারের বাটি নিয়ে বারান্দার দিকে গেছে। তার কিছুক্ষন পরে তার মাও গেল। এরপর ফিরোজার মা আরও দুএকবার যাওয়া আসা করলো, কিন্তু ফিরোজাকে আর দেখা গেলো না। মেয়েটাকে দেখেই তার মাথাটা আবার কেমন কেমন করে ওঠে। অনেকদিন ধরে মেয়েটার পিছনে ঘুরছে নবীন। একবার ভালো করে কথা বলা তো দুরের কথা, ওকে দেখলেই মাথা নীচু করে মুখটা এমন করে চলে যায় না মেয়েটা! নিজের অযোগ্যতাটা কোথায় সেটাই খুঁজে পায় না নবীন। পড়াশুনা বেশিদুর করেনি সে, কিন্তু বাবার জমিজমাতো কম নেই তার। বাজারে একটা দোকানও আছে। উত্তারাধিকারি বলতে তারা দুই ভাই। বাসায় দুটো মোটরসাইকেল। একটা নিয়ে বাবা দোকানে, শহরে যায়। আরেকটা তার। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডাবাজি ছাড়া নেশা করা বলতে ঐ সিগারেট। মাঝে মাঝে অবশ্য উপজেলায় যায়, কিন্তু ওখানে গিয়ে আসলে সে কি করে সেটা তো ঐ রজব আর কাশেম ছাড়া এখানকার কেউ জানে না। গত রবিবার আর থাকতে না পেরে ফিরোজাকে সে রাস্তায় আটকে বসেছিলো, কিছু একটা তার মুখ থেকে শুনতে চায়। কিন্তু মেয়েটা যে এতগুলো বন্ধুর সামনে তাকে এভাবে দুকথা শুনিয়ে দিবে, ভাবতেও পারে নি সে। খুব অপমান লেগেছে। এত দেমাগ দেখানোর কি আছে? নবীনকে এখনও চিনে নাই ফিরোজা। চিনবে! ভাবতে গিয়ে আবার উত্তেজনা বোধ করে নবীন। অনেক্ষন থেকে সিগারেট খাচ্ছে না সে। এখানে আগুনের আলো দেখলে যে কেউ কৌতুহলি হতে পারে। তখন সব পরিকল্পনা একেবারে ভেস্তে যাবে। গত কয়দিন ধরে আজকের পরিকল্পনা সাজিয়েছে তারা। রজব আর কাশেম প্রথমে রাজী হচ্ছিলো না। কি দরকার একটা মেয়ের জন্য এত ঝুঁকি নেয়ার। কিন্তু পরে বন্ধুর কষ্ট দেখে রাজী হয় তারা। আজকের বুদ্ধিটা কাশেমের। কিন্তু শর্তও আছে ওদের। প্রথমে খারাপ লাগলেও, পরে অপমানের কথা মনে হতেই রাজী হয়ে যায় নবীন। বেটিকে সে দেখাবে নবীন কি জিনিস!

মাঠের নীচু দিকটা থেকে কে যেন আস্তে করে নবীনের নাম ধরে ডাকে। চমকে উঠে তারপর নীচের দিকে তাকায়, ছায়ামুর্তি দুটোকে দেখে অস্ফুটে সাড়া দেয় নবীন। কাশেম, রজব দুজনই উঠে এসে নবীনের পাশে বসে। কথা বলে নিচু স্বরে। তারপর ক্ষেতের বেড়ার পাশ দিয়ে দিয়ে নীচু হয়ে অন্ধকারে কুকুরের মতো এগোতে থাকে তিনজন। সবুর মিয়ার বাড়ীর রান্নাঘরের পিছন দিকের লেবুগাছের ঝোপটার দিকে এগোতে থাকে।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×